কারা কীভাবে ব্যয় করেছে, নিশ্চিত করতে পারছে না কেউ
Published: 23rd, February 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প জানিয়েছেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার একটি প্রতিষ্ঠানকে দেওয়া হয়েছে। তবে কোন প্রতিষ্ঠান বা কবে দেওয়া হয়েছে বা কত বছর ধরে দেওয়া হয়েছে বাকি কোনো তথ্যই খোলাসা করেননি মার্কিন প্রসিডেন্ট। ফলে দেশে বিষয়টি নিয়ে সৃষ্টি হয়েছে ধোয়াসা। বাংলাদেশে যে এনজিওগুলো মার্কিন অর্থায়নে প্রকল্প নিয়ে থাকে, তাদের বৈদেশিক অনুদানের হিসাব–নিকাশ করা শুরু হয়েছে। তবে মার্কিন সরকারের ফরেন অ্যাসিসটেন্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা গেছে, ২০২৪ সালে যুক্তরাষ্ট্রের উন্নয়ন সহযোগী এজেন্সি ফর ইন্টারন্যাশনাল ডেভেলপমেন্টের (ইউএসএআইডি) বাংলাদেশে গর্ভনেন্স বা সুশাসনখাতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান করেছে।
ইউএসএআইডি দীর্ঘ দিন ধরেই বাংলাদেশের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, পুষ্টি, দুর্যোগ ব্যস্থাপনা, শরণার্থীসহ অন্যান্য বিষয়ে সুশাসন, উন্নয়ন ও মানবিক সহায়তায় অর্থায়ন করে থাকে। আর তাদের অর্থায়নের আরেকটি খাত হচ্ছে গণতন্ত্র, মানবাধিকার ও সুশাসন। ফরেন অ্যাসিসটেন্টের ওয়েবসাইট থেকে জানা যায়, বাংলাদেশে মানবিক সহায়তা হিসেবে ২৩০ মিলিয়ন, স্বাস্থ্য এবং জনসংখ্যায় ৬০ মিলিয়ন, কৃষিতে ৪১ মিলিয়ন, শিক্ষায় ৩৩ মিলিয়ন, প্রশাসনিক খরচে ২১ মিলিয়ন এবং অন্যান্য খাতে ২৮ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান হিসেবে এসেছে। এখানে সুশাসনখাতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদানের কথা বলা রয়েছে।
ওয়েবসাইটটিতে সুশাসনখাতে ২৯ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদানের খাত ভিত্তিক খরচ ভাগ করে দেওয়া রয়েছে। এতে গর্ভমেন্ট অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিতে ২১ মিলিয়ন এবং অন্যান্য সামাজিক অবকাঠামোতে ৭ দশমকি ৬ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান বরাদ্দের তথ্য আছে। সামাজিক অবকাঠামোতে ৭ দশমকি ৬ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে কর্মসংস্থান তৈরিতে ৪ দশমিক ৪ মিলিয়ন এবং সামাজিক সুরক্ষায় ৩ দশমিক ২ মিলিয়ন ডলার দেখানো হয়েছে।
গর্ভমেন্ট অ্যান্ড সিভিল সোসাইটিতে ২১ মিলিয়ন ডলারের মধ্যে মানবাধিকারে ৭ দশমিক ৬ মিলিয়ন, গণমাধ্যম ও অবাধ তথ্য প্রবাহে ৭ দশমিক ৪ মিলিয়ন, আইনি ও বিচার ব্যবস্থার উন্নয়নে ২ দশমিক ৮ মিলিয়ন, নির্বাচনে ১ দশমিক ৭ মিলিয়ন, গণতান্ত্রিক অংশগ্রহণ ও সুশীল সমাজে ৯ লাখ ডলার এবং বিকেন্দ্রীকরণ এবং উপজাতির প্রতি সমর্থণে ১ দশমিক ১ মিলিয়ন ডলার বৈদেশিক অনুদান হিসেবে দেখানো হয়েছে।
গত ১৫ ফেব্রুয়ারি ডিওজিই এক্স হ্যান্ডলে বলেছে, বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশে নানা প্রকল্পে অর্থায়ন বাতিল করেছে যুক্তরাষ্ট্র। বাংলাদেশে রাজনৈতিক পরিস্থিতি শক্তিশালী করার লক্ষ্যে নেওয়া প্রকল্প ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ ইন বাংলাদেশ’ এ ২৯ মিলিয়ন ডলারের অর্থায়ন বাতিল করা হয়েছে।
এরপর গত শুক্রবার ডোনাল্ড ট্রাম্প বলেন, বাংলাদেশের সার্বিক রাজনীতি শক্তিশালী করতে ২৯ মিলিয়ন ডলার এমন এক সংস্থার কাছে গেছে, যে সংস্থার নাম আগে কেউ শোনেনি।
ডোনাল্ড ট্রাম্পের উল্লেখ করা ২৯ মিলিয়নই কি ফরেন অ্যাসিসটেন্টের ২৯ মিলিয়ন তা সমকাল নিশ্চিত হতে পারেনি। তবে মার্কিন তহবিল পেয়ে থাকেন এমন কয়েকটি এনজিও সংশ্লিষ্টরা জানান, যে পরিমান অর্থের কথা মার্কিন প্রেসিডেন্ট বলেছেন, তা কোনো একক প্রতিষ্ঠানে বা একভাগে বৈদেশিক অনুদান হিসেবে দেওয়াটা অস্বাভাবিক। মার্কিন অনুদানে চলা প্রকল্পগুলো কয়েক বছর ধরে হয় এবং এসব অনুদান ভাগে ভাগে প্রকল্পের অগ্রগতি হিসেবে এসে থাকে।
ইউএসএআইডি ‘স্ট্রেনদেনিং পলিটিক্যাল ল্যান্ডস্কেপ (এসপিএল) ইন বাংলাদেশ’ অর্থায়নকারী প্রতিষ্ঠান। আর এর বাস্তবায়নকারি প্রতিষ্ঠানের নাম হচ্ছে ডেমোক্রেসি ইন্টারন্যাশনাল। প্রকল্পটি ২০১৭ সালের ২ মার্চে গ্রহণ করা হয়, যা শেষ হওয়ার কথা চলতি বছরের ২০ সেপ্টেম্বর। বাংলাদেশে গণতান্ত্রিক কাঠামোকে শক্তিশালী করার লক্ষ্য নিয়ে ১৭ জেলায় এটি বাস্তবায়ন হচ্ছিলো।
এনজিওবিষয়ক ব্যুরোর মহাপরিচালক (ভারপ্রাপ্ত) মো.
ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনাল বাংলাদেশের (টিআইবি) নির্বাহী পরিচালক ড. ইফতেখারুজ্জামান বলেন, ইউএসএআইডির ফান্ড বন্ধের ফলে উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে। অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ হচ্ছে। এটা শুধু বাংলাদেশেই নয়, সারা বিশ্বে। একই সঙ্গে বিশ্বে কিন্তু বিকল্প অর্থায়নের উৎসও কমে যাচ্ছে। ইউরোপীয় দেশগুলো অন্তর্মুখী হচ্ছে। বৈশ্বিক অবস্থাও ইতিবাচক নয়। এমন পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের রাজনীতি শক্তিশালী করতে একটি এনজিওকে ২৯ মিলিয়ন ডলার সহায়তা দেওয়া হয়েছে বলে যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের দাবি নতুন করে নানা আলোচনার জন্ম দিয়েছে। এটি (ট্রাম্পের দাবি) একটি অস্বাভাবিক দাবি। আমার মনে হয় ইউএসএআইডির অর্থায়ন বাতিলকে বৈধতা দিতে এখানে বাংলাদেশের নাম ব্যবহার করা হয়েছে। কারণ এভাবে কোনো সংস্থার অর্থ নেওয়ারই সুযোগ নেই।
তিনি বলেন, ২৯ মিলিয়ন ডলার যদি এমন কোনো সংস্থাকে যুক্তরাষ্ট্র দিয়ে থাকে তাহলে সেটি যুক্তরাষ্ট্র কর্তৃপক্ষের দুর্বলতা। কারণ ১ ডলারই হোক আর ২৯ মিলিয়ন ডলারই হোক- সরকারের অনুমোদন ছাড়া কোন অর্থ ছাড় হওয়া অসম্ভব। আর এককভাবে কোনো সংস্থার ২৯ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার খবরটিই অস্বাভাবিক।
নাম প্রকাশে অনচ্ছুক একটি এনজিওয়ের প্রধান নির্বাহী বলেন, ট্রাম্পের বক্তব্য ভবিষ্যতে সহযোগিতা পাওয়ার ক্ষেত্রে সংকট তৈরি করবে এবং এসব কর্মসূচি নিয়ে আস্থা হারানোর জায়গা তৈরি হবে। যুক্তরাষ্ট্রে কোনো নিবন্ধন না থাকলে ইউএসএআইডি বা যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের সরাসরি অর্থায়ন পাওয়া যায় না। আবার বাংলাদেশে কোনো এনজিও বিদেশি অর্থায়ন পেলে সেটি ছাড় করাতে এনজিওব্যুরোতে এ সম্পর্কে বিস্তারিত সব তথ্য জানানোর নিয়ম আছে। যুক্তরাষ্ট্র বা ইউএসএআইডির উচিত পরিষ্কার করে বলা যে কারা তাদের ফান্ড নিয়েছে। ফান্ড তো কেউ জোর করে আনেনি। যে পেয়েছে নিয়ম মেনেছে বলেই পেয়েছে। সেখান কোন ত্রুটি থাকলে সেই দায় তো যুক্তরাষ্ট্রের। সবাইকে বিব্রত না করে এটি তাদেরই পরিষ্কার করা উচিত।
বেসরকারি সংস্থা মানুষের জন্য ফাউন্ডেশনের নির্বাহী পরিচালক শাহীন আনাম বলেন, সাধারণত যুক্তরাষ্ট্রের টাকা বাংলাদেশে সরাসরি কেউ পায় না, বরং তাদের অর্থ আসে সেখানকারই কোন ম্যানেজমেন্ট কোম্পানির মাধ্যমে। তারা ঢাকায় অফিস নেয়। লোকাল পার্টনার ঠিক করে কর্মসূচি বাস্তবায়নের জন্য। সে কারণে এখানকার কোন সংস্থার ২৯ মিলিয়ন ডলার পাওয়ার দাবিটাই হাস্যকর। আবার বিভিন্ন কর্মসূচিতে যে টাকা তারা দেয় তার ৫০ শতাংশই আবার আমেরিকাতেই চলে যায়। তারপরেও কেউ এমন অর্থ পেয়েছে (ট্রাম্প যা দাবি করেছেন) কি-না সেটি কর্তৃপক্ষের তদন্ত করে দেখা উচিত বলে মনে করেন তিনি।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ইউএসএআইড র অন য ন য প রকল প র জন ত এনজ ও দশম ক সরক র ৭ দশম
এছাড়াও পড়ুন:
আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা ইশরাকের
বিএনপি নেতা ইশরাক হোসেনকে মেয়রের দায়িত্ব দেওয়ার দাবিতে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের (ডিএসসিসি) নগর ভবনে ঈদের বিরতির পর ফের অবস্থান নিয়েছেন সংস্থাটির কর্মচারীরা। এর সঙ্গে ঢাকাবাসীর ব্যানারে নগরভবনে একত্রিত হয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা। সেখানে উপস্থিত হয়ে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দিয়েছেন ইশরাক হোসেন।
আজ রোববার সকাল থেকে ইশরাকের অনুসারীরা ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নগরভবনে একত্রিত হয়ে অবস্থান কর্মসূচি পালন করলেও। সকাল ১১ টার দিকে নগরভবনে প্রবেশ করেন ইশরাক হোসেন এবং আন্দোলনকারীদের উদ্দেশ্যে আন্দোলন অব্যাহত রাখার ঘোষণা দেন তিনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, সরকারকে আহ্বান জানাচ্ছি, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে নিষ্পত্তি করেন। তাহলে অচল অবস্থা কেটে যাবে। এই সমস্যা সুরাহা না করা পর্যন্ত এই কর্মসূচি অব্যাহত থাকবে।
তিনি আরও বলেন, আমাদের এই আন্দোলন চলমান থাকবে। স্থানীয় সরকার উপদেষ্টা সংবিধান লংঘন করেছেন। আন্দোলন চলমান থাকবে। এখান থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। এই লড়াই থেকে ফিরে আসার কোনো সুযোগ নেই। প্রধান উপদেষ্টাকে আহ্বান জানাবো, তিনি যেন বিষয়টি সরাসরি নিজে তত্ত্বাবধান করেন। আমরা আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল। আমরা নিয়মতান্ত্রিক রাষ্ট্র পরিচালনায় বিশ্বাস করি। এখন আমাদের আন্দোলন যেভাবে চলছে কোনো অবস্থাতেই আমরা এখান থেকে ফিরে যেতে পারি না। আদালতের রায় জনগণের রায়কে আপনারা মেনে নিন।
ইশরাক বলেন, আমরা যদি এখান থেকে পেছনের দিকে চলে যাই, তাহলে জনগণের প্রত্যাশা পূরণ হবে না। সরকারকে আহ্বান জানাবো, আপনারা দ্রুততম সময়ের মধ্যে এটা নিষ্পত্তি করেন। নইলে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের এই সংকটে চলবেই। আমরা সিদ্ধান্ত নিয়েছি, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের যেসব দৈনন্দিন কার্যক্রম চলবে, জনগণের জন্য ভোগান্তি না হয়। এগুলো আমাদের তত্ত্বাবধানে চলমান থাকবে।
এদিকে তারা ‘শপথ শপথ শপথ চাই, ইশরাক ভাইয়ের শপথ চাই’, ‘মেয়র নিয়ে তালবাহানা, সহ্য করা হবে না’, ‘চলছে লড়াই চলবে, ইশরাক ভাই লড়বে’, ‘নগর পিতা ইশরাক ভাই, আমরা তোমায় ভুলি নাই’- এমন নানা স্লোগান দিয়ে যাচ্ছেন আন্দোলনকারীরা। তাদের স্লোগানে উত্তাল ছিল পুরো নগরভবন। তাদের আন্দোলনের ফলে বিরতির আগে ১৫ মে থেকে ৩ জুন পর্যন্ত নগর ভবন থেকে দেওয়া সব নাগরিক সেবা বন্ধ ছিল। ঈদের ছুটির পর আজ থেকে ফের তারা আন্দোলনে যোগ দিয়েছেন ইশরাকের অনুসারীরা।
প্রসঙ্গত, ২০২০ সালের ১ ফেব্রুয়ারি ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের নির্বাচন হয়। সে সময় আওয়ামী লীগের প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপসকে বিজয়ী ঘোষণা করা হয়। নির্বাচনে অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগ তুলে ফল বাতিল চেয়ে ২০২০ সালের ৩ মার্চ মামলা করেন ইশরাক।
ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর গত ২৭ মার্চ ঢাকার নির্বাচনী ট্রাইব্যুনাল সেই ফল বাতিল করে অবিভক্ত ঢাকা সিটি করপোরেশনের সাবেক মেয়র সাদেক হোসেন খোকার ছেলে ইশরাককে মেয়র ঘোষণা করে। এরপর ২৭ এপ্রিল ইশরাককে ডিএসসিসি মেয়র ঘোষণা করে গেজেট প্রকাশ করে নির্বাচন কমিশন। কিন্তু তাকে যেন শপথ পড়ানো না হয়; সেজন্য গত ১৪ মে হাইকোর্টে রিট আবেদন করা হয়। এমন পরিস্থিতিতে মেয়রের দায়িত্ব বুঝিয়ে দিতে গত ১৫ মে থেকে আন্দোলন নামেন ইশরাক সমর্থকরা। তাদের আন্দোলনের কারণে ডিএসসিসি নগর ভবন কার্যত অচল হয়ে পড়ে। কিন্তু আইনি জটিলতার কথা বলে ইশরাকের শপথের আয়োজন থেকে বিরত থাকে স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়।
এরপর এ রিট মামলার ওপর কয়েক দফা শুনানির পর তা খারিজ করে আদেশ দেন হাইকোর্টের বেঞ্চ।