Samakal:
2025-08-02@05:06:40 GMT

বেলুচিস্তানের বিএলএ কারা?

Published: 14th, March 2025 GMT

বেলুচিস্তানের বিএলএ কারা?

পাকিস্তানের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলীয় প্রদেশ বেলুচিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনী জানিয়েছে, তারা মঙ্গলবার পেশোয়ারগামী ট্রেন জাফর এক্সপ্রেস ছিনতাইকারী সশস্ত্র বিচ্ছিন্নতাবাদীদের বিরুদ্ধে সামরিক অভিযান শেষ করেছে। এরই মাধ্যমে ৩৪৬ জন যাত্রীকে উদ্ধার করা হয়েছে। সামরিক বাহিনী বেলুচিস্তান লিবারেশন আর্মির (বিএলএ) ৩৩ জন হামলাকারীকে হত্যা করেছে।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে বিএলএর কার্যক্রমের পরিধি ও দক্ষতা উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। কেবল গত বছরে তারা ১৫০টিরও বেশি আক্রমণ চালিয়েছে, যারই ধারাবাহিকতা এই ট্রেন ছিনতাই। 
১৯৪৭ সালের আগস্টে ভারত থেকে দেশ ভাগের ছয় মাস পর, ১৯৪৮ সালে পাকিস্তান বেলুচিস্তানকে নিজেদের অন্তর্ভুক্ত করে। তখন থেকেই প্রদেশটি বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্নতাবাদী আন্দোলনের সাক্ষী। ২০২৩ সালের জনশুমারি অনুসারে, পাকিস্তানের আনুমানিক ২৪ কোটি জনসংখ্যার প্রায় ১ কোটি ৫০ লাখের বাসস্থান বেলুচিস্তান। কয়লা, সোনা, তামা ও গ্যাসের মতো প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ হওয়া সত্ত্বেও এটি দেশের সবচেয়ে দরিদ্র অঞ্চল। 

বেলুচিস্তানে সর্বশেষ আন্দোলন শুরু হয় ২০০০ সালের গোড়ায়। প্রাথমিক লক্ষ্য প্রদেশের জনগণের জন্য সম্পদের বৃহত্তর অংশ নিশ্চিত করা হলেও, শিগগিরই তারা পূর্ণ স্বাধীনতার দাবি তোলে। বিএলএ ১৯৯০-এর দশকের শেষ দিকে এবং ২০০০-এর দশকের গোড়ায় আত্মপ্রকাশ করে। বিএলএর নেতৃত্বে ছিলেন প্রবীণ বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা নবাব খায়ের বখশ মারির ছেলে বালাচ মারি।
২০০৬ সালে সামরিক শাসক পারভেজ মোশাররফের নেতৃত্বে সরকার বিশিষ্ট বালুচ জাতীয়তাবাদী নেতা নবাব আকবর বুগতিকে হত্যা করার পর বিদ্রোহ তীব্রতর হয়। বছরের পর বছর ধরে বিএলএ পাকিস্তান থেকে বেলুচিস্তানের সম্পূর্ণ স্বাধীনতার জন্য প্রতিশ্রুতিবদ্ধ একটি দল হিসেবে নিজেদের আলাদা করে তুলেছে। মধ্যপন্থি বালুচ জাতীয়তাবাদী গোষ্ঠীগুলো প্রাদেশিক স্বায়ত্তশাসনের পক্ষে কথা বললেও বিএলএ কখনও মধ্যম পন্থা অনুসরণ করেনি।

২০১০ সালে এই গোষ্ঠী তাদের আত্মঘাতী দল মাজিদ ব্রিগেড চালু করে, যা কয়েক বছর ধরে সুপ্ত ছিল। ২০১৮ সালে দলটি জনপ্রিয়তা লাভ করে, যখন আসলাম বালুচ তাঁর নিজের ছেলেকে বেলুচিস্তানের দালবান্দিন শহরে কর্মরত চীনা প্রকৌশলীদের লক্ষ্য করে হামলা চালাতে পাঠিয়েছিল। এতে তিন চীনা নাগরিকসহ পাঁচজন আহত হয়, তবে আসলামের ছেলে ছাড়া আর কোনো প্রাণহানির ঘটনা ঘটেনি। 
পর্যবেক্ষকরা বলছেন, বিএলএর সবচেয়ে বড় শক্তি হলো তরুণ ও সুশিক্ষিত সৈন্যদের তালিকাভুক্ত করার ক্ষমতা। বিশেষজ্ঞ আকবরের মতে, ‘তরুণ, শিক্ষিত যোদ্ধাদের নিয়োগ করা এখন আর কোনো চ্যালেঞ্জ নয়। কারণ, এই গোষ্ঠী বালুচ তরুণদের মধ্যে উল্লেখযোগ্য জনপ্রিয়তা লাভ করেছে, যদিও এর কার্যক্রম বিতর্কিত।’ যদিও বিএলএর তহবিলের উৎসগুলো অস্পষ্ট; বিশ্লেষকরা একাধিক রাজস্ব উৎসের কথা বলেছেন। তার মধ্যে রয়েছে চাঁদাবাজি, চোরাচালান ও মাদক পাচারের মতো অবৈধ কার্যকলাপ।

পাকিস্তান সরকার দাবি করে, ভারত বিএলএকে অর্থায়ন করে। কিন্তু আকবরের মতে, আফগানিস্তানে বছরের পর বছর কাটিয়ে বেশির ভাগ বিএলএ নেতৃত্ব পাকিস্তানে আগমন করেন। তাঁর মতে, সরকারের এসব দাবি হুবহু গ্রহণ করা কঠিন। বিশেষজ্ঞ আকবরের মতে, ‘প্রায় প্রতিটি ইস্যুতে ভারতকে দোষারোপ করার প্রবণতা পাকিস্তানের রয়েছে। এ কারণে দৃঢ় প্রমাণ ছাড়া এ ধরনের দাবি গ্রহণ করা কঠিন।’ ‘যদি সরকার ভারতীয় সমর্থনের সুনির্দিষ্ট প্রমাণ দিতে পারে, তবেই কেবল তাদের অভিযোগের গুরুত্ব রয়েছে। তবে যা স্পষ্ট তা হলো, বিএলএর একটি শক্তিশালী তহবিলদাতা রয়েছে এবং এর যোদ্ধারা বিদ্রোহের জন্য বিশেষভাবে তৈরি উচ্চ পেশাদার প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে।’
আকবর বলেন, প্রশাসনের ব্যর্থতা ও প্রাদেশিক সরকারের প্রতি ‘অসন্তোষ’-এ হতাশ জনসাধারণের মধ্যে বিএলএ তার প্রভাব বাড়াতে সাহায্য করে।
পর্যবেক্ষক আকবরের মতে, ‘অনেকে প্রাদেশিক সরকার বিশেষত বেলুচিস্তানের জনগণের চেয়ে ইসলামাবাদের প্রতি বেশি অনুগত বলে মনে করে। কারণ এটি জোরপূর্বক গুমের মতো গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলোতে শক্ত অবস্থান নিতে অস্বীকার করে।’

আবিদ হোসেন: পাকিস্তানের ইসলামাবাদে আলজাজিরার ইংরেজি ডিজিটাল সংবাদদাতা; আলজাজিরা থেকে সংক্ষিপ্ত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: র র মত সরক র ব এলএ

এছাড়াও পড়ুন:

থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক

চট্টগ্রামের রাউজানে গতকাল মঙ্গলবার বিএনপির দুই পক্ষের মধ্যে সংঘর্ষ-গোলাগুলিতে অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হওয়ার ২২ ঘণ্টা পরও মামলা করেনি কোনো পক্ষ। ঘটনার পর থেকে পুরো উপজেলায় থমথমে পরিস্থিতি বিরাজ করছে। এ অবস্থায় বিএনপি নেতা গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীরা বিক্ষোভের ডাক দিয়েছে। আজ বুধবার বিকেল চারটায় উপজেলা সদরের মুন্সির ঘাটায় এই বিক্ষোভ অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা রয়েছে।

এর আগে মঙ্গলবার বিকেলে রাউজানের সত্তারঘাট এলাকায় চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির সদ্য বিলুপ্ত কমিটির আহ্বায়ক গোলাম আকবর খোন্দকার ও বিএনপির কেন্দ্রীয় ভাইস চেয়ারম্যান (পদ স্থগিত) গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এতে ছররা গুলিতে আহত হন গোলাম আকবর খন্দকার নিজেও। তিনি দাবি করেন, তাঁর গাড়িবহরে হামলা করা হয়েছে গিয়াস উদ্দিন কাদেরের নির্দেশে। এতে দুই পক্ষের অর্ধশত নেতা-কর্মী আহত হন।

সংঘর্ষের পর গতকাল রাতে চট্টগ্রাম উত্তর জেলা বিএনপির আহ্বায়ক কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়েছে। গতকাল রাত আটটার দিকে কেন্দ্রীয় বিএনপির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভীর সই করা এক চিঠিতে কমিটি বিলুপ্তির ঘোষণা দেওয়া হয়। জানতে চাইলে বিষয়টি প্রথম আলোকে নিশ্চিত করেন উত্তর জেলা বিএনপির বিলুপ্ত কমিটির যুগ্ম আহ্বায়ক বেলায়েত হোসেন। এ ছাড়া আরেকটি চিঠিতে স্থগিত করা হয়েছে কেন্দ্রীয় কমিটির ভাইস চেয়ারম্যান গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর পদও।
এ ঘটনার পর গোলাম আকবর খোন্দকার পক্ষের লোকজন মঙ্গলবার রাতে চট্টগ্রাম নগরের চকবাজার এলাকায় বিক্ষোভ মিছিল করেছে। দুই পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা অব্যাহত থাকায় নতুন করে সহিংসতার আশঙ্কা করছেন উপজেলার বাসিন্দারা।

গোলাম আকবর খোন্দকারের অনুসারী রাউজান উপজেলা ছাত্রদলের সাবেক সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন আজ দুপুরে প্রথম আলোকে বলেন, তিনি নিজেও আহত হয়ে হাসপাতালে চিকিৎসা নিয়েছেন। তাঁর পা ভেঙে দিয়েছেন গিয়াস কাদেরের লোকজন। গোলাম আকবরকেও তাঁরা গুলি করেছেন। তিনি বলেন, তাঁরা মামলার প্রস্তুতি নিচ্ছেন। আজকের মধ্যে মামলার এজাহার দেওয়া হবে। পাশাপাশি সংবাদ সম্মেলন করে হামলার বিস্তারিত তুলে ধরবেন।

গিয়াস উদ্দিন কাদের চৌধুরীর অনুসারী এবং উপজেলা বিএনপির প্রচার বিভাগের আহ্বায়ক কাজী সরোয়ার খান প্রথম আলোকে বলেন, হামলা ও সংঘর্ষের ঘটনায় আজ বিকেলে তাঁরা বিক্ষোভ মিছিল করবেন। সেখান থেকে অপপ্রচারের জবাব দেওয়া হবে।

ঘটনার পর থেকে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে এক পক্ষ অপর পক্ষকে দোষারোপ করে স্ট্যাটাস, ছবি ও ভিডিও শেয়ার করছেন বিএনপির দুই পক্ষের নেতা-কর্মীরা। এতে পাল্টা উত্তেজনা ও পুনরায় সহিংস ঘটনা ঘটার পরিবেশ তৈরি হচ্ছে বলে অভিযোগ করেছেন বিএনপির তৃণমূলের নেতা–কর্মীরা।

রাউজান থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মনিরুল ইসলাম ভূঁইয়া আজ বেলা একটায় প্রথম আলোকে বলেন, বিএনপির দুই পক্ষের হামলা সংঘর্ষের ঘটনায় কোনো পক্ষ মামলা করেনি। কাউকে গ্রেপ্তারও করা যায়নি। মামলা করলে আসামিদের গ্রেপ্তার করা হবে।

উল্লেখ্য, রাউজানে গত বছরের ৫ আগস্টের পর থেকে এ পর্যন্ত সহিংসতায় মোট ১৩টি হত্যাকাণ্ডের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ১০টি রাজনৈতিক হত্যাকাণ্ড। বিএনপির দুই পক্ষের সংঘর্ষ হয় অন্তত শতাধিকবার। তিন শতাধিক মানুষ এসব ঘটনায় গুলিবিদ্ধ হন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • রাউজানে দখলদারি ও নির্বাচন ঘিরে বিএনপির সংঘাত থামছে না
  • রাউজানে উত্তেজনা থামেনি, পাল্টাপাল্টি কর্মসূচি বিএনপির দুই পক্ষের
  • থমথমে পরিস্থিতিতে এক পক্ষের বিক্ষোভের ডাক