শেষ হচ্ছে পিকেকে-তুরস্কের ৪০ বছরের সংঘাত, যুদ্ধবিরতি ঘোষণা
Published: 1st, March 2025 GMT
তুরস্কের নিষিদ্ধ ঘোষিত কুর্দি গোষ্ঠী পিকেকে (কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টি) দেশটির সরকারের সঙ্গে যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করেছে। গোষ্ঠীটির কারাবন্দী নেতা আবদুল্লাহ ওচালান অস্ত্র সমর্পণ করে দল বিলুপ্ত করার আহ্বান জানানোর পর এই ঘোষণা দেওয়া হয়। ফলে তুরস্ক রাষ্ট্রের সঙ্গে ৪০ বছর ধরে চলা সংঘাতে অবসান ঘটতে চলছে।
শনিবার (১ মার্চ) এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
শনিবার এক বিবৃতিতে পিকেকে বলেছে, তারা আশা করছে সরকার ওচালানকে মুক্তি দেবে, যাতে তিনি এই অস্ত্র সমর্পণ প্রক্রিয়ার নেতৃত্ব দিতে পারেন। ওচালান ১৯৯৯ সাল থেকে নির্জন কারাগারে বন্দি আছেন। তবে বন্দি অবস্থাতেও তিনি পিকেকের ওপর ব্যাপক প্রভাব বজায় রেখেছেন।
আরো পড়ুন:
রাশিয়া-ইউক্রেন-যুক্তরাষ্ট্রের শান্তি আলোচনার জন্য তুরস্ক আদর্শ স্থান: এরদোগান
তুরস্কে অস্ত্রের কারখানায় বিস্ফোরণ, নিহত ১৩
বৃহস্পতিবার কারাগার থেকেই ওচালান তার সংগঠনকে অস্ত্র ত্যাগ, দল ভেঙে দেওয়া এবং তুরস্কের বিরুদ্ধে দীর্ঘদিনের লড়াই বন্ধ করার ঐতিহাসিক আহ্বান জানান।
তুরস্কের অতি-জাতীয়তাবাদী এমএইচপি দলের নেতা এবং তুর্কি সরকারের মিত্র ডেভলেট বাহচেলি সংঘাতের অবসান ঘটানোর জন্য একটি উদ্যোগ শুরু করার কয়েক মাস পর এই ঘোষণা আসে।
বৃহস্পতিবার সকালে তুরস্কের কুর্দিপন্থি ডিইএম পার্টির এমপিরা ওচালানের সঙ্গে কারাগারে সাক্ষাৎ করতে যান। সেখান থেকেই পিকেকে সংগঠনটিকে চিরতরে বিলুপ্ত করার আহবান জানিয়ে তিনি বলেন, “আপনারা (দলের) সম্মেলন করুন এবং সিদ্ধান্ত নিন। সংগঠনের সবাইকে অবশ্যই অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। পিকেকেকে অবশ্যই নিজেদের বিলুপ্ত করতে হবে।”
তিনি আরো বলেন, “তার আন্দোলন মূলত ‘গণতান্ত্রিক রাজনীতির পথ বন্ধ করে দেওয়ার কারণে’ গঠিত হয়েছিল। তবে, তুরস্কের প্রেসিডেন্ট রাষ্ট্রপতি রিসেপ তাইয়িপ এরদোগান এবং অন্যান্য রাজনৈতিক দলগুলোর ইতিবাচক সংকেতের সমর্থনে পিকেকে-র অস্ত্র সমর্পণের জন্য সঠিক পরিবেশ তৈরি করেছেন।”
কুর্দি নেতারা এই উন্নয়নকে স্বাগত জানিয়েছেন। স্থানীয় প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, দক্ষিণ-পূর্বে কুর্দি অধ্যুষিত দিয়ারবাকির এবং ভ্যান শহরে হাজার হাজার মানুষ বড় পর্দায় ওচালানের বিবৃতিটি দেখার জন্য জড়ো হয়েছিলেন।
শনিবার এক বিবৃতিতে পিকেকে-এর নির্বাহী কমিটি বলেছে, “শান্তি ও গণতান্ত্রিক সমাজের জন্য ও আমাদের নেতার আহ্বান বাস্তবায়নের পথ প্রশস্ত করার জন্য আমরা আজ থেকে কার্যকর যুদ্ধবিরতি ঘোষণা করছি।”
তুরস্কের ৮৫ মিলিয়ন জনসংখ্যার প্রায় ২০ শতাংশ কুর্দিদের জন্য একটি স্বদেশ প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে এই গোষ্ঠীটি ১৯৮৪ সাল থেকে বিদ্রোহ চালিয়ে আসছে। এই লড়াইয়ে এখন পর্যন্ত ৪০ হাজার এরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। তুরস্ক, ইইউ, যুক্তরাজ্য এবং মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে একটি সন্ত্রাসী গোষ্ঠী হিসেবে নিষিদ্ধ করেছে কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টিকে।
ঢাকা/ফিরোজ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ত রস ক র জন য
এছাড়াও পড়ুন:
অনিয়ম-দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার
অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে যশোর আইনজীবী সমিতির চার সদস্যকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। গতকাল বুধবার বিকেলে সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় ওই চারজনের কারণ দর্শানো নোটিশের জবাবের শুনানি শেষে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়।
বহিষ্কৃত সদস্যরা হলেন আইনজীবী আবদুর রাজ্জাক, সৈয়দ কবির হোসেন, রফিকুল ইসলাম রফিক ও তরফদার আবদুল মুকিত। তাঁদের বহিষ্কারাদেশ প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আদালতের সব কার্যক্রম থেকে বিরত থাকতে বলা হয়েছে।
এ সমিতির সাধারণ সম্পাদক এম এ গফুর বলেন, ‘অভিযোগ প্রমাণিত হওয়াতে তাঁদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। কেউ সমিতির নিয়মনীতির ঊর্ধ্বে নন। বৃহস্পতিবার ওই চার সদস্যকে বহিষ্কারের বিষয়টি নোটিশ দিয়ে জানানো হবে।’
সমিতি সূত্রে জানা গেছে, যশোর জেলা আইনজীবী সমিতির সদস্য সৈয়দ কবির হোসেনের (জনি) কাছে ৩৫ লাখ টাকায় শহরের বারান্দীপাড়া কদমতলা এলাকায় জমি বিক্রি করেন ইমরান হাসান। জমি রেজিস্ট্রির আগে সব টাকা পরিশোধের কথা থাকলেও সৈয়দ কবির হোসেন ১০ লাখ টাকা দিয়েছিলেন। বাকি ২৫ লাখ টাকা না দিয়ে টালবাহানা করতে থাকেন। পরে তিনি আরও ১৭ লাখ টাকা দেন। বাকি ৮ লাখ টাকা চাইলে হুমকি দিতে থাকেন কবির হোসেন। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে ইমরান হাসান আইনজীবী সমিতি বরাবর লিখিত অভিযোগ দেন।
সমিতির নির্বাহী কমিটির সভায় তদন্ত প্রতিবেদনের ওপর শুনানি শেষে কবির হোসেনকে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেওয়া হয়েছিল। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় গঠনতন্ত্র অনুযায়ী কবির হোসেনকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়।
এ বিষয়ে আইনজীবী কবির হোসেন বলেন, ‘বহিষ্কারের বিষয়টি আমি শুনেছি। তবে যে বিষয়ে আমাকে অভিযুক্ত করা হয়েছে, সেই বিষয়ে অভিযুক্ত আমি নই। তারপরও আইনজীবী সমিতি আমার অভিভাবক; তারা যে ব্যবস্থা নিয়েছে, তার বিষয়ে আমার কিছু বলার নেই।’
অন্যদিকে অভয়নগরের নওয়াপাড়ার জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশন পাওনা টাকা আদায়ে আবদুর রাজ্জাককে মামলার আইনজীবী নিয়োগ দিয়েছিল। ২০১৯ থেকে ২০২২ সাল পর্যন্ত আবদুর রাজ্জাক আটটি চেকের মামলা পরিচালনা করেন। এসব মামলার রায় ও আপিল বাদীর অনুকূলে যাওয়ার পর আটটি চেকের ৪১ লাখ ১২ হাজার ৫০০ টাকা ব্যাংক থেকে উত্তোলন করে নেন আবদুর রাজ্জাক। এ টাকা জয়েন্ট ট্রেডিং কর্তৃপক্ষকে না দিয়ে তিনি ঘোরাতে থাকেন। চলতি বছরের ৪ জুন তিনি ১৫ লাখ টাকার একটি চেক দেন। চেকটি ব্যাংকে জমা দিলে পর্যাপ্ত টাকা না থাকায় নগদায়ন করা যায়নি। টাকা আদায়ে ব্যর্থ হয়ে জয়েন্ট ট্রেডিং করপোরেশনের ব্যবস্থাপনা পরিচালক আবদুল ওহাব গত ২৮ জুলাই আবদুর রাজ্জাকের বিরুদ্ধে যশোর আইনজীবী সমিতি বরাবর অভিযোগ করেন।
এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে আবদুর রাজ্জাককে কারণ দর্শানোর নোটিশ দেয় যশোর আইনজীবী সমিতি। নোটিশের জবাব সন্তোষজনক না হওয়ায় আবদুর রাজ্জাককে গঠনতন্ত্র অনুযায়ী সাময়িক বহিষ্কার করা হয়। এ ছাড়া রফিকুল ইসলাম রফিক তাঁর সহকর্মীর সঙ্গে অসদাচরণ ও মামলা করতে টাকা ও কাগজপত্র নিয়ে মামলা না করায় সমিতির সুনাম ক্ষুণ্ন করায় সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে। আইনজীবী তরফদার আবদুল মুকিতের বিরুদ্ধেও নানা ধরনের অভিযোগ রয়েছে। এ কারণে তাঁকে সাময়িক বহিষ্কার করা হয়েছে।