নতুন বাংলাদেশের সিটি করপোরেশনগুলো থেকে আশা ও প্রত্যাশা
Published: 27th, February 2025 GMT
নদী, নগর ব্যবস্থাপনা, প্রাণ-পরিবেশ-প্রকৃতি নিয়ে বিস্তর কাজের অভিজ্ঞতা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনে অ্যাডমিনিস্ট্রেটর হিসেবে যোগ দিয়েছেন মোহাম্মদ এজাজ। অন্য সিটি করপোরেশনগুলোতেও অ্যাডমিনিস্ট্রেটর নিয়োগ দেওয়া হচ্ছে। নতুন অ্যাডমিনিস্ট্রেটদের শুভেচ্ছা জানিয়ে তিনটি প্রস্তাব তাঁদের সামনে তুলে ধরছি।
বাংলাদেশের আর সব প্রতিষ্ঠানের মতো সিটি করপোরেশনগুলো জনগণের সেবার বদলে ক্ষমতাসীনদের জুলুমের অন্যতম হাতিয়ার হিসেবেই ব্যবহৃত হয়েছে বরাবর। জনগণের সম্পদ লুটপাট, দুর্নীতি আর অপচয়ের অন্যতম সেরা হাতিয়ার সিটি করপোরেশনগুলো। মশার ওষুধে ভেজাল, সংরক্ষিত জলাধার বা নিম্নভূমি ভরাট ও দখলে সহায়তা, উন্নয়নের নামে একই রাস্তা প্রতিবছর কাটা, নর্দমা পরিষ্কার করে আবার সেই একই ময়লা দিয়ে নর্দমা ভরাট করার চক্র, ফুটপাতকে ক্ষমতাসীনদের অর্থ উপার্জনের উপায় বানানো, ট্রেড লাইসেন্স, জন্মসনদ, হোল্ডিং ট্যাক্স ব্যবস্থার জবাবদিহিহীনতায় সাধারণের ভোগান্তি আর ঘুষ-দুর্নীতির অফুরন্ত সুযোগ সৃষ্টি ইত্যাদি হাজারো অভিযোগ সিটি করপোরেশনগুলোর বিরুদ্ধে গত ৫৪ বছরের বাংলাদেশে আছে।
নতুন বাংলাদেশেও কি একই অবস্থা চলতে থাকবে? জনগণ নিশ্চয় তা আশা করে না। আবার অভ্যুত্থান–পরবর্তী বাংলাদেশে মানুষের প্রত্যাশা হয়েছে আকাশচুম্বী। সে তুলনায় অন্তর্বর্তী সরকার ও প্রতিষ্ঠানগুলোর সফলতার হার প্রায় চোখে দেখা যায় না। সরকারের অদক্ষতা, অযোগ্যতার সঙ্গে বিভিন্ন বাস্তবিক সংকট, ষড়যন্ত্রও এর পেছনে দায়ী।
২০১৩ থেকে ২০১৮ সাল পর্যন্ত ‘পরিবর্তন চাই’ নামের সামাজিক সংগঠনের সঙ্গে আমার কাজের সুযোগ হয়েছিল। নাগরিক পরিচ্ছন্নতায় সচেতনতা তৈরি, সিটি করপোরেশনসহ সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে পলিসি ও অবকাঠামোগত সহায়তা ইত্যাদি ছিল পরিবর্তন চাইয়ের কাজের পরিধিতে। তখন সামগ্রিক বর্জ্য ব্যবস্থাপনাসহ সিটি করপোরেশনগুলোর কাজের বিভিন্ন দিক নিয়ে ভাবার, বোঝার ও গবেষণার কিছু সুযোগ পেয়েছি। নতুন বাংলাদেশের যে অবারিত সম্ভাবনা এবং বাস্তবিক সংকটগুলো আছে, সেসব বিবেচনায় নিচের তিনটি কাজ যদি আগামী এক বছরে সিটি করপোরেশনগুলো থেকে পাই, তাহলে সন্তুষ্ট হব।
১.বর্জ্যকে সম্পদে রূপান্তর
১.১ ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনসহ দেশের কয়েকটি সিটি করপোরেশন ও পৌরসভায় বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির একাধিক প্রকল্পের কথা বহু বছর ধরে শুনে আসছি। আদতে কোনো নমুনাও দেখিনি। যেমন ঢাকা উত্তরের আমিন বাজারে ডব্লিউটিই পাওয়ার প্ল্যান্ট নর্থ ঢাকা প্রাইভেট লিমিটেড নামের একটি ইনসিনারেশন প্ল্যান্ট প্রকল্প ২০২৪ সালে সম্পন্ন হওয়ার কথা ছিল।
এসব প্রকল্প যদি আদৌ সত্যি হয়, তবে সেগুলো দ্রুততম সময়ে সম্পন্ন করা জরুরি। যদি পুরোটাই ভুয়া হয়, তবে নতুন করে এমন প্রকল্প নেওয়া দরকার।
এসব কারখানায় পুনর্ব্যবহারের অযোগ্য পলিথিনসহ যাবতীয় উচ্চ দাহ্যক্ষমতার বর্জ্য জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা হবে।
১.২ বাংলাদেশে বর্জ্য থেকে বিদ্যুৎ তৈরির সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো সরবরাহ চ্যানেলে পলিথিন বর্জ্য ও কিচেন বর্জ্য একসঙ্গে থাকার ফলে বর্জ্যের দাহ্যক্ষমতা কমে যাওয়া। সেটার সমাধানে সোর্স থেকেই যথাসম্ভব কিচেন বর্জ্যমুক্ত দাহ্য বর্জ্য সংগ্রহ করা যায়।
সারা দেশে এখন যেমন প্লাস্টিক বোতল আর বর্জ্য হিসেবে রাস্তাঘাটে পরে থাকে না, কারণ সেগুলো বিক্রি করা সম্ভব। প্লাস্টিকসহ অন্যান্য দাহ্য বর্জ্যও ঠিক তেমনি কারখানার জ্বালানি হিসেবে ব্যবহার করা সম্ভব হলে সেগুলো আর সর্বশেষ নদী বা সাগরের তলদেশে জমা হয়ে পরিবেশদূষণ করবে না। আবার এসব কারখানায় আধুনিক ফিল্ট্রেশন পদ্ধতি ব্যবহার করায় বায়ুদূষণও হবে না। বরং বাই প্রোডাক্ট হিসেবে আরও কিছু অর্থকরী বিভিন্ন সম্পদ পাওয়া সম্ভব হবে।
বাসাবাড়ি থেকে বর্জ্য সংগ্রহের সময় তিনটি ভাগে সেগ্রিগেশন (পৃথক) করে দেওয়াকে উৎসাহিত করতে হবে। এমনকি সে বর্জ্য কিনে নেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়। তেমন হলে সবাই বর্জ্যগুলো সঠিকভাবে আলাদা করে দেবেন নিশ্চয়।
১.৩ সংগৃহীত কিচেন বর্জ্য জৈব সার তৈরিতে এবং অন্যান্য বর্জ্য উপযোগিতা ভেদে রিসাইকেল করা হবে।
এ ধরনের একটি সমন্বিত বর্জ্য ব্যবস্থাপনা খুবই কম খরচে এবং ছয় মাস সময়ে অন্তত সীমিত পরিসরে শুরু করা নিশ্চয়ই সম্ভব বলে মনে করি।
১.৪ ইনসিনারেশন প্ল্যান্টের মতো সুনিয়ন্ত্রিত পরিবেশ ছাড়া বর্জ্য পোড়ানো অতিদ্রুত বন্ধ করা জরুরি। এটা জনস্বাস্থ্যের জন্য বিরাট হুমকি।
১.৫ এ প্রকল্পের মাধ্যমে বৈশ্বিক কার্বন ব্যাংক থেকে আর্থিক সুবিধা আদায়ের উদ্যোগ নেওয়া।
২. গণশৌচাগারের সংখ্যা বাড়ানোসারা ঢাকায় মাত্র কয়েক শ গণশৌচাগার আছে, যা প্রয়োজনের তুলনায় অপ্রতুল। এর প্রায় সব কটি আবার ব্যয়সাপেক্ষ। ফলে বেশির ভাগ পথজীবীর পক্ষে ব্যবহার সম্ভব হয় না। ফলাফল পথজীবী ও অনেক পথচারী যেখানে–সেখানে নোংরা করতে বাধ্য হন এবং অনেক মহিলা দুরারোগ্য কিডনি রোগে আক্রান্ত হন।
সব স্কুল, মার্কেট, মসজিদ, সরকারি–বেসরকারি ভবনে এক বা একাধিক শৌচাগার থাকে। কিন্তু সেগুলো সাধারণের জন্য উন্মুক্ত থাকে না। আবার উন্মুক্ত শৌচাগারগুলো পরিচ্ছন্ন থাকে না। এগুলোর অন্তত একটি অংশ নগরবাসীর জন্য উন্মুক্ত, ব্যবহার উপযোগী রাখা সেই কর্তৃপক্ষ বা ভবনমালিকের জন্য খুব দুঃসাধ্য কিছু না। এ ধরনের উপযুক্ত ক্ষেত্রে পরিচ্ছন্ন গণশৌচাগার রাখার জন্য সিটি করপোরেশন উৎসাহ প্রদান করবে। প্রয়োজনীয় ক্ষেত্রে বিনা খরচে সাবান, পানি, পরিচ্ছন্নতাকর্মী দিয়ে সহায়তা করবে। এভাবে দুই ঢাকায় অন্তত ১ হাজার গণশৌচাগার ৩ মাসের মধ্যে করা সম্ভব হবে। এর উপকার পাবে সব পথজীবী, পথচারী, বিশেষ করে নারীরা।
৩. হকার নিবন্ধনবাংলাদেশের সামাজিক নিরাপত্তা, বেকারত্ব, বাজার ব্যবস্থাপনা ও দ্রব্যমূল্য ইত্যাদি কারণে হকার একটি বাস্তবতা। সর্বোচ্চভাবে চাইলেও এ দেশে হকার বন্ধ করা সম্ভব নয়। বরং এ চেষ্টার ঝুঁকি অনেক বেশি। এ দেশে হকাররা সরকারি দলের পান্ডাদের কাছে গড়ে দিনে ৬০ থেকে ৫০০ টাকার বিনিময়ে বেসরকারিভাবে নিবন্ধন নেয়। বিনিময়ে অবৈধ বিদ্যুৎ ব্যবহার, যত্রতত্র বসে পথচারীদের অসুবিধার মধ্যে ফেলে।
সিটি করপোরেশনগুলোকে উপযুক্ত মাসিক ফির মাধ্যমে হকারদের নিবন্ধনের আওতায় আনতে হবে।
সিটি করপোরেশন নগর–পরিকল্পনাবিদ ও স্থানীয়দের সঙ্গে আলাপ করে হকার বসার স্থান, হকারের সংখ্যা, সময়, কার্ট বা চৌকির ডিজাইন ও মাপ ইত্যাদি নির্ধারণ করে এ নিবন্ধন দেবে। হকারদের বৈধ বিদ্যুৎ, গণশৌচাগারের সুবিধা, নিরাপত্তা, পরিচ্ছন্নতা ইত্যাদি সুবিধা নিশ্চিত করা হবে। নিবন্ধিত হকাররা নির্ধারিত স্থানে, সময়ে, নির্ধারিত পণ্য বিক্রয় করবেন।
এ প্রকল্প সম্পন্ন হলে এলাকাভিত্তিক হকার ব্যবস্থাপনা সম্ভব। সিটি করপোরেশনের রাজস্ব বেশ বাড়ানো সম্ভব। সর্বোচ্চ ছয় মাসে যেকোনো এলাকায় এ প্রকল্প সম্পন্ন করা সম্ভব।
গণ–অভ্যুত্থানের আগের আর পরের সিটিগুলো ব্যবস্থাপনা, সুবিধার দিক থেকে একই হতে পারে না। জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধি, ব্যয় কমানোর এক আবশ্যকীয়তায় সিটি করপোরেশনগুলো ৫৪ বছর ধরে কেবল ব্যর্থই ছিল। ফলাফল বিশ্বের বসবাসের অনুপযোগী শহরের তালিকায় দেশের শহরগুলোর খুবই দৃষ্টিকটু উপস্থিতি (শীর্ষ ১০টির মধ্যে ৩টি শহর বাংলাদেশের)। এবার অন্তত তিনটি বিষয়ে নাগরিকদের তারা সুবিধা দিক। এই তিনটি কাজ করতে পারলেই বসবাসযোগ্যতায় অনেকাংশে এগিয়ে যাবে দেশের নগরগুলো, এ কথা হলফ করে বলা যায়। বলা বাহুল্য, উপরেল্লিখিত যেকোনো প্রস্তাব নিয়ে আরো বিস্তারিত আলাপসহ যেকোনো সহযোগিতা করতে আমি ও আমার সংগঠন সদা প্রস্তুত।
দিদারুল ভূঁইয়া অর্থ সমন্বয়ক, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলন
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: র ব যবস থ গণশ চ গ র ন বর জ য ব যবহ র প রকল প ন বন ধ র জন য সরক র ক ষমত
এছাড়াও পড়ুন:
বাজারে আগাম সবজি আসতে দেরি, দাম চড়া
শীতের মৌসুম শুরু হলেও রাজধানীর বাজারে শীতের সবজির সরবরাহ এবার কম। এ কারণে দামও চড়া। বাজারে অধিকাংশ সবজির কেজি ৮০ টাকার বেশি। কিছু সবজির দাম ১০০ টাকার ওপরে।
বছরের এপ্রিল-অক্টোবর সময়টা মূলত গ্রীষ্ম ও বর্ষা মৌসুম। এ সময়ে প্রাণিজ আমিষ, অর্থাৎ মাছ, মাংস ও ডিমের দাম তুলনামূলকভাবে বেড়ে যায়। তাতে সবজির ওপর চাপ বাড়ে। ফলে সবজির সরবরাহ মোটামুটি থাকলেও দাম থাকে চড়া। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করলে দামও কমতে শুরু করে। শীতের আগাম সবজি বাজারে আসতে শুরু করে সেপ্টেম্বর–অক্টোবরে।
বিক্রেতারা বলছেন, এ বছর শীতের আগাম সবজি আসতে তুলনামূলক বেশি সময় লাগছে। এ কারণে দীর্ঘ সময় ধরে বাজারে চড়া দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। তবে গত কয়েক দিনে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে ফুলকপি, শিমসহ শীতের আগাম কিছু সবজি আসতে শুরু করেছে। এতে এসব সবজির দামও কেজিতে ১০ থেকে ২০ টাকা কমেছে। বিক্রেতারা বলছেন, অক্টোবরের শুরুতেই আগাম শীতের সবজি বাজারে আসার কথা। কিন্তু এবার বেশ দেরিতেই এসব সবজি বাজারে এসেছে।
দেশে সবজির অন্যতম উৎপাদনস্থল যশোর। যশোরের সদর উপজেলার নোঙরপুর গ্রামের কৃষক বদরুল আলম এ বছর ৪০ শতক জমিতে আগাম মুলা চাষ করেছেন। ইতিমধ্যে ২৫ শতক জমির মুলা তিনি বিক্রি করেছেন। তিনি জানান, আবহাওয়াগত কারণে এবার আগাম সবজি একটু দেরিতে চাষ হয়েছে। এ জন্য খেত থেকে সবজি তুলতেও দেরি হয়।
এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে আগাম শীতকালীন সবজি অক্টোবরের শেষে বাজারে আসা শুরু হয়েছে।আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ, অধ্যাপক, শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়বাংলাদেশ কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতির সভাপতি ইমরান মাস্টার বলেন, এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। এতে বাজারেও প্রভাব পড়েছে।
কী বলছেন বিশেষজ্ঞরাকৃষিবিশেষজ্ঞরা বলছেন, চলতি বছর আগাম সবজি চাষে দেরি হওয়ার পেছনে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরের টানা বৃষ্টির একটি ভূমিকা ছিল। মূলত জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে এ সময়ে হঠাৎ টানা বৃষ্টি হয়। সামনের বছরগুলোতেও এমন পরিস্থিতি আসতে পারে বলে সতর্ক করেছেন তাঁরা।
এ বছর সেপ্টেম্বর-অক্টোবর মাসে দেশের বিভিন্ন স্থানে ভারী বৃষ্টি হয়েছে। এ কারণে অনেক কৃষক ওই সময়ে আগাম সবজি চাষ করতে পারেননি। চাষাবাদ শুরু করতে দেরি হওয়ায় সবজি পেতেও দেরি হয়েছে। ইমরান মাস্টার, সভাপতি, কাঁচামাল আড়ত মালিক সমিতিশেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, দেশে ফসল উৎপাদন মূলত প্রকৃতিনির্ভর চাষাবাদ পদ্ধতিতে এবং খোলা মাঠে হয়। এ ক্ষেত্রে বৃষ্টি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। তবে গত কয়েক বছরে দেশে বৃষ্টির ধরন পরিবর্তন হয়ে গেছে। কখনো খুব বেশি বৃষ্টি হয়, কখনো কম। এ বছর একটা লম্বা সময় ধরে বিভিন্ন অঞ্চলে টানা বৃষ্টি হয়েছে। ফলে বৃষ্টির সময়ে কেউ আগাম সবজি চাষের ঝুঁকি নেননি। এ কারণে অন্যান্য সময় যেখানে সেপ্টেম্বর-অক্টোবরে আগাম শীতকালীন সবজি বাজারে চলে আসে, সেখানে এবার তা অক্টোবরের শেষে আসা শুরু হয়েছে। এটিই বাজারে সবজির দাম না কমার অন্যতম কারণ।
ভিন্ন দাবি কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরেরকৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছর অতিবৃষ্টির কারণে দুই দফায় সবজির ক্ষতি হয়। এর মধ্যে গত আগস্টে প্রায় ১৮ দিনের বৃষ্টিতে ৩৫১ হেক্টর জমির এবং সেপ্টেম্বরে ১৫ দিনে ১২৪ হেক্টর জমির ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়। সংস্থাটির কর্মকর্তাদের দাবি, চলতি বছর শীতের আগাম সবজি আসতে উল্লেখ করার মতো দেরি হয়নি। স্থানভেদে কোথাও কয়েক দিন দেরিতে চাষ শুরু হয়েছে। তবে সেটি সার্বিক চিত্র নয়।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের সরেজমিন উইংয়ের পরিচালক মো. ওবায়দুর রহমান মণ্ডল বলেন, ‘আগাম সবজির সরবরাহ কম, এটি ব্যবসায়ীদের সাধারণ কথা। আমাদের তথ্য বলছে, শীতের আগাম সবজি ইতিমধ্যে বাজারে চলে এসেছে। দেশের সব বাজারেই এখন শীতের আগাম সবজি পাওয়া যায়। দামও সহনীয় হয়ে এসেছে। আগাম সবজি যদি কম থাকত, তাহলে দাম আরও চড়া থাকার কথা ছিল।’
বৃষ্টির কারণে সবজি আসতে দেরি হয়েছে কি না—এ প্রসঙ্গে ওবায়দুর রহমান বলেন,সারা দেশে একসঙ্গে টানা বৃষ্টি হয়নি। শুধু কুড়িগ্রাম, গাইবান্ধাসহ রংপুরের কয়েকটি জেলা এবং চট্টগ্রামের কিছু জেলার নিচু এলাকায় অতিবৃষ্টির প্রভাব পড়েছিল। এ ছাড়া বগুড়া, যশোর অঞ্চলে বৃষ্টির তেমন প্রভাব পড়েনি।
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আরও জানিয়েছে, চলতি বছর শীতকালে (রবি মৌসুম) প্রায় ৬ লাখ ৩৫ হাজার হেক্টর জমিতে সবজি আবাদের লক্ষ্যমাত্রা অনুমান করেছে তারা। এর মধ্যে ১ লাখ ২৯ হাজার হেক্টরের বেশি জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে। যেসব জমিতে আগাম সবজি চাষ হয়েছে, সেখানে আবার সবজি চাষ হবে। গত বছর শীত মৌসুমে সব মিলিয়ে ৬ লাখ ৪২ হাজার হেক্টরে সবজি চাষ হয়েছিল।
করণীয় কীবিশেষজ্ঞরা বলছেন, জলবায়ু পরিবর্তন, বৃষ্টির অস্বাভাবিকতা ও লবণাক্ততা বৃদ্ধির ফলে কৃষিতে নতুন চ্যালেঞ্জ তৈরি হচ্ছে। এ সত্যকে মেনে নিতে হবে। এ পরিস্থিতিতে আধুনিক প্রযুক্তির চাষাবাদ বাড়াতে হবে। বিশেষ করে এক ফসলি জমিকে দুই বা তিন ফসলি করা এবং নতুন প্রযুক্তি ব্যবহার করে উৎপাদনশীলতা বাড়ানো জরুরি।
শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক আবু নোমান ফারুক আহম্মেদ জানান, জনসংখ্যা বৃদ্ধির সঙ্গে খাদ্যের চাহিদা মেটাতে কৃষিতে প্রযুক্তিনির্ভর অভিযোজনের বিকল্প নেই। কম খরচে পলিথিনের শেড তৈরি করে সবজি চাষ করা সম্ভব, যা বৃষ্টি বা তাপমাত্রার পরিবর্তনে তেমন প্রভাবিত হয় না। পাতাজাতীয় শাকসবজি, মরিচ, টমেটো, বেগুন ও শসার মতো ফসল এতে সহজে উৎপাদন করা যায়। উৎপাদন স্থিতিশীল থাকলে সবজির সরবরাহ ঠিক থাকবে, কৃষকেরাও ভালো দাম পাবেন।