গত বছরের অক্টোবরে প্রেসিডেন্ট রিসেপ তাইয়েপ এরদোয়ানের প্রধান মিত্র তুরস্কের ন্যাশনালিস্ট মুভমেন্ট পার্টির (এমএইচপি) নেতা ডেভলেট বাহচেলির একটি বিস্ময়কর পদক্ষেপ তুরস্কের জন্য একটি পরিবর্তনমুখী যুগের সূচনাকে চিহ্নিত করছে।

কুর্দিপন্থী পিপলস ইকুয়ালিটি অ্যান্ড ডেমোক্রেসি (ডিইএম) পার্টির নেতাদের সঙ্গে তিনি করমর্দন করেন। তারপর যুগান্তকারী একটি বিবৃতি দেন। বিবৃতিতে তিনি কুর্দিস্তান ওয়ার্কার্স পার্টির (পিকেকে) নেতা আবদুল্লাহ ওকালানকে পার্লামেন্টে আসার ও কথা বলার আমন্ত্রণ জানান। তিনি বলেন, তুর্কি ও কুর্দিদের অবশ্যই একে অন্যকে ভালোবাসা উচিত। তাঁর এই বিবৃতি কুর্দি প্রশ্নে তুরস্কের অবস্থান বদলের ইঙ্গিত দেয়।

বাহচেলির বক্তব্যে সন্ত্রাসবাদ অবসানের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে। একই সঙ্গে এ বিবৃতিতে রাজনৈতিক উপায়ে কুর্দি প্রশ্ন সমাধানের দরজাও খুলে দেওয়া হয়েছে। এই অপ্রত্যাশিত ঘটনাটি এখন তুরস্কের প্রভাবশালী রাজনৈতিক এজেন্ডায় পরিণত হচ্ছে এবং নতুন একটি শান্তিপ্রক্রিয়া দৃশ্যমান হয়ে উঠছে।

সম্প্রতি তুর্কি সরকার ওকলান ও ডিইএমের প্রতিনিধিদের সঙ্গে যোগাযোগ করায় শান্তিপ্রক্রিয়াটি গতি পেয়েছে।

ওকলান শান্তি প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা পালন করার ক্ষেত্রে তাঁর আগ্রহের কথা জানিয়েছেন। ফলে এখন সবার চোখ ওকলানের দিকে। কেননা, সবাই আশা করছেন, তিনি খুব শিগগির পিকেকে অস্ত্র সংবরণের আহ্বান জানাবেন।

চলমান যে শান্তিপ্রক্রিয়া, সেটা কুর্দি সংঘাতের সামাজিক ও রাজনৈতিক মাত্রিকতার সমন্বিত সমাধান দেবে না। এটা একটা নিরস্ত্রীকরণ উদ্যোগ, যেটা শেষ পর্যন্ত সহিংসতার অবসান ঘটাবে। এরদোয়ান দীর্ঘদিন ধরেই এ দুটিকে পৃথক ইস্যু বলে আসছেন।

কিন্তু তুরস্ক পিকেকে–কে নিরস্ত্রীকরণের দিকে মনোযোগ দিচ্ছে। এটা সফল হলে বৃহত্তর অর্থে গণতন্ত্রায়ণের পথ খুলে দেবে।

পিকেকে অস্ত্র ত্যাগ করলে রাজনীতিবিদদের গ্রেপ্তার ও তাঁদের বিরুদ্ধে সন্ত্রাসবাদের অভিযোগ আনার ন্যায্যতা দুর্বল হয়ে যাবে। সেটা উন্মুক্ত রাজনৈতিক বিতর্ক ও গণতান্ত্রিক রাজনীতির জন্য জায়গা তৈরি করবে।

তুরস্কের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুর্দি সমস্যা একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে রয়েছে। বর্তমান শান্তি উদ্যোগটিকে সমন্বিত সমাধান বলা যাবে না। কিন্তু কয়েক দশকের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার এবং আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক তুরস্ক গঠনের এটি একটি বড় সুযোগ।

ওকলানের সঙ্গে কারাগারে থাকা কুর্দি রাজনীতিবিদ সেলাহাতিন দেমিরতাস ও ডিইএম পার্টি এ প্রক্রিয়াকে সমর্থন দিয়েছেন। কিন্তু সন্দেহটা এখনো থেকেই যাচ্ছে।

অনেকে প্রশ্ন তুলেছেন, এটা কি সত্যিকারের শান্তির উদ্যোগ, নাকি নিছক রাজনৈতিক চালবাজি। তুরস্কের রাজনৈতিক পরিমণ্ডল বছরের পর বছর ধরে সংকটের  মধ্যে আছে এবং দেশের সবচেয়ে গুরুতর সমস্যাটি সমাধানের উদ্যোগ নিতে ব্যর্থ হয়েছে।

কুর্দি সংকটের সঙ্গে তুরস্কে অনেকগুলো সমস্যা একসঙ্গে মিলেছে। এর মধ্যে অর্থনৈতিক অসমতা, গণতন্ত্রের ঘাটতি  ও সামাজিক মেরুকরণের মতো বিষয়গুলো রয়েছে। ফলে কুর্দি সমস্যাটির সমাধান নতুন একটি রাজনৈতিক রূপরেখা তৈরির সুযোগ তৈরি করে দিয়েছে। কুর্দি ইস্যুটির সমাধান হলে অনেকগুলো কাঠামোগত সমস্যার সমাধান করা সম্ভব।

কুর্দি সংঘাতের অর্থনৈতিক ও মানবিক মূল্যও অনেক। নিরাপত্তাকে কেন্দ্রে রেখে নেওয়া নীতি কয়েক দশক ধরে কুর্দি ইস্যুর সমাধান করতে ব্যর্থ হয়েছে। এর পরিবর্তে নাগরিক স্বাধীনতাকে খর্ব করেছে, সমাজে মেরুকরণ ঘটিয়েছে এবং আইনের শাসনকে ক্ষুণ্ন করেছে।

অনেক সমালোচক বলতে চান যে অর্থনৈতিক উদ্বেগ বিবেচনায় গণতন্ত্র গৌণ বিষয়। কিন্তু একটা গণতান্ত্রিক শাসন ছাড়া স্থিতিশীলতা ও সমৃদ্ধি অধরা থেকে যায়। ফলে কুর্দি সমস্যা সমাধানটি একমাত্র নৈতিক বাধ্যবাধকতা নয়, তুরস্কের ভবিষ্যতের জন্য একটি কৌশলগত আবশ্যকতাও।

বাহচেলির এই অপ্রত্যাশিত উদ্যোগ তাঁর উদ্দেশ্য নিয়ে প্রশ্নের জন্ম দিচ্ছে। প্রশ্ন হচ্ছে, এটা কি খুব হিসাব–নিকাশ করে নেওয়া রাজনৈতিক পদক্ষেপ? এটা কি নতুন রাজনৈতিক যুগ সূচনার ইঙ্গিত দেয়?

একেপি–এমএইচপি জোট হওয়ার পর থেকেই বাহচেলি কুর্দি সমস্যা সমাধানের ক্ষেত্রে প্রধান অন্তরায় হিসেবে হাজির ছিলেন। যা–ই হোক, তাঁর সাম্প্রতিক বিবৃতি এই ইঙ্গিত দিচ্ছে যে কুর্দি সংকট সমাধানে তিনি আগ্রহী।

ঐতিহাসিক সুযোগ অথবা কৌশলগত সুযোগ, যা–ই হোক না কেন, এই সুযোগ অবশ্যই গ্রহণ করা উচিত। কিন্তু এই প্রক্রিয়া চূড়ান্তভাবে কোন পথে যাবে, সেটা নির্ভর করছে এরদোয়ানের মতো প্রধান রাজনৈতিক ক্রীড়ানকদের পদক্ষেপের ওপর।

আঞ্চলিক পটভূমি, বিশেষ করে সিরিয়ার ঘটনাপ্রবাহ, গোটা প্রক্রিয়াকে জটিল করে তুলেছে। আঙ্কারায় রাজনৈতিক পটপরিবর্তন সিরিয়ায় পিকেকের অবস্থানকে তাৎপর্যপূর্ণভাবে প্রভাবিত করেছে। কুর্দি নেতৃত্বাধীন সিরিয়ান ডেমোক্রেটিক ফোর্সেস (এসডিএফ) একটি প্রধান খেলোয়াড়।

তুরস্ক ও সিরিয়ার নতুন শাসকেরা এসডিএফের ভবিষ্যৎ (সামরিক ও প্রশাসনিক কাঠামোসহ) নির্ধারণে দর–কষাকষি করছে।

এর মধ্যে প্রধান একটি বিষয় হচ্ছে, এসডিএফের যোদ্ধারা সিরিয়ার সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত হবে নাকি স্বতন্ত্র সামরিক সত্তা বজায় রেখে চলবে। এর ফলাফল কী হবে, তার সরাসরি প্রভাব পড়বে পিকেকের অবস্থানের ওপর। পিকেকের প্রতি ওকলান যে অস্ত্র সমর্পণের আহ্বান জানিয়েছেন, এর প্রতিক্রিয়া কী হবে, তার ওপরও এর প্রভাব পড়বে।

আরেকটি বিতর্কিত বিষয় হচ্ছে সিরিয়ার কুর্দি সংখ্যাগরিষ্ঠ অঞ্চলে প্রশাসনিক কাঠামো কী হবে। তুরস্ক ও সিরিয়ার সরকার একটি এককেন্দ্রীক রাষ্ট্রের বিষয়ে জোর দিচ্ছে।

কিন্তু এসডিএফ চাইছে একটি বিকেন্দ্রীভূত মডেল, যেখানে স্থানীয় শাসনব্যবস্থা থাকবে। এই বিরোধগুলোর মীমাংসা হলে সেটা যেমন আঞ্চলিকি রাজনীতির গতি পরিবর্তনে ভূমিকা রাখবে, আবার তুরস্কে শান্তি প্রতিষ্ঠার যে সম্ভাবনা, সেখানেও ক্ষেত্রেও প্রভাব রাখবে।

তুরস্কের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে কুর্দি সমস্যা একেবারে কেন্দ্রীয় বিষয় হয়ে রয়েছে। বর্তমান শান্তি উদ্যোগটিকে সমন্বিত সমাধান বলা যাবে না। কিন্তু কয়েক দশকের সংঘাত থেকে বেরিয়ে আসার এবং আরও বেশি অন্তর্ভুক্তিমূলক ও গণতান্ত্রিক তুরস্ক গঠনের এটি একটি বড় সুযোগ।

এসরা এলমাস, মানবাধিকারকর্মী
মিডলইস্ট আই থেকে নেওয়া, ইংরেজি থেকে সংক্ষিপ্তাকারে অনূদিত

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: গণত ন ত র ক র জন ত ক সমস য র করণ র অবস

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।

অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য

পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।

ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্য

যুক্তরাজ্য

২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।

জার্মানি

জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।

ফ্রান্স

INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।

ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ