রাজধানীতে পুলিশের উপর হামলার প্রতিবাদ এবং গণজাগরণ মঞ্চের অন্যতম সংগঠক ও ছাত্র ইউনিয়নের সাবেক সভাপতি লাকি আক্তারের গ্রেপ্তার দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে বিক্ষোভ মিছিল করেছেন শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১১ মার্চ) দিবাগত মধ্য রাতে তারা এ বিক্ষোভ কর্মসূচি পালন করেন। রাইজিংবিডি ডটকমের বিশ্ববিদ্যালয় সংবাদদাতাদের পাঠানো খবরে বিস্তারিত-

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) 

আরো পড়ুন:

রাবিতে শিবির-ছাত্রদল এক মঞ্চে

রাবিতে ছাত্রশিবিরের কোরআন বিতরণ কর্মসূচি

ঢাবি শিক্ষার্থীরা রাত ১টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হল পাড়া থেকে বিক্ষোভ মিছিল নিয়ে বেশি চত্বর ও টিএসসি হয়ে শাহবাগে এসে একটি সংক্ষিপ্ত সমাবেশে মিলিত হয়। মিছিলের পর ২৪ ঘণ্টার মধ্যে লাকি আক্তারকে গ্রেপ্তারের আল্টিমেটাম দেন তারা।

এ সময় তারা ‘জুলাইয়ের বাংলায়, শাহবাগের ঠাঁয় নাই’, ‘ল তে লাকি, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘শা তে শাহবাগী, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘শাহবাগীরা হামলা করে, ইন্টেরিম কী করে’, ‘কাফন লাগলে কাফন নে, শাহবাগের কবর দে’, ‘জাস্টিস জাস্টিস, উই ওয়ান্ট জাস্টিস’, ‘আমার ভাই কবরে, লাকি কেন বাহিরে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি)

অন্তর্বর্তী সরকারকে হুমকি, দেশে অস্থিতিশীল পরিবেশ ও দায়িত্বরত পুলিশের উপর হামলার প্রতিবাদে মধ্যরাতে বিক্ষোভ করেছেন রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) গণঅভ্যুত্থান মঞ্চ।

মিছিল থেকে তারা স্বৈরাচার শেখ হাসিনার আমলে ২০১৩ সালে শাহবাগে গড়ে ওঠা প্ল্যাটফর্ম ‘গণজাগরণ মঞ্চের’ আলোচিত মুখ লাকি আক্তারকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে গ্রেফতারের দাবি জানান। এছাড়াও বিচার বহির্ভূত হত্যাকাণ্ডের সূচনাকারীদের গ্রেপ্তারের দাবি জানান তারা।

রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের জোহা চত্বর থেকে বিক্ষোভ মিছিল শুরু হয়। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রধান সড়ক ও আবাসিক হল প্রদক্ষিণ শেষে একই জায়গায় এসে মিলিত হন।

এ সময় ‘শাহবাগীদের আস্তানা, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘ল তে লাকি, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘শ তে শাহাবাগী, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘শাহাবাগির বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট অ্যাকশন’, ‘শাহবাগিদের গদিতে, আগুন জ্বালো একসাথে’, ‘বিচার বিচার বিচার চাই, শাহাবাগীদের বিচার চাই’, ‘শাহাবাগীরা হামলা করে, ইন্টেরিম কী করে?’, ‘উদ্যানের গাজাখোর উদ্যানে ফিরে যা’, ‘১৩ আর ২৫, এক নয় নয়’, ‘শাহাবাগ না শাপলা, শাপলা শাপলা’, ‘হলে হলে খবর দে, শাহবাগীদের কবর দে’, ‘জুলাইয়ের বাংলায়, শাহাবাগীদের ঠাই নাই’, ‘২৪ এর বাংলায়, শাহাবাগিদের ঠাই নাই’ ইত্যাদি স্লোগান দিতে দেখা যায় শিক্ষার্থীদের।

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় (জাবি)

মব সন্ত্রাসের প্রতিবাদে এবং শাহবাগের জুডিশিয়াল কিলিং এর বিচার দাবিতে রাত ২ টার দিকে বিক্ষোভ মিছিল ও সমাবেশ করেছেন জাবি শিক্ষার্থীরা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বটতলা থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের হয়ে বিভিন্ন সড়ক প্রদক্ষিণ করে আবার বটতলায় ফিরে আসে। পরবর্তীতে সেখানে সংক্ষিপ্ত সমাবেশের মধ্যে দিয়ে কর্মসূচি সমাপ্ত করা হয়। মিছিলে প্রায় শতাধিক শিক্ষার্থী অংশগ্রহণ করেন। 

বিক্ষোভ মিছিলে ‘সন্ত্রাস করে একদল, শাহবাগী মবের দল’, ‘শাপলা হত্যার বিচার চাই, করতে হবে করতে হবে’, ‘ল তে লাকী, তুই হাসিনা তুই হাসিনা’, ‘শাহবাগীদের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’, ‘শাহবাগ সন্ত্রাস করে, ইন্টেরিম কি করে’, ‘শাহবাগের কালো হাত, ভেঙে দাও গুড়িয়ে দাও’, ‘শাহবাগের বিরুদ্ধে, আগুন জ্বালো একসাথে’ ইত্যাদি স্লোগান দেন শিক্ষার্থীরা।

জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় (জবি)

গণজাগরণ মঞ্চের সংগঠক লাকি আক্তারকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করেছেন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা। একইসঙ্গে গ্রেপ্তার ও বিচারের দাবি জানিয়েছেন তারা। রাত দেড়টায় বিশ্ববিদ্যালয় এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেন শিক্ষার্থীরা। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভাস্কর্য চত্বরে ফিরে সংক্ষিপ্ত সমাবেশ থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ইংরেজি বিভাগের সাবেক শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্র ইউনিয়নে সাবেক নেত্রী লাকীকে অবাঞ্চিত ঘোষণা করা হয়।

বিক্ষোভ মিছিলে শিক্ষার্থীরা ‘১৩ এর খুনিরা, হুঁশিয়ার সাবধান’, ‘শাহবাগের বিরুদ্ধে, ডাইরেক্ট একশন’, ‘ল তে লাকি, তুই হাসিনা, তুই হাসিনা’, ‘শহীদেরা দিচ্ছে ডাক, শাহবাগ নিপাত যাক’, ‘ওয়ান, টু, থ্রি, ফোর, শাহবাগ নো মোর’, ‘শাহবাগের ঠিকানা, এই বাংলায় হবে না’ ইত্যাদি স্লোগান দেন।

ঢাকা/সৌরভ/আহসান/লিমন/ফাহিম/মেহেদী

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর কর ছ ন

এছাড়াও পড়ুন:

স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ চলবে: হামাস

স্বাধীন ও সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়ার প্রতিরোধ চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দিয়েছে হামাস। গত মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া এক ঘোষণাপত্রের অস্ত্র ত্যাগের আহ্বানের জবাবে সংগঠনটি এই প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে।

বৃহস্পতিবার হামাসের সংক্ষিপ্ত বিবৃতিতে বলা হয়েছে, দখলদারির অবসান এবং জেরুজালেমকে রাজধানী করে একটি স্বাধীন ও সম্পূর্ণ সার্বভৌম ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠা না হওয়া পর্যন্ত প্রতিরোধ থামবে না তারা।

মঙ্গলবার জাতিসংঘের সদর দপ্তর থেকে দেওয়া ঘোষণায় বলা হয়েছিল, ‘গাজায় যুদ্ধ বন্ধে হামাসকে (এই উপত্যকায়) তার শাসনের অবশ্যই অবসান ঘটাতে হবে এবং আন্তর্জাতিক অংশগ্রহণ ও সমর্থনের মাধ্যমে ফিলিস্তিনি কর্তৃপক্ষের কাছে অস্ত্র সমর্পণ করতে হবে। সার্বভৌম ও স্বাধীন ফিলিস্তিন রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যের সঙ্গে এটি সংগতিপূর্ণ।’

সৌদি আরব, কাতার, ফ্রান্স ও মিসরসহ ১৭টি দেশ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও আরব লিগ ঘোষণাপত্রটি সমর্থন করেছে। এটি ‘দ্য নিউইয়র্ক’ ঘোষণাপত্র হিসেবে পরিচিতি পেয়েছে।

বৃহস্পতিবার আলাদা এক বিবৃতিতে প্রতি শুক্রবার, শনিবার ও রোববার বিশ্বব্যাপী যুক্তরাষ্ট্র, ইসরায়েল ও তাদের মিত্র দেশগুলোর দূতাবাসের বাইরে বিক্ষোভ করার আহ্বান জানিয়েছে হামাস। ইসরায়েলের আগ্রাসন বন্ধ না হওয়া পর্যন্ত তা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানিয়েছে তারা।

অনাহারে মৃত্যু ১৫৪

গাজায় কর্মরত চিকিৎসকেরা জানিয়েছেন, উপত্যকাটিতে অনাহারে আরও দুই শিশু এবং এক তরুণ মারা গেছে। এ নিয়ে সেখানে অনাহারে মৃতের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫৪ জনে। তাদের মধ্যে শিশু ৮৯টি।

গাজায় প্রায় ২১ লাখ মানুষের বসবাস। উপত্যকাটিতে গত মার্চ থেকে নতুন করে অবরোধ শুরু করে ইসরায়েল। ফলে সেখানে ত্রাণবাহী কোনো ট্রাক প্রবেশ করতে পারছিল না। আন্তর্জাতিক চাপের মুখে সম্প্রতি কিছুদিন ধরে গাজায় সীমিত পরিমাণে ত্রাণ প্রবেশ করতে দিচ্ছে ইসরায়েল। এই ত্রাণ প্রয়োজনের তুলনায় অত্যন্ত নগণ্য।

ত্রাণ নিতে প্রাণহানি ১৩৭৩

জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয় জানিয়েছে, গাজায় গত মে মাস থেকে এখন পর্যন্ত ত্রাণ আনতে গিয়ে মোট ১ হাজার ৩৭৩ জন প্রাণ হারিয়েছেন। এর মধ্যে ৮৫৯ জন মারা গেছেন বিতর্কিত গাজা হিউম্যানিটারিয়ান ফাউন্ডেশনের (জিএইচএফ) ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রে। গত মে মাসের শেষ থেকে যুক্তরাষ্ট্রভিত্তিক সংস্থাটি ইসরায়েলি সেনাদের সহায়তায় গাজার কয়েকটি স্থানে ত্রাণ দিচ্ছে।

বাকি ৫১৪ জন মারা গেছেন ত্রাণবাহী ট্রাকের আশপাশে। তাঁরা ত্রাণের জন্য অপেক্ষা করছিলেন। অধিকাংশই ইসরায়েলের সেনাদের গুলিতে নিহত হয়েছেন বলে জানিয়েছে জাতিসংঘের মানবাধিকার কার্যালয়।

আল জাজিরার প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, শুক্রবার সকালে গাজায় অন্তত আরও ৪২ জন নিহত হয়েছেন। এর মধ্যে ত্রাণ আনতে গিয়ে প্রাণ হারিয়েছেন ১৫ জন। এই নিয়ে প্রায় ২২ মাসের সংঘাতে গাজায় ইসরায়েলি সেনাদের হামলা নিহত হয়েছেন অন্তত ৬০ হাজার ৩৩২ জন।

গাজায় স্টিভ উইটকফ

শুক্রবার মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ গাজা সফর করেছেন। তিনি উপত্যকাটির রাফা এলাকায় জিএইচএফের একটি ত্রাণ বিতরণ কেন্দ্রও ঘুরে দেখেন। এ সময় ইসরায়েলে নিয়োজিত মার্কিন রাষ্ট্রদূত মাইক হুকাবি তাঁর সঙ্গে ছিলেন। তাঁরা পাঁচ ঘণ্টার বেশি গাজায় ছিলেন।

সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম এক্সে উইটকফ নিজেই এই কথা জানিয়েছেন। আগের দিন তিনি ইসরায়েলের প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন। উইটকফ বলেছেন, ‘মাঠের পরিস্থিতি বুঝতে ও তথ্য সংগ্রহ করতে আমরা গাজায় গিয়েছিলাম। গাজার মানবিক পরিস্থিতির একটি স্পষ্ট ধারণা মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের কাছে পৌঁছে দেওয়াই আমার উদ্দেশ্য, যাতে করে গাজাবাসীর জন্য খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা পৌঁছাতে পরিকল্পনা প্রণয়নে সহায়তা করা যায়।’

গার্ডিয়ানের প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্পের মধ্যপ্রাচ্য-বিষয়ক বিশেষ দূত ও আবাসন খাতের সাবেক আইনজীবী উইটকফের আন্তর্জাতিক নীতি ও মানবিক সহায়তা-সংক্রান্ত কোনো অভিজ্ঞতা নেই। তা সত্ত্বেও তিনি মধ্যপ্রাচ্যের সংকট সমাধানের চেষ্টার পাশাপাশি রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধেও কূটনীতি চালাচ্ছেন। এরই মধ্যে তিনি রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক করেছেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ