দৌলতপুর উপজেলার তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের ইনচার্জ এসআই আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম, দুর্নীতি ও স্বজনপ্রীতির অভিযোগ উঠেছে। কুষ্টিয়া মডেল থানায় নানা অপকর্মের কারণে তাঁকে শাস্তিমূলক বদলি করা হয় তেকালা ক্যাম্পে। সেখানে যোগদান করেই মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায়, তল্লাশি করে পাওয়া মাদক জব্দ না দেখিয়ে বিক্রি করে দেওয়া এবং চাকরিজীবী ও সাধারণ মানুষের তালিকা করে আওয়ামী লীগের দোসর আখ্যা দিয়ে বাড়িঘরে অভিযানের নামে চাঁদাবাজির অনেক অভিযোগ পাওয়া গেছে। এসব নিয়ে স্থানীয় লোকজন পুলিশ সুপারের কাছে লিখিত অভিযোগ দেওয়ার পর মিরপুর সার্কেল অফিসকে তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে।
এলাকার লোকজনের সঙ্গে কথা বলে আনিছের অপকর্মের নানা তথ্য মিলেছে। তাঁর হয়রানির শিকার হন মোটর মেকানিক স্বপন হোসেন। গত ১০ মার্চ বিকেলে ধর্মদহ গ্রামের স্বপনের কাছে আসেন তেকালা পুলিশ ক্যাম্পের কনস্টেবল সোহেল। একটি ব্যাগে ১০ বোতল ফেনসিডিল নিয়ে এসে স্বপনকে বিক্রি করে দেওয়ার জন্য চাপ দেন। তিনি বলেন, ‘স্যার বলেছেন (আনিছ) এগুলো বিক্রি করে দিতে হবে, জরুরি টাকা লাগবে।’ স্বপন ফেনসিডিল বিক্রিতে রাজি না হলে জোরাজুরি করা হয়। এক পর্যায়ে স্বপন নিজস্ব মোটরসাইকেল নিয়ে চলে যান। রাস্তায় ধর্মদহ মোড়ে এসআই আনিছ এবং তাঁর অনুগত তরিকুল, সোহেলসহ কয়েকজনকে দেখে ভয়ে মোটরসাইকেল ফেলে রেখে স্বপন পালিয়ে যান। এই মোটরসাইকেল ক্যাম্পে নিয়ে যান আনিছ। এর পর তাঁর কাছে ৫০ হাজার টাকা ও ১০ বোতল ফেনসিডিলের মূল্য দাবি করেন। স্বপন ৩০ হাজার টাকা দিতে রাজি হন। এর আগে গত শবেবরাতের দিন মাংস কেনার জন্য টাকা দাবি করেন আনিছ। ৫ হাজার টাকা দিতে গেলে না নিয়ে ফেরত দেন তিনি। ধর্মদহ গ্রামের মাদক কারবারি ও সোর্স জাহিদুল এবং রতনের মাধ্যমে এই টাকা দাবি করা হয়। জাহিদুল অন্য মাদক কারবারিদের কাছ থেকে মাসোহারা আদায় করেন।
স্বপনের কাছে এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি ভয়ে আনিছের বিরুদ্ধে কিছু বলতে রাজি হননি। তবে জানান, পুলিশের লোকজন তাঁর দোকানে মাঝে মধ্যে আসেন।
গত ১ ফেব্রুয়ারি দুপুরে আনিছ তাঁর সহকর্মী তরিকুল ইসলামকে নিয়ে গুড়ারপাড়া ডাংমড়কা মাঠে মাদক কারবারি মোকলেছসহ দু’জনকে মোটরসাইকেলে মাদক বহনের সময় আটক করেন। পরে গুড়ারপাড়া গ্রামের শাকিল নামের এক ব্যক্তির মধ্যস্থতায় ১ লাখ টাকা নিয়ে দু’জনকে ছেড়ে দেন। ১৭০ বোতল ফেনসিডিল জব্দ না দেখিয়ে প্রাগপুর এলাকার মাদক কারবারি জুয়েলের কাছে প্রতিটি ১ হাজার ১০০ টাকা করে বিক্রি করে দেন বলে স্থানীয় একাধিক সূত্র নিশ্চিত করেছে।
এক ব্যবসায়ী নাম প্রকাশ না করার শর্তে বলেন, ‘দারোগা আনিছ এলাকায় আসার পর মাদক চোরাচালান ও অপরাধ বেড়েছে। তিনি ব্যবসায়ী থেকে শুরু করে সাধারণ মানুষের তালিকা তৈরি করে আওয়ামী লীগ বলে হয়রানি করছেন। মাদক কারবারিদের সঙ্গে নিয়ে ঘোরেন। শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার পরিবর্তে নিজেই শান্তি বিনষ্ট করছেন।’
আনিছের বিরুদ্ধে উপজেলার মশাওড়া মধ্যপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক জান মোহাম্মদকে হয়রানির অভিযোগ উঠেছে। আওয়ামী লীগের রাজনীতি করেন এ অভিযোগ এনে পর পর তিন দিন তাঁর বাড়িতে অভিযান চালান আনিছ। ২০১২ সালের আগে আওয়ামী লীগে যুক্ত ছিলেন জান মোহাম্মদ। চাকরি হওয়ার পর দলের সব পদ থেকে ইস্তফা দেন। ৫ আগস্টের পর বিএনপির একটি পক্ষ তাঁর কাছে চাঁদা দাবি করে। পরে এক আত্মীয়ের মাধ্যমে সেটি সমাধান করেন। এর পর আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড কমিটিতে তাঁর নামে আছে এমন অভিযোগ করে তার বাড়িতে লোক পাঠান আনিছ। বিএনপির কয়েকজন নেতার মাধ্যমেও টাকা-পয়সা দাবি করেন। এক পর্যায়ে অসুস্থ হয়ে পড়েন জান মোহাম্মদ। ভয়ে তিনি পালিয়ে আছেন। এসব বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘খুব বিপদে আছি। রাজনীতি না করেও এখন হয়রানি হতে হচ্ছে।’
এ বিষয়ে জানতে এলাকার এক সাংবাদিক আনিছকে ফোন করলে তিনি ক্ষুব্ধ হন। পরে ওই শিক্ষকের এক আত্মীয়ের মাধ্যমে জানান, ‘এখন ৫০ হাজার টাকা দিলে কিছুই হবে না। তবে আমি ধরলে ২ লাখের কমে কাজ হবে না। মাজায় রশি বেঁধে মামলায় ঢুকিয়ে দেব, কেউ বাঁচাতে পারবে না।’
এসআই আনিছুর রহমানের বিরুদ্ধে অনিয়ম ও দুর্নীতির সুষ্ঠু তদন্ত এবং তাঁকে তেকালা পুলিশ ক্যাম্প থেকে অপসারণের দাবিতে স্থানীয় লোকজন গত ৬ মার্চ পুলিশের ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে লিখিত অভিযোগ দিয়েছেন। কুষ্টিয়া পুলিশ লাইনের গোপনীয় শাখার একজন কর্মকর্তা বলেন, আনিছের বিরুদ্ধে সদরে থাকতে নানা অনিয়ম ও অপকর্মের অভিযোগ ছিল। এর পর তাঁকে তেকালায় পাঠানো হয়। নতুন অভিযোগ নিয়ে তদন্ত চলছে।
এদিকে অভিযোগ দেওয়ার পর নিজেকে বাঁচতে আনিছ নানা কায়দায় তদবির করছেন। অভিযোগের বিষয়ে জানতে মোবাইল ফোনে কল করলে এসআই আনিছ বলেন, ‘আমিও একজন মানুষ। দোষ, গুণ থাকবেই। তবে কেউ বলতে পারবে না আমি মাদক কারবারিদের কাছ থেকে একটি লজেন্স খেয়েছি। আমি আপনার সঙ্গে দেখা করব। নিউজ করার দরকার নেই।’ কুষ্টিয়ার পুলিশ সুপার মিজানুর রহমান বলেন, ‘আনিছের বিরুদ্ধে একটি লিখিত অভিযোগ পেয়েছি, তদন্ত চলছে।’
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপকর ম স বপন হয়র ন তদন ত ল কজন আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
গোপালগঞ্জে সুদের টাকা নিয়ে বিরোধের জেরে সংঘর্ষ, পুলিশসহ আহত ২৫
গোপালগঞ্জের কোটালীপাড়ায় সুদের টাকা লেনদেনের বিরোধকে কেন্দ্র করে দুই গ্রামের মধ্যে ২ ঘণ্টাব্যাপী সংঘর্ষে ৪ পুলিশসহ অন্তত ২৫ জন আহত হয়েছে। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে পুলিশ ও সেনা বাহিনী ঘটনাস্থলে ছুটে যায়। সংঘর্ষ চলাকালে পুলিশ ২৫ রাউন্ড ফাঁকা গুলি বর্ষণ করে। এছাড়া ঘটনাস্থল থেকে উভয়পক্ষের ৪৫ জনকে আটক করার কথা জানিয়েছে পুলিশ।
আহতরা হলেন- পারভেজ শেখ (২০), মানিক শেখ (৪১), সাদ্দাম শেখ (৩৫), শাকিল খান (২৫), ফয়সাল শেখ (২০), আবু সাঈদ শেখ (৪০), সজীব শেখ (১৯), রনি শেখ (৪০), সোহেল সুলতান (২৫), আফ্রিদি শেখ (১৯), মোস্তফা শেখ (৪০), নুরুন্নবী (১৮), আমানুল্লাহসহ (২৫) আরও অনেকে।
গুরুতর আহতদের গোপালগঞ্জ ও কোটালীপাড়া হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে। এছাড়া কোটালীপাড়া থানার আহত এসআই সেলিম মাহমুদ কোটালীপাড়া স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স থেকে প্রাথমিক চিকিৎসা নিয়েছেন। ওই এসআইসহ কোটালীপাড়া থানার আরও ৩ কনস্টেবল আহত হয়েছেন বলে কোটালীপাড়া থানার এসআই মামুনুর রশীদ জানিয়েছেন।
মাঝবাড়ি গ্রামের কালাম দাড়িয়া ও বংকুরা গ্রামের হাসেম মুন্সি জানিয়েছেন, কোটালীপাড়া উপজেলার বংকুরা গ্রামের রিয়াজুলের কাছ থেকে মাঝবাড়ি গ্রামের ফারুক দাড়িয়া সুদে টাকা নেন । সেই টাকা সময়মত ফারুক সুদে আসলে পরিশোধ করতে গড়িমসি শুরু করেন। এতে পাওনাদার রিয়াজুল ক্ষুব্ধ হয়ে ওঠেন। সুদের টাকা লেনদেন নিয়ে দু’জনের মধ্যে আজ শুক্রবার সকালে বাকবিতণ্ডা হয়। এদিন সকাল সাড়ে ৯টার দিকে মসজিদের মাইক থেকে গ্রামবাসীকে সংঘর্ষে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়। এ আহ্বানের পর দুই গ্রামের লোকজন ঢাল-সড়কিসহ দেশীয় অস্ত্রশস্ত্র নিয়ে সংঘর্ষে লিপ্ত হয়। দফায়-দফায় উভয়পক্ষের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়া ও সংঘর্ষ চলে। পুলিশ প্রথমে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে ব্যর্থ হয়। দুই ঘণ্টা পর বেলা সাড়ে ১১টার দিকে সেনাবাহিনী ঘটনাস্থলে পৌঁছে পরিস্থিতি শান্ত করে।
উভয়পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা বিরাজ করায় ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন রয়েছে।
কোটালীপাড়া পাড়া থানার ওসি মো. আবুল কালাম আজাদ বলেন, ২৫ রাউন্ড গুলি বর্ষণ ও উভয়পক্ষের ৪৫ জনকে আটক করে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করা হয়েছে। তুচ্ছ ঘটনাকে কেন্দ্র করে এ সংঘর্ষের ঘটনা ঘটেছে জানিয়ে ওসি আরও বলেন, এলাকার পরিস্থিতি পুলিশের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে। ঘটনাস্থলে পুলিশ মোতায়েন করা হয়েছে। কোন পক্ষ থেকে এখন পর্যন্ত থানায় অভিযোগ দেওয়া হয়নি। অভিযোগ পাওয়ামাত্র আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।
অভিযুক্ত রিয়াজুল ও ফারুক দাড়িয়ার ফোন নম্বর বন্ধ পাওয়া গেছে। এ কারণে তাদের বক্তব্য পাওয়া যায়নি।