তুরস্কের সঙ্গে কুর্দিদের সংঘাত অবশেষে শেষ হচ্ছে?
Published: 2nd, March 2025 GMT
গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান মিত্র তুরস্কের ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) নেতা ডেভলেট বাহচেলির একটি বিস্ময়কর পদক্ষেপ তুরস্কের জন্য একটি পরিবর্তনমুখী যুগের সূচনাকে চিহ্নিত করছে।
কুর্দিপন্থী পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (ডিইএম) পার্টির নেতাদের সঙ্গে তিনি করমর্দন করেন। তারপর যুগান্তকারী একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নেতা আবদুল্লাহ ওকালানকে পার্লামেন্টে আসার ও কথা বলার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, তুর্কি ও কুর্দিদের অবশ্যই একে অন্যকে ভালোবাসা উচিত। তাঁর এই বিবৃতি কুর্দি প্রশ্নে তুরস্কের অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দেয়।
বাহচেলির বক্তব্যে সন্ত্রাসবাদ অবসানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিবৃতিতে রাজনৈতিক উপায়ে কুর্দি প্রশ্ন সমাধানের দরজাও খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি এখন তুরস্কের প্রভাবশালী রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত হচ্ছে এবং নতুন একটি শান্তিপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।
সম্প্রতি তুর্কি সরকার ওকলান ও ডিইএমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় শান্তিপ্রক্রিয়াটি গতি পেয়েছে।
ওকলান শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ফলে এখন সবার চোখ ওকলানের দিকে। কেননা, সবাই আশা করছেন, তিনি খুব শিগগির পিকেকে অস্ত্র সংবরণের আহ্বান জানাবেন।
চলমান যে শান্তিপ্রক্রিয়া, সেটা কুর্দি সংঘাতের সামাজিক ও রাজনৈতিক মাত্রিকতার সমন্বিত সমাধান দেবে না। এটা একটা নিরস্ত্রীকরণ উদ্যোগ, যেটা শেষ পর্যন্ত সহিংসতার অবসান ঘটাবে। এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরেই এ দুটিকে পৃথক ইস্যু বলে আসছেন।
কিন্তু তুরস্ক পিকেকে–কে নিরস্ত্রীকরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটা সফল হলে বৃহত্তর অর্থে গণতন্ত্রায়ণের পথ খুলে দেবে।
পিকেকে অস্ত্র ত্যাগ করলে রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার ও তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনার ন্যায্যতা দুর্বল হয়ে যাবে। সেটা উন্মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্ক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য জায়গা তৈরি করবে।
তুরস্কের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুর্দি সমস্যা একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে রয়েছে। বর্তমান শান্তি উদ্যোগটিকে সমন্বিত সমাধান বলা যাবে না। কিন্তু কয়েক দশকের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার এবং আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক তুরস্ক গঠনের এটি একটি বড় সুযোগ।ওকলানের সঙ্গে কারাগারে থাকা কুর্দি রাজনীতিবিদ সেলাহাতিন দেমিরতাস ও ডিইএম পার্টি এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু সন্দেহটা এখনো থেকেই যাচ্ছে।
অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি সত্যিকারের শান্তির উদ্যোগ, নাকি নিছক রাজনৈতিক চালবাজি। তুরস্কের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল বছরের পর বছর ধরে সংকটের মধ্যে আছে এবং দেশের সবচেয়ে গুরুতর সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।
কুর্দি সংকটের সঙ্গে তুরস্কে অনেকগুলো সমস্যা একসঙ্গে মিলেছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অসমতা, গণতন্ত্রের ঘাটতি ও সামাজিক মেরুকরণের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে কুর্দি সমস্যাটির সমাধান নতুন একটি রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কুর্দি ইস্যুটির সমাধান হলে অনেকগুলো কাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।
কুর্দি সংঘাতের অর্থনৈতিক ও মানবিক মূল্যও অনেক। নিরাপত্তাকে কেন্দ্রে রেখে নেওয়া নীতি কয়েক দশক ধরে কুর্দি ইস্যুর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিবর্তে নাগরিক স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে, সমাজে মেরুকরণ ঘটিয়েছে এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করেছে।
অনেক সমালোচক বলতে চান যে অর্থনৈতিক উদ্বেগ বিবেচনায় গণতন্ত্র গৌণ বিষয়। কিন্তু একটা গণতান্ত্রিক শাসন ছাড়া স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অধরা থেকে যায়। ফলে কুর্দি সমস্যা সমাধানটি একমাত্র নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, তুরস্কের ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত আবশ্যকতাও।
বাহচেলির এই অপ্রত্যাশিত উদ্যোগ তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি খুব হিসাব–নিকাশ করে নেওয়া রাজনৈতিক পদক্ষেপ? এটা কি নতুন রাজনৈতিক যুগ সূচনার ইঙ্গিত দেয়?
একেপি–এমএইচপি জোট হওয়ার পর থেকেই বাহচেলি কুর্দি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে হাজির ছিলেন। যা–ই হোক, তাঁর সাম্প্রতিক বিবৃতি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কুর্দি সংকট সমাধানে তিনি আগ্রহী।
ঐতিহাসিক সুযোগ অথবা কৌশলগত সুযোগ, যা–ই হোক না কেন, এই সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে কোন পথে যাবে, সেটা নির্ভর করছে এরদোয়ানের মতো প্রধান রাজনৈতিক ক্রীড়ানকদের পদক্ষেপের ওপর।
আঞ্চলিক পটভূমি, বিশেষ করে সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহ, গোটা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। আঙ্কারায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সিরিয়ায় পিকেকের অবস্থানকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করেছে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) একটি প্রধান খেলোয়াড়।
তুরস্ক ও সিরিয়ার নতুন শাসকেরা এসডিএফের ভবিষ্যৎ (সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামোসহ) নির্ধারণে দর–কষাকষি করছে।
এর মধ্যে প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে, এসডিএফের যোদ্ধারা সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে নাকি স্বতন্ত্র সামরিক সত্তা বজায় রেখে চলবে। এর ফলাফল কী হবে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে পিকেকের অবস্থানের ওপর। পিকেকের প্রতি ওকলান যে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন, এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তার ওপরও এর প্রভাব পড়বে।
আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে সিরিয়ার কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে প্রশাসনিক কাঠামো কী হবে। তুরস্ক ও সিরিয়ার সরকার একটি এককেন্দ্রীক রাষ্ট্রের বিষয়ে জোর দিচ্ছে।
কিন্তু এসডিএফ চাইছে একটি বিকেন্দ্রীভূত মডেল, যেখানে স্থানীয় শাসনব্যবস্থা থাকবে। এই বিরোধগুলোর মীমাংসা হলে সেটা যেমন আঞ্চলিকি রাজনীতির গতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে, আবার তুরস্কে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে সম্ভাবনা, সেখানেও ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখবে।
তুরস্কের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুর্দি সমস্যা একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে রয়েছে। বর্তমান শান্তি উদ্যোগটিকে সমন্বিত সমাধান বলা যাবে না। কিন্তু কয়েক দশকের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার এবং আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক তুরস্ক গঠনের এটি একটি বড় সুযোগ।
এসরা এলমাস, মানবাধিকারকর্মী
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক সমস য র করণ র অবস
এছাড়াও পড়ুন:
এসএসসিতে অনুপস্থিতির বড় কারণ বাল্যবিবাহ
ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের অধীন এ বছরের এসএসসি পরীক্ষায় ছয় হাজারের বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের মধ্য থেকে পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জনের তথ্য বলছে, প্রায় ৪০ শতাংশের (৪৮১) বিয়ে হয়ে গেছে।
বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।
উদ্বেগের বিষয় হলো অনুপস্থিত ওই সব পরীক্ষার্থীর মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের প্রায় ৫১ শতাংশ আর পড়াশোনা করবে না। বাকিরা বলেছে, পরবর্তী বছরে পরীক্ষা দেবে।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড কর্তৃপক্ষ তাদের অধীন বিদ্যালয়গুলো থেকে এসব তথ্য পেয়েছে। এখন এ বিষয়ে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন পাঠানো হবে।
সারা দেশে এবারের এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় ফরম পূরণ করা পরীক্ষার্থীর সংখ্যা গতবারের চেয়ে প্রায় এক লাখ কম ছিল। বিগত পাঁচ বছরের মধ্যে এবারই সবচেয়ে কম ছাত্রছাত্রী পরীক্ষা দিয়েছে।
বিয়ে হওয়ার এ হার মেয়ে ও ছেলে মিলিয়ে। এ ছাড়া ৭ শতাংশের বেশি শিক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দেওয়ার কারণে। বাকিরা অসুস্থতা, প্রস্তুতি ভালো না থাকাসহ নানা কারণে পরীক্ষায় অংশ নেয়নি।আবার এবার পরীক্ষার ফরম পূরণ করে অংশ না নেওয়া শিক্ষার্থীর সংখ্যাও ছিল অন্যান্যবারের তুলনায় বেশি। ১১টি শিক্ষা বোর্ডের অধীন এসব পরীক্ষার প্রথম দিনেই অনুপস্থিত ছিল ২৬ হাজার ৯২৮ পরীক্ষার্থী। অথচ গত বছর এসএসসি ও সমমানের পরীক্ষায় প্রথম দিনে অনুপস্থিত ছিল ১৯ হাজার ৩৫৯ পরীক্ষার্থী।
প্রতিবছরই শিক্ষার্থীরা অনুপস্থিত থাকে, কিন্তু কারণ জানা হয় না। এ জন্য বিশেষজ্ঞরা অনুপস্থিতির প্রকৃত কারণ বের করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নেওয়ার পরামর্শ দিয়ে আসছিলেন। এমন পরিস্থিতিতে নিজেদের বোর্ডের অধীন পরীক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির কারণ অনুসন্ধানের উদ্যোগ নেয় ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চমাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ড। এ জন্য অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের তথ্য নির্ধারিত গুগল ফরমে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানগুলোর কাছ থেকে সংগ্রহ করা হয়। অনুপস্থিতির কারণ জানার জন্য পরীক্ষার্থী বা অভিভাবকের সঙ্গে সশরীর বা মুঠোফোনে যোগাযোগ করে তথ্য সংগ্রহ করা এবং কোন কোন পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত, তা জানার জন্য সংশ্লিষ্ট কেন্দ্র থেকে তথ্য সংগ্রহ করতে নির্দেশ দিয়েছিল ঢাকা বোর্ড।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড। তার ভিত্তিতে একটি খসড়া প্রতিবেদন করা হয়েছে। এসব পরীক্ষার্থী পরীক্ষা দেওয়ার জন্য ফরম পূরণ করেও পরীক্ষা দেয়নি।
দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে।ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, খসড়া প্রতিবেদন অনুযায়ী তথ্য পাওয়া ১ হাজার ২০৩ জন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীর মধ্যে প্রায় ৬০ শতাংশই ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগের। ২৩ শতাংশ মানবিক বিভাগের ও ১৭ শতাংশ বিজ্ঞান বিভাগের। সাধারণত বিদ্যালয়গুলোয় পড়াশোনায় তুলনামূলকভাবে এগিয়ে থাকা শিক্ষার্থীরা বিজ্ঞান বিভাগে পড়ে। প্রাপ্ত তথ্য বলছে, এ বিভাগের শিক্ষার্থীদের অনুপস্থিতির হার কম।
অনুপস্থিত থাকাদের মধ্যে নিয়মিত পরীক্ষার্থী প্রায় ৭০ শতাংশ। বাকি ৩০ শতাংশ অনিয়মিত পরীক্ষার্থী। উল্লেখ্য, আগের বছর অকৃতকার্য বা দু–এককটি বিষয়ে অকৃতকার্য হয়ে যারা এবার পরীক্ষা দিয়েছে, তাদের অনিয়মিত পরীক্ষার্থী বলা হয়।
ঢাকা শিক্ষা বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, এবার তাদের বোর্ডের অধীন ৬ হাজার ৩৮৯ পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। তাদের সবার তথ্য জানা যায়নি। ১ হাজার ২০৩ পরীক্ষার্থীর অনুপস্থিতির কারণসহ তথ্য পেয়েছে ঢাকা বোর্ড।ঢাকা বোর্ডের তথ্য বলছে, গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থীরাই বেশি অনুপস্থিত থাকে। তথ্য প্রাপ্ত ১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে ৭৬ শতাংশের বেশি গ্রাম এলাকার শিক্ষার্থী। প্রায় ২৪ শতাংশ শহর এলাকার। সমতল এলাকায় মোট পরীক্ষার্থী বেশি হওয়ায় অনুপস্থিতিও সেখানে বেশি।
জানতে চাইলে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের পরীক্ষা নিয়ন্ত্রক অধ্যাপক এস এম কামাল উদ্দিন হায়দার প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা যেসব তথ্য পেয়েছেন, সেগুলো প্রতিবেদন আকারে শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে পাঠাবেন, যাতে পরবর্তী প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া যায়।
যেসব কারণে অনুপস্থিতিযেসব কারণে পরীক্ষার্থীরা অনুপস্থিত ছিল, সেগুলোও জানার চেষ্টা করেছে ঢাকা শিক্ষা বোর্ড। বোর্ড সূত্রে জানা গেছে, অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে (১ হাজার ২০৩ জন), তাদের প্রায় ৪০ শতাংশের বিয়ে হয়েছে।
দেশে সাধারণত মেয়েরা বাল্যবিবাহের শিকার হয়। অনেক ক্ষেত্রে বাল্যবিবাহের শিকার মেয়েদের পড়াশোনা বাদ দিতে হয়। নাম প্রকাশ না করার শর্তে ঢাকা শিক্ষা বোর্ডের একজন কর্মকর্তা প্রথম আলোকে বলেন, তাঁরা দেখেছেন, অনুপস্থিত মেয়ে পরীক্ষার্থীদের পাশাপাশি কিছু ছেলেরও বিয়ে হয়েছে। চূড়ান্ত প্রতিবেদনে অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে কতজন মেয়ে এবং কতজন ছেলে, তা উল্লেখ করা হবে।
প্রাপ্ত তথ্য বলছে, ২১ জন (প্রায় ২ শতাংশ) মেয়ে পরীক্ষার্থী গর্ভধারণের কারণে পরীক্ষায় অনুপস্থিত ছিল।
আইনানুযায়ী, বাংলাদেশে মেয়েদের ১৮ বছর ও ছেলেদের ২১ বছরের নিচে বিয়ে হলে সেটিকে বাল্যবিবাহ বলা হয়। এসএসসি পরীক্ষার্থীদের বয়স সাধারণত ১৮ বছরের নিচে হয়। অবশ্য ব্যতিক্রমও আছে।
নিজের অসুস্থতার জন্য ২৪ শতাংশের (১ হাজার ২০৩ জনের মধ্যে) বেশি পরীক্ষার্থী অনুপস্থিত ছিল। আর প্রস্তুতি ভালো না থাকার কারণে অনুপস্থিত ছিল ১১ শতাংশের বেশি। দারিদ্র্যের কারণও উঠে এসেছে এ তথ্যে। ৭ দশমিক ৩২ শতাংশ শিক্ষার্থী পারিবারিক অসচ্ছলতার জন্য কর্মক্ষেত্রে যোগ দিয়েছে। অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে ১৭ জন মারা গেছেন। এ ছাড়া পরিবারের কোনো সদস্যের অসুস্থতা, মৃত্যুসহ অন্যান্য কারণে বাকিরা অনুপস্থিত ছিল।
এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে। করোনার প্রভাবের কারণে অনেকেই বিভিন্ন স্তরে ঝরে পড়েছে। এসবের পাশাপাশি বাল্যবিবাহ, শিশুশ্রমসহ একাধিক কারণের কথা বলে আসছিলেন বিশেষজ্ঞরা। এখন অনুপস্থিত পরীক্ষার্থীদের মধ্যে যাদের তথ্য পাওয়া গেছে, তাদের বড় অংশেরই বিয়ে হয়ে যাওয়ার তথ্য পেল ঢাকা শিক্ষা বোর্ড।
প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী‘সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে’বাংলাদেশে বাল্যবিবাহ একটি বড় সমস্যা। আফ্রিকার কয়েকটি দেশ ছাড়া বিশ্বের আর কোথাও বাংলাদেশের মতো এত বেশি বাল্যবিবাহ নেই।
জাতিসংঘের জনসংখ্যাবিষয়ক সংস্থা ইউএনএফপিএর বার্ষিক প্রতিবেদনের তথ্য বলছে, দেশের ৫১ শতাংশ মেয়ের বিয়ে হয়ে যাচ্ছে ১৮ বছর হওয়ার আগেই। আবার ১৫ থেকে ১৯ বছর বয়সী এক হাজার মেয়ের মধ্যে ৭১ জন এক বা একাধিক সন্তানের মা। গত মঙ্গলবার ইউএনএফপিএর বৈশ্বিক জনসংখ্যা পরিস্থিতি ২০২৫–বিষয়ক এ প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।
এবার যারা এসএসসি পরীক্ষা দিয়েছে, তারা ২০২০ সালে যখন ষষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়েছিল, সেই বছরই দেশে করোনার সংক্রমণ শুরু হয়। এর প্রভাবে একবার টানা দেড় বছর এবং পরে আবারও কয়েক মাস শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল। সেই ক্ষতির রেশ দীর্ঘ মেয়াদে পড়েছে বলে মনে করা হচ্ছে।জানতে চাইলে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারের উপদেষ্টা রাশেদা কে চৌধূরী প্রথম আলোকে বলেন, ‘প্রথমত, সরকারি প্রতিষ্ঠানের উদ্যোগে অনুপস্থিতির কারণ জানার প্রয়াসকে সাধুবাদ জানাই। কারণগুলো চিহ্নিত করতে পারলে ব্যবস্থা নেওয়া সহজ হয়।’ তিনি বলেন, বাল্যবিবাহের পেছনে অসচ্ছলতা একটি বড় কারণ। এখনো দেখা যায়, অনেক অভিভাবক মেয়েদের জন্য বেশি ব্যয় করার চেয়ে ছেলে সন্তানের পেছনে ব্যয় করাকে বেশি প্রাধান্য দেন। আবার নিরাপত্তাহীনতাও মেয়েদের বাল্যবিবাহের একটি অন্যতম কারণ।
বাল্যবিবাহ রোধে সরকারকেই বেশি উদ্যোগী হতে হবে উল্লেখ করে রাশেদা কে চৌধূরী বলেন, এ জন্য বিনিয়োগ বাড়াতে হবে। আন্তমন্ত্রণালয় সভা করে কার্যকর পদক্ষেপ নিতে হবে। এ ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাগুলোকেও কাজে লাগানো যেতে পারে।