ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে কাজে আন্তরিক হওয়ার আহ্বান নৌপরিবহন উপদেষ্টার
Published: 18th, March 2025 GMT
আসন্ন ঈদুল ফিতর উপলক্ষে দেশের বিভিন্ন নৌপথের যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে সংশ্লিষ্ট সবাইকে আন্তরিকভাবে কাজ করার আহ্বান জানিয়েছেন নৌপরিবহন উপদেষ্টা ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হোসেন।
মঙ্গলবার (১৮ মার্চ) নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে আয়োজিত সভায় ভার্চুয়ালি যুক্ত হয়ে তিনি এ আহ্বান জানান।
নৌ উপদেষ্টা নৌ দুর্ঘটনা রোধে ঈদের আগের ৫ দিন ও পরের ৫দিন সার্বক্ষণিক বাল্কহেড (বালুবাহী) চলাচল বন্ধ করার জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে নির্দেশনা প্রদান করেন।
তিনি বলেন, “সদরঘাট বা অন্যান্য ঘাটে যাদের ইজারা দেওয়া হয়েছে, তারা যাত্রীদেরকে কোনোভাবে হয়রানি করতে পারবেন না। কোনো অতিরিক্ত চার্জ আদায় করতে পারবে না। বিআইডব্লিউটিএসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে এ বিষয়ে তদারকি করার জন্য নির্দেশনা দেওয়া হয়েছে।”
এ সময় উপদেষ্টা যেসব জলযানের ফিটনেস নেই তাদেরকে অবিলম্বে ফিটনেস সনদ গ্রহণের আহ্বান জানান। এ বিষয়ে নৌপরিবহন অধিদফতরের মহাপরিচালককে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করার জন্য উপদেষ্টা নির্দেশনা দেন।
উপদেষ্টা আরো বলেন, আসন্ন ঈদযাত্রায় নৌপথে নৌযানগুলোতে অতিরিক্ত যাত্রী বহন এবং নির্ধারিত ভাড়ার অতিরিক্ত ভাড়া আদায়ের অভিযোগ পাওয়া গেলে তাৎক্ষণিক কঠোর শাস্তিমূলক ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। জরিমানার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষ অভিযুক্ত লঞ্চের রুট পারমিট বাতিল করা হবে। এ সময় উপদেষ্টা জেলা প্রশাসকদেরকে দেশের বিভিন্ন ফেরি ও লঞ্চ ঘাটগুলোতে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করার নির্দেশনা দেন।
লঞ্চের অনুমোদিত ভাড়ার একটি চার্ট ঘাটে টানিয়ে রাখার জন্য বিআইডব্লিউটিসির চেয়ারম্যানকে নির্দেশনা দেন উপদেষ্টা।
নৌপরিবহন উপদেষ্টা ঢাকার জিরো পয়েন্ট থেকে সদরঘাট পর্যন্ত সড়ককে যানজটমুক্ত রাখতে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণের জন্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে নির্দেশনা দেন। সভায় সদরঘাট টার্মিনাল ও লঞ্চ হকারমুক্ত রাখার পাশাপাশি আইনশৃঙ্খলা রক্ষা ও যাত্রীদের নিরাপত্তা বিধানের জন্য ট্র্যাফিক পুলিশের পাশাপাশি আনসারসহ কমিউনিটি পুলিশের ব্যবস্থা গ্রহণের সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়। নৌপথে ঈদযাত্রার প্রস্তুতি দেখতে উপদেষ্টা সদরঘাটসহ নৌরুটের বিভিন্ন স্পটে আকস্মিক পরিদর্শনে যাবেন বলে সভাকে অবহিত করেন।
এ সময় উপদেষ্টা নৌপথের যাত্রীদের ঈদযাত্রা নির্বিঘ্ন করতে জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, উপজেলা নির্বাহী অফিসার, অফিসার ইনচার্জ এবং অন্যান্য আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারীবাহিনীকে সমন্বিতভাবে কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান।
সভায় নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ের সিনিয়র সচিব মোহাম্মদ ইউসুফসহ মন্ত্রণালয়ের ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা, বিভিন্ন দফতর/সংস্থার প্রধান, ঘাটসংশ্লিষ্ট ৩১ জেলার জেলা প্রশাসক, পুলিশ সুপার, সংশ্লিষ্ট উপজেলা নির্বাহী অফিসার, কোস্টগার্ড, নৌপুলিশ ও ফায়ার সার্ভিসের প্রতিনিধিরা উপস্থিত ছিলেন।
সভায় উপদেষ্টা বলেন, “আসন্ন ঈদে দেশের বিভিন্ন নৌপথে জলযান সুষ্ঠুভাবে চলাচল এবং যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বর্তমান সরকার আন্তরিকভাবে কাজ করছে। ইতোমধ্যে বিভিন্ন কার্যকর পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়েছে। যাত্রীদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করার লক্ষ্যে দূরপাল্লার লঞ্চগুলোতে সশস্ত্র আনসার মোতায়েন করা হবে। নৌপুলিশ, কোস্টগার্ড এবং বাংলাদেশ নৌবাহিনীকে নৌপথের বিশেষ অপরাধ প্রবণ জায়গাগুলোতে বিশেষ টহল কার্যক্রম পরিচালনা করার জন্য নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এছাড়া বিভিন্ন গন্তব্যের যাত্রী ও যানবাহনকে ফেরি ও যাত্রীবাহী জাহাজে সার্বক্ষণিক সেবা প্রদানের জন্য বিআইডব্লিউটিসির কন্ট্রোল রুম চালু করা হয়েছে। সম্মানিত যাত্রী ও যানবাহনগুলোকে প্রয়োজনে ০২২২৩৩৬২৭৭৯ ও ০১৪০৪৪৪৩৭০৭ নম্বরে যোগাযোগ করে সেবা গ্রহণের অনুরোধ জানানো হচ্ছে।”
ঢাকা/আসাদ/সাইফ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ন উপদ ষ ট য় উপদ ষ ট ন পর বহন র র জন য গ রহণ র ঈদয ত র সদরঘ ট র বহন
এছাড়াও পড়ুন:
‘কৃষির উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে’
স্বরাষ্ট্র ও কৃষি উপদেষ্টা লেফটেন্যান্ট জেনারেল মো. জাহাঙ্গীর আলম চৌধুরী (অব.) বলেছেন, “জাপান বাংলাদেশের উন্নয়নে অন্যতম প্রধান অংশীদার ও পরীক্ষিত বন্ধু। জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা)-এর মাধ্যমে দেশটি বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে ব্যাপকভাবে সহায়তা করে আসছে। আগামী দিনে বাংলাদেশের কৃষি খাতের উন্নয়নে জাপানের অংশীদারিত্ব আরও বৃদ্ধি করা হবে।”
বুধবার (৩০ এপ্রিল) সচিবালয়ে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে তাঁর অফিসকক্ষে বাংলাদেশে নিযুক্ত জাপানের রাষ্ট্রদূত Saida Shinichi-এর সাক্ষাৎকালে তিনি এসব কথা বলেন।
বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে কৃষি খাতে সহযোগিতা বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা, ২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামাতে অনুষ্ঠিতব্য আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’তে বাংলাদেশের অংশগ্রহণ, কৃষি বিষয়ক জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সভা, নিরাপত্তা ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি, পুলিশ সংস্কার, ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় সহযোগিতা, জাতীয় সংসদ নির্বাচন ইস্যু সহ পারস্পরিক স্বার্থ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বিষয়ে আলোচনা হয়।
বৈঠকের শুরুতে রাষ্ট্রদূতকে স্বাগত জানিয়ে উপদেষ্টা বলেন, “জাপান বাংলাদেশের অন্যতম ঘনিষ্ঠ বন্ধু। আগামী দিনগুলোতে এ সম্পর্ক আরও জোরদার হবে।”
উপদেষ্টাকে ধন্যবাদ জানিয়ে রাষ্ট্রদূত বলেন, “২০২৭ সালে জাপানের ইয়োকোহামা'তে ‘আন্তর্জাতিক হর্টিকালচার এক্সপো’ অনুষ্ঠিত হবে। আন্তর্জাতিক এ এক্সপো'তে বাংলাদেশকে অংশগ্রহণের আমন্ত্রণ।”
উপদেষ্টা বলেন, “বাংলাদেশ একটি কৃষি প্রধান দেশ। আর জাপান কৃষি খাতে সর্বাধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহারী দেশ। তাই জাপান বাংলাদেশের কৃষি খাতে বিশেষ করে কৃষি পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ ও বাজারজাতকরণ, ফসলের পোস্ট হার্ভেস্ট ম্যানেজমেন্ট ও সংরক্ষণ, জলবায়ু ও স্মার্ট কৃষি, সেচ ও পানি ব্যবস্থাপনা প্রভৃতি খাতে সহযোগিতা করতে পারে।”
তিনি বলেন, “জাপান বাংলাদেশের কৃষি পণ্য সংরক্ষণে আধুনিক হিমাগার স্থাপন ও কুলিং ভ্যান সরবরাহ করে সহযোগিতা করতে পারে। তাছাড়া জাপান আমাদেরকে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি দিয়ে সহায়তা করতে পারে।”
তিনি এসময় রাষ্ট্রদূতকে বাংলাদেশে আধুনিক কৃষি সরঞ্জাম ও যন্ত্রপাতি তৈরির জন্য প্রযুক্তিগত সহায়তা দিয়ে সহযোগিতার আহ্বান জানান।
রাষ্ট্রদূত বলেন, “কৃষি বিষয়ক দু'দেশের জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের সর্বশেষ সভা ২০২৪ সালের মে মাসে জাপানের টোকিওতে অনুষ্ঠিত হয়েছিল। দ্রুত এ সংক্রান্ত পরবর্তী সভা আয়োজন করা দরকার।”
উপদেষ্টা জানান, জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের পরবর্তী সভা এ বছরের অক্টোবর বা নভেম্বর মাসে ঢাকায় অনুষ্ঠিত হতে পারে। এ সভা আয়োজনের বিষয়ে বাংলাদেশ সব ধরনের সহযোগিতা করবে।
বাংলাদেশের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ও নিরাপত্তা প্রসঙ্গে রাষ্ট্রদূতের প্রশ্নের জবাবে উপদেষ্টা বলেন, “বর্তমানে ঢাকার আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি ক্রমশ উন্নতি হচ্ছে। তবে এটির আরও উন্নতির সুযোগ রয়েছে এবং আমরা এ ব্যাপারে চেষ্টা করে যাচ্ছি।”
আগামী জাতীয় সংসদ নির্বাচনকালীন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি কেমন হবে জানতে চাইলে উপদেষ্টা বলেন, “তখন আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি অবনতির কোনো সুযোগ নেই, বরং দিন দিন এটির উন্নতি ঘটবে বলে আমি আশা করছি।”
পুলিশের সামর্থ্য ও গ্রহণযোগ্যতা বিষয়ে উপদেষ্টা বলেন, “৫ আগস্ট পরবর্তী পরিস্থিতির তুলনায় বর্তমানে পুলিশের সামর্থ্য, মনোবল ও বিশ্বাসযোগ্যতা অনেক বেশি বেড়েছে।”
তিনি এসময় আধুনিক ট্রাফিক ব্যবস্থাপনায় জাপানের সহায়তা কামনা করেন। তাছাড়া তিনি নৌপুলিশ ও কোস্টগার্ডকে পেট্রোল ভেসেল ও আধুনিক যন্ত্রপাতি দিয়ে সহযোগিতা এবং অধিক সংখ্যক পুলিশ সদস্যকে জাপানে উন্নত প্রশিক্ষণে প্রেরণের জন্য রাষ্ট্রদূতকে অনুরোধ করেন।
রাষ্ট্রদূত জানান, আগামী ইন্টারপোল নির্বাচনে নির্বাহী কমিটির সদস্য পদে জাপানের পক্ষ থেকে মনোনয়ন প্রদান করা হবে। উপদেষ্টা এ পদে বাংলাদেশের পক্ষ থেকে জাপানকে পূর্ণ সমর্থনের আশ্বাস প্রদান করেন।
বৈঠকে কৃষি মন্ত্রণালয় ও জাপান দূতাবাসের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাবৃন্দ অংশগ্রহণ করেন।
ঢাকা/নঈমুদ্দীন/এস