“সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আপনাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা”
Published: 27th, February 2025 GMT
প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র পরিচালক (প্রশিক্ষণ ও অধ্যয়ন) মিজ পারভীন সুলতানা রাব্বী বলেছেন, সাংবাদিকরা কারো বন্ধু নয়, শুধুমাত্র সাংবাদিকরাই সাংবাদিকের বন্ধু। কেননা সাংবাদিকরা যখন কারো বিরুদ্ধে নিউজ করে, তখন থেকেই ঐ ব্যক্তি তার শত্রু হয়ে যায়।
সে আপনার যতোই আপন কিংবা কাছের লোক হোক না কেন? কিন্তু বর্তমানে সাংবাদিকরা সাংবাদিকের বন্ধু হতে পারেনা বলে আজ সাংবাদিকদের করুন দশা। সাংবাদিকরা ঐক্যবদ্ধ থাকলে কেউ আপনাদের উপর প্রভাব বিস্তার করতে পারবেনা।
গতকাল বৃহস্পতিবার (২৭ ফেব্রুয়ারি) নারায়ণগঞ্জের বিভিন্ন উপজেলার ৩৫ জন সাংবাদিককে নিয়ে তিন দিনব্যাপী সংবাদ প্রতিবেদন বিষয়ক প্রশিক্ষণ কর্মশালার সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে একথা বলেন তিনি। নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবে এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করে পিআইবি।
পারভীন সুলতানা রাব্বী বলেন, সাংবাদিকদের প্রশ্ন করতে জানতে হবে, কোথায়, কখন, কি প্রশ্ন করতে হবে তা জানতে হবে। বিগত ১৬ বছর সাংবাদিকরা সঠিক সাংবাদিকতার পরিবর্তে তোষামোদির সাংবাদিকতা করেছে। এর জন্যই স্বৈরশাসন আমাদের উপর ভর করে বসেছিলো। তাই সাংবাদিকদের ঐক্যবদ্ধ হওয়ার পাশাপাশি মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, যাদের আগ্রহ থাকে এবং মনোযোগী হয় সাংবাদিকতায় তারাই এগিয়ে যায়।
এছাড়া, প্রেসক্লাব চাইলে ভবিষ্যতে শুধুমাত্র মোবাইল সাংবাদিকতার বিষয়ে আলাদা প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
সমাপনী অনুষ্ঠানের সভাপতিত্ব করেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সভাপতি আরিফ আলম দিপু। নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকদের নিয়ে যুগোপযোগী এ প্রশিক্ষণের আয়োজন করায় পিআইবি’র প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করেন তিনি। এছাড়া, আগামী ৬ মাসের মধ্যে আবারও প্রশিক্ষণের আয়োজন করার অনুরোধ জানান তিনি।
সমাপনী অনুষ্ঠানে আরও উপস্থিত ছিলেন নারায়ণগঞ্জ প্রেসক্লাবের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আবু সাউদ মাসুদ, পিআইবি'র সহকারী প্রশিক্ষক জিলহাজ উদ্দিন নিপুনসহ পিআইবির কর্মকর্তা-কর্মচারী ও নারায়ণগঞ্জের সাংবাদিকবৃন্দ।
পরে প্রশিক্ষণ কর্মশালায় অংশ নেওয়া সাংবাদিকদের হাতে সনদ তুলে দেন প্রধান অতিথি প্রেস ইন্সটিটিউট বাংলাদেশ (পিআইবি)’র পরিচালক মিজ পারভীন সুলতানা রাব্বী।
এর আগে, তিনদিন ব্যাপী প্রশিক্ষণে রিসোর্সপার্সন হিসেবে উপস্থিত থেকে প্রশিক্ষণ দেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণযোগাযোগ ও সাংবাদিকতা বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ড.
উৎস: Narayanganj Times
কীওয়ার্ড: ন র য়ণগঞ জ ন র য়ণগঞ জ ব দ কত ব দ কর প আইব
এছাড়াও পড়ুন:
কারখানার বর্জ্যে মরছে নদ
ডাইং কারখানার বর্জ্যে মরছে ব্রহ্মপুত্র নদ। প্রকাশ্যে এ দূষণ ঘটলেও দেখার কেউ নেই। প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে ক্ষোভ ভুক্তভোগীদের। পরিবেশ কর্মকর্তা চাইছেন সুনির্দিষ্ট প্রমাণসহ অভিযোগ।
নারায়ণগঞ্জের আড়াইহাজার ও নরসিংদী সদর উপজেলায় অন্তত ৬০টি ডাইং কারখানা ব্রহ্মপুত্র দূষণের সঙ্গে জড়িত বলে জানা গেছে। নদের তীরে অবস্থিত এসব কারখানায় এফ্লুয়েন্ট ট্রিটমেন্ট প্ল্যান্ট (ইটিপি) থাকলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই প্রতিদিন নদে ফেলছে। এতে পরিবেশ দূষণের পাশাপাশি বিভিন্ন রোগে আক্রান্ত হচ্ছেন এ নদের সঙ্গে সম্পর্কিত মানুষজন।
অভিযোগ রয়েছে, নদের তীরে অবস্থিত কারখানাগুলো ইটিপি রাখলেও তারা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ফেলছে। অনেক কারখানায় ইটিপি থাকলেও খরচ কমাতে বেশির ভাগ সময় তা বন্ধ রাখা হয়। এ ছাড়া বেশকিছু কারখানার ইটিপি প্রয়োজনের তুলনায় ছোট হওয়ায় সঠিকভাবে বর্জ্য পরিশোধন করা সম্ভব হয় না।
পরিবেশ অধিদপ্তরের হিসাব অনুযায়ী, নরসিংদী সদর উপজেলায় রয়েছে ছোট-বড় ৫০টি ডাইং কারখানা। আড়াইহাজারে স্পিনিং মিলসহ ডাইং কারখানা রয়েছে অন্তত ১০টি। নরসিংদীর ডাইং কারখানাগুলোর মধ্যে পাঁচদোনা এলাকার আবদুল্লাহ ডাইং ইন্ডাস্ট্রিজ, বাঘহাটা এলাকার ফাইভ অ্যান্ড ফাইভ ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং, সাজেদা ডাইং, আনোয়ার ডাইং, শতরূপা ডাইং, রুকু ডাইং, মেসার্স একতা ডাইং, কুড়েরপাড় এলাকার ব্রাদার্স টেক্সটাইল, ইভা ডাইং, ভগীরথপুর এলাকার এম এমকে ডাইং, নীলা ডাইং, এইচ এম ডাইং, মা সখিনা টেক্সটাইল, মুক্তাদিন ডাইং, পাঁচদোনা এলাকার তানিয়া ডাইং, সান ফ্লাওয়ার টেক্সটাইল প্রভৃতি।
আড়াইহাজারের কয়েকটি কারখানা হলো– ভাই ভাই স্পিনিং মিলস, ছাবেদ আলী স্পিনিং মিল, রফিকুল ডাইং, দিপু ডাইং ও হাজী হাবিবুর ডাইং।
আড়াইহাজার পৌরসভার চামুরকান্দি এলাকার বাসিন্দা মিয়াজউদ্দিন মিয়া বলেন, দখল-দূষণে অস্তিত্ব সংকটে পড়েছে নদটি। দেশীয় জাতের মাছের অভয়াশ্রম এ নদ থেকে মাছ হারিয়ে গেছে।
আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার ইসমাইল হোসেন জানান, রফিকুল ডাইংয়ের বর্জ্য সরাসরি নদীতে ফেলা হচ্ছে। এতে পানির রং কালচে হয়ে গেছে। একই অবস্থা অন্য কারখানাগুলোর। বর্জ্য নদে ফেলার বিষয়ে স্থানীয়রা কথা বলতে গিয়ে উল্টো কারখানা কর্তৃপক্ষের হুমকির সম্মুখীন হয়েছেন। এ ব্যাপারে প্রশাসন কোনো ব্যবস্থা না নেওয়ায় ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
রফিকুল ডাইংয়ের মালিক রফিকুল ইসলাম জানান, তাদের ইটিপি নেই। ডাইংয়ের পানি তারা নির্দিষ্ট পানির ট্যাংকে রাখেন, সরাসরি নদে ফেলেন না। ট্যাংকে জমানো পানি কোথায় ফেলেন জানতে চাইলে তিনি কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী সদর উপজেলার শিলমান্দী ইউনিয়নের গনেরগাঁও গ্রামের বাসিন্দা মাহবুব হাসান শুভর ভাষ্য, কুড়েরপাড় এলাকার ডাইং কারখানাগুলোর রং মেশানো বর্জ্য পরিশোধন না করে ব্রহ্মপুত্রে ফেলায় নদটি এখন মৃতপ্রায়। দূষণের কারণে দুর্গন্ধে এর পারে দাঁড়ানো যায় না। স্থানীয়রা অনেকবার প্রতিবাদ করেও প্রতিকার পাননি বলে জানান তিনি।
গত ১৫ এপ্রিল শিলমান্দী ইউনিয়নের কুড়েরপাড় এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, ইভা ডাইং অ্যান্ড প্রিন্টিং লিমিটেড নামে একটি কারখানা থেকে বর্জ্য এসে পড়ছে নদের পানিতে। ভিডিও করতে দেখে কারখানা কর্তৃপক্ষ বর্জ্য ফেলা বন্ধ করে দেয়।
ইভা ডাইংয়ের ইটিপি ইনচার্জ রেজাউল করিম জানান, বিভিন্ন মহলের সঙ্গে সম্পর্ক রেখে তারা প্রতিষ্ঠানটি চালাচ্ছেন। অনেক কারখানা সরাসরি নদে বর্জ্য ফেললেও তারা নদ দূষণ করেন না।
একই এলাকা ঘুরে দেখা গেছে, ফাতেমা ডাইংসহ ব্রহ্মপুত্রের তীরে গড়ে ওঠা কারখানাগুলো থেকেও নদে বর্জ্য ফেলা হচ্ছে। কিন্তু এ নিয়ে এসব কারখানার কেউ কথা বলতে রাজি হননি।
নরসিংদী পরিবেশ অধিদপ্তরের উপসহকারী পরিচালক কামরুজ্জামান জানান, নদে বর্জ্য ফেলার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন নারায়ণগঞ্জ শাখার সাবেক সাধারণ সম্পাদক তারেক বাবু জানান, ব্রহ্মপুত্রে নদে সরাসরি বর্জ্য ফেলছে ডাইংসহ যেসব কারখানা সেসবের অধিকাংশই নরসিংদী জেলার অন্তর্গত। তাই নারায়ণগঞ্জ ও নরসিংদী প্রশাসনের যৌথ উদ্যোগে নদ দূষণমুক্ত করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়া প্রয়োজন।
আড়াইহাজারের ইউএনও সাজ্জাত হোসেন বলেন, কখনও কখনও কিছু কারখানা বর্জ্য পরিশোধন না করেই নদে ছেড়ে দেয়। কোন কারখানা নদ দূষণ করছে, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিবেশবাদী সংগঠন তা জানালে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।