বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আ.লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা করতে হবে
Published: 4th, March 2025 GMT
জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) আহ্বায়ক নাহিদ ইসলাম বলেছেন, “জুলাই গণঅভ্যুত্থানে সংগঠিত গণহত্যার বিচার দ্রুত সময়ের মধ্যে কার্যকর দেখতে চাই। বিচারিক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে আওয়ামী লীগের রাজনৈতিক ফয়সালা এ বাংলার মাটিতে করতে হবে।”
মঙ্গলবার (৪ মার্চ) সকালে সাভার জাতীয় স্মৃতিসৌধে বীর শহীদদের প্রতি ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে একথা বলেন তিনি।
নাহিদ ইসলাম বলেন, “জুলাই গণ অভ্যুত্থানে আমাদের প্রতিশ্রুতি ছিল, যারা এ হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িত, গত ১৫ বছরে নানাভাবে জুলুম করেছে তাদের বিচার এ বাংলার মাটিতে হতে হবে। অন্তর্বর্তীকালীন সরকারের প্রতি আহ্বান থাকবে, দ্রুত সময়ের মধ্যে এ বিচার বাংলাদেশের মানুষ দেখতে চায়। বিচারের পরে যে সংস্কার কার্যক্রম, জাতীয় ঐক্যমত্য কমিশন রয়েছে, দ্রুত জাতীয় সংলাপে গিয়ে আমাদের জুলাই সনদ ও জুলাই ঘোষণাপত্র তার বাস্তবায়ন দেখতে চাই।”
তিনি বলেন, “মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে একটি স্বাধীন রাষ্ট্র পেলেও ফ্যাসিবাদের কারণে সার্বভৌমত্ব হুমকির মুখে পড়েছে। আমাদের গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়াকে বারবার দীর্ঘায়িত করা হয়েছে। পুরাতন সংবিধান এবং পুরাতন শাসন কাঠামো রেখে নতুন বাংলাদেশ বিনির্মান সম্ভব নয়। কেবলমাত্র সরকার পরিবর্তন করেই কিন্তু আমাদের জনগণের কল্যাণ সম্ভব নয়। প্রকৃত গণতন্ত্র বাস্তবায়ন সম্ভব নয়।”
তিনি আরো বলেন, “আমরা বলেছি, ২৪ সালে যেহেতু গণঅভ্যুত্থান হয়েছে, ছাত্র জনতা রক্ত দিয়েছে, আমরা কেবল সরকার পরিবর্তন নয়, শাসন কাঠামোসহ পুরো সরকার পদ্ধতি পরিবর্তন করে নতুন একটি বাংলাদেশের যাত্রা শুরু করতে চাই। যেখানে প্রকৃত গণতন্ত্র, ইনসাফ এবং সাম্য নিশ্চিত করা সম্ভব হবে।”
এ সময় সাংবাদিকদের সঙ্গে কথা বলেন জাতীয় নাগরিক কমিটির সদস্য সচিব আখতার হোসেন। তিনি বলেন, “ডান বামের বাইনারি বিভাজনের মধ্যে না গিয়ে সত্যিকার অর্থে একটি মধ্যমপন্থি রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে আমরা সফল হতে পারি, সে অঙ্গীকার আমাদের রয়েছে। সেই অঙ্গীকারগুলো যেন আমরা বাস্তবে রূপ দিতে পারি, সেজন্য সারা দেশের সব শ্রেণি-পেশার মানুষের সমর্থন আমরা প্রত্যাশা করি।”
তিনি বলেন, “সারা দেশের অনেক মানুষ আমাদের সঙ্গে যুক্ত হতে চাচ্ছেন। অল্প সময়ের মধ্যে সব জেলা, উপজেলায় জাতীয় নাগরিক পার্টি তার কর্মপরিধি ও বিস্তৃতি লাভে সমর্থ হবে বলে আমরা আশাবাদী। এই সময়ে রায়েরবাজারে আমাদের আরেকটা কর্মসূচি রয়েছে। আমাদের যারা ২৪ এর গণঅভ্যুত্থানে শহীদ রয়েছেন, আমরা তাদের কবর জিয়ারতে যাব। তাদের জন্য দোয়া করব।”
এসময় আরো উপস্থিত ছিলেন- জাতীয় নাগরিক কমিটির মুখ্য সমন্বয়ক নাসির উদ্দিন পাটওয়ারি, মুখ্য সংগঠক সারজিস আলম, হাসনাত আব্দুল্লাহ, মেহেরাব সিফাতসহ নেতাকর্মীরা।
এর আগে, সকাল ৭টা ৪৫ মিনিটে দুইটি দ্বিতল বাসসহ কয়েকটি গাড়ি করে স্মৃতিসৌধে উপস্থিত হন নাগরিক পার্টির আহ্বায়ক কমিটির সদস্যরা। দ্বিতল বাস থেকে একে একে নামেন নাহিদ, হাসনাত, সারজিসসহ অন্যান্যরা। এসময় দলটির স্থানীয় সমর্থক, নাগরিক কমিটি ও বৈষম্যবিরোধী কমিটির শতাধিক সদস্য তাদের ফুল দিয়ে বরণ করে নেন।
সকাল ৮টায় শহীদ বেদীতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন নেতাকর্মীরা। পরে তারা স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণে ১ মিনিট নিরবতা পালন করেন।আনুষ্ঠানিকতা শেষে সাড়ে ৮টায় স্মৃতিসৌধ প্রাঙ্গণ ত্যাগ করেন এনসিপি নেতারা।
ঢাকা/সাব্বির/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ক কম ট কম ট র আম দ র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ মির্জা ফখরুলের
গণঅভ্যুত্থানের মুখে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেওয়া সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে দেশে ফিরে মামলা মোকাবিলার চ্যালেঞ্জ গ্রহণের আহ্বান জানিয়েছেন বিএনপি মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীর।
মঙ্গলবার (২৯ এপ্রিল) বিকালে ঠাকুরগাঁও সদর উপজেলার চিলারং ইউনিয়নে দলীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে গণসংযোগের সময় দেওয়া বক্তব্যে এই আহ্বান রাখেন তিনি।
শেখ হাসিনার শাসন আমলে বিএনপি নেতাকর্মীদের নির্যাতনের শিকার হওয়ার কথা তুলে ধরেন মির্জা ফখরুল। গুম, খুন, ভিত্তিহীন মামলা, লুটপাট, টাকা পাচার, বাকস্বাধীনতা হরণ ও ভোট চুরিসহ নানা বিষয় নিয়ে কথা বলেন তিনি।
আরো পড়ুন:
জুলাই গণহত্যা: শেখ হাসিনাসহ ৪০৮ জনের বিরুদ্ধে আরেক মামলা
হাসিনা-রেহানাসহ ২২ জনের গ্রেপ্তার-সংক্রান্ত প্রতিবেদন ১২ মে
শেখ হাসিনাকে উদ্দেশ্য করে মির্জা ফখরুল বলেন, “আমাদের নেতাকর্মীদের গুম করা হয়েছে। লাখ লাখ নেতাকর্মীকে মিথ্যা মামলা দিয়ে নির্যাতন করা হয়েছে, তাদের ঘরে থাকতে দেননি আপনি। আমরা তো কোথাও পালিয়ে যাইনি। আদালতে মিথ্যা মামলা আইনের মাধ্যমে ফেইস (মোকাবিলা) করেছি। উকিল ধরে জামিন নিয়েছি। আপনি (শেখ হাসিনা) পালিয়ে আছেন কেন? আপনিও মামলা লড়েন। আপনি দেশে এসে দাড়ান না দেখি।”
জনগণের উদ্দেশে তিনি বলেন, “আপনারা অনেকে মনে করেন শেখ হাসিনা আবারো দেশে ফিরে আসবেন। তিনি তো ১৫ বছর দেশের প্রধানমন্ত্রী ছিলেন। তার বাবা শেখ মুজিবুর রহমান একজন বিখ্যাত মানুষ ছিলেন। তার তো দেশ থেকে পালানোর কথা ছিল না। তিনি পালালেন কেন? কারণ তিনি একজন ডাইনি ছিলেন। জনগণের ওপর এমন নির্যাতন করেছেন যে, তিনি পালাতে বাধ্য হয়েছেন। জনগণ যদি সেদিন তাকে পেত, তাহলে ছিঁড়ে খেত।”
দলীয় নেতাকর্মীদের উদ্দেশে মির্জা ফখরুল বলেন, “হাসিনা দেশে ফিরে রাজনীতি করলে আমাদের কিছু করতে হবে না, জনগণই তাকে দেখে নেবে।”
আওয়ামী লীগের শাসনামলের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে তিনি বলেন, “বিএনপির নেতাকর্মীরা যেন আওয়ামী লীগের মতো অন্যায় না করে; এতে মানুষ ভালোবাসবে না। দলের কোনো নেতাকর্মীরা অন্যায় করলে যেন জেলার নেতারা তাদের শক্ত হাতে দমন করেন; তারা যেন অন্যায়কারীদের পুলিশের হাতে তুলে দেন। তাই অপকর্ম বন্ধ করুন, না হলে আওয়ামী লীগের মতো অবস্থা হবে।”
ত্রোদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনের দৃষ্টি রেখে জনসংযোগ চালিয়ে যাচ্ছে বিএনপি। মির্জা ফখরুলসহ দলটির শীর্ষ নেতারা সভা-সমাবেশ করছেন। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের অংশগ্রহণের সুযোগ রাখা, না রাখা নিয়ে ব্যাপক মতপার্থক্য রয়েছে; সেই সঙ্গে আইনি ঝক্কিও সামনে আসছে।
গণহত্যার দায়ে আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের একাধিক মামলায় আসামি করা হয়েছে শেখ হাসিনাকে। এ ছাড়া কয়েক শত ফৌজদারি মামলায় তিনি আসামি। অনেক মামলায় তাকে গ্রেপ্তারে পরোয়ানা জারি করেছেন আদালত। তবে ভারতের আশ্রয়ে থাকা শেখ হাসিনাকে দেশে ফেরানোর কোনো নিশ্চয়তা এখনো তৈরি হয়নি।
গণঅভ্যুত্থানের মুখে ৫ আগস্ট দেশ ছেড়ে ছোট বোন রেহানাকে সঙ্গে নিয়ে ভারতে চলে যান শেখ হাসিনা। সেদেশে উচ্চনিরাপত্তা শৃঙ্খলে বসবাস করছেন বলে আন্তর্জাতিক সাংবাদমাধ্যমের খবরে বলা হয়ে থাকে। সেখান থেকে দেশে আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের বিভিন্ন পর্যায়ের নেতাকর্মীদের সঙ্গে অনলাইনে তার কথোপকথনের ভিডিও ছড়িয়ে পড়ে, যা নিয়ে অস্বস্তির কথা ভারতকে জানিয়ে রেখে অন্তর্বর্তী সরকার।
ঢাকা/মঈনুদ্দীন/মাসুদ