‘কাউরে না কাউরে আমার লাগবে, উপর থেকে প্রেশার আছে’
Published: 9th, March 2025 GMT
এটা বললে বাড়াবাড়ি হবে না, সময়ের আলোচিত নির্মাতা রায়হান রাফী সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণায় সিনেমা নির্মাণে সফল। ‘জানোয়ার’, ‘ফ্রাইডে’, ‘টান’, ‘খাঁচার ভেতর অচিন পাখি’র পর এবার সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে তিনি নিয়ে আসছেন ‘আমলনামা’। অল্পবিস্তর প্রায় সবাই জানেন, চরকি অরিজিনাল ফিল্ম ‘আমলনামা’ও সত্য কোনো ঘটনার ছায়া অবলম্বনে। ফিকশনের আশ্রয়ে রাফী এবার কোনো এক অঞ্চলের অদেখা দৃশ্য ও অনুভূতি দর্শকের সামনে আনার চেষ্টা করেছেন। সিনেমাটি চরকিতে আসছে ১২ মার্চ রাত ১২টা ১ মিনিটে (১৩ মার্চ)।
‘আমলনামা’র অফিশিয়াল পোস্টার প্রকাশ পায় ৩ মার্চ। পোস্টারে সিনেমার চরিত্রের ছবি তো আছেই, কিন্তু তার পেছনে ঝাপসা অক্ষরে লেখা ‘ক্রসফায়ার’, ‘বন্দুকযুদ্ধ’, ‘বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড’ শব্দগুলো। সেই থেকে দর্শকের ধারণা স্পষ্ট, ‘আমলনামা’র গল্পও এগিয়েছে সেই পথেই। ৮ মার্চ প্রকাশ পেয়েছে সিনেমাটির ট্রেলার। সেখানেও নানান ইঙ্গিত রয়েছে গল্পটির। ট্রেইলারের শেষে ইমরান জামান চরিত্রটির কণ্ঠে শোনা যায়, ‘কাউরে না কাউরে আমার লাগবে, ওপর থেকে প্রেশার আছে।’এ ছাড়া ট্রেলারে কিছু বাক্য ব্যবহার করা হয়েছে এমন, ‘মধ্যরাতে সাদাপোশাকে যাদের নিয়ে যায় ধরে’, ‘তাহারা কি সবাই আবার ফিরে আসে ঘরে?’
শুধু তা–ই নয়, ট্রেলারটি শুরু হয়েছে কবিতা দিয়ে। যার লাইন এমন—‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো, চোখ বেঁধে ফেল প্রভু/ আমি কোনোখানে কোনো মানুষের হৃদয় দেখিনি কভু।’ কামরুজ্জামান কামুর ‘আমাকে এবার পিছমোড়া করো’ কবিতা থেকে নেওয়া হয়েছে লাইন দুটি। মজার বিষয় হলো, ট্রেলারের জন্য আবৃত্তি করেছেন কবি নিজেই। সিনেমাটিতে তিনি অভিনয়ও করেছেন। কামু বলেন, ‘এই সিনেমায় অভিনয়ের অন্যতম কারণ হলো, আমার ও নির্মাতার ভাবনার মিল। রাফী যখন চরিত্রটির জন্য আমাকে বলেন, তখন ভেবে দেখলাম, যে কথা তিনি বলতে চান, সে কথা তো আমিও বলেছি, বলতে চাই। চরিত্রটি অনেক কিছু বলে এবং এটা বলা দরকার।’
‘আমলনামা’ ওয়েব সিনেমাটি নির্মিত হয়েছে এমন ‘বলা দরকার’-এর তাগিদ থেকেই। যে তাগিদ অনুভব করেছেন নির্মাতা রায়হান রাফী। তাঁর ভাষ্যে, ‘গল্পটা অনেক বছর আগেই ভাবা। যখনই কোনো ঘটনা আমাকে পীড়া দেয়, তখনই আমি সেটা নিয়ে একটু ঘাঁটাঘাঁটির চেষ্টা করি। যে ঘটনাটা নিয়ে এবার কাজ করেছি, সেটা এখনই বলতে পারছি না, কিন্তু ঘটনাটা আমাকে অনেক ভাবিয়েছে এবং কাঁদিয়েছে। এটা অনেক ইমোশনাল গল্প। যখন এটা নিয়ে আগাচ্ছিলাম, তখন চোখে পানি চলে আসছিল।’
রাফীর মতে, এ ধরনের কাজ তিনি যখনই করতে গেছেন, যখনই সমাজকে প্রশ্ন করেছেন, সিস্টেমকে প্রশ্ন করতে গেছেন, তখনই কোনো না কোনো সমস্যা এসেছে তাঁর সামনে। কিন্তু সেগুলো কখনোই আটকাতে পারেনি রাফীকে। তিনি বলেন, ‘আমি সিনেমা বানাই এবং সিনেমাই আমার প্রতিবাদের ভাষা। আমরা একটা সত্য ঘটনার অনুপ্রেরণা নিয়েছি ঠিকই, কিন্তু এটা মূলত ফিকশন। আমরা ঘটনার ইনার ফিলিংটা ধরার চেষ্টা করেছি। এমন ঘটনা অনেক হয়েছে, দর্শকেরা সেটা দেখলেই বুঝতে পারবেন।’
সত্য ঘটনার ছায়া অবলম্বনে কোনো কনটেন্ট বা সিনেমা নির্মাণ করলে রায়হান রাফী সেভাবেই নির্মাণ করতে চান, যেন অপরাধী দেখলেও আতঙ্কিত হয়, বুঝতে পারে, সে কী করেছে। ‘আমলনামা’তেও রাফী সেই চেষ্টা করেছেন বলে জানান। রাফী বলেন, ‘একটি ঘটনা থেকে অনুপ্রেরণা নিলেও সিনেমাটিতে নানা রকমের ঘটনা রয়েছে। তবে আমি বিশেষভাবে বলতে চাই, এটা একজন বাবারও গল্প।’
সিনেমায় পারভীন চরিত্রে অভিনয় করেছেন তমা মির্জা। ট্রেলারের প্রায় পুরোটা সময়জুড়ে তাঁর ছোটাছুটি। স্বামীকে ফিরে পাওয়ার জন্য তাঁর আকুতি বিভিন্ন দৃশ্যে স্পষ্ট। চরিত্র নিয়ে তিনি বলেন, ‘চরিত্রটা আমাকে বুঝিয়ে দেওয়ার পর ওই জগৎ থেকে আমি আর বের হতে পারিনি। আমার মনে হচ্ছিল যে চোখের সামনে সব ঘটছে। খুবই বাস্তবধর্মী একটি চরিত্র এবং চরিত্রটির যে টেনশন, সেটা দর্শকদেরও চিন্তিত করে তুলবে বলে আমার মনে হয়।’
সিনেমায় ইমরান জামানের চরিত্রে অভিনয় করেছেন জাহিদ হাসান। তিনি একজন পুলিশ সদস্য। তাঁর স্ত্রীর চরিত্রে আছেন সারিকা সাবরিন। সিনেমায় আরেকটি পরিবারে দেখা যাবে কামরুজ্জামান কামু ও তমা মির্জাকে। গাজী রাকায়েত, গীতাশ্রী চৌধুরী, হাসনাত রিপন, জান্নাতুল মাওয়া ঝিলিক, এ কে আজাদ সেতু, ইনায়া আর্যা অভিনয় করেছেন সিনেমায়। রায়হান রাফীর গল্পে ‘আমলনামা’র চিত্রনাট্য করেছেন রায়হান রাফী ও এস এম নজরুল ইসলাম।
উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
ধূসর রাত্রি কেবল আকর্ণবিস্তৃত
দূর থেকে উপগত হলে
শিকারি পাখির উড়ে যাওয়ার মতো
ছায়া ভুলে দূরে কোনো অভিভূত রোদে
যারা উড়ে যায়, অথবা উড়তে পারে,
যারা আকস্মিক জলজ বঙ্কিম কোনো
সরু রেখা ধরে নিজেকেই ক্রমাগত
অস্বীকার করে; কিংবা নিজ হাতে গড়া
বুদ্বুদের নাভি ছিঁড়ে রোদ লাগা চোখে
বহুবিধ শিস রাখে বাইরে বাইরে
তারা জানে ভালো করে—চোখের সকল
জমে থাকা ক্ষত দূর থেকে দেখা হলে
বিস্তারিত সব অঘটন চোখে পড়ে—
নিজ জামা খুলে কোলাহল ভুলে থাকা
চুপ কোনো বনগ্রামে উপগত হলে
মনে হয় দূর থেকে দেখা যায় বেশি—
একদম শেষে যেন আর কিছু নেই
কেবল মাথার পাশে পাখিরা উড়ছে,
সারা হাত-মুখে তোমার দেহের পলি
সুবাসিত হয়ে আছে গহিন আদরে,
বর্ষণের পরে আরও খুব কাছাকাছি
ডোরাকাটা জোছনার স্মৃতি ঝরে পড়ে,
সাদা কাশফুল হিল-হিল করে দোলে,
শরতের ভোর যেন সহসা এসেছে—
আস্বাদের পরে যত বেশি কাছাকাছি
সময় কাটানো যায়; যতখানি ভেঙে
চক্রাকারে নুয়ে দুজনের খুব কাছে
কুসুম ফুলের স্বরে মেখে থাকা যায়,
অধিক নির্জনে যতখানি কাছে আসি,
মধু রাখা মুখে তাকে শুধু প্রেম বলি—
আকাশে নিকিয়ে থাকা সব ঘন আলো
কমে আসার ভেতর উড়ে যাচ্ছে সব
ভরপেট সারসেরা; প্রান্তরের দেহে
পড়ে আসা রোদে মানুষের যাতায়াত
অনুমিত হয়; যেন তারাও ফিরছে
নিজ হাতে গড়ে রাখা উষ্ণতার কাছে,
কমলা রঙের পাশে অবিরাম কাঁপে
শীতলষষ্ঠী দিনের অনুগামী চাঁদ—
এরপর আকাশের বুক খুলে ধীরে
বের হয়ে আসা অনুপম হাওয়ারা
পৃথিবীর সব তামারঙা লোকদের
দেহের ভেতর দিয়ে উড়ে যায় আর
গাছদের সরু পাতাগুলো ঘিরে শুধু
শব্দ হয়, যেন রাত্রি এবার নামবে—
যখনই কোনো দুঃখ আসে আকস্মিক,
সারা দেহ ঘিরে করোটির চারপাশে
যখনই হৃদয়ের ডহরে ডহরে
করুণ জলের দেহ অনায়াসে কাঁপে,
কিংবা আয়ুর অসীমে কী এক বিরান
সব দ্বিধা ফেলে রেখে সমূহ বিস্তারে
নিদ্রাহীন ক্রীড়া করে আর প্রকাশিত
ফুলের কাছেই আফসোস খুলে পড়ে,
মাথার ভেতরে জমে থাকা আন্তরিক
সুবাসিত সব আলো, অরূপ রোশনি
জলের বিন্যাসে অবিরাম কেঁপে কেঁপে
অ্যাবসার্ড হয়ে পড়ে; যেন কিছু নেই
নিজের ছায়ার চারপাশে বিজড়িত,
ধূসর রাত্রি কেবল আকর্ণবিস্তৃত!
বিজড়িত কিছু ছেড়ে যাওয়ার পথে
পাখি বসে থাকা গাছের ভেতর দিয়ে
যেসব হাওয়া কেবল সুবাস রেখে
মৃদু মৃদু স্বরে বয়ে যায় নিরুদ্বেগে;
অথবা যেসব আনক জোরালো বর্ষা
পথ ভুল করে বা কোনো অপ্রয়োজনে
একহারা পাতা আর লাল শস্যদানা
ভেঙে ভেঙে রেখে উড়ে যায় দূর বনে,
তাদের শাঁসালো ভাষা রোদ ভরা দিনে
কিংবা ভারী হাওয়ার কোনো সন্ধ্যাকালে
আর সব স্মৃতিদের ম্রিয়মাণ করে
তিলাঘুঘুদের মতো ছোট ছোট দলে
দিনভর রাতভর পায়চারি করে
নখ রাখে অবিরাম উজানের পথে—