জার্মানির রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়ন (সিডিইউ) দলের প্রধান ফ্রিডরিখ মেৎর্স। জার্মানিতে অনুষ্ঠিত পার্লামেন্ট নির্বাচনে তাঁর নেতৃত্বাধীন জোট সিডিইউ-সিএসইউ জয়ী হয়েছে। তিনিই যে জার্মানির পরবর্তী চ্যান্সেলর হচ্ছেন, তা এখন অনেকটাই নিশ্চিত।

কে এ মেৎর্স

রক্ষণশীল মেৎর্স একজন ব্যবসায়ী। তিনি কখনোই মন্ত্রী পদে দায়িত্ব পালন করেননি। বেশ কয়েক বছর আগে আঙ্গেলা ম্যার্কেলের সঙ্গে ক্ষমতার দ্বন্দ্বকে কেন্দ্র করে তাঁকে সরকার থেকে বহিষ্কার করা হয়েছিল। রক্ষণশীল ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্রেটিক ইউনিয়নের (সিডিইউ) এই নেতা তখন বেসরকারি খাতে নিজের ভাগ্য গড়তে শুরু করেন। পরে ৬৩ বছর বয়সে তিনি আবারও রাজনীতিতে ফেরেন। ইউরোপের অন্যতম বৃহৎ অর্থনীতির দেশটিতে অর্থনৈতিক স্থবিরতার কারণে সৃষ্ট রাজনৈতিক অস্থিরতার মধ্যে জার্মান নাগরিকেরা তাঁর ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে গুরুত্বসহকারে দেখেছিলেন।

যেভাবে উত্থান

বর্তমানে ৬৯ বছর বয়সী মেৎর্সের জন্ম জার্মানির পশ্চিমাঞ্চলীয় জাওয়ালান্দ অঞ্চলে। এখনো সেখানেই থাকেন তিনি। পাহাড়, খাবারদাবার এবং মনোরম প্রাকৃতিক দৃশ্যের জন্য এলাকাটির খ্যাতি আছে। ১৯৮৯ সালে জাওয়ালান্দ থেকেই প্রথম তিনি ইউরোপীয় পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন। এর পর ১৯৯৪ সালে জার্মান পার্লামেন্টে নির্বাচিত হন তিনি।

একই দলের নেতা হওয়ার পরও বিভিন্ন ক্ষেত্রে সাবেক চ্যান্সেলর ম্যার্কেলের সঙ্গে পুরোনো ধারার কট্টর রাজনীতিবিদ মেৎর্সের মতবিরোধ ছিল। ক্রিশ্চিয়ান ডেমোক্র্যাটের সংসদীয় দলকে নেতৃত্ব দেওয়ার দায়িত্ব পেয়েছিলেন মেৎর্স। তবে ম্যার্কেল তাঁকে উৎখাত করেছিলেন। এরপর মেৎর্স রাজনীতি থেকে দূরে সরে যান এবং আইন পেশায় নিযুক্ত হন।

আইনজীবী ও লবিস্ট হিসেবে কাজ করে মেৎর্স ধনী হয়ে ওঠেন। ম্যার্কেল যখন অবসর নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, তখন আবার রাজনীতিতে ফিরে আসেন মেৎর্স। ২০১৮ সালে রাজনৈতিক মঞ্চে ফিরে মেৎর্স প্রতিশ্রুতি দেন, তিনি অভিবাসন এবং অপরাধের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে তাঁর দলকে আরও ডানপন্থী করে তোলার মধ্য দিয়ে কট্টর-ডানপন্থী অলটারনেটিভ ফর জার্মানি (এএফডি) দলের উত্থান ঠেকাবেন।

দুইবার ব্যর্থ চেষ্টা চালানোর পর ২০২১ সালে আবারও পার্লামেন্টে ফেরেন মেৎর্স। ২০২২ সালে তিনি দলের নেতৃত্ব পান। তবে দলের নেতা হিসেবে তিনি বেশ কিছু ভুল করেছেন। যেমন ২০২৩ সালের সেপ্টেম্বরে তিনি দাবি করেছিলেন, করদাতাদের দেওয়া করের অর্থে শরণার্থীরা তাঁদের দাঁত ঠিকঠাক করাচ্ছেন; অথচ নিয়মিত জার্মান রোগীরা দন্তচিকিৎসকের সঙ্গে সাক্ষাতের সুযোগ পাচ্ছেন না। যদিও জার্মান ডেন্টাল অ্যাসোসিয়েশন কর্তৃপক্ষ মেৎর্সের এমন অভিযোগ অস্বীকার করেছিল।

মেৎর্স আরও দাবি করেন, তিনি মধ্যবিত্ত শ্রেণির সাধারণ একজন মানুষ। তাঁর এ কথা নিয়ে জার্মান নাগরিকদের কেউ কেউ হাসিঠাট্টা করে থাকেন। এসব জার্মান নাগরিকের দৃষ্টিতে মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষদের অনেককে যে ধরনের অর্থনৈতিক বাস্তবতার মধ্য দিয়ে যেতে হয়, সে সম্পর্কে মেৎর্সের ধারণাই নেই।

এরপরও মেৎর্স নিজ দলের সদস্যদের কাছে টানতে পেরেছেন। ম্যার্কেলের দীর্ঘ শাসন মেয়াদে অনেক বেশি বামপন্থী হয়ে ওঠা দলটিকে মেৎর্স পুরোনো চিন্তাধারার রক্ষণশীল দলে পরিণত করতে সক্ষম হয়েছেন। তিনি জার্মান অর্থনীতিতে প্রবৃদ্ধি ফিরিয়ে আনার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে মেৎর্সের ব্যবসায়িক অভিজ্ঞতাকে শক্তি হিসেবে বিবেচনা করা হয়।

পররাষ্ট্রনীতি কেমন হবে

চ্যান্সেলর হিসেবে, রক্ষণশীল হিসেবে এবং ট্রান্স আটলান্টিসিস্ট (উত্তর আমেরিকা ও ইউরোপের দেশগুলোর মধ্যে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক চাওয়া) হিসেবে বিদায়ী চ্যান্সেলর ওলাফ শলৎজের চেয়ে মেৎর্সের সঙ্গেই মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বেশি মিল আছে বলে মনে করা হয়। আশা করা হচ্ছে, মেৎর্স এমন একটি পররাষ্ট্রনীতির নেতৃত্ব দেবেন যা ট্রাম্পের ধারণার সঙ্গে বেশি সামঞ্জস্যপূর্ণ হবে। ট্রাম্পের ধারণাটি হচ্ছে, ইউরোপ নিজস্ব প্রতিরক্ষার দায়িত্ব নিজেরাই নেবে।

তবে ইউক্রেন ইস্যুতে রাশিয়ার পক্ষ নিয়ে ট্রাম্প সম্প্রতি যেসব মন্তব্য করেছেন, তার ঘোরতর বিরোধী মেৎর্স। পাশাপাশি মার্কিন ভাইস প্রেসিডেন্ট জেডি ভ্যান্সের অবস্থানেরও বিরোধিতা করেছেন তিনি। ভ্যান্সের বক্তব্যকে জার্মানির নির্বাচনে হস্তক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বিশ্লেষকেরা বলছেন, সাহসী মনোভাব মেৎর্সের একটি বৈশিষ্ট্য। এর মধ্য দিয়ে তাঁর এ দৃঢ় বিশ্বাসটাই প্রতিফলিত হচ্ছে যে জার্মানিকে ইউরোপীয় ও বৈশ্বিক বিষয়গুলোর সঙ্গে আরও জোরালোভাবে সম্পৃক্ত হতে হবে। অন্যদিকে শলৎজ অস্থিরতা এবং সতর্কতার জন্য সমালোচিত হয়েছেন। এমনকি তাঁর নিজস্ব জোটের ভেতরেও এ নিয়ে সমালোচনা ছিল।

ফ্রিডরিখ মেৎর্স.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ইউর প

এছাড়াও পড়ুন:

ইউটিউবে ভুয়া ‘টক শো’র ছড়াছড়ি, বিভ্রান্ত মানুষ

এক পাশে বেগম খালেদা জিয়া, অন্য পাশে শেখ হাসিনা, মাঝখানে খালেদ মুহিউদ্দীন—ইউটিউবে একটি ‘টক শো’তে তিনজনকে এভাবেই দেখা যায়। যদিও বিষয়টি পুরোটাই ভুয়া।

সাবেক প্রধানমন্ত্রী খালেদা জিয়া ও জুলাই গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষমতাচ্যুত হয়ে ভারতে পালিয়ে যাওয়া শেখ হাসিনা কখনোই সুপরিচিত উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীনের টক শোতে (আলোচনা অনুষ্ঠান) যাননি; কিন্তু ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

সুপরিচিত নবীন ও প্রবীণ রাজনীতিবিদ, আলোচিত ব্যক্তিত্ব, জনপ্রিয় বিশ্লেষক, সাংবাদিক, সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ‘ইনফ্লুয়েন্সার’দের নিয়ে এ ধরনের ভুয়া টক শো তৈরি করা হচ্ছে। তথ্যব্যবস্থায় প্রযুক্তির প্রভাব নিয়ে গবেষণাকারী প্রতিষ্ঠান ডিজিটালি রাইটের তথ্য যাচাইয়ের উদ্যোগ ডিসমিসল্যাব বিশ্লেষণ করে দেখিয়েছে, ইউটিউবে এমন ভুয়া টক শো অনেক রয়েছে।

ইউটিউবে কারসাজি করে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। ব্যবহার করা হয়েছে খণ্ড খণ্ড ভিডিও চিত্র (ক্লিপ)। মনে হয়, যেন টক শোর অতিথিরাই কথা বলছেন।

ডিসমিসল্যাব ২৮৮টি ভিডিও পর্যালোচনা করেছে। তারা বলছে, অধিকাংশ ভিডিওতে মূল সাক্ষাৎকারগুলোকে প্রাসঙ্গিকতার বাইরে গিয়ে কাটাছেঁড়া করে এমনভাবে বানানো হয়েছে, যা আদতে ঘটেনি। এসব ভিডিও গড়ে ১২ হাজারবার দেখা হয়েছে।

‘ভুয়া টক শোকে উসকে দিচ্ছে ইউটিউব, যেখানে আসল কনটেন্ট জায়গা হারাচ্ছে’ শিরোনামে একটি প্রতিবেদন গতকাল বুধবার প্রকাশ করে ডিসমিসল্যাব। এতে বলা হয়, ভুয়া টক শোতে বিজ্ঞাপন প্রদর্শিত হয়। অর্থাৎ সেখান থেকে অর্থ আয়ের সুযোগের সম্ভাবনাও রয়েছে। ইউটিউবের নিজস্ব নীতিমালা ভঙ্গ করে বানানো এ ধরনের ভিডিও প্রচার করে ইউটিউব নিজেও লাভবান হচ্ছে।

ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী প্রথম আলোকে বলেন, এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।

খালেদা জিয়া ও শেখ হাসিনাকে জড়িয়ে বানানো ভিডিওটি পর্যালোচনা করে ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভিডিওতে দেখা যায়, ক্যামেরার দিকে মুখ করে দুই নেত্রী অনলাইনে নিজ নিজ অবস্থান থেকে ‘ভার্চু৵য়াল টক শো’তে অংশ নিয়েছেন। যেখানে সঞ্চালক খালেদ মুহিউদ্দীন শেখ হাসিনাকে আমন্ত্রণ জানান, ২০২৪ সালের আগস্টে তাঁকে ক্ষমতাচ্যুত করার বিষয়ে প্রতিক্রিয়া জানাতে; কিন্তু কিছুক্ষণ যেতেই দর্শক বুঝবেন, ভিডিওটি ভুয়া। খালেদা জিয়ার নড়াচড়া স্বাভাবিক না। শেখ হাসিনার কণ্ঠস্বর তাঁর মুখভঙ্গির সঙ্গে মিলছিল না। খালেদার ভিডিও ফুটেজ বিকৃত বা টেনে লম্বা করা হয়েছে। উপস্থাপকের হাতের অঙ্গভঙ্গি বারবার একই রকম দেখা যাচ্ছিল। বিভিন্ন উৎস থেকে ক্লিপ কেটে জোড়া লাগিয়ে কথোপকথন তৈরি করে এই ভুয়া টক শো বানানো হয়েছে।

এ ধরনের ভুয়া টক শো অনেকে বিশ্বাস করেন, যার ফলে সমাজে বিভাজন তৈরি হয় এবং রাজনীতি ও গণতন্ত্রের ওপর প্রভাব পড়ে।ডিজিটালি রাইটের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরাজ আহমেদ চৌধুরী

ডিসমিসল্যাব জানায়, ভুয়া টক শোটি চলতি মাসের শেষ নাগাদ ফেসবুকে দুই লাখের বেশিবার দেখা হয়েছে। ভিডিওটির ওপর একটি লোগো ছিল ‘টক শো ফার্স্ট নিউজ’ নামে, যা একই নামের একটি ইউটিউব চ্যানেলের সঙ্গে মিলে যায়। সেখানে একই ভিডিওটি আরও ১ লাখ ৩৫ হাজারবার দেখা হয়েছে। ওই চ্যানেলে এমন বেশ কিছু ক্লিপ ছিল, যা একইভাবে বিকৃত বা সাজানো হয়েছিল।

প্রবাসী সাংবাদিক খালেদ মুহিউদ্দীন ইউটিউবে ‘ঠিকানায় খালেদ মুহিউদ্দীন’ নামে একটি চ্যানেলে টক শো উপস্থাপনা করেন। সম্প্রতি তাঁর ছবি, ফুটেজ ব্যবহার করে বিভিন্ন ক্লিপ যুক্ত করে প্রচুর ভুয়া টক শো তৈরি করে প্রচার করা হয়েছে। ডিসমিসল্যাব এ বিষয়ে গবেষণা করেছে। তারা ইউটিউবে ‘খালেদ মুহিউদ্দীন টক শো’ লিখে খোঁজ করে অন্তত ৫০টি চ্যানেল চিহ্নিত করেছে। খালেদ মুহিউদ্দীন ছাড়াও এসব চ্যানেলে অন্যান্য উপস্থাপক ও রাজনৈতিক বক্তাদের বিভিন্ন বক্তব্যের ক্লিপ জুড়ে দিয়ে ভুয়া টক শো তৈরি করা হয়েছে। গত ২৫ মার্চ থেকে ৩১ মার্চে খুঁজে পাওয়া এসব চ্যানেলের মধ্যে ২৯টি চ্যানেল অন্তত একটি বিকৃত টক শো প্রচার করেছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, চিহ্নিত ২৯টির মধ্যে ২০টি চ্যানেল তৈরি হয়েছে ২০২৪ সালের আগস্টে বাংলাদেশের রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর। বাকি চ্যানেলগুলো ২০২১ থেকে ২০২৩ সালের মধ্যে তৈরি। পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

পর্যালোচনা করা ভিডিওগুলোতে ‘ব্যাকগ্রাউন্ড’ (নেপথ্যের দৃশ্য) বদলানো, ফুটেজ কাটাছেঁড়া বা জুম করা এবং মূল প্রসঙ্গ বিকৃত করা হয়েছে। অধিকাংশ ভিডিও ইউটিউব, টেলিভিশন শো, ফেসবুক লাইভ এবং অডিও রেকর্ডিং থেকে ক্লিপ জোড়া লাগিয়ে তৈরি। অনেক ক্ষেত্রে, মূল বক্তার ফুটেজে এমন ভয়েসওভার (কথা) জুড়ে দেওয়া হয়েছে, যা ভিন্ন প্রেক্ষাপট থেকে নেওয়া এবং যার সঙ্গে কথোপকথনের কোনো সম্পর্ক নেই; কিন্তু বাস্তব ও বিশ্বাসযোগ্যভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে।

ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, ২০২৫ সালের ২৭ মার্চ প্রকাশিত একটি ভিডিওর শিরোনাম ছিল, ‘ড. ইউনূস চীন সফরের পরপরই পদত্যাগ করলেন’। যেখানে যমুনা টিভির লোগো ব্যবহার করা হয়। যমুনা টিভির সঙ্গে ডিসমিসল্যাব যোগাযোগ করে জানতে পারে যে তাদের অনুমতি ছাড়া লোগো ব্যবহার করা হয়েছে। ভিডিওটিতে উপস্থাপক খালেদ মুহিউদ্দীন এবং রাজনীতিবিদ গোলাম মাওলা রনির আলাদা আলাদা ফুটেজ জোড়া লাগানো হয়েছে।

ডিসমিসল্যাব বলছে, রাজনীতিবিদদের মধ্যে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান, দলের নেতা ফজলুর রহমান, সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জেড আই খান পান্না, এনসিপির মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) সারজিস আলমের ফুটেজও এসব ভুয়া টক শোতে ব্যবহার করা হয়েছে।

পর্যালোচনার আওতায় আসা ভিডিওগুলোর মধ্যে অন্তত ৫৮ জন রাজনীতিবিদ, সাংবাদিক ও টক শো উপস্থাপকের ছবি, ফুটেজ বা বক্তব্য বিকৃত করা হয়েছে।

ভুয়া টক শোর বিষয়ে ডিসমিসল্যাবকে খালেদ মুহিউদ্দীন বলেন, তিনি দর্শকদের তাঁর ভেরিফায়েড ইউটিউব চ্যানেলের আধেয়র ওপর আস্থা রাখার আহ্বান জানান।

ডিসমিসল্যাব বলেছে, ভুয়া টক শোগুলোতে বক্তব্য তুলে ধরা হয় মূলত রাজনৈতিক দল ও সরকারকে নিয়ে। ভুয়া টক শোগুলোর ৪০ শতাংশেই অন্তর্বর্তী সরকারের সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে। জাতীয় নাগরিক পার্টিকে (এনসিপি) সমালোচনা করে তৈরি করা হয়েছে ২০ শতাংশ ভুয়া টক শো। বিএনপি ও আওয়ামী লীগকে নিয়ে সমালোচনামূলক বক্তব্য রয়েছে ১০ শতাংশ করে ভুয়া টক শোতে।

বেশিবার দেখা হয়েছে, এমন পাঁচটি ভুয়া টক শো খুঁজে বের করেছে। এসব টক শোতে প্রচার করা হয়েছে অশনিবার্তা, আলোর রাজনীতি ও রাজনৈতিক আলোচনা নামের ইউটিউব চ্যানেল থেকে। পাঁচটি টক শো দুই থেকে ছয় লাখ বার দেখা হয়েছে।

নিজের নিয়মই মানছে না ইউটিউব

ইউটিউবের স্প্যাম ও প্রতারণামূলক আচরণ নীতিমালায় বলা হয়েছে, এমন শিরোনাম, থাম্বনেইল বা বিবরণ ব্যবহার করা যাবে না, যার সঙ্গে ভিডিওর প্রকৃত বিষয়বস্তুর মিল নেই এবং যা দর্শকদের বিভ্রান্ত করে। এসব ভুয়া টক শোতে এ নীতি মানা হয়নি।

ইউটিউবের ছদ্মবেশ ধারণ নিষেধাজ্ঞা নীতিমালায় বলা আছে, অন্য কারও আসল নাম, ব্যবহারকারী নাম, ছবি, ব্র্যান্ড, লোগো বা ব্যক্তিগত কোনো তথ্য ব্যবহার করে মানুষকে বিভ্রান্ত করা যাবে না। ডিসমিসল্যাবের প্রতিবেদনে বলা হয়, অনুমতি ছাড়া সাংবাদিক, টক শো উপস্থাপক ও কনটেন্ট (আধেয়) নির্মাতাদের ফুটেজ ব্যবহার করায় এগুলো ইউটিউবের কপিরাইট নীতিমালাও লঙ্ঘন করতে পারে।

ডিজিটাল মিডিয়া–বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নিজস্ব নীতিমালা থাকলেও ইউটিউব এ ধরনের ভুয়া ভিডিওকে ব্যাপকভাবে ছড়িয়ে পড়তে দিচ্ছে। এতে গুণগত সাংবাদিকতা পিছিয়ে পড়ে।

২০২২ সালে একটি খোলাচিঠিতে ইন্টারন্যাশনাল ফ্যাক্টচেকিং নেটওয়ার্ক অভিযোগ করেছিল, ইউটিউব তাদের প্ল্যাটফর্মকে অপব্যবহারের সুযোগ দিচ্ছে—যেখানে অসাধু ব্যক্তি ও গোষ্ঠী বিভ্রান্তি ছড়ানো, মানুষকে প্রতারিত করা, এমনকি সংগঠিত হয়ে অর্থ সংগ্রহ পর্যন্ত করছে।

মিরাজ আহমেদ চৌধুরী বলেন, এ ধরনের ভুয়া কনটেন্ট বা আধেয় বন্ধ করতে প্ল্যাটফর্মগুলোর নিজস্ব নীতি মনে করিয়ে দিয়ে তাদের ওপর চাপ তৈরি করতে হবে। নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশনসহ সংশ্লিষ্ট সংস্থাগুলোকে উদ্যোগী হতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ