সব স্তরে নারীর সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে
Published: 14th, March 2025 GMT
সমাজে নারীদের করুণ দশার পেছনে দায়ী একটি শব্দের নাম ‘পুরুষতন্ত্র’, যা শুধু পুরুষদের মধ্যেই নয়, সমাজের নারীদের মধ্যেও প্রবল। এ ধরনের সমাজ ব্যবস্থার সঙ্গে সক্রিয়ভাবে লড়াই করতে হবে। বর্তমান নতুন এই সময় ও সুযোগ কাজে লাগিয়ে সব স্তরে নারীর অধিকার এবং সুরক্ষা নিশ্চিত করতেই হবে।
গতকাল বৃহস্পতিবার মাগুরার শিশু আছিয়ার মৃত্যুর ঘটনায় সমকালকে এই কথা বলেন বাংলাদেশ মহিলা পরিষদের সভাপতি ডা.
তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় ডা. ফওজিয়া মোসলেম বলেন, বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশের অবস্থা যেমন নাজুক হয়ে পড়েছে, তেমনি নারীর অবস্থা আরও বিপজ্জনক অবস্থায় আছে। এ অবস্থা থেকে উত্তরণের পথ একটাই, এগুলোর বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়া। নারী আন্দোলন আরও বেগবান করা এবং এই আন্দোলনে সবাইকে সক্রিয়ভাবে অংশগ্রহণ করতে হবে। এসব ঘটনাকে যতদিন আমরা শুধু নারীর ইস্যু ভাবব, ততদিন এখান থেকে আমরা মুক্ত হতে পারব না। নারীর প্রতি অবমাননা, সহিংসতা এসব সামাজিক সমস্যা। এতে কিন্তু সমাজটাকেই প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। নারীকে প্রশ্নবিদ্ধ করার পাশাপাশি সমাজকেও প্রশ্নবিদ্ধ করা হচ্ছে। কারণ সমাজ নারীকে নিরাপত্তা দিতে পারছে না, নারীর অধিকার নারীকে দিতে পারছে না। তাই এটাকে নারীর সমস্যা না ভেবে সমাজের অগ্রগতিতে বাধা হিসেবে দেখতে হবে।
তিনি আরও বলেন, আছিয়ার বিষয়টি খুবই দুঃখজনক। তার মৃত্যুটা মেনে নেওয়া কারও পক্ষেই সম্ভব না। তারপরও আমাদের থেমে যাওয়া যাবে না। সমাজ ও রাষ্ট্রের দায়িত্বে যারা আছেন, তাদের দায়বদ্ধতা থেকেই এ ধরনের ঘটনাগুলোর কারণ খুঁজে বের করতে হবে। সমাধানের পথ বের করতে হবে। আছিয়ার সঙ্গে যারা অন্যায় করেছে, প্রত্যেকের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিত করতে হবে। তাহলে ভবিষ্যতে আছিয়ার মতো আর কোনো শিশু ও নারীর প্রতি সহিংসতা ঘটানোর আগে তারা ভাববে। এ জন্য রাষ্ট্রের দায়িত্বপ্রাপ্ত ব্যক্তিদের দৃষ্টি খুলে দিতে হবে। একই সঙ্গে আছিয়ার পরিবারের বিষয়ে ভাবতে হবে। সেইসঙ্গে এ ঘটনায় যেন দ্রুত বিচার হয়, পাশাপাশি ভবিষ্যতে যাদের ওপর অত্যাচার করা হবে, তারাও যেন যথার্থ বিচার পায়– সে বিষয়ে সরকারকে নজর দিতে হবে।
অধ্যাপক মেহজাবীন হক বলেন, যখন একটি ঘটনা ঘটে তখন চারদিকে কয়েক দিন উত্তেজনা চলে। তবে কোনো পরিবর্তন আসে না। আবার অন্য আরেকটি বিষয় আসে, সেটাতে আমরা মগ্ন হয়ে যাই। এ বিষয়ে আমাদের সচেতন হতে হবে।
তিনি বলেন, যে অস্থির সময়ে মানুষের মধ্যে কুপ্রবৃত্তিগুলো জাগিয়ে তোলে, ধর্ষণের যে ঘটনাগুলো ঘটেছে, এর পেছনে একক কোনো ঘটনা নেই। অনেকগুলো কারণ মিলে ঘটনা হতে পারে। সমাজে মেয়ে বাচ্চাকে শেখানো হচ্ছে, তুমি অবলা। তোমার ওপর অত্যাচার হলে তুমি চুপ করে থাকবে, মেনে নেবে। যে মেয়েগুলো এখন প্রতিবাদ করছে, তাদের আবার আমরা দোষারোপ করছি। এই চর্চা আমাদের সমাজে দীর্ঘদিন ধরে চলে আসছে। এই মানসিকতার পরিবর্তন যতদিন না আসবে, ততদিন আমরা এই ধরনের অন্যায় আচরণগুলো করে যাব। মেয়েদেরও শেখাতে হবে তাদের আত্মরক্ষার কৌশল, ওরাও যেন প্রতিবাদ করে।
শিশু আছিয়া প্রসঙ্গে ড. মেহজাবীন হক বলেন, অনেক সময় মেয়েরাই মেয়েদের শত্রু। আছিয়ার ক্ষেত্রে এটি হয়েছে, সেখানে কিন্তু একজন নারী উপস্থিত আছেন। তিনি কিন্তু তাঁর পরিবারের সদস্যদের অন্যায় আচরণের সুযোগ করে দিয়েছেন। তিনিও কিন্তু পুরুষের প্রতিনিধিত্ব করছেন। সমাজ এইভাবে শেখায়। ফলে আমাদের মানসিকতায় পরিবর্তন আনতে হবে। এটার জন্য সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টা লাগবে। যখন এ রকম একটা ঘটনা ঘটে, তখন আশপাশে আরও ঘটনা ঘটে। তখন বিকৃত মনমানসিকতার মানুষগুলো ভাবে, এটা তো একটা সুযোগ। সে কিন্তু শাস্তির ভয় পায় না। সে ভাবে এগুলো তো হাতের নাগালের মধ্যেই আছে। অন্যদিকে সমাজে মা-বাবারা বলেন, হয়েছে কাউকে বলিও না। ফলে পুরুষ আরও উৎসাহী হয় অপকর্ম করার জন্য। সে জন্য কঠোর দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। জনসমক্ষে শাস্তি দেওয়া। আমি ফাঁসির পক্ষে না। তবে এখন মনে হয় কিছু কিছু কাজের ক্ষেত্রে এটি দেওয়া যায়। তিনি বলেন, কথায় কথায় নারীর দোষ, এই মানসিকতা থেকে বের হতে হবে। নারীকে নারীর দৃষ্টিতে দেখতে হবে।
উৎস: Samakal
এছাড়াও পড়ুন:
বেড়েছে মাছ, মুরগি ও ডিমের দাম
উৎপাদন ও বাজারে সরবরাহ কম থাকায় বেড়েছে ডিমের দাম। বিক্রেতারা বলছেন, উৎপাদন কম হওয়ায় খামারিরা মুরগি বিক্রি করে দিচ্ছেন এবং টানা বৃষ্টিপাতের জন্য সরবরাহ ব্যাহত হচ্ছে।
শুক্রবার (১ আগস্ট) রাজধানীর নিউ মার্কেট, রায়েরবাজারসহ গুরুত্বপূর্ণ বাজারগুলো ঘুরে ক্রেতা-বিক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, গত সপ্তাহে ফার্মের মুরগির ডিম বিক্রি হয়েছে প্রতি ডজন ১২০ টাকায়, এ সপ্তাহে তা বিক্রি হচ্ছে ১৩০ থেকে ১৩৫ টাকায়। সেই হিসেবে ডিমের দাম বেড়েছে ১০ থেকে ১৫ টাকা।
সবজির দাম স্বাভাবিক
এ সপ্তাহে বাজারে টমেটো ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম স্বাভাবিক আছে। গত সপ্তাহে টমেটো বিক্রি হয়েছিল ১২০ থেকে ১৩০ টাকায়, এ সপ্তাহে বিক্রি হচ্ছে ১৫০ টাকায়। কাঁচামরিচ ২০০ টাকা, শশা ৭০ টাকা, বেগুন ৭০ থেকে ৮০ টাকা, করলা ৭০ টাকা, গাজর (দেশি) ১২০ থেকে ১৩০ টাকা, চিচিঙ্গা ৪০ টাকা, বরবটি ৭০ থেকে ৮০ টাকা, ঢেঁড়স ৪০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ৩০ টাকা, পটল ৫০ টাকা, কাকরোল ৬০ টাকা, কচুরমুখী ৬০ টাকা, প্রতিটি পিস জালি কুমড়া ৫০ টাকা এবং লাউ ৫০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
মুদিবাজারে চালসহ অন্যান্য নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম স্থিতিশীল আছে। তবে, পেঁয়াজের দাম সামান্য বেড়েছে। এ সপ্তাহে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি দরে। গত সপ্তাহে ৫৫ টাকায় কেজিতে বিক্রি হয়েছে। প্রতি কেজি আলু বিক্রি হচ্ছে ২৫ থেকে ৩০ টাকায়। রসুন ১৮০ থেকে ২০০ টাকা এবং দেশি আদা ১৭০ থেকে ১৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
বেড়েছে মাছ ও মুরগির দাম
বিক্রেতারা বলছেন, নদীতে পানি বৃদ্ধির জন্য জেলেদের জালে মাছ কম ধরা পড়ছে এবং উজানের পানিতে খামারিদের পুকুর ও ঘের তলিয়ে যাওয়ায় মাছের দাম বেড়েছে। বাজারে এখন মাঝারি সাইজের চাষের রুই মাছ বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে থেকে ৩৫০ টাকায়। চাষের পাঙাসের কেজি ২০০ থেকে ২২০ টাকা, তেলাপিয়া ২০০ থেকে ২২০ টাকা, মাঝারি সাইজ কৈ মাছ ২৫০ থেকে ২৮০ টাকা, দেশি শিং ৬৫০ থেকে ৭০০ টাকা, বড় সাইজের পাবদা ৬০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, দেশি পাঁচমিশালি ছোট মাছ ৬০০ টাকা এবং এক কেজির বেশি ওজনের ইলিশ মাছ বিক্রি হচ্ছে ২ হাজার ৫০০ থেকে ২ হাজার ৬০০ টাকায়।
এ সপ্তাহে প্রতি কেজি ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ১৮০ টাকা, যা গত সপ্তাহ ছিল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা। সোনালি মুরগি বিক্রি হচ্ছে ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকায়। গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৮০০ টাকা এবং খাসির মাংস ১ হাজার ১৫০ থেকে ১ হাজার ২০০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
ঢাকা/রায়হান/রফিক