ঈদ সামনে রেখে খুলনা নগরের ‘পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেটের’ পাঁচটি দোকানে প্রায় এক কোটি টাকার মালামাল তুলেছিলেন বিসমিল্লাহ ব্যাগ হাউসের মালিক শান্ত ইসলাম। আজ বুধবার ভোররাতে আগুনে তাঁর দোকানের সব মালামাল পুড়ে একেবারে ছাই হয়ে গেছে, কোনো কিছুই অবশিষ্ট নেই। ঘটনার পর থেকে শোকে বিহব্বল শান্ত কয়েকবার মূর্ছাও গেছেন।

শুধু শান্ত ইসলাম নয়, হঠাৎ আগুনে প্রায় নিঃস্ব হয়ে গেছেন ওই মার্কেটের প্রায় অর্ধশত ব্যবসায়ী। কোনো মালামালই তাঁরা আগুন থেকে রক্ষা করতে পারেননি। ঘুরে দাঁড়াতে সরকারের সুদৃষ্টি কামনা করেছেন তাঁরা।

আরও পড়ুনখুলনায় পিকচার প্যালেস মোড়ে অস্থায়ী ঈদ মার্কেটের দোকান আগুনে পুড়ে গেছে৭ ঘণ্টা আগে

দোকান মালিক ও স্থানীয় লোকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা গেছে, মার্কেটের ওই জায়গায় ছিল খুলনার ঐতিহ্যবাহী পিকচার প্যালেস সিনেমা হল। হলের নামানুসারে জায়গার নাম হয়ে যায় পিকচার প্যালেস। প্রায় দুই বছর আগে সিনেমা হলটি ভেঙে ফেলা হয়। সেখানে বহুতল বিপণিবিতান করার পরিকল্পনা করেছিল মালিকপক্ষ। তবে জমি নিয়ে আইনি জটিলতা থাকায় শেষ পর্যন্ত আর মার্কেট নির্মাণ করা হয়নি। পড়ে থাকা জমি ইজারা নিয়ে একটি ইভেন্ট ম্যানেজমেন্ট প্রতিষ্ঠান সেখানে অস্থায়ী মার্কেট গড়ে তোলে। নাম দেওয়া হয় ‘পিকচার প্যালেস সুপার মার্কেট’।

আজ বুধবার ভোর সাড়ে পাঁচটার দিকে ওই মার্কেটের দক্ষিণ দিকের একটি কাপড়ের দোকানে আগুন লাগে। মুহূর্তেই তা ছড়িয়ে পড়ে পুরো মার্কেটে। আগুন এত দ্রুত ছড়িয়ে পড়ে যে দোকানের মধ্যে থাকা কর্মচারীরা শুধু বের হতে পেরেছিলেন। কোনো মালামাল তাঁরা রক্ষা করার সুযোগ পাননি। ব্যবসায়ীরা বলছেন, মার্কেটে প্রসাধনসামগ্রী, ক্রোকারিজ, ব্যাগ, কাপড়সহ বিভিন্ন পণ্যের ৪৫টি দোকান ছিল। সব কটি দোকানই একেবারে পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আগুনে ৫০-৫৫ কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছে তাঁদের।

আজ সকাল ১০টার দিকে ওই এলাকায় গিয়ে দেখা যায়, পুরো জায়গাটি পোড়া ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়েছে। পুড়ে ছাই হয়ে গেছে সব মালামাল ও আসবাব। শুধু পড়ে আছে টিন বা লোহার জিনিসপত্র। সেগুলো আলাদা করে সরিয়ে রাখা হচ্ছে এক পাশে। ওই কাজ করছেন বেশ কয়েকজন। ধ্বংসস্তূপের মধ্যে অনেকেই কিছু খোঁজার চেষ্টা করছেন। ধ্বংসস্তূপের ওপর দাঁড়িয়ে নির্বাক হয়ে গেছেন ব্যবসায়ীরা। কী করবেন, কী বলবেন, তা বুঝে উঠতে পারছেন না।

বিসমিল্লাহ ব্যাগ হাউসের কর্মচারী রানা তালুকদার জানান, তাঁদের পাঁচটি দোকানে কসমেটিকস, ব্যাগসহ প্রায় এক কোটি টাকার বিভিন্ন ধরনের মালামাল ছিল। গত তিন-চার দিনে সবচেয়ে বেশি মালামাল তোলা হয়। ঈদ সামনে রেখে মালিক বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে এসব মালামাল তুলেছিলেন। সব একেবারে পুড়ে গেছে। মালিক নিঃস্ব হয়ে গেছেন।

রানা তালুকদার বলেন, ঘটনার সময় তিনি দোকানের মধ্যেই ছিলেন। কেবল সাহ্‌রি খেয়ে ঘুমানোর চেষ্টা করছিলেন। এ সময় চিৎকার শুনে বাইরে বেরিয়ে এসে দেখেন, দক্ষিণ দিকের একেবারে শেষ প্রান্তের একটি দোকানে আগুন লেগেছে। পানি দিয়ে তা নেভানোর চেষ্টা করছিলেন কয়েকজন। সেটি দেখে তিনি দোকানের অন্য কর্মচারীদের ডাকার জন্য আসেন। এরই মধ্যে দেখেন, আগুন পাশের দোকানে চলে এসেছে। অন্যদের ডাক দিয়ে কোনোরকম মুঠোফোন নিয়ে বের হতে পেরেছেন। তিন-চার মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে বলে তিনি জানান।

ওই মার্কেটের আরেক ব্যবসায়ী মো.

শামীম শরিফ বলেন, ‘শর্টসার্কিট থেকে আগুন লাগতে পারে আবার কেউ শত্রুতা করে আগুন ধরিয়েও দিতে পারে। তবে চার-পাঁচ মিনিটের মধ্যেই আগুন পুরো মার্কেটে ছড়িয়ে পড়ে। ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন জায়গা থেকে ধারদেনা করে দোকানে মালামাল তুলেছিলেন। এখন দেনা পরিশোধ তো দূরে থাক, নিজেদের সংসার চালানোরমতো কোনো অবস্থা নেই। ব্যবসায়ীরা যেন মোটামুটিভাবে ব্যবসা শুরু করতে পারেন, সে জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে সরকারের প্রতি তিনি অনুরোধ করেন।

ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্সের খুলনার উপপরিচালক মো. মতিয়ার রহমান বলেন, খবর পাওয়ার সঙ্গে সঙ্গে টুটপাড়া, খালিশপুর ও বয়রা স্টেশনের নয়টি ইউনিট ঘটনাস্থলে পৌঁছে আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজে নামে। কেন ও কী কারণে আগুন লেগেছে, তা তদন্ত না করে বলা যাবে না। তবে প্রাথমিকভাবে ধারণা করা হচ্ছে, বৈদ্যুতিক শর্টসার্কিট থেকে আগুনের সূত্রপাত হতে পারে। ক্ষয়ক্ষতি নিরূপণে তদন্ত কমিটি করা হবে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ব যবস য় র এক ব র

এছাড়াও পড়ুন:

লাকসামে অস্ত্রের মুখে এতিমখানার ৫ গরু লুট, আহত ৮

কুমিল্লার লাকসামে একটি এতিমখানার খামার থেকে গত শুক্রবার পাঁচটি গরু লুট করে নিয়ে গেছে ডাকাত দল। এ সময় তাদের হামলায় মাদরাসার শিক্ষক-শিক্ষার্থীসহ আটজন আহত হন। মাদরাসা কর্তৃপক্ষ থানায় মামলা করেছে।

গত শুক্রবার (৩১ অক্টোবর) ভোরে উপজেলার আজগরা ইউনিয়নের বড়বাম আল-জামিয়াতুল ইসলামিয়া দারুল উলুম মাদরাসা ও এর সংলগ্ন এতিমখানার খামারে ঘটনাটি ঘটে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু লুট করেছিল ডাকাতরা।

আরো পড়ুন:

খুলনায় বিএনপি নেতার অফিসে বোমা-গুলি, শিক্ষক নিহত

ব্রাহ্মণবাড়িয়ায় প্রতিপক্ষের হামলা: গুলিবিদ্ধ যুবকের মৃত্যু

সোমবার (৩ নভেম্বর) সকালে ঘটনাটি জানাজানি হয়।

এলাকাবাসী জানান, মাদরাসার আয় এই খামারের মাধ্যমে হয়। তিন মাসের ব্যবধানে দুই দফা ডাকাতি হওয়ায় শিক্ষক ও ছাত্রদের মধ্যে আতঙ্ক ছড়িয়েছে। খামারের বড় গরুগুলো লুট হয়ে যাওয়ায় এক পাশ ফাঁকা পড়ে আছে। বর্তমানে খামারে ১১টি গরু অবশিষ্ট রয়েছে।

খামারের সামনে পড়ে আছে ডাকাত দলের ব্যবহৃত তুষের বস্তা, যা দিয়ে গরুগুলো পিকআপ ভ্যানে তোলে তারা। গরু উদ্ধার এবং ডাকাত দলের সদস্যদের গ্রেপ্তারের দাবি জানিয়েছেন এলাকাবাসী।

মামলার বাদী এবং মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন জানান, গত শুক্রবার ভোরে একদল ডাকাত দুটি পিকআপ ভ্যান নিয়ে এসে অস্ত্রের মুখে মাদরাসার শিক্ষক ও শিক্ষার্থীদের জিম্মি করে। শিক্ষকদের মারধর করে তাদের মোবাইল ফোন নিয়ে যায় ডাকাতরা। তারা খামারে ঢুকে কেয়ারটেকার উৎসব হোসেনকে বেঁধে একে একে পাঁচটি গরু পিকআপ ভ্যানে তুলে নেয়। শিক্ষক ও ছাত্রদের চিৎকারে স্থানীয়রা ছুটে আসলে ডাকাতরা পালিয়ে যায়।

মাদরাসার প্রতিষ্ঠাতা শরীফুল আলম খন্দকার জানান, খামারের আয়ের ওপর ভিত্তি করে মাদরাসার কার্যক্রম চলে। তিন মাস আগেও এই খামারের সাতটি গরু নিয়ে যায় ডাকাতরা।

লাকসাম থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) নাজনীন সুলতানা বলেন, “লুট হওয়া গরু উদ্ধার এবং ডাকাতদের গ্রেপ্তারে অভিযান অব্যাহত আছে। মাদরাসার শিক্ষক ইমরান হোসাইন বাদী হয়ে থানায় মামলা করেছেন।”

ঢাকা/রুবেল/মাসুদ

সম্পর্কিত নিবন্ধ