১১ মার্চ জেদ্দায় ৯ ঘণ্টা ধরে যুক্তরাষ্ট্র-ইউক্রেনের আলোচনার পর  যে যৌথ বিবৃতি দেওয়া হয়েছে, এর রাজনৈতিক গতিপ্রকৃতি তুলে ধরা কঠিন। কারণ, প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প নিজেই চুক্তিতে পৌঁছানোর ক্ষমতা নিয়ে গর্ব করেন। প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, ইউক্রেন রাশিয়ার সঙ্গে ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতির জন্য ট্রাম্প প্রশাসনের প্রস্তাব মেনে নিয়েছে। পরবর্তীকালে কিয়েভের সঙ্গে গোয়েন্দা তথ্য ভাগাভাগির ওপর থেকে অবিলম্বে স্থগিতাদেশ তুলে নিতে এবং সামরিক সহায়তা আবার শুরু করতে সম্মত হয়েছে।

ফক্স নিউজ টিভি সম্প্রচারকালে হোয়াইট হাউসের প্রেস সচিব ক্যারোলিন লিভিট বলেছেন, ‘ট্রাম্প জেলেনস্কিকে তাঁর জায়গায় বসিয়েছেন এবং তাঁকে বলেছেন, আমেরিকানরা দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তি নিয়ে গুরুত্ব দিচ্ছেন।.

..আর ইউক্রেনীয়রা যেভাবে সম্মত হয়েছেন এবং আজ এই চুক্তি যেভাবে হয়েছে, তা আমরা খুবই আনন্দিত।’
তবে যৌথ বিবৃতিতে কিছু বিষয় আছে, যেগুলোর ভিত্তিতে এই সতর্কতা প্রকাশ করা যায় যে, যদি রাশিয়া একই কাজ করতে সম্মত হয় তবে ইউক্রেন তাৎক্ষণিকভাবে ৩০ দিনের অন্তর্বর্তীকালীন যুদ্ধবিরতি কার্যকর করতে মার্কিন প্রস্তাব গ্রহণ করতে প্রস্তুত।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও ব্যাখ্যা দিয়েছেন, চুক্তিটি এখন রাশিয়ার ওপর যুদ্ধ বন্ধ করার জন্য চাপ সৃষ্টি করছে। তিনি বলেন, ‘আমরা এখন এই প্রস্তাবটি রাশিয়ানদের কাছে নিয়ে যাব এবং আমরা আশা করি তারা সম্মত হবেন। তারা শান্তির জন্য হ্যাঁ বলবেন। বল এখন তাদের কোর্টে।’

রুবিও ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, যদি মস্কো যুদ্ধবিরতিতে স্বাক্ষর না করে, তাহলে দুর্ভাগ্যবশত আমরা শান্তি প্রতিষ্ঠায় বাধার ব্যাপারে জানতে পারব। নিশ্চিতভাবেই এখানে জবরদস্তিমূলক কূটনীতি ঢুকে পড়েছে। 
কৌতূহলের বিষয় হলো, জেদ্দায় আলোচনা শুরু হওয়ার আগেই রুবিও সাংবাদিকদের বলেছিলেন, ‘সবার কাছে এটা স্পষ্ট হওয়া উচিত, এই সমীকরণে রাশিয়ার পক্ষের ওপর খরচ আরোপ করতে যুক্তরাষ্ট্রের কাছে হাতিয়ার রয়েছে। তবে আমরা আশা করি, এটি তেমন হবে না। উভয় পক্ষই এর বেসামরিক সমাধানের বিষয়টি বুঝতে পারবে বলে আমরা মনে করি। কোনো সংঘাতের প্রয়োজন নেই। এটি কেবল কূটনৈতিক উপায়ে সমাধান হতে পারে। প্রেসিডেন্টের লক্ষ্য, এটি সমাধানের জন্য উভয়কেই আলোচনার টেবিলে আনা। তবে এটি মনে করিয়ে দেয়, যদি বাস্তবে চুক্তি কাজ না করে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের হাতে তার বন্দোবস্তের সুযোগ রয়েছে। কিন্তু আমরা আশা করছি, এটি নাও হতে পারে। আমরা সত্যিই তাই প্রত্যাশা করি। আশা করি, পরিস্থিতি সেই পর্যায়ে পৌঁছাবে না।’
এখন পর্যন্ত এমন কোনো প্রকাশ্য ইঙ্গিত পাওয়া যায়নি যে, রাশিয়া একটি নিঃশর্ত মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতি মেনে নেবে, যে বিশেষ সামরিক অভিযানের মূল উদ্দেশ্যগুলো অর্জনে বিঘ্ন ঘটাবে। প্রকৃতপক্ষে, রাশিয়ার জনগণ প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিনের কাছ থেকে এটাই আশা করবে। অবশ্য, পুতিন নিজেই জানুয়ারিতে ইঙ্গিত দিয়েছিলেন, ‘লক্ষ্যটি একটি সংক্ষিপ্ত যুদ্ধবিরতি হওয়া উচিত নয়। পরবর্তীকালে সংঘাত চালিয়ে যাওয়ার লক্ষ্যে শক্তি পুনর্গঠন ও পুনঃসশস্ত্রীকরণের জন্য কোনো ধরনের অবকাশও নয়, বরং এই অঞ্চলে বসবাসকারী সব মানুষ, সব জাতির বৈধ স্বার্থের প্রতি শ্রদ্ধার ওপর ভিত্তি করে একটি দীর্ঘমেয়াদি শান্তিচুক্তি হওয়া উচিত।’

গত জুনে মস্কোতে পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ভাষণে রাশিয়ার শান্তি আলোচনায় সম্মত হওয়ার শর্ত হিসেবে পুতিন যে বিষয়াবলি উল্লেখ করেছিলেন, তা থেকে সরে আসা মস্কোর জন্য রাজনৈতিকভাবে ক্ষতিকর হবে। উপরন্তু, জেনারেলদের মতামত বিবেচনায় নিতে হবে। রাশিয়ার বাহিনী দোনেৎস্ক অঞ্চলের পূর্বে ধীরগতিতে ধারাবাহিকভাবে অগ্রগতি অর্জন করেছে এবং প্রতিবেশী ডিনিপ্রোপেট্রোভস্ক অঞ্চলে প্রবেশের প্রস্তুতি নিচ্ছে। গত সপ্তাহান্তে তীব্র লড়াইয়ের পর তারা কুরস্ক অঞ্চলে একটি উল্লেখযোগ্য সাফল্য অর্জন করতে সক্ষম হয়েছে। তারা সেখানে প্রায় ১০ হাজার অভিজাত ইউক্রেনীয় সেনাকে ঘিরে ফেলার কাছাকাছি পৌঁছেছে।

স্পষ্টত জেলেনস্কি তার মার্কিন বন্ধু এবং ইউরোপীয় উপদেষ্টাদের দ্বারা প্রশিক্ষিত। তিনি ট্রাম্পের বিরোধিতা এড়াতে একটি খেলার কৌশল বেছে নিয়েছেন। যুক্তিসংগতভাবে তাঁর উচিত ট্রাম্পকে হতাশ করার ব্যাপারটি পুতিনের ওপর ছেড়ে দেওয়া। অন্য কথায়, একটি পুনরাবৃত্তিমূলক প্রক্রিয়ায় ইউক্রেনকে গঠনমূলক পক্ষ হিসেবে নিজেকে তুলে ধরতে হবে। তবে চূড়ান্ত বিশ্লেষণে পরিস্থিতি এমন, আদর্শিক প্রতিশ্রুতি বা এমনকি সামরিক সাফল্যের চেয়ে ব্যক্তিগত কূটনীতিই প্রাধান্য পেতে পারে। ফলাফল নির্ভর করবে পুতিন এবং ট্রাম্পের মধ্যে ব্যক্তিগত চুক্তি, অথবা তার প্রভাবের ওপর।
ট্রাম্প নিজেই সাংবাদিকদের বলেছেন, তিনি এই সপ্তাহে পুতিনের সঙ্গে কথা বলবেন। তিনি আশা করেন, আগামী দিনে একটি স্থায়ী যুদ্ধবিরতি নিয়ে আলোচনা হবে। এদিকে ট্রাম্পের দূত স্টিভ উইটকফ পুতিনের সঙ্গে দেখা করার জন্য মস্কো গেছেন বলে জানা গেছে। গত মাসে পুতিনের সঙ্গে তাঁর বেশ কয়েক ঘণ্টা ধরে বৈঠক হয়েছিল। মূল কথা হলো, মস্কোকে দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে হবে, কীভাবে ট্রাম্পকে নাচানো যায়। আমার মনে হয়, জেদ্দা থেকে বেরিয়ে আসা এই কাঁটাযুক্ত গোলাপের তোড়ায়, পুতিন পরপর পাল্টা প্রস্তাব দিয়ে আলোচনাকে আরও জোরদার করার চেষ্টা করতে পারেন।

এম কে ভদ্রকুমার: ভারতের সাবেক 
কূটনীতিক ও রাজনৈতিক বিশ্লেষক; ইন্ডিয়ান পাঞ্চলাইন থেকে সংক্ষেপিত ভাষান্তর ইফতেখারুল ইসলাম

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ইউক র ন ক টন ত র জন য র ওপর

এছাড়াও পড়ুন:

বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) পদার্থবিজ্ঞান বিভাগ ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার’ ও ‘রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড ইন ফিজিক্স’ প্রদানের জন্য দেশের পদার্থবিজ্ঞানী ও গবেষকদের কাছ থেকে আবেদনপত্র আহ্বান করা হয়েছে।

কোন সালের জন্য পুরস্কার —

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় পদার্থবিজ্ঞান বিভাগে প্রতিষ্ঠিত ট্রাস্ট ফান্ড থেকে ২০১৭, ২০১৮, ২০১৯, ২০২০ ও ২০২১ সালের গবেষণা কাজের জন্য এই অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

পুরস্কার মল্যমান কত —

১. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে মৌলিক গবেষণার জন্য পুরস্কার পাওয়া গবেষককে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার হিসেবে নগদ ২০ হাজার টাকা প্রদান করা হবে।

২. পদার্থবিজ্ঞান বিষয়ে আজীবন অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে একজন বিজ্ঞানী বা গবেষককে নগদ ৫০ হাজার টাকা মূল্যের রাজ্জাক শামসুন নাহার লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ড প্রদান করা হবে।

আবেদনের শেষ তারিখ —

আগ্রহী প্রার্থীদের আগামী ১৮ ডিসেম্বর ২০২৫ সালের মধ্যে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা) বরাবর আবেদনপত্র জমা দিতে হবে।

আবেদনের সঙ্গে জমা দিতে—

আবেদনকারীদের যথাযথ কর্তৃপক্ষের মাধ্যমে তিন কপি আবেদনপত্র, তিন প্রস্থ জীবনবৃত্তান্ত, তিন প্রস্থ গবেষণাকর্ম এবং তিন কপি ছবি আবেদনপত্রের সঙ্গে জমা দিতে হবে।

দরকারি তথ্য—

১. জানুয়ারি থেকে ডিসেম্বর মাসের মধ্যে প্রকাশিত গবেষণাকর্ম পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবে।

২. যৌথ গবেষণা কাজের ক্ষেত্রে গবেষণা পুরস্কারের অর্থ সমান হারে বণ্টন করা হবে। এ ক্ষেত্রে সহযোগী গবেষক বা গবেষকের অনুমতি নিয়ে আবেদন করতে হবে।

৩. আবেদনকারী যে বছরের জন্য আবেদন করবেন পাবলিকেশন ওই বছরের হতে হবে।

৪. একই পাবলিকেশন দিয়ে পরবর্তী বছরের জন্য আবেদন করা যাবে না।

৫. কোন কারণে একজন প্রার্থী পুরস্কারের জন্য আবেদন করলে প্রার্থিতার স্বল্পতা বিবেচনা করে তাঁর আবেদন বিবেচনা করা হবে।

৬. পরীক্ষক তাঁর গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য সুপারিশ না করলে তাঁকে পুরস্কারের বিষয়ে বিবেচনা করা হবে না।

৭. পদার্থবিজ্ঞানে রাজ্জাক শামসুন নাহার গবেষণা পুরস্কার একবার প্রাপ্ত গবেষকও পরবর্তী সময়ে আবেদন করতে পারবেন।

৮. নতুন গবেষককে অগ্রাধিকার দেওয়া হবে।

৯. যদি মানসম্মত গবেষণা কাজ না পাওয়া যায়, সে ক্ষেত্রে পূর্বের পুরস্কার পাওয়া গবেষকের নতুন গবেষণা কাজের পুরস্কারের জন্য পরীক্ষকের সুপারিশের ভিত্তিতে বিবেচনা করা হবে।

# আবেদন জমা দেওয়ার ঠিকানা: প্রো-উপাচার্য (শিক্ষা), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, ঢাকা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • খুলনায় বিএনপির সদস্য সচিব মনিরুল, ভোলা সদরে কার্যক্রম স্থগিত
  • জুলাই সনদ নিয়ে রাজনৈতিক সংকট তৈরি হলো কেন
  • বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে গবেষণা পুরস্কার এবং লাইফটাইম অ্যাচিভমেন্ট অ্যাওয়ার্ডের আবেদন করুন
  • নোবিপ্রবিসাসের বর্ষসেরা সাংবাদিক রাইজিংবিডি ডটকমের শফিউল্লাহ
  • এবারও কলকাতা আন্তর্জাতিক চলচ্চিত্র উৎসবে নেই বাংলাদেশ
  • ১০০ কোটির সম্পদ, স্বামীর প্রতারণা, ৪৭ বছর বয়সেই মারা যান এই নায়িকা
  • তানজানিয়ায় ‘সহিংস’ প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ৯৮ শতাংশ ভোট পেয়ে জয়ী সামিয়া
  • শিল্পের আয়নায় অতীতের ছবি
  • সনদ বাস্তবায়নে আবারো কমিশনের সভা আয়োজনের দাবি