নির্বাচিত সরকারের জনগণের প্রতি জবাবদিহিতা থাকে: আমীর খসরু
Published: 24th, February 2025 GMT
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেছেন, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির স্থিতিশীলতা, দ্রব্যমূল্য সহনীয় পর্যায়ে রাখার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে কোনো প্রত্যাশা নেই। দ্রব্যমূল্য স্থিতিশীল রাখতে, আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখতে জনগণের কাছে দায়বদ্ধ ও জবাবদিহিমূলক সরকার ছাড়া সম্ভব নয়। যে সরকারের জনগণের কাছে কোনো জবাবদিহিতা কিংবা দায়বদ্ধতা নেই তাদের পক্ষে তা সম্ভব নয়।
সোমবার বিকেলে ব্রাহ্মণবাড়িয়া জেলা বিএনপি আয়োজিত সমাবেশে প্রধান অতিথির বক্তৃতায় তিনি এসব কথা বলেন।
তিনি বলেন, নির্বাচন হচ্ছে গণতন্ত্রের বাহন। নির্বাচিত সরকারের সময়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি এবং দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি ক্রমান্বয়ে নিয়ন্ত্রণে চলে আসে।
আমির খসরু মাহমুদ চৌধরী বলেন, ১৬ বছর বিএনপির নেতাকর্মীরা গুম, খুনের শিকার হয়েছেন। ৬০ লাখ নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে মিথ্যা মামলা দেওয়া হয়েছে। জেলখানায় বিএনপির নেতাকর্মীরা বিনা চিকিৎসায় মারা গেছেন। ১৬ বছর তারা বাড়িতে ঘুমাতে পারেননি। বাংলাদেশের মানুষের অধিকার ফিরিয়ে দিতে, দেশের মালিকানা ফিরিয়ে আনার জন্য তারা জীবন দিয়েছেন, আত্মত্যাগ করেছেন।
জুলাই-আগস্ট অভ্যুত্থানে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও আহতদের প্রতি সমবেদনা জানিয়ে সমাবেশে তিনি আরও বলেন, জুলাই আগস্ট অভ্যুত্থান সম্পর্কে এখন নতুন বয়ান শোনা যাচ্ছে। যে বয়ানে বিএনপির ১৬ বছরের লড়াই সংগ্রামের কোনো কথা নেই, ৩৬ দিনের আন্দোলনে বিএনপির নেতাকর্মীদের যেন কোনো আত্মত্যাগ নেই।
আন্দোলন হাইজ্যাক হয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, এ আন্দোলন কোনো দল বা গোষ্ঠীর নয়। এ আন্দোলন সবচেয়ে বেশি অবদান বিএনপির নেতাকর্মীদের। সবচেয়ে বেশি অবদান রেখেছেন দেশনেত্রী বেগম খালেদা জিয়া, দেশনায়ক তারেক রহমান। এ আন্দোলনে বাংলাদেশের সব মানুষের অবদান রয়েছে। আন্দোলনের লক্ষ্য ছিল গণতন্ত্র পুনরুদ্ধার। অভ্যুত্থান শেষে আমরা সবাই মিলে অন্তর্বর্তী সরকার গঠনে সমর্থন দিয়েছি সুষ্ঠু নির্বাচনের মাধ্যমে আগামী দিনের নির্বাচিত সরকারের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তরের জন্য।
সংস্কার প্রসঙ্গে তিনি বলেন, উনারা সংস্কারের গল্প শোনাচ্ছেন। অন্তর্বর্তী সরকারের সাংবিধানিক সংস্কারের কোনো অধিকার নেই। বিএনপির ৩১ দফা সংস্কারের মধ্যেই সবকিছু রয়েছে। বাংলাদেশে যত সংস্কার হয়েছে তা বিএনপির মাধ্যমেই হয়েছে। ভবিষ্যতে যে সংস্কার হবে তা বিএনপির মাধ্যমেই হবে। বিএনপি জনগণের আস্থার রাজনীতি করে। বিএনপি উৎপাদনের, উন্নয়নের জন্য রাজনীতি করে। বিএনপি ঐক্যের রাজনীতি করে।
সমাবেশে অন্যান্যের মধ্যে বক্তব্য রাখেন, বিএনপির সহ-আন্তর্জাতিক বিষয়ক সম্পাদক ও সাবেক এমপি ব্যারিস্টার রুমিন ফারহানা, সাবেক এমপি এম এ খালেক, বিএনপির সহ-সাংগঠনিক (কুমিল্লা বিভাগ) সম্পাদক মোস্তাক হোসেন, বিএনপির অর্থনীতি বিষয়ক সম্পাদক ইঞ্জিনিয়ার খালেদ হোসেন মাহবুব শ্যামল, বিএনপির কেন্দ্রী কমিটির সদস্য রফিক শিকদার, সাঈদুল হক সাঈদ, তদদির হোসেন জসীম, অ্যাডভোকেট জিয়াউল হক জিয়া, শেখ মো.
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ব এনপ র ন ত কর ম ব এনপ র স সরক র র জনগণ র র র জন
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস