পাকিস্তানে মঙ্গলবার বিচ্ছিন্নতাবাদী বিদ্রোহীরা একটি ট্রেন ছিনতাই করে প্রায় ৫০০ যাত্রীকে জিম্মি করে। পরে এই হামলার দায় স্বীকার করেছে বালুচ লিবারেশন আর্মি (বিএলএ)। এই সংগঠনটি দীর্ঘদিন ধরে দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় বেলুচিস্তানে স্বাধীনতার দাবিতে সশস্ত্র সংগ্রাম চালিয়ে যাচ্ছে।

নিরাপত্তা বাহিনীর কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, রাতভর অভিযানে সেনাবাহিনী অন্তত ১৯০ জন জিম্মিকে উদ্ধার করতে সক্ষম হয়েছে এবং ৩০ বিদ্রোহীকে হত্যা করেছে। অন্যদিকে বিএলএ দাবি করেছে, তারা পাকিস্তানের ৩০ সেনাসদস্যকে হত্যা করেছে এবং একটি ড্রোন ভূপাতিত করেছে।

বুধবার যুক্তরাজ্যভিত্তিক ইন্ডিপেন্ডেন্ট জানিয়েছে, বিদ্রোহীরা কোয়েটা থেকে পেশোয়ারগামী জাফর এক্সপ্রেস ট্রেনটিতে বলান পার্বত্য অঞ্চলে হামলা করে। এ ক্ষেত্রে প্রথমে তারা রেললাইনে বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ট্রেনটি থামিয়ে দেয় এবং এটিকে মাশকাফ টানেলের ভেতর আটকে ফেলে।

‘বিএলএ’ বেলুচিস্তানের অন্যতম বৃহৎ বিচ্ছিন্নতাবাদী গোষ্ঠী। পাকিস্তানের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের কাছেও এটি সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে চিহ্নিত। বিএলএ দাবি করেছে, তারা বালুচ রাজনৈতিক বন্দিদের মুক্তি চায়। এসব বন্দিকে পাকিস্তানের সামরিক বাহিনী গোপন অভিযানে আটক করেছে বলে অভিযোগ রয়েছে।

এদিকে আধুনিককালের ইতিহাসে ট্রেন ছিনতাইয়ের ঘটনা খুবই বিরল। পাকিস্তানে ট্রেন ছিনতাইয়ে যুক্ত দ্য বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির  কৌশলগত লড়াই মূলত গেরিলা যুদ্ধকে ঘিরে আবর্তিত। তাই বিএলএর একা এ ঘটনা ঘটানোর সক্ষমতা থাকার বিষয়টি নিয়ে সন্দেহ দেখা দিয়েছে। কোনো না কোনো রাষ্ট্রীয় পৃষ্ঠপোষক এর সঙ্গে জড়িত বলে ধারণা করা হচ্ছে। খবর- ডন।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব এলএ

এছাড়াও পড়ুন:

দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম, এখানে সাম্প্রদায়িকতার জায়গা নেই: জেড আই খান পান্না

মোহাম্মদ আলী জিন্নাহর দ্বিজাতিতত্ত্বের কবর দিয়েই বাংলাদেশের জন্ম হয়েছে মন্তব্য করে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না বলেছেন, এই দেশে সাম্প্রদায়িকতার কোনো স্থান নেই।

আজ শুক্রবার সুপ্রিম কোর্ট বারের হলরুমে ‘বাংলাদেশে মানবাধিকার সংকট ও আইনি প্রতিকার পাওয়ার পথ’ শীর্ষক এক সেমিনারে প্রধান অতিথির বক্তব্যে এসব কথা বলেন জেড আই খান পান্না। সেমিনারটির আয়োজন করে আন্তর্জাতিক সংস্থা হিউম্যান রাইটস কংগ্রেস ফর বাংলাদেশ মাইনোরিটিস (এইচআরসিবিএম), বাংলাদেশ চ্যাপ্টার।

বক্তব্যে জেড আই খান পান্না বলেন, ‘এখানে সংখ্যালঘুর কথা বলা হচ্ছে। একজন মুক্তিযোদ্ধা হিসেবে এখন আমি সবচেয়ে বেশি সংখ্যালঘু। আজ মুক্তিযোদ্ধার গলায় জুতার মালা দেখি, জুতা দিয়ে বাড়ি দিতে দেখি, কিন্তু কিছু করতে পারি না। তাই আমি সবচেয়ে বড় অসহায়।’

এসব কথা বলতে বলতে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী জেড আই খান পান্না কেঁদে ফেলেন। কান্নাজড়িত কণ্ঠে তিনি বলেন, জীবনে কখনো জেনে-বুঝে অন্যায়ের সঙ্গে আপস করেননি। যাঁরা মুক্তিযুদ্ধকে ধারণ করেন, তাঁদের অন্যায়ের বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর আহ্বান জানান তিনি।

জেড আই খান পান্না আরও বলেন, ৩০ লাখ শহীদ আর ২ লাখ মা-বোনের ইজ্জতের বিনিময়ে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে, কারও সঙ্গে এর তুলনা চলে না। এটা সাম্প্রদায়িকতার দেশ না। সংবিধানে যেন কেউ হাত না দেয়। সরকারের অনেকেই বিদেশি হয়েও স্বদেশি ভাব দেখাচ্ছেন।

সেমিনারে বিশেষ অতিথির বক্তব্যে সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী সুব্রত চৌধুরী বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘুদের মৌলিক অধিকার ও মানবাধিকার যেন নিঃশেষ হয়ে গেছে। সমাজে ন্যায়বিচার বা সুবিচার পাওয়ার কথা থাকলেও তা মিলছে না। সংখ্যালঘুদের ওপর হামলার বিচার হয় না। কেউ কেউ ধরা পড়লেও পরে বেরিয়ে যায়।

সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী সুমন কুমার রায় বলেন, সব সরকারের আমলেই বাংলাদেশের সংখ্যালঘুরা নির্যাতিত। বর্তমান নিরপেক্ষ অন্তর্বর্তী সরকারের আমলেও সবচেয়ে বেশি উপেক্ষিত সংখ্যালঘু জনগোষ্ঠী। সংস্কার কমিশনে সংখ্যালঘুদের কোনো প্রতিনিধিত্ব নেই। রংপুরসহ বিভিন্ন এলাকায় হামলা হলেও সরকারের কোনো প্রতিক্রিয়া আসে না, এমনকি দুঃখও প্রকাশ করে না।

গত বছরের ৫ আগস্টের পর সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতনের প্রেক্ষিতে প্রতিবাদ শুরু হলে তা দমন করতেই ষড়যন্ত্র শুরু হয়েছে উল্লেখ করে সুমন কুমার দাবি করেন, বাংলাদেশ সম্মিলিত সনাতনী জাগরণ জোটের মুখপাত্র চিন্ময় কৃষ্ণ দাস ব্রহ্মচারীকে মিথ্যা মামলায় গ্রেপ্তার করা হয়েছে। সনাতনী সম্প্রদায়ের বাক্‌স্বাধীনতা বন্ধ করতে, নেতৃত্ব দমন করতে এসব করা হচ্ছে।

সেমিনারে সভাপতিত্ব করেন সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী জে কে পাল। সঞ্চালনায় ছিলেন এইচআরসিবিএমের বাংলাদেশ চ্যাপটারের আহ্বায়ক লাকি বাছাড়। সেমিনারে আরও বক্তব্য দেন সুপ্রিম কোর্টের জ্যেষ্ঠ আইনজীবী মনজিল মোরশেদ ও মো. গোলাম মোস্তফা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ