ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় হামলা-সংঘর্ষের ঘটনায় মামলা করেছে পুলিশ। বুধবার রমনা থানার এসআই আবুল খায়ের পুলিশের ওপর হামলার অভিযোগে এ মামলা করেন। এতে বাম সংগঠনের ১২ নেতাকর্মীর নামে ও অজ্ঞাতপরিচয় অন্তত ৮০ জনকে আসামি করা হয়েছে।

আসামিরা হলেন– বাংলাদেশ ছাত্র ফেডারেশনের সাধারণ সম্পাদক সৈকত আরিফ, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সভাপতি মেঘমল্লার বসু ও সাধারণ সম্পাদক মাঈন আহম্মেদ, ছাত্র ফেডারেশন ঢাকা মহানগরের সভাপতি আল আমিন রহমান, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্টের ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সভাপতি সুমাইয়া শাহিনা, গণতান্ত্রিক ছাত্র কাউন্সিলের সাধারণ সম্পাদক ফাহিম আহাম্মদ চৌধুরী, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্র ইউনিয়নের নেত্রী আদ্রিতা রায়, ছাত্র ফেডারেশনের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত আরমানুল হক, হাসান শিকদার ও সীমা আক্তার, বাম ছাত্র সংগঠনের সঙ্গে জড়িত মশিউর রহমান রিচার্ড এবং অং অং মারমা।

ডিএমপির রমনা বিভাগের উপকমিশনার (ডিসি) মাসুদ আলম বলেন, পুলিশের ওপর হামলার ঘটনায় মামলা হয়েছে। আসামিদের কাউকে এখন পর্যন্ত গ্রেপ্তার করা যায়নি। 

এজাহারে বলা হয়, প্রধান উপদেষ্টার বাসভবনের নিরাপত্তা ও রাস্তায় যানবাহন চলাচল স্বাভাবিক রাখতে মিছিলকারীদের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি না করার অনুরোধ করেন ঊধ্বর্তন পুলিশ কর্মকর্তারা। মিছিলকারীরা অনুরোধের তোয়াক্কা না করে লাঠিসোটা নিয়ে হামলা চালান। এতে রমনা জোনের সহকারী কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুন, পুলিশ সদস্য রায়হান, কাউছার, রোহান, সাইফুল ইসলাম, রাজারবাগের নারী পুলিশ সদস্য আদিবা ও রুবিনা গুরুতর আহত হন।

দেশব্যাপী ধর্ষণ ও নারী নির্যাতন নিয়ে বিভিন্ন মহলের উদ্বেগ-প্রতিবাদের মধ্যে সম্প্রতি গড়ে ওঠে ‘ধর্ষণ ও নিপীড়নের বিরুদ্ধে বাংলাদেশ’ নামে প্ল্যাটফর্ম। মঙ্গলবার সংগঠনের ব্যানারে প্রধান উপদেষ্টার বাসভবন অভিমুখে গণপদযাত্রা কর্মসূচি হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টালের সামনে পুলিশ আটকে দিলে সংঘর্ষ হয়। এ ঘটনায় পুলিশ ও বিক্ষোভকারীরা পরস্পরের ওপর দায় চাপাচ্ছে। পুলিশ সদরদপ্তর বিবৃতিতে দাবি করেছে, বিক্ষোভকারীরা পরিকল্পিতভাবে হামলা করলে পুলিশ তা প্রতিহত করে। অন্যদিকে বিক্ষোভকারীরা বলেছেন, পুলিশ প্রথমে উস্কানি দেয়। পরে হামলা করে। 

এদিকে মামলার আসামি ঢাবি ছাত্র ফেডারেশনের আহ্বায়ক আরমানুল হক ও মশিউর রহমান রিচার্ড দাবি করেছেন, তারা ঘটনাস্থলে ছিলেন না। আরমানের দাবি, তিনি দিনাজপুরের খানসামায় ছিলেন। 

পুলিশ কর্মকর্তা মামুনের অপসারণ দাবি

হামলার জন্য সহকারী পুলিশ কমিশনার আবদুল্লাহ আল মামুনকে ২৪ ঘণ্টার মধ্যে অপসারণের দাবি জানান বিক্ষোভকারীরা। সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট ইডেন মহিলা কলেজ শাখার সভাপতি সুমাইয়া শাহিনা সমকালকে বলেন, কর্মসূচি থেকে প্রধান উপদেষ্টাকে স্মারকলিপি দেওয়ার পরিকল্পনা ছিল আমাদের। কিন্তু পুলিশ হোটেল ইন্টারকন্টিনেন্টাল মোড়ে আটকে দিয়ে প্রথমে উস্কানি দেয়। পরে মিছিলে হামলা করে।

ডিসি মাসুদ আলম বলেন, ‘আন্দোলনকারীরা বারবার শান্তিপূর্ণ কর্মসূচি ও স্মারকলিপি দিয়ে চলে যাবেন জানান। ফলে কোনো ধরনের অ্যাকশনের পরিকল্পনা আমাদের ছিল না। কিন্তু তারা পূর্বপরিকল্পিতভাবে পুলিশের ওপর হামলা করেছে।’

এদিকে ধর্ষণবিরোধী পদযাত্রায় পুলিশের লাঠিপেটার ঘটনায় ক্ষোভ ও বিস্ময় প্রকাশ করেছে বাংলাদেশ মহিলা পরিষদ। গতকাল সংগঠনের সভাপতি ডা.

ফওজিয়া মোসলেম ও সাধারণ সম্পাদক মালেকা বানু এক বিবৃতিতে এ দাবি জানান তারা।

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: পদয ত র স ঘর ষ স গঠন র র কল প ঘটন য় র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে বংশে তিনি প্রথম, তাই এত আয়োজন

চীনে উচ্চশিক্ষার জন্য অভিজাত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর মধ্যে প্রথম সারিতে রয়েছে বেইজিংয়ের পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়। সেখানে ভর্তি হওয়ার সুযোগ পাওয়া দেশটির যেকোনো শিক্ষার্থীর জন্য দারুণ সম্মানের। এ বছর পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছেন লি গুওইয়াও।

লির বাড়ি জেজিয়াং প্রদেশের ওয়েনজউ শহরে। এর আগে তাঁর বংশে শত বছরের ইতিহাসে কেউ পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সুযোগ পাননি। এত বড় সম্মানের উপলক্ষ উদ্‌যাপন করতে তাই বিন্দুমাত্র কার্পণ্য করেননি লির পরিবার ও গ্রামের বাসিন্দারা। রীতিমতো লালগালিচা বিছিয়ে, মোটর শোভাযাত্রা করে, ব্যান্ড বাজিয়ে পরিবার ও গ্রামের মুখ উজ্জ্বল করা লিকে সংবর্ধনা দেন তাঁরা, সঙ্গে ছিল ভূরিভোজের ব্যবস্থা। চীনের সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম উইবোতে এই সংবর্ধনার ছবি ও ভিডিও রীতিমতো ভাইরাল হয়ে যায়।

চীনে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য জাতীয় পর্যায়ে একটি পরীক্ষা নেওয়া হয়। যেটি ‘গাওকাও’ নামে পরিচিত। তীব্র প্রতিযোগিতাপূর্ণ এই পরীক্ষা বেশ কঠিন। পরীক্ষায় মোট ৭৫০ নম্বরের মধ্যে লি পেয়েছেন ৬৯১।

লির গ্রামের এক প্রতিবেশী জানান, লির বাবা নির্মাণশ্রমিক। লির মা মাত্র ২ হাজার ৮০০ ইউয়ান বেতনে একটি সুপারশপে কাজ করেন। সত্যি বলতে, ছেলেটি সম্পূর্ণ নিজের চেষ্টা আর পরিশ্রমে এটা অর্জন করেছেন।

প্রতিবেশী আরেক গ্রামবাসী বলেন, লি তাঁর বাবার কাছ থেকে পাওয়া একটি পুরোনো মুঠোফোন দিয়ে প্রশ্নোত্তর অনুশীলন করতেন। সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় গ্রামের গ্রন্থাগারে বসে পরীক্ষার প্রশ্নপত্র হাতে লিখে তারপর সেগুলো অনুশীলন করতেন। মাধ্যমিকে তিনি কখনো কোনো প্রাইভেট শিক্ষকের কাছে পড়েননি।

লিকে সংবর্ধনা দিতে শতাব্দীপ্রাচীন ঐতিহ্য ভেঙে তাঁদের গ্রামের পূর্বপুরুষদের মন্দিরের প্রধান ফটক খোলা হয়, যা একটি বিশেষ সম্মানের প্রতীক হিসেবে বিবেচিত।

লিকে সংবর্ধনা দেওয়ার ছবি ও ভিডিও চীনজুড়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

অনলাইনে একজন লেখেন, ‘পিকিং বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হতে ৬৯১ নম্বর! এটা অবিশ্বাস্য। সত্যিই পুরো পরিবারের মুখ উজ্জ্বল করেছে!’

তবে কেউ কেউ এই জমকালো উদ্‌যাপন নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।

তাঁরা বলেছেন, এটা কি একটু বাড়াবাড়ি নয়? উৎসবটা খুবই জাঁকজমকপূর্ণ, এতে ছেলেটার ওপর অকারণ চাপ তৈরি হতে পারে। স্নাতক হওয়ার পর কি পরিবার তাঁর কাছ থেকে অনেক বেশি কিছু প্রত্যাশা করবে না?

সম্পর্কিত নিবন্ধ