আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তাড়ানো হয়েছে, নতুন কোনো মুসিবত আনার জন্য নয় বলে মন্তব্য করেছেন জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) দক্ষিণাঞ্চলের মুখ্য সংগঠক হাসনাত আবদুল্লাহ। শনিবার সন্ধ্যায় নিজ উপজেলা কুমিল্লার দেবীদ্বারে দোয়া ও ইফতার মাহফিল শেষে সাংবাদিকদের সঙ্গে আলাপকালে তিনি এ মন্তব্য করেন।

হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘আমরা দেখতে পাচ্ছি, কোনো কোনো রাজনৈতিক দল আবার দেশের মানুষের জন্য মুসিবত হয়ে আসার চেষ্টা করছে। তবে আমরা আন্দোলনের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি, নতুন কোনো মুসিবত আনার জন্য নয়।

আমরা যেভাবে ফ্যাসিবাদ তাড়িয়েছি, ফ্যাসিবাদের বিরুদ্ধে আমাদের যেমন অবস্থান ছিল, তেমনই যারা নতুন করে ফ্যাসিবাদ হয়ে ওঠার চেষ্টা করবে, তাদের বিরুদ্ধেও আমাদের একই অবস্থান থাকবে।’

সাংবাদিকদের উদ্দেশে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘কোটা আন্দোলন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন, পরবর্তী সময়ে এক দফা আন্দোলন এবং আজকে ফ্যাসিবাদ-পরবর্তী বাংলাদেশে গণমাধ্যমের বস্তুনিষ্ঠতা, নিরপেক্ষতা, নিরলস পেশাদারির মধ্য দিয়ে সমাজের বাস্তব চিত্রগুলো উঠে আসছে। আমি প্রত্যাশা করব, গণমাধ্যমে এই বস্তুনিষ্ঠ সাংবাদিকতার চর্চা অব্যাহত থাকবে। আওয়ামী লীগের আমলে নিয়ন্ত্রিত সাংবাদিকতা দেখেছি। তবে আমি বিশ্বাস করি, রাজনৈতিক প্রভাবের বাইরে গিয়ে মতপ্রকাশের যে স্বাধীনতা পেয়েছে গণমাধ্যম, তা এই সময়ে এসে ইতিহাসে উদাহরণ হয়ে থাকবে।’

হাসনাত আবদুল্লাহ আরও বলেন, ‘দেশ সংস্কারের কাজ এখনো অব্যাহত রয়েছে। আমরা যে গণতান্ত্রিক উত্তরণের দিকে যাচ্ছি, সে ক্ষেত্রে আপনারা বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ প্রকাশে ভূমিকা রাখবেন। কোনো ধরনের পেশিশক্তি, কোনো ধরনের রাজনৈতিক শক্তির কাছে মাথানত করবেন না। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদের মাধ্যমেই জনগণের রাজনৈতিক দলগুলোর ওপর মতামত গড়ে ওঠে। জাতীয় নাগরিক পার্টি যে বার্তা মানুষের কাছে পৌঁছাতে চায়, আপনারা অখণ্ডিত ও বস্তুনিষ্ঠতার মধ্য দিয়ে তা সঠিকভাবে মানুষের কাছে পৌঁছে দেবেন, এটি গণমাধ্যমের কাছে আশা করছি।’

আগামী নির্বাচনে এনসিপির ৩০০ আসনে প্রার্থী দেওয়ার ব্যাপারে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, ‘গত ২৮ ফেব্রুয়ারি জাতীয় নাগরিক পার্টি আত্মপ্রকাশ করেছে। এরপর আমাদের প্রাথমিক কাজ হচ্ছে দলের নিবন্ধন করা, এরপর দলের সাংগঠনিক বিস্তারের প্রয়োজন রয়েছে। আমরা প্রথমত মনোযোগ দিচ্ছি সাংগঠনিক বিস্তারের দিকে। যেটির মধ্য দিয়ে আমরা নিবন্ধন কার্যক্রম সম্পন্ন করতে পারব। আমরা অবশ্যই সামনে নির্বাচন নিয়ে পর্যালোচনা করব।’

বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের কার্যক্রম সম্পর্কে হাসনাত আবদুল্লাহ বলেন, বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন একটি অরাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম। ফ্যাসিবাদবিরোধী ও গণহত্যার বিচারের দাবিতে তাঁদের কার্যক্রম অব্যাহত থাকবে। তাঁরা শুরু থেকেই বলে আসছেন, সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে এই ভূখণ্ড বা রাষ্ট্র থেকে কেউ বিশেষ সুবিধা নেবে, তা হতে দেওয়া হবে না। যদি কেউ সমন্বয়ক পরিচয় দিয়ে কোনো অন্যায় করেন, তাহলে তাঁর বিরুদ্ধে দেশের প্রচলিত আইনানুযায়ী বিচার হবে।

আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ে এনসিপির এই নেতা বলেন, ৫ আগস্টের আগে আওয়ামী লীগ পুলিশ বাহিনীকে লাঠিয়াল বাহিনী ও রাজনৈতিক স্বার্থ হাসিলের কাজে ব্যবহার করেছে। পুলিশসহ অন্যান্য যে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী আছে, তিনি তাদের বলতে চান, যদি তারা মনে করে, আবার কোনোভাবে আওয়ামী লীগ ফিরে আসবে, ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে, তারা তাদের মডেলের পুলিশিং করবে, সেটি বাংলাদেশে আর কখনোই হবে না। জনগণ যে ধরনের পুলিশিং চায়, সেই পুলিশিংয়ে তাদের তৎপর হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: র জন ত ক

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩