গত কয়েক বছর ধরেই বাংলাদেশের নারী ফুটবলে চেনামুখ ছিলেন সাবিনা খাতুন, মারিয়া মান্ডা, মনিকা চাকমা, ঋতুপর্ণা চাকমার মতো ফুটবলাররা। টানা দুটি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ জয়ে প্রধান ভূমিকা ছিল তাদের। কিন্তু কোচ পিটার বাটলারের বিরুদ্ধে অনুশীলন বয়কট করার পর সংযুক্ত আরব আমিরাত সফরে গত বছর নেপালে সাফজয়ী ১৮ ফুটবলার নেই। সিনিয়রদের ছাড়া নতুন এবং অনভিজ্ঞ বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল মঙ্গলবার সকালে পৌঁছেছে দুবাইয়ে। যে দলে আছেন গত সাফের স্কোয়াডে থাকা আট ফুটবলার। কিন্তু মাঠে নামা খেলোয়াড় হলেন অধিনায়ক আফেইদা খন্দকার। 

বাটলার-সিনিয়র খেলোয়াড় দ্বন্দ্বে সুযোগ পাওয়া নতুন খেলোয়াড়দের যেমন নিজেদের মেলে ধরার চ্যালেঞ্জ, তেমনি করে এসিড পরীক্ষা ব্রিটিশ কোচের। সেই পরীক্ষায় আজই নামতে হচ্ছে বাংলাদেশের মেয়েদের। বুধবার দুবাইয়ে শক্তিশালী আরব আমিরাতের বিপক্ষে মাঠে নামার আগে গতকাল সন্ধ্যায় শেষ প্রস্তুতি নিয়েছেন শাহেদা আক্তার রিপা-স্বপ্না রানীরা। ম্যাচটি শুরু হবে বাংলাদেশ সময় রাত সাড়ে ৯টায়। ২ মার্চ একই দলের বিপক্ষে দ্বিতীয় ম্যাচ, তবে সেটা ফিফার উইন্ডো নয়।

সাম্প্রতিক সময়ে নানা ইস্যুতে টালমাটাল থাকা বাংলাদেশ নারী দলের বর্তমান খেলোয়াড়দের কাছে আমিরাত সফরটি শিক্ষণীয়ই বলা চলে। সাবিনা, সানজিদাসহ বিদ্রোহী ১৮ ফুটবলারের সবাই ছুটি নিয়ে বাফুফে ক্যাম্প ছেড়েছেন। এই দলের বেশির ভাগের মূলত বয়সভিত্তিক পর্যায়ে খেলার অভিজ্ঞতা আছে। বিশেষ করে অনূর্ধ্ব-২০ দলে খেলা ফুটবলারের সংখ্যাই বেশি। তাই এই দলকে বলা যেতে পারে অলিম্পিক দল। 

আর আমিরাতের বিপক্ষে দুই ম্যাচের ফলাফলের ওপর নির্ভর করছে বাংলাদেশের নারী ফুটবলের ভবিষ্যৎ। কোচ বাটলার প্রায়ই বলেছেন, নতুন দল গঠনে কাজ করছেন। সে ক্ষেত্রে ব্যর্থ হলে এই অভিজ্ঞতা ভবিষ্যতে কাজে লাগবে বলে যুক্তি তুলে ধরেন বাটলার। অন্যদিকে আন্দোলন করা মেয়েরা বলতে পারবেন তাদের বিকল্প নেই। আর বয়সভিত্তিক প্রতিযোগিতায় খেললেও মেয়েদের জাতীয় দলে এই প্রথম আমিরাতের মুখোমুখি হতে যাচ্ছে বাংলাদেশ। তাই নতুন এই দলটি আমিরাতের বিপক্ষে কেমন খেলে, সেটাই এখন বড় প্রশ্ন।

দুটি ম্যাচের পর সেই প্রশ্নের উত্তর পেয়ে যাবেন ফুটবলপ্রেমীরা। তবে বাস্তবতা বলছে, আমিরাতের মেয়েরা অনেক শক্তিশালী। র‍্যাঙ্কিংয়ের পার্থক্যই ফুটে উঠেছে বাংলাদেশের চেয়ে আমিরাত কতটা এগিয়ে। যেখানে বাংলাদেশের র‍্যাঙ্কিং ১৩২, সেখানে আমিরাতের অবস্থান ১১৬। অর্থাৎ ১৬ ধাপ এগিয়ে স্বাগতিক মেয়েরা। নতুন এই দলের জন্য লড়াইটা যে মোটেও সহজ হবে না, তা অনুমেয়। হয়তো মনিকা, ঋতুপর্ণা, রুপনা চাকমারা থাকলে আশাবাদী লোক খুঁজে পাওয়া যেত। অবশ্য ম্যাচের আগে এই দল নিয়ে এখনই বড় কিছুর স্বপ্ন দেখাচ্ছেন না বাটলার।

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ল দ শ ফ টবল আম র ত র ফ টবল র

এছাড়াও পড়ুন:

রেকর্ড ভাঙা দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টিনার ১৭ বছরের ‘মাস্তান’

বয়স মাত্র ১৭। কিন্তু এরই মধ্যে তাঁর পেছনে ইউরোপের বড় বড় ক্লাবগুলোর লাইন লেগেছে, এই খবর আগেই বেরিয়েছিল। নতুন খবর হচ্ছে, অন্য সব ক্লাবকে পেছনে ফেলে শেষ পর্যন্ত ১৭ বছর বয়সী সেই আর্জেন্টাইনকে কিনে নিয়েছে রিয়াল মাদ্রিদ। ও হ্যাঁ, নামটাই তো বলা হয়নি সেই বিস্ময়বালকের—ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো!

আর্জেন্টিনার ক্লাব রিভার প্লেটের কাছ থেকে তাঁকে কিনে নেওয়ার খবরটা আজ রিয়াল মাদ্রিদই দিয়েছে তাদের ওয়েব সাইটে। মাস্তানতুয়োনোর আগে রিয়াল মাদ্রিদে নাম লেখানো সর্বশেষ আর্জেন্টাইন ছিলেন আনহেল দি মারিয়া (২০১০ সালে)।

কে এই ফ্রাঙ্কো মাস্তানতুয়োনো

মাস্তানতুয়োনোর জন্ম বুয়েনস এইরেসের আজুল শহরে। শৈশবে অবশ্য ফুটবল ও টেনিস দুটোতেই  আগ্রহ ছিল। তবে শেষ পর্যন্ত আর্জেন্টাইনদের সবচেয়ে বড় আবেগ ফুটবলকেই বেছে নেন। ২০১১ সালে রিভার দি আজুলের বয়সভিত্তিক দলের হয়ে মাস্তানতুয়োনোর প্রাতিষ্ঠানিক ফুটবল-যাত্রা শুরু। ২০১৮ সাল পর্যন্ত সেখানেই ছিলেন।

এরপর ক্লাব সিমেন্টোতে এক বছর থেকে তিনি চলে যান আর্জেন্টিনার সেরা ক্লাবগুলোর একটি রিভার প্লেটে। ২০১৯ থেকে ২০২৪ পর্যন্ত ক্লাবটির বয়সভিত্তিক দলে খেলেন। গত বছরই  ক্লাবের মূল দলে অভিষেক হয় তাঁর।

এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রিভার প্লেটের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী গোলদাতা হিসেবে রেকর্ড গড়ে চলে আসেন সবার নজরে। রিভার প্লেটের হয়ে জেতেন আর্জেন্টাইন সুপার কাপ। শুধু তাই নয়, গত ৬ জুন চিলির বিপক্ষে বিশ্বকাপ বাছাইপর্বের ম্যাচে মাত্র ১৭ বছর ৯ মাস ২২ দিন বয়সে আর্জেন্টিনার হয়ে অভিষেক হয় তাঁর। আর্জেন্টিনার হয়ে অফিশিয়াল ম্যাচ খেলা সর্ব কনিষ্ঠ খেলোয়াড়ও এখন মাস্তানতুয়োনোই!

কেমন খেলোয়াড় মাস্তানতুয়োনো

চিলির বিপক্ষে সেদিন ম্যাচের ৮৪ মিনিটে থিয়াগো আলমাদার বদলি হিসেবে মাঠে নামেন মাস্তানতুয়োনো। বাকি সময়ে তিনি বল স্পর্শ করেন ৮বার, ৩টি পাস দিয়েছেন, তিনটি-ই ছিল সফল। তবে আর্জেন্টিনার বাইরে বেশির ভাগ ফুটবলপ্রেমীর কাছে মাস্তানতুয়োনো এখনো অচেনা এক নাম। অনেকেই তাকে  ‘নেক্সট মেসি’ বলছেন, আবার কারও কারও চোখে তাঁর খেলার সঙ্গে কলম্বিয়ার হামেস রদ্রিগেজের মিল আছে।

অনেকে বলছেন, ছেলেটার বাঁ পা খুব ভালো কিন্তু গতি কম। বিশুদ্ধ উইঙ্গার নন, বরং একজন ‘নম্বর ১০’। অ্যাটাকিং মিডফিল্ডে খেলতে স্বাচ্ছন্দ্য বোধ করেন। মাঝমাঠ থেকে খেলা গড়ে তোলেন। বলের ওপর তার নিয়ন্ত্রণ, ছোট জায়গায় ঘুরে যাওয়া আর দূর থেকে শুটিং দক্ষতা তাকে অন্যদের চেয়ে আলাদা করে দেয়।
ট্রান্সফার ফি: আর্জেন্টিনার ইতিহাসে সবচেয়ে দামি

রিয়াল মাদ্রিদ এই চুক্তিতে টাকার অঙ্কটা জানায়নি। কিন্তু রিভার প্লেট ঠিকই জানিয়ে দিয়েছে। তাদের বিবৃতি অনুযায়ী, এই চুক্তিটা ৬ কোটি ৩২ লাখ ইউরোর! এর মধ্যে ৪ কোটি ৫০ লাখ ইউরো সরাসরি রিভার প্লেটের পকেটে যাচ্ছে, যেটা আসলে মাস্তানতুয়োনোর রিলিজ ক্লজই ছিল। বাকি টাকা বিভিন্ন ধরনের কর, ফুটবলার অ্যাসোসিয়েশন, এএফএ ফান্ড এবং অন্যান্য ফি হিসেবে খরচ হচ্ছে।

ট্রান্সফার ফির হিসাবে আর্জেন্টিনা থেকে দলবদল করা ফুটবলারদের মধ্যে মাস্তানতুয়োনোই সবচেয়ে দামি! রিয়াল মাদ্রিদের সঙ্গে ২০৩১ সাল পর্যন্ত ছয় বছরের চুক্তি মাস্তানতুয়োনোর। শোনা যাচ্ছে, প্রতি বছর তার নেট বেতন হবে প্রায় ৩৫ লাখ ইউরো! আর তাকে দলে ধরে রাখতে রিয়াল মাদ্রিদ তার রিলিজ ক্লজ রেখেছে ১০০ কোটি ইউরো!

কবে মাঠে দেখা যাবে তাঁকে

মাস্তানতুয়োনো আগামী আগস্টে ১৮ বছর বয়স হলে তারপর রিয়াল মাদ্রিদে যোগ দেবেন। তবে তার আগে ক্লাব বিশ্বকাপে রিভার প্লেটের জার্সিতেই তাকে দেখা যাবে। কেন এত টাকা দিয়ে রিয়াল মাদ্রিদ তাকে কিনেছে, সেটা বোঝার জন্য নিশ্চয়ই  ক্লাব বিশ্বকাপে তার ওপর চোখ রাখবেন রিয়াল সমর্থকেরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রেকর্ড ভাঙা দামে রিয়াল মাদ্রিদে আর্জেন্টিনার ১৭ বছরের ‘মাস্তান’