‘সাব্বির রহমানের এবারের ঢাকা প্রিমিয়ার লিগের পারিশ্রমিক শুনলে চেয়ার থেকে মাটিতে বসে যেতে পারেন’ – বিসিবির এক কর্মকর্তার এমন কথা শোনার পর কৌতুহল তো জাগবেই।

জাতীয় দলের এক সময়ের তিন ফরম‌্যাটের নিয়মিত ক্রিকেটার। ২০১৬ এশিয়া কাপের টুর্নামেন্টের সেরা খেলোয়াড়। তাকে নিয়ে ঢাকা লিগে কাড়াকাড়ি না হোক, সম্মানজনক পারিশ্রমিক তো থাকবেই। শেষ বিপিএলে ঢাকা ক্যাপিটালসের হয়ে দুয়েকটি ভালো ইনিংসও ছিল। কিন্তু প্রাইম ব‌্যাংক থেকে পারটেক্স স্পোর্টিং ক্লাবে নাম লিখানো সাব্বির এমন ছাড় দেবেন তা কেউ কল্পনাও করতে পারেনি। পারিশ্রমিকের অঙ্কটা গোপনই থাক।

শুধু সাব্বির নন, ঢাকা লিগের নিয়মিত ক্রিকেটাররা এবারের লিগে পারিশ্রমিক ইস্যুতে যেভাবে ছাড় দিয়েছেন তাতে বিস্ময় ছড়িয়েছে বেশ। আবাহনী লিমিটেডের নিয়মিত ক্রিকেটার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত। এবার আকাশী-নীল তাঁবুতে খেলবেন এক সময়ের জাতীয় দলের ক্রিকেটার। কিন্তু এবার তার পারিশ্রমিকের অঙ্কটা বলার মতোও নয়। স্রেফ ধারনা দেওয়ার জন‌্য বলা, বর্তমানে টেপ টেনিসের শীর্ষস্থানীয় খ‌্যাপের খেলোয়াড়দের থেকেও কম পারিশ্রমিকে ঢাকা লিগ খেলতে সম্মত হয়েছেন মোসাদ্দেক।

আরো পড়ুন:

‘আমি যদি ওদের বিপক্ষে আউট হলে কী বলবেন ইচ্ছা করে হয়েছি’

তামিমের সহায়তায় অবশেষে দল পেলেন লিটন

একই দলে আছেন শাহরিয়ার কমল নামের উইকেটরক্ষক ব‌্যাটসম‌্যান। টেপ টেনিসের শীর্ষস্থানীয় খেলোয়াড় হিসেবে সুনাম তার। এক মৌসুমে দশ লাখ টাকার মতো পারিশ্রমিক পান বলে খবর আছে। কিন্তু আবাহনীতে এবার দুই লাখ পারিশ্রমিক পাবেন কিনা সেই নিশ্চয়তা নেই।

হুট করেই খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকে এতোটা ভাটার টান কেন? খোঁজ নিয়ে জানা গেল, ‘ক্লাবগুলোর সিন্ডিকেটে’ আটকে গিয়েছেন ক্রিকেটাররা। এজন‌্য ‘ছাড় দিতে’ বাধ‌্য হয়েছেন ক্রিকেটাররা। ঢাকার শীর্ষ ক্লাবগুলোর কর্ণধার, কর্মকর্তার ঘুরিয়ে ফিরিয়ে প্রায় সবাই বোর্ডের আশেপাশেরই লোক। বোর্ডে এখন এমন কর্মকর্তাও আছেন যারা দুই-তিনটি ক্লাবের দল গুছিয়ে দেওয়ার কাজও করেছেন। স্বাভাবিকভাবে খেলোয়াড়দের সঙ্গে দরদামে সবচেয়ে সাশ্রয়ী উপায়টাই খুঁজে নেন তারা। সেক্ষেত্রে খেলোয়াড়দের সবচেয়ে কম পারিশ্রমিকে পাওয়ার সুযোগ তৈরি হয় অনায়েসে।
 
এছাড়া খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিকের খবর ছড়িয়ে যায় অতি সহজে। ঘুরে ফিরে ক্লাবগুলোর নজর সেসব খেলোয়াড়দের দিকে থাকায় দরদামের এবার সুযোগ কমই পেয়েছেন ক্রিকেটাররা। সঙ্গে বর্তমান দেশের বাস্তবতাও যোগ হয়েছে। রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের কারণে বেশ কিছু ক্লাব আগের মতো খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক দিতে পারছে না। কারণ, প্রধান পৃষ্ঠপোষকদের হদিস নেই। এসব কারণে খেলোয়াড়দের পারিশ্রমিক কমে গেছে ঢাকা লিগে।

দলবদলের সময় হতাশা প্রকাশ করেছিলেন তাইজুল ইসলাম-মোহাম্মদ মিঠুনের মতো লম্বা সময় ধরে ঘরোয়া ক্রিকেট খেলে আসা ক্রিকেটাররা।

তাইতো মোহামেডানের অধিনায়ক তামিম ইকবাল লিগ শুরুর আগে ক্লাবগুলোর কর্ণধারদের লিগের পারিশ্রমিকের দিকে দৃষ্টি রাখার আহ্বান জানিয়েছেন, ‘‘এইবার দেশের পরিস্থিতিটা একটু আলাদা। বিপিএল বলেন, ডিপিএল বলেন, সব দিক থেকেই ক্রিকেটাররা আর্থিক দিক দিয়ে অনেক ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। তাই খেলোয়াড়রা সবাই যেন সময় মতো তাদের প্রতিশ্রুত অঙ্কের টাকা পায় এটাই আমার কাছে সর্বোচ্চ গুরুত্বপূর্ণ।’’

আবাহনীর অধিনায়ক মোসাদ্দেকেরও অভিন্ন সুর, ‘‘ক্রিকেটাররা এবার অনেক ত্যাগ স্বীকার করেছে। যে পরিমাণ অর্থ পাওয়ার কথা, সেখান থেকে অনেক ছাড় দেওয়া হয়েছে। যে পরিমাণ টাকা ঠিক করা হয়েছে, অন্তত সেই পরিমাণটুকু যেন সবাই পায়।’’

ক‌্যারিয়ারের কথা ভেবে ক্লাবগুলোর ‘সিন্ডিকেট’ ভিত্তিক পারিশ্রমিকে এবার ৯০ শতাংশ ক্রিকেটার ঢাকা লিগে খেলছেন। লিটন দাস শেষ দিন পর্যন্ত অপেক্ষায় ছিলেন তার চাওয়া মতো পারিশ্রমিক, আনুমানিক ৫০ লাখ টাকা কোনো ক্লাব অফার করবে। কিন্তু তার পারিশ্রমিকের ধারের কাছেও যায়নি কোনো ক্লাব। ম‌্যাচ ভিত্তিক চুক্তিতে তিনি নাম লিখিছেন নবাগত গুলশান ক্লাবে। মোস্তাফিজুর রহমানের সঙ্গে কারও বনিবনা না হওয়ায় এবারের লিগেও তার খেলা হচ্ছে না।

ঢাকা/ইয়াসিন/আমিনুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর

এছাড়াও পড়ুন:

‘ভোল পাল্টে’ সক্রিয় কিশোর গ্যাং, অতিষ্ঠ বাসিন্দারা

লক্ষ্মীপুরের রায়পুর উপজেলার চর আবাবিল ইউনিয়নের উদমারা এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের উৎপাতে অতিষ্ঠ বাসিন্দারা। এলাকায় নারীদের উত্ত্যক্ত করা, মাদক সেবন, মারামারি, খুনসহ বিভিন্ন ধরনের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের এসব সদস্যদের বিরুদ্ধে।

স্থানীয় বাসিন্দারা জানিয়েছেন, গত বছরের ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগের কয়েকজন নেতার ছত্রচ্ছায়ায় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড পরিচালনা করত। তবে এখন ভোল পাল্টে স্থানীয় বিএনপি নেতা-কর্মীদের সঙ্গে ভিড়েছে তারা।

সম্প্রতি এলাকাটিতে কিশোর গ্যাংয়ের হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসাধীন জাহাঙ্গীর আলম (৫২) নামের এক ব্যক্তির মৃত্যু হয়েছে। জাহাঙ্গীর আলম স্থানীয় মসজিদ কমিটির সভাপতি ছিলেন। মসজিদের পাশে জুয়ার আসর বসানো ও মাদক সেবনে বাধা দেওয়াকে কেন্দ্র করে তাঁর ওপর হামলার অভিযোগ রয়েছে কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের বিরুদ্ধে। গত ৩ এপ্রিল তাঁর ওপর হামলা করা হয়। এরপর গত শনিবার তিনি ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান।

স্থানীয় বাসিন্দা ও আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, কিশোর গ্যাংয়ের নেতৃত্বে রয়েছেন কয়েকজন স্থানীয় তরুণ। ওই তরুণেরা রাজনীতিতে যুক্ত থাকায় মিছিল-সমাবেশে কিশোরদের ব্যবহার করে আসছেন। ফলে স্থানীয় কিছু রাজনৈতিক নেতাও এসব কিশোরকে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে প্রশ্রয় দেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে কয়েকজন স্থানীয় বাসিন্দা বলেন, আগে এলাকায় কিশোর গ্যাংয়ের নিয়ন্ত্রণ ছিল চর আবাবিল ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম ও ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দারের হাতে। তাঁরা এসব কিশোরকে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিতেন। গত বছরের ৫ আগস্ট ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানে আওয়ামী লীগ সরকারের পতনের পর ওই কিশোরেরা ভোল পাল্টে বিএনপির কর্মসূচিতে সক্রিয় হচ্ছে। আবদুর রহিম নামে স্থানীয় এক ব্যক্তি এসব তরুণকে নতুন করে আশ্রয়–প্রশ্রয় দিচ্ছেন। রহিম ইউনিয়ন বিএনপির রাজনীতিতে সক্রিয় হলেও তাঁর পদপদবি নেই।

জাহাঙ্গীর আলম খুনের ঘটনায় আবদুর রহিমকেও আসামি করা হয়। মামলার পর তিনি আত্মগোপনে রয়েছেন। মুঠোফোনে তিনি প্রথম আলোকে বলেন, ‘কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের আমি প্রশ্রয় দিচ্ছি—এমন অভিযোগ প্রায় করা হচ্ছে। তবে এসব অভিযোগ সত্য নয়। আমাকে হয়রানির উদ্দেশ্যে মামলায় জড়ানো হয়েছে।’

ইউনিয়নের ২ নম্বর ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সভাপতি ছিদ্দিক সর্দার বলেন, ‘কিশোর গ্যাংকে আমি কখনো প্রশ্রয় দিইনি। তারা (কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা) আমার সঙ্গে ঘনিষ্ঠ হওয়ার চেষ্টা করত।’ ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক তাজুল ইসলাম আত্মগোপনে থাকায় তাঁর বক্তব্য জানা সম্ভব হয়নি।

জানতে চাইলে রায়পুর উপজেলা বিএনপির আহ্বায়ক জেড এম নাজমুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দলীয় কোনো নেতা-কর্মী কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যদের প্রশ্রয় দিলে তাঁদের বিরুদ্ধে সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কোনো নেতা-কর্মীর অপকর্মের দায় দল নেবে না।

জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলার ঘটনায় গত ৭ এপ্রিল লক্ষ্মীপুরের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতে ৯ জনের নাম উল্লেখ ও ২০ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলার আবেদন করেন তাঁর স্ত্রী রাজিয়া বেগম। আদালত রায়পুর থানাকে মামলাটি গ্রহণের নির্দেশ দেন। মামলার এজাহারে অভিযোগ করা হয়, মসজিদের আশপাশে জুয়ার আসর ও মাদক সেবন করত কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা। এসব বিষয়ের প্রতিবাদ করাকে কেন্দ্র করে সাব্বির হোসেন, জুবায়ের হোসেনসহ কয়েকজনের নেতৃত্বে ৮–১০ জন কিশোর গ্যাংয়ের সদস্য জাহাঙ্গীর আলমের ওপর হামলা করেছেন। নিহত জাহাঙ্গীর আলমের মেয়ে শারমিন আক্তার প্রথম আলোকে বলেন, মামলার পর আতঙ্কে দিন কাটছে তাঁর পরিবারের সদস্যদের। স্থানীয় কিশোর গ্যাংয়ের সদস্যরা মামলা প্রত্যাহারের জন্য হুমকি দিয়ে আসছে।

জানতে চাইলে রায়পুর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মো. নিজাম উদ্দিন ভূঁইয়া বলেন, কিশোর অপরাধীদের বিরুদ্ধে পুলিশের ধারাবাহিক অভিযান অব্যাহত রয়েছে। এরই মধ্যে বেশ কয়েকজনের বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে।

লক্ষ্মীপুর সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ মাঈন উদ্দিন পাঠান বলেন, কিশোর-তরুণদের খেলাধুলা, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক কর্মকাণ্ডের মাধ্যমে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড থেকে ফিরিয়ে আনতে হবে। তাদের ফেরাতে না পারলে অপরাধ আরও বেড়ে যাবে। কেউ যাতে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে কিশোরদের ব্যবহার করতে না পারে, সে বিষয়ে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীসহ সবাইকে তৎপর থাকতে হবে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ