২৫ বছর পর রুলের ওপর শুনানি শুরু, পরবর্তী শুনানি ৪ মার্চ
Published: 26th, February 2025 GMT
বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনকে (বিটিভি) স্বায়ত্তশাসিত করার উদ্দেশ্যে ‘জাতীয় সম্প্রচার কমিশন’ গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়েছিল প্রায় ২৮ বছর আগে। সেই সুপারিশ বাস্তবায়ন চেয়ে উচ্চ আদালতে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে প্রায় ২৫ বছর আগে হাইকোর্ট রুল দিয়েছিলেন। এই রুলের ওপর আজ বুধবার শুনানি শুরু হয়েছে।
বিচারপতি মোহাম্মদ উল্লাহ ও বিচারপতি ফয়েজ আহমেদের সমন্বয়ে গঠিত হাইকোর্ট বেঞ্চ এ শুনানি গ্রহণ করেন। আদালত আগামী ৪ মার্চ পর্যন্ত শুনানি মুলতবি করেন।
নথিপত্র থেকে জানা যায়, বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনে সৃজনশীলতা, জবাবদিহি ও শৃঙ্খলা আনাসহ অধিকতর স্বায়ত্তশাসন প্রদানসংক্রান্ত নীতিমালার বিষয়ে সুপারিশ প্রণয়নের জন্য ১৯৯৬ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মোহাম্মদ আসাফ্উদ্দৌলাহ্কে চেয়ারম্যান করে ১৪ সদস্যের কমিশন গঠন করা হয়। ওই বছরের ২৩ অক্টোবর আরও দুজনকে সদস্য হিসেবে কমিশনে অন্তর্ভুক্ত করা হয়। ‘বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন’ নামে ১৬ সদস্যের এই কমিশন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন সরকারের কাছে সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন জমা দেয়।
ওই প্রতিবেদন বাস্তবায়ন বিষয়ে নির্দেশনা চেয়ে মানবাধিকারসংক্রান্ত বেসরকারি সংগঠন অধিকারের পক্ষে ২০০০ সালের ১৭ আগস্ট হাইকোর্টে রিট করা হয়। প্রাথমিক শুনানি নিয়ে একই বছরের ১৯ নভেম্বর হাইকোর্ট রুল দেন। রুলে সুপারিশসংবলিত কমিশনের প্রতিবেদন বাস্তবায়নের বিষয়টি বিবেচনার জন্য কেন নির্দেশ দেওয়া হবে না, তা জানতে চাওয়া হয়। এই রুলের ওপর আজ শুনানি হয়েছে।
আদালতে রিটের পক্ষে জ্যেষ্ঠ আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া শুনানি করেন, সঙ্গে ছিলেন আইনজীবী মো.
ঘটনা ও প্রেক্ষাপট তুলে ধরে রিট আবেদনকারীর আইনজীবী রুহুল আমিন ভূঁইয়া প্রথম আলোকে বলেন, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনে স্বায়ত্তশাসন না থাকায় সরকারে যাঁরা ছিলেন, তাঁদের মন্ত্রী–নেতা ও তাঁদের পরিবারের গুণগানই করতে দেখা যেত, বিশেষত বিটিভিতে। এ অবস্থায় নব্বইয়ে এরশাদবিরোধী আন্দোলন শুরু হয়। তখন পাঁচ দল, আট দল ও সাত দল নামে পরিচিত রাজনৈতিক জোট—সবাই মিলে সিদ্ধান্ত নেয়, বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন দরকার।
রুহুল আমিন ভূঁইয়া আরও বলেন, ‘এর আলোকে ১৯৯৬ সালে তৎকালীন সরকার একটি কমিশন গঠন করে। কমিশন ১৯৯৭ সালের ৩০ জুন তৎকালীন সরকারের কাছে প্রতিবেদন দাখিল করে। প্রতিবেদনে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসনের জন্য জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন এবং নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশ করা হয়। তবে সুপারিশ বাস্তবায়িত না হওয়ায় ২০০০ সালের ১৭ আগস্ট রিটটি করে অধিকার। হাইকোর্ট রুল দেন। তবে ভ্যাগের নির্মম পরিহাসে এত দিনেও রুল শুনানি করতে পারিনি। রুলের ওপর আজ শুনানি শুরু হয়। শুনানির জন্য আগামী মঙ্গলবার পরবর্তী দিন রেখেছেন আদালত।’
জ্যেষ্ঠ এই আইনজীবী বলেন, জনগণ বিটিভি দেখে এবং রেডিও শোনে। জনগণ প্রকৃত ঘটনা জানতে চায়। তবে বেতার ও বিভিটিতে স্বায়ত্তশাসন না থাকায় যখন যে সরকার ছিল, তাদের ইচ্ছার প্রতিফলন হতে দেখা যেত, বিরোধী মতের কোনো কিছুর প্রতিফলন হতো না বললেই চলে। শুনানিতে বেতার ও বিটিভির স্বায়ত্তশাসনের জন্য জাতীয় সম্প্রচার কমিশন গঠন ও নীতিমালা প্রণয়নের সুপারিশসংবলিত প্রতিবেদন বাস্তবায়ন চেয়েছেন বলে জানান তিনি।
২৮ বছর আগের কমিশনের সুপারিশ
২৮ বছর আগে বাংলাদেশ বেতার ও বাংলাদেশ টেলিভিশনের স্বায়ত্তশাসন নীতিমালা প্রণয়ন কমিশন বেশ কিছু সুপারিশ করেছিল। সুপারিশে বলা হয়েছিল, বেতার ও টেলিভিশনের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনায় দিকনির্দেশনা প্রদান এবং দেশের সম্প্রচারমাধ্যমকে যথাযথ ধারায় প্রবাহিত করার লক্ষ্যে একটি স্থায়ী কমিশন গঠন করা প্রয়োজন। এই কমিশনের নাম হবে জাতীয় সম্প্রচার কমিশন।
সুপারিশে আরও বলা হয়, প্রস্তাবিত কমিশন হবে ৯ সদস্যের। কমিশনের চেয়ারম্যান সার্বক্ষণিক ও অন্যান্য সদস্য খণ্ডকালীন সদস্য হিসেবে কমিশনের দায়িত্ব পালন করবেন। কমিশনের চেয়ারম্যান ও সদস্যরা পরপর দুই মেয়াদের জন্য মনোনয়নযোগ্য হবেন না। কমিশন তথ্য মন্ত্রণালয়সংক্রান্ত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির কাছে জবাবদিহি করবে। কমিশনের কাজ হবে বাংলাদেশ বেতার ও টেলিভিশনের কার্যাবলি সুষ্ঠুভাবে পরিচালনার উদ্দেশ্যে জাতীয় সম্প্রচার নীতিমালা প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ল র ওপর প রণয়ন র ন র জন য আইনজ ব সদস য সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
আফ্রিকার দেশ তানজানিয়ায় ব্যাপক সংঘাতপূর্ণ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে নিজেকে জয়ী ঘোষণা করেছেন ক্ষমতাসীন রাষ্ট্রপ্রধান সামিয়া সুলুহু হাসান। তিনি প্রায় ৯৮ শতাংশের কাছাকাছি ভোট পেয়েছেন।
তবে এ নির্বাচন নিয়ে ব্যাপক সমালোচনা রয়েছে। অভিযোগ রয়েছে, প্রেসিডেন্ট সামিয়া তাঁর শীর্ষস্থানীয় প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনী লড়াই থেকে বাইরে রেখেছিলেন। নির্বাচনী পরবর্তী সহিংসতায় ব্যাপক হতাহতের অভিযোগও তুলেছেন বিরোধীরা।
গত বুধবার তানজানিয়ায় ভোট গ্রহণ হয়। স্থানীয় সময় শনিবার দেশটির নির্বাচন কমিশন চূড়ান্ত ফলাফল ঘোষণা করে। ফলাফলে দেখা গেছে, ক্ষমতাসীন প্রেসিডেন্ট সামিয়া ৯৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ ভোট পেয়েছেন।
দেশটির রাষ্ট্রীয় সংবাদমাধ্যম জানিয়েছে, আজ শনিবার সামিয়ার শপথ অনুষ্ঠান হওয়ার কথা রয়েছে।
নির্বাচনের পরবর্তী দিনগুলোয় তানজানিয়ায় ব্যাপক সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ে। বড় বড় শহরগুলোয় রাস্তায় বিক্ষোভ হয়। সামিয়ার প্রতিদ্বন্দ্বীদের নির্বাচনে প্রার্থী হতে না দেওয়া এবং ব্যাপক দমন-পীড়নের অভিযোগে রাজপথে নামে মানুষ।
দেশজুড়ে কঠোর নিরাপত্তা সত্ত্বেও ভোটের দিন ছড়িয়ে পড়ে বিশৃঙ্খলা। বিক্ষোভকারীরা সামিয়ার পোস্টার আর ব্যানার ছিঁড়ে ফেলে, আগুন দেয় সরকারি ভবনে। অন্যদিকে পুলিশ বিক্ষোভকারীদের লক্ষ্য করে টিয়ার গ্যাস ও গুলি চালায় বলে জানান প্রত্যক্ষদর্শীরা।
প্রধান বিরোধী দল চাদেমাকেও নির্বাচনে অংশ নেওয়ার অনুমতি দেওয়া হয়নি। গতকাল শুক্রবার দলটির পক্ষ থেকে বার্তা সংস্থা এএফপিকে জানানো হয়, নির্বাচনী সহিংসতায় প্রায় ৭০০ জন নিহত হয়েছেন। তাদের দাবি, হাসপাতাল আর স্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলো থেকে পাওয়া তথ্য থেকে এ সংখ্যা নির্ধারণ করা হয়েছে।
অন্যদিকে জাতিসংঘের মানবাধিকার দপ্তর বলছে, নির্ভরযোগ্য সূত্র অনুযায়ী তানজানিয়ার অন্তত তিনটি শহরে ঘটা নির্বাচনী সহিংসতায় কমপক্ষে ১০ জন নিহত হয়েছেন।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ সাবিত কম্বো শুক্রবার আল–জাজিরাকে বলেন, কর্তৃপক্ষ যথাযভাবে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে শেষ হয়েছে।
মাহমুদ সাবিত আরও দাবি করেন, বিক্ষোভ দমনে অতিরিক্ত বল প্রয়োগ করা হয়নি। সরকারের কাছে কোনো বিক্ষোভকারীর মৃত্যুর তথ্য নেই। বিরোধীদের অভিযোগের বিষয়ে তিনি বলেন, ‘আমি এ ৭০০ জনের কথা কোথাও দেখিনি।’
তানজানিয়ার প্রেসিডেন্ট জন মাগুফুলির আকস্মিক মৃত্যুর পর ২০২১ সালে তাঁর দল থেকে রাষ্ট্রপ্রধান হিসেবে শপথ নিয়েছিলেন সামিয়া।
আরও পড়ুননামিবিয়ায় প্রথম নারী প্রেসিডেন্ট নির্বাচিত হলেন নান্দি নাদাইতওয়া০৪ ডিসেম্বর ২০২৪