এবার প্রিমিয়ার লিগে কেমন সম্মানী পাচ্ছেন? জনৈক ক্রিকেটার ‘(হাসি)... বলার মতো না। ধরে নেন ফ্রি খেলছি। না খেললে তো ক্যারিয়ার বাঁচাতে পারব না। সে জন্য খেলছি।’
ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের একজন উদীয়মান ক্রিকেটার কথাগুলো বলছিলেন মাটির দিকে তাকিয়ে। কারণ, মনের গভীরে জমে থাকা কষ্টের বরফ অভিমানের জল হয়ে দু’চোখ বেয়ে ঝরছিল। এক বছর আগেও যিনি ৭ লাখ টাকা সম্মানী পেয়েছেন, তাঁকেই এবার খেলতে হবে ৫০ হাজার টাকায়। এ রকম অনেক ক্রিকেটার খুঁজে পাবেন, যাদের কাছে এবারের দলবদল অভিশাপের মতো। এই লিগে খেলে যাদের সংসার চলে, তাদের হতাশা সীমাহীন।
তেমনই একজন দীর্ঘশ্বাস ফেলে বলেন, ‘আসলে এমন একসময় কেউ কারও পাশে দাঁড়াতে পারছে না। করোনার কঠিন সময় পাড়ি দেওয়া সম্ভব হলেও বর্তমান বাস্তবতায় সেটা কঠিন।’ সাধারণ ক্রিকেটারদের মতো জাতীয় দলের তারকাদেরও হতাশা ছুঁয়ে গেছে। দলবদল করে কেউই খুশি না। কারণ, ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের দলবদলের বাজার মন্দা। জাতীয় দলের ক্রিকেটারদেরও সম্মানী কমে অর্ধেক হয়েছে গত মৌসুমের তুলনায়।
২০২৪ সালের লিগ শেষে মুমিনুল হকের সঙ্গে প্রাইম ব্যাংকের সমঝোতা হয়েছিল ৪২ লাখ টাকায়। ১৯ জন ক্রিকেটারকে তারা মৌখিকভাবে নিশ্চিত করলেও রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের কারণে সবাইকে নতুন দল খুঁজে নিতে বলা হয়। মুমিনুল দল পেলেও সম্মানী কমে গেছে ১০ লাখ। তিনি বলেন, ‘আবাহনীর সঙ্গে আমার ১১ ম্যাচের চুক্তি হয়েছে। প্রতি ম্যাচে ২ লাখ করে মোট ২২ লাখ টাকা। সুপার লিগে খেলতে পারলে ১৬ ম্যাচে ৩২ লাখ টাকা পেতাম। জিম্বাবুয়ের সঙ্গে টেস্ট সিরিজ থাকায় ১১ ম্যাচ খেলব।’
উইকেটরক্ষক ব্যাটার মোহাম্মদ মিঠুনও আবাহনীতে নাম লিখিয়েছেন খুব কম সম্মানীতে। সম্মানী বেশি চাওয়ায় গতকাল পর্যন্ত কোনো দল পাননি লিটন কুমার দাস। প্রতি ম্যাচে ৩ লাখ ৩০ হাজার টাকা করে চেয়েছিলেন তিনি। একজন ক্রিকেটার জানান, এত টাকা দিয়ে কোনো ক্লাব লিটনকে নিতে রাজি হয়নি। বিপিএলে বিতর্কিত হলেও এনামুল হক বিজয় দল পেয়েছেন। তিনি খেলবেন ধানমন্ডি ক্লাবে।
এবার লিগে বড় বাজেটের দল গড়েছে মোহামেডান স্পোর্টিং ক্লাব। তারা খেলোয়াড় পেমেন্ট করবে ৭ কোটি টাকা। লিজেন্ডস অব রূপগঞ্জ দ্বিতীয় সেরা। বাকি ১০ দলের বেশির ভাগ কম বাজেটের দল। শাইনপুকুর স্পোর্টিং ক্লাব সস্তার দল। এই ক্লাবের সাধারণ সম্পাদক সাইফুল ইসলাম বলেন, ‘কোনো স্পন্সর নেই। ডোনেশনও পাচ্ছি না। লিগে অংশগ্রহণ করার মতো একটি দল বানিয়েছি। ৫০ হাজার, ১ লাখ টাকা দিয়ে খেলাচ্ছি।’
প্রিমিয়ার লিগের নবাগত গুলশান ক্লাব দেড় কোটি টাকা বাজেট করেছে। গাজী গ্রুপ ক্রিকেটার্সও ছোট বাজেটের দল। এ কারণেই নামমাত্র পেমেন্ট নিয়ে লিগে খেলতে হচ্ছে ক্রিকেটারদের একটা বড় অংশকে।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ড প এল
এছাড়াও পড়ুন:
ইরানের সঙ্গে সংঘাত: ইসরায়েলকে ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা দিতে সৌদি সরকারকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র
গত জুনে সংঘাতের সময় ইরানের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের বিভিন্ন শহরে উপর্যুপরি আঘাত হানছিল। তা প্রতিরোধ করতে গিয়ে দেশটির ভান্ডারে থাকা টার্মিনাল হাই অল্টিটিউড এরিয়া ডিফেন্সে (থাড) টান পড়েছিল। সংঘর্ষ চলাকালে সৌদি আরবের হাতে এই প্রতিরক্ষাব্যবস্থা না থাকলেও যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি অন্য আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তাদের ছিল। তাই সংকটকালে ইসরায়েলকে কিছু আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে সৌদি আরবকে অনুরোধ করেছিল যুক্তরাষ্ট্র। কিন্তু রিয়াদ তাতে রাজি হয়নি।
অনুরোধের বিষয়টি জানেন, এমন দুজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে এ তথ্য নিশ্চিত করেছেন।
দুজনের একজন বলেন, ‘যুদ্ধ চলাকালে আমরা সবাইকে (মধ্যপ্রাচ্যের যেসব দেশে মার্কিন প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল) তাদের সবাইকে (ইসরায়েলকে কিছু ধার দেওয়া) অনুরোধ করেছিলাম। যখন কাজ হলো না, তখন আমরা চুক্তির প্রস্তাব দিয়েছিলাম। শুধু কোনো একটি দেশকে অনুরোধ করা হয়েছিল, তা কিন্তু নয়।’
কিন্তু ইরানের বিরুদ্ধে ইসরায়েলকে সাহায্য করার জন্য সবচেয়ে ভালো অবস্থানে ছিল সৌদি আরব। যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা জোর দিয়ে বলে আসছিলেন, ইরান শুধু ইসরায়েল নয়, সৌদি আরবের জন্যও হুমকি।
তেলসমৃদ্ধ উপসাগরীয় এই দেশের হাতে থাকা যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আগেই নিজেদের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হয়েছিল। কিছুদিন আগেও এসব প্রতিরক্ষাব্যবস্থা লক্ষ্য করে ক্ষেপণাস্ত্র ও ড্রোন দিয়ে হামলা চালিয়েছিল ইয়েমেনের হুতিরা।
ইরান ও ইসরায়েলের মধ্যে যখন সংঘর্ষ চলছিল, ঠিক তখনই নিজেদের কেনা থাড ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থার প্রথম ব্যাটারিটি গ্রহণের জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছিল সৌদি আরব। ব্যাটারিটি নিজেদের সার্বভৌম তহবিল দিয়েই কিনেছিল রিয়াদ। ঘটনা হলো, ইসরায়েল ও ইরানের যুদ্ধবিরতির মাত্র ৯ দিন পর ৩ জুলাই সৌদি সেনাবাহিনী এই ব্যাটারি আনুষ্ঠানিকভাবে চালু করেছে।
ইরান-ইসরায়েলের সংঘাতের একপর্যায়ে মার্কিন কর্মকর্তাদের মধ্যে নিজেদের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়া নিয়ে উদ্বেগ ছিল। কারণ, তখন ইসরায়েলের বিভিন্ন নিশানায় ব্যাপক ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাচ্ছিল ইরান।
ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের সময় মিডল ইস্ট আই-ই প্রথম জানিয়েছিল, যুক্তরাষ্ট্রের ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা এবং ইসরায়েলের নিজস্ব আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অ্যারো দ্রুত শেষ হয়ে আসছে। পরে দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল ও দ্য গার্ডিয়ান নিজেদের প্রতিবেদনে মিডল ইস্ট আইয়ের তথ্য নিশ্চিত করেছিল।
চলতি মাসে এক প্রতিবেদনে গার্ডিয়ান জানিয়েছে, ইরান-ইসরায়েল সংঘাতের পর যুক্তরাষ্ট্রের হাতে মাত্র ২৫ শতাংশ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা অবশিষ্ট ছিল, যা পেন্টাগনের পরিকল্পনামাফিক বিশ্বব্যাপী দেশটির সামরিক অভিযানের জন্য প্রয়োজনীয় মজুতের তুলনায় অনেক কম।
এক মার্কিন কর্মকর্তা ওই সময় যুক্তরাষ্ট্রের হাতে কী পরিমাণ প্যাট্রিয়ট ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ছিল, সেই গোপন সংখ্যা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন।
ইরানের হামলা থেকে ইসরায়েলকে রক্ষা জন্য যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৩ (এসএম-৩) ছুড়েছিল। এসব ক্ষেপণাস্ত্র ছোড়া হয়েছিল দেশটির রণতরি আরলি বার্ক ক্লাসের গাইডেড-মিসাইল ডেস্ট্রয়ার থেকে।
ইসরায়েলের তিন স্তরের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা তো ছিলই, সঙ্গে যুক্ত হয়েছিল যুক্তরাষ্ট্রের অতিরিক্ত শক্তি। তা সত্ত্বেও যুদ্ধবিরতির আগপর্যন্ত ইসরায়েলি শহরগুলোতে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে সক্ষম হয়েছিল ইরান।
যুক্তরাজ্যের দৈনিক দ্য টেলিগ্রাফের প্রতিবেদনে দাবি করা হয়েছে, ইরানের ক্ষেপণাস্ত্র ইসরায়েলের পাঁচটি সামরিক স্থাপনায় সরাসরি আঘাত করতে সক্ষম হয়েছিল।
বিশ্লেষকদের মতে, ইরান যেভাবে বৃষ্টির মতো ক্ষেপণাস্ত্র ছুড়েছে, সেটার বিপরীতে যুক্তরাষ্ট্র ও ইসরায়েলের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা প্রত্যাশার চেয়ে ভালো করেছে। তবে সংঘাত দীর্ঘ সময় ধরে চলায় ইসরায়েল ও যুক্তরাষ্ট্রের আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার দুর্বল দিকটি বুঝে গিয়েছিল ইরান। তাই তারা ইসরায়েলে বেশি পরিমাণে ক্ষেপণাস্ত্র হামলা চালাতে পেরেছিল।
মিচেল ইনস্টিটিউট ফর অ্যারোস্পেস স্টাডিজের নির্বাহী পরিচালক ডগলাস বারকি বলেন, দুর্বলতাটা হলো, যুদ্ধের একটা পর্যায়ে আপনার প্রতিরক্ষাব্যবস্থার মজুত ফুরিয়ে যাওয়ার ঝুঁকি আছে। আমাদের হাতে যে পরিমাণ আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা আছে, সেগুলো শেষ হয়ে যাওয়ার পর নতুন করে তৈরি করার সক্ষমতা সীমিত।
গত শুক্রবার দ্য ওয়াল স্ট্রিট জার্নাল জানিয়েছে, আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থার ঘাটতির এই পর্যায়ে যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কর্মকর্তা সৌদি আরবের কেনা থাড প্রতিরক্ষাব্যবস্থা ইসরায়েলে পাঠানোর বিষয়েও রিয়াদের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেছিলেন।
একজন মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে নিশ্চিত করেছেন, যুক্তরাষ্ট্রের সৌজন্য অনুরোধ ও চুক্তির প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করার পরই সৌদি আরবের সঙ্গে এ বিষয়ে গভীর আলোচনা শুরু হয়েছিল।
উভয় মার্কিন কর্মকর্তা মিডল ইস্ট আইকে আরও বলেছেন, ইসরায়েলকে আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা দিতে যুক্তরাষ্ট্র সংযুক্ত আরব আমিরাতকেও অনুরোধ করেছিল। তবে দেশটির কাছ থেকে ইসরায়েল আদৌ কোনো আকাশ প্রতিরক্ষাব্যবস্থা পেয়েছিল কি না, এই দুই কর্মকর্তার কেউ তা নিশ্চিত করতে রাজি হননি।
যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে আমিরাতই প্রথম দেশ, যারা প্রথম থাড কিনেছিল এবং ব্যবহার করেছিল। দেশটি থাড কিনেছিল ২০১৬ সালে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ইরান যেভাবে ইসরায়েলের উন্নত আকাশ প্রতিরক্ষা ভেদ করে হামলা চালাতে পেরেছে, তা উপসাগরীয় অঞ্চলের তুলনামূলক কম সুরক্ষিত দেশগুলোকে গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে।