নীতি সহায়তা চেয়ে এনবিআরকে বিজিবিএর ৫ প্রস্তাব
Published: 14th, March 2025 GMT
জাতীয় রাজস্ব বোর্ডের (এনবিআর) চেয়ারম্যানের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠিত প্রাক-বাজেট আলোচনায় বেশ কয়েকটি নীতি সহায়তা চেয়ে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্টস বায়িং হাউজ অ্যাসোসিয়েশন (বিজিবিএ)।
বৃহস্পতিবার দুপুরে আগারগাঁওয়ের এনবিআর ভবনে এ আলোচনায় বিভিন্ন সংগঠনের ব্যবসায়ী নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
বিজিবিএ’র সিনিয়র সহ-সভাপতি এ কে এম সাইফুর রহমান এ সহায়তা চেয়ে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছেন। এগুলো হলো- অগ্রিম আয়কর (এআইটি) সাড়ে ৭ শতাংশ করা, নমুনার জন্য একটি পৃথক পাস বই চালু, লোকাল সোর্স ফ্যাব্রিক ও ট্রিমস ব্যবহার করে রপ্তানির অনুমতি, রপ্তানির পর শুল্ক প্রত্যাহার এবং আন্তর্জাতিক ট্রেড মেলার জন্য ভর্তুকি।
এ ছাড়াও পোশাক রপ্তানি বাড়ানোর ক্ষেত্রে ভূমিকা রাখবে এমন কিছু সহায়তা চেয়েছেন সাইফুর রহমান।
ব্যবসায়ী নেতাদের আলোচনায় বাংলাদেশ টেরি টাওয়েল অ্যান্ড লিলেন ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন উৎসে কর্তনের হার হ্রাস, নগদ প্রণোদনা থেকে উৎসে কর কর্তনের হার কমানো এবং ১০ কাউন্ট ও ২০ কাউন্ট সুতায় শুল্ক ও কর কমানোর প্রস্তাব দেওয়া হয়।
রপ্তানি লক্ষ্যমাত্রা পূরণে সরকারের নীতি সহায়তা চেয়েছে বাংলাদেশ গার্মেন্ট অ্যাক্সেসরিজ অ্যান্ড প্যাকেজিং ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিজিএপিএমইএ)। পাশাপাশি আসন্ন বাজেটে রপ্তানির বিপরীতে প্রযোজ্য উৎসে কর অর্ধেক কমানোর দাবি জানিয়েছে সংগঠনটি।
সংগঠনটি আগামী ৫ বছরের জন্য উৎসে কর ১ শতাংশ থেকে কমিয়ে ০.
তথ্য প্রযুক্তিখাতে কর অব্যাহতি ২০৩১ সাল পর্যন্ত অব্যাহত রাখার দাবি জানিয়েছে বেসিস। পাশাপাশি ডিজিটাল পেমেন্ট ইকোসিস্টেম গড়ে ওঠার আগে ক্যাশলেস ট্রানজেকশনের শর্ত শিথিল করার, দেশি সফটওয়্যার ও তথ্য প্রযুক্তির ওপর ভ্যাট প্রত্যাহার, সফটওয়্যার রপ্তানিতে প্রণোদনা ৬ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করার প্রস্তাব দিয়েছে।
প্লাস্টিকের খেলনা প্রস্তুতে ২৪ ধরনের কাঁচামাল আমদানিতে করছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ প্লাস্টিক গুডস ম্যানুফ্যাকচারার অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিপিজিএমইএ)।
আমদানি করা ১৪টি কাঁচামালে কর ছাড় চেয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার শিল্প মালিক সমিতি। রপ্তানির উদ্দেশে উৎপাদিত পণ্যের কাঁচামাল আমদানিতে নির্দিষ্ট সময়ের জন্য কাঁচামাল বাবদ আরোপযোগ্য শুল্ক ও করের বিপরীতে শতভাগ ব্যাংক গ্যারান্টির মাধ্যমে বন্ড সুবিধা দেওয়ার দাবি জানিয়েছে বাংলাদেশ ফার্নিচার এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন।
বাংলাদেশ এলপিজি অটোগ্যাস স্টেশন অ্যান্ড কনভারসন ওয়ার্কশপ ওনার্স অ্যাসোসিয়েশন এলপিজি অটোগ্যাস সেক্টরকে ট্যাক্স হলিডে সুবিধা প্রদান, এলপিজি কনভারসন কিট, সিলিন্ডার ও অন্যান্য যন্ত্রপাতি আমদানিতে শুল্কমুক্ত সুবিধা চেয়েছে। পাশাপাশি ভোক্তা পর্যায়ে অটোগ্যাসের বিক্রয়মূল্যের সঙ্গে সংযোজিত মূসক প্রত্যাহারের প্রস্তাব করেছে।
বন্ডেড ওয়্যারহাউস সুবিধা প্রদান, নগদ সহায়তার ওপর ১০ শতাংশ হারে অগ্রিম আয়কর প্রত্যাহারের প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ ফ্রোজেন ফুডস এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন (বিএফএফইএ)। বাংলাদেশ বিস্কুট, ব্রেড ও কনফেকশনারি প্রস্তুতকারক সমিতি কেক, বিস্কুট ও কনফেকশনারি পণ্যে শুল্ক অব্যাহতি চেয়েছে।
দি বাংলাদেশ জুয়েলারি ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশন হিরা আমদানির রপ্তানিতে মূসকের ওপর ২০ শতাংশ ভর্তুকি ও স্বর্ণের গহনার ক্ষেত্রে তিন বছরের জন্য মূসকের ওপর ৫০ শতাংশ ভর্তুকি প্রদানের প্রস্তাব করেছে। আর বাংলাদেশ গার্মেন্ট বায়িং হাউস অ্যাসোসিয়েশন ১০ শতাংশ থেকে কমিয়ে এআইটি ৫ শতাংশ করার প্রস্তাব করেছে।
বাংলাদেশ টেক্সটাইল মিলস অ্যাসোসিয়েশন (বিটিএম) ২০৩০ সাল পর্যন্ত ১৫ শতাংশ হারে আয়কর দেওয়ার দাবি জানায় সংগঠনটি।
বিটিএম-এর পরিচালক মোশাররফ হোসেন বলেন, ভারতীয় সুতার প্রভাবে তারা আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। ৭-৮ কোটি টাকার সুতা অবিক্রিত রয়েছে। আমরা মুনাফা করতে পারছি না।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, করপোরেট কর যেটা নিই সেটা আয়ের ওপর পারসেন্টেজ। গত ৫-৭ বছরে করপোরেট কর অনেক কমিয়েছি। কমাতে কমাতে ২৫ শতাংশে এনেছি। ১০০ টাকা লাভ হলে ২৫ টাকা সরকারকে দেবেন। আপনাদের লাভ হয় না বলছেন। তাহলে সরকারকে টাকা দেওয়ার দরকার নেই। সেক্ষেত্রে আপনার রিডিউস রেট যেটা আছে ১৫ শতাংশ সেটা আপনাদের কেন দরকার। আমাকে বোঝান। এই ১২-১৫ শতাংশ কার দরকার, যার অনেক লাভ হয়। ২৫ শতাংশ হলে হাজার কোটি টাকা ট্যাক্স দেয়। রেগুলার ট্যাক্স রেট হলে সমস্যা কী। পাশাপাশি ভারতীয় সুতা এত কম দামে আসে কীভাবে?
তবে ১৫ শতাংশ কর হার রাখার যুক্তিতে নানান বক্তব্য রাখেন সংগঠনের সদস্যরা।
এনবিআর চেয়ারম্যান বলেন, আপনার ১৫ শতাংশ কেন হবে। এটার কোনো লজিক দেখি না। এটাতে আপনাদের বদনাম হচ্ছে। বলা হচ্ছে টেক্সটাইল খাতে কর হার কম। আপনারা রেগুলার রেটে চলে আসেন। ট্যাক্স হলে দেবেন, না হলে দেবেন না।
তিনি বলেন, গত কয়েক মাসে আমরা অনেক কর অব্যাহতি বাতিল করেছি। সে সব অব্যাহতি এ বছরের জুনে শেষ হবে, একটাও আর নতুন করে বাড়বে না। সবচেয়ে বেশি আপনাদের কথা শুনেছি। আপনারা বোঝাতে পারছেন না কেন। আরও বোঝান। দরকার হলে আজকে সারাদিন শুনবো। আমরা কেউ বুঝবো না এটা তো হয় না।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ন ত সহ য ত আপন দ র শ কর র আমদ ন র ওপর আপন র দরক র
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় দফা দাবিতে ‘আমরা ভোলাবাসী’র আন্দোলন ‘সরকারি আশ্বাসে’ স্থগিত
ভোলায় গ্যাস ও অবকাঠামোগত উন্নয়নের দাবিতে চলমান ছয় দফা আন্দোলন স্থগিত করেছে ‘আমরা ভোলাবাসী’। সরকারি আশ্বাসের ভিত্তিতে এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে বলে জানিয়েছে সংগঠনটি। আজ মঙ্গলবার দুপুরে ভোলা প্রেসক্লাবে এক সংবাদ সম্মেলনে এ ঘোষণা দেন নেতারা।
সংগঠনের পক্ষ থেকে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন জেলা বিএনপির সদস্যসচিব ও আমরা ভোলাবাসীর জ্যেষ্ঠ নির্বাহী সদস্য রাইসুল আলম। এ সময় আরও উপস্থিত ছিলেন জেলা বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক মো. এনামুল হক, বিজেপির সাধারণ সম্পাদক মোতাসিন বিল্লাহ, ভোলা জেলা কমিউনিস্ট পার্টির সভাপতি মোবাশ্বির উল্লাহ চৌধুরী, ভোলা আলিয়া মাদ্রাসার উপাধ্যক্ষ মোবাশ্বিরুল হক নাঈম, ইসলামী আন্দোলনের ভোলা উত্তর জেলা শাখার সাধারণ সম্পাদক মাওলানা তরিকুল ইসলাম, ভোলা সদর উপজেলা জামায়াতে ইসলামীর আমির মো. কামাল হোসেন ও আমরা ভোলাবাসীর সদস্যসচিব মীর মোশাররফ হোসেন।
লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, ভোলার গ্যাস স্থানীয়ভাবে ব্যবহারের দাবিসহ ছয় দফা দাবিতে দীর্ঘদিন ধরে আন্দোলন চলছে। সরকারের সঙ্গে একাধিক বৈঠকের মাধ্যমে দাবি আদায়ে অগ্রগতি হয়েছে।
আমরা ভোলাবাসীর দাবির মধ্যে রয়েছে, ভোলায় মেডিকেল কলেজ স্থাপন, বিদ্যমান ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালে পূর্ণাঙ্গ চিকিৎসার সুবিধা নিশ্চিত করা, ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণ, ঘরে ঘরে গ্যাস সরবরাহ, গ্যাসভিত্তিক শিল্পকারখানা স্থাপন ও নদীভাঙন প্রতিরোধ।
সংগঠনটি জানায়, আন্দোলনের আগে ২৫০ শয্যাবিশিষ্ট হাসপাতালটিতে মাত্র আট চিকিৎসক কর্মরত ছিলেন, বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৮ জন। আরও চিকিৎসক, নার্স ও যন্ত্রপাতি দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়েছে সরকার। মেডিকেল কলেজ স্থাপনের বিষয়ে বলা হয়েছে, ভবিষ্যতে নতুন মেডিকেল কলেজ হলে, সেটি ভোলায় হবে। ভোলা–বরিশাল সেতু নির্মাণের ক্ষেত্রেও ফিজিবিলিটি স্টাডি ও নকশা সম্পন্ন হয়েছে এবং ২০২৬ সালের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি হবে বলে আশ্বাস দেওয়া হয়েছে।
সার কারখানা ও ইপিজেড স্থাপনের জন্য জমি নির্বাচন সম্পন্ন হয়েছে বলেও জানিয়েছেন নেতারা। গ্যাস–সংযোগের বিষয়ে জানানো হয়, সুন্দরবন গ্যাস কোম্পানিকে ডিমান্ড নোট জমা দেওয়া ২ হাজার ১৪৫ গ্রাহককে গ্যাস–সংযোগ দেওয়া হবে এবং ন্যায্যমূল্যে ২০ হাজার সিলিন্ডার বিতরণ করা হবে।
সংগঠনের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, আগামী দুই মাসের মধ্যে দৃশ্যমান অগ্রগতি না হলে আবার কঠোর কর্মসূচি দেওয়া হবে।