ভারতের সঙ্গে বাণিজ্যবৃদ্ধিসহ সম্পর্কোন্নয়নের বার্তা চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর
Published: 8th, March 2025 GMT
চীনের সঙ্গে বাণিজ্যযুদ্ধের তীব্রতা বৃদ্ধি করেছেন ডোনাল্ড ট্রাম্প। চীনও পাল্টা ব্যবস্থা নিয়েছে। এ পরিস্থিতিতে ভারতের সঙ্গে চীনের বাণিজ্যসহ সামগ্রিক সম্পর্কের উন্নয়ন হয়েছে বলে বার্তা দিয়েছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই।
ওয়াং ই বলেছেন, গত বছর রাশিয়ায় চীনের প্রেসিডেন্ট সি চিন পিংয়ের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের পর থেকে ভারত ও চীনের দ্বিপক্ষীয় সম্পর্কের অগ্রগতি হয়েছে। ক্ষমতার রাজনীতির বিরুদ্ধে এই দুই দেশকে একজোট হয়ে কাজ করতে হবে বলে জানিয়েছেন ওয়াং। যুক্তরাষ্ট্রের নাম মুখে না আনলেও পরোক্ষভাবে ডোনাল্ড ট্রাম্পকেই বার্তা দিয়েছেন তিনি। ওয়াং জানিয়েছেন, ক্ষমতার রাজনীতি ও আধিপত্যবাদের বিরুদ্ধে নেতৃত্ব দিতে হবে চীন ও ভারতকে। চীনের রাজধানী বেইজিংয়ে বার্ষিক এক সংবাদ সম্মেলনে এসব কথা বলেন দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী।
ভারত ও চীনের শক্তির কথা বলতে গিয়ে ‘হাতি’ ও ‘ড্রাগন’-এর উপমা ব্যবহার করেছেন চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী। তাঁর কথায়, ‘ড্রাগন ও হাতির মধ্যে সহযোগিতাপূর্ণ সম্পর্ক দুই দেশের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। ড্রাগন আর হাতিকে একসঙ্গে নাচিয়ে দিতে হবে। একে অপরের বিরুদ্ধে কথা না বলে পরস্পরকে সাহায্য করতে হবে। তাতে দুই দেশেরই লাভ, যদি এশিয়ার বৃহত্তম দুই অর্থনীতি একজোট হয়, সারা বিশ্বের জন্যই তা লাভজনক।
ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পরেই চীনকে কঠোর বার্তা দিয়েছেন। চীনের পণ্যে প্রথমে ১০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছিলেন তিনি। এরপর তা দ্বিগুণ করে দেন। বর্তমানে চীনের পণ্যে যুক্তরাষ্ট্র ২০ শতাংশ বাড়তি শুল্ক নিচ্ছে। ট্রাম্পের এ পদক্ষেপ ভালো চোখে দেখেননি সি চিন পিং। চীনও বসে নেই, তারা কঠোর বার্তা দিয়েছে।
বুধবার যুক্তরাষ্ট্রে অবস্থিত চীনা দূতাবাসের পক্ষ থেকে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে পোস্ট দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, ‘যুক্তরাষ্ট্র যদি যুদ্ধই চায়, তা শুল্কযুদ্ধ হোক, বাণিজ্যযুদ্ধ কিংবা অন্য কোনো যুদ্ধ, আমরা শেষ পর্যন্ত লড়াই করতে তৈরি আছি।’ জবাবে পেন্টাগন জানায়, তারাও তৈরি আছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে এই বাক্যবিনিময়ের মধ্যেই শুক্রবার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী বেইজিংয়ে বার্ষিক সংবাদ সম্মেলন করেন। ভারতের সঙ্গে সম্পর্কের প্রশ্ন উঠলে বন্ধুত্বের বার্তা দেন তিনি। বলেন, গত এক বছরে ভারত ও চীনের সম্পর্কের ইতিবাচক অগ্রগতি হয়েছে। আগামী দিনে এই দুই দেশ একসঙ্গে কাজ করলে তার একাধিক ইতিবাচক ফল পাওয়া যাবে।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: চ ন র পরর ষ ট রমন ত র
এছাড়াও পড়ুন:
আইএমএফের পর্ষদ বৈঠক ২৩ জুন, এরপর মিলতে পারে দুই কিস্তি অর্থ
২৩ জুন আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) নির্বাহী পর্ষদের বৈঠক ডাকা হয়েছে। সেই বৈঠকে বাংলাদেশের সঙ্গে আইএমএফের চলমান ঋণ কর্মসূচির দুই কিস্তির অর্থ ছাড়ের বিষয়টি উত্থাপনের কথা রয়েছে। বৈঠকে অনুমোদন হলে চলমান ঋণ কর্মসূচির আওতায় একসঙ্গে দুই কিস্তির অর্থ পাবে বাংলাদেশ। আইএমএফ গতকাল শুক্রবার তার কার্যসূচিতে নির্বাহী পর্ষদের বৈঠকের এ তারিখ নির্ধারণসংক্রান্ত তথ্য প্রকাশ করেছে।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্রে জানা যায়, আইএমএফের এ বৈঠকে চলমান ঋণ কর্মসূচির তৃতীয় ও চতুর্থ পর্যালোচনার (রিভিউ) প্রতিবেদন উপস্থাপনের কথা রয়েছে। এ প্রতিবেদন পর্ষদ অনুমোদন করলে বাংলাদেশ একসঙ্গে পেয়ে যাবে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ। দুই কিস্তির অর্থ একসঙ্গে হতে পারে ১৩০ কোটি মার্কিন ডলার।
এর আগে ২০২৩ সালের ৩১ জানুয়ারি আইএমএফ বাংলাদেশের জন্য সাড়ে তিন বছর মেয়াদি ৪৭০ কোটি ডলারের ঋণ প্রস্তাব অনুমোদন করে। ঋণ অনুমোদনের সময় আইএমএফ বলেছিল, বাংলাদেশের সামষ্টিক অর্থনীতির স্থিতিশীলতা বজায় রাখা, ঝুঁকিতে থাকা ও পিছিয়ে পড়া জনগোষ্ঠীকে সুরক্ষা দেওয়া এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক ও পরিবেশসম্মত প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে এ ঋণ কর্মসূচি। চলতি হিসাবের ঘাটতি বেড়ে যাওয়া, টাকার দরপতন ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমে যাওয়া—মূলত এ তিন কারণে ওই সময় আইএমএফের কাছে ঋণ চেয়েছিল তৎকালীন আওয়ামী লীগ সরকার।
আইএমএফের ঋণ কর্মসূচির মধ্যে বর্ধিত ঋণসহায়তা (ইসিএফ) ও বর্ধিত তহবিলসহায়তা (ইএফএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ৩৩০ কোটি ডলার। আর রেজিলিয়েন্স অ্যান্ড সাসটেইনেবিলিটি ফ্যাসিলিটি (আরএসএফ) বাবদ ঋণ রয়েছে ১৪০ কোটি ডলার। আরএসএফ আইএমএফের একটি নতুন তহবিল, যেখান থেকে এশিয়ার মধ্যে বাংলাদেশকেই প্রথম ঋণ দেওয়া হচ্ছে। ২০২৩ সালের ২ ফেব্রুয়ারি আইএমএফের কাছ থেকে প্রথম কিস্তির ৪৭ কোটি ৬৩ লাখ ডলার পায় বাংলাদেশ। একই বছরের ডিসেম্বরে দ্বিতীয় কিস্তির ৬৮ কোটি ১০ লাখ ডলার ও ২০২৪ সালের জুনে তৃতীয় কিস্তির ১১৫ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। অর্থাৎ তিন কিস্তিতে আইএমএফ থেকে এখন পর্যন্ত ২৩১ কোটি ডলার পেয়েছে বাংলাদেশ। বাকি আছে ঋণের ২৩৯ কোটি ডলার।
আইএমএফের ঋণের চতুর্থ কিস্তির অর্থ গত বছরের ডিসেম্বরে পাওয়ার কথা থাকলেও তা আর পাওয়া যায়নি। আইএমএফের সদর দপ্তর যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটনে অবস্থিত। প্রায় প্রতিবছর ওয়াশিংটনসহ প্রতিবেশী রাজ্যগুলোতে বড় ধরনের তুষারপাত হয়। গত বছরও তাই হয়েছে। অতিমাত্রার বরফের কারণে অচল হয়ে যায় জনজীবন। মার্কিন প্রশাসন সতর্কবার্তা জারি করে। তুষারপাতের কারণে আইএমএফসহ অনেক প্রতিষ্ঠান বন্ধ ছিল অনেক দিন।
পরে আইএমএফের পক্ষ থেকে প্রথমে এ বছরের ফেব্রুয়ারি ও পরে মার্চে পর্ষদ বৈঠকের কথা বলা হয়। গত এপ্রিলে আইএমএফের একটি দল পর্যালোচনা করতে ঢাকায় আসে দুই সপ্তাহের জন্য। এর মধ্যে শর্ত পরিপালন নিয়ে দর–কষাকষিতে চতুর্থ ও পঞ্চম কিস্তির অর্থ ছাড় আটকে যায়। এরপর ওয়াশিংটনে গত ২১ থেকে ২৬ এপ্রিল অনুষ্ঠিত আইএমএফ-বিশ্বব্যাংকের বসন্তকালীন বৈঠকে এ বিষয়ে আরও আলোচনা হলেও কোনো সুরাহা হয়নি। তখন দর-কষাকষি হচ্ছিল মূলত মুদ্রা বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করা নিয়ে। আইএমএফ তা চাইলেও করতে চাইছিল না সরকার।
সবশেষে গত মাসে এ নিয়ে আইএমএফের সঙ্গে কয়েকটি ভার্চ্যুয়াল বৈঠক করে বাংলাদেশ ব্যাংক। গত ১২ মে দুই পক্ষ চূড়ান্ত সমঝোতায় পৌঁছায় ও বিনিময় হার বাজারভিত্তিক করে বাংলাদেশ। ১৪ মে আইএমএফ ওয়াশিংটন থেকে এক বিবৃতিতে জানায়, দুই পক্ষের মধ্যে সমঝোতা হয়েছে এবং ঋণের অর্থ ছাড় করা হবে জুনে।
অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সাধারণত পর্ষদ বৈঠকে অনুমোদন হওয়ার দুই থেকে তিন দিনের মাথায় আইএমএফ অর্থ ছাড় করে দেয়। এবারও এর ব্যতিক্রম হবে না।