ছেলেকে আটক করতে না পেরে বাবাকে আটক করল পুলিশ
Published: 20th, March 2025 GMT
চট্টগ্রামে এক তরুণকে আটক করতে গিয়ে হামলার শিকার হয়েছেন বলে অভিযোগ করেছেন পুলিশ সদস্যরা। স্থানীয়দের তোপের মুখে ছেলেকে আটক করতে না পারলেও পরে বাবাকে গ্রেপ্তার করে পুলিশ। তার বিরুদ্ধে সরকারি কাজে বাধার অভিযোগ আনা হয়েছে। বৃহস্পতিবার বিকেলে নগরের হালিশহর থানার বড়পোল এলাকায় এ ঘটনা ঘটে।
ওই তরুণের নাম মো. শাবু। তিনি যুবলীগের রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ও বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে হামলার অভিযোগের প্রমাণ রয়েছে বলে দাবি পুলিশের।
তবে শাবুর পরিবারের দাবি, শাবুর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। আটকের সময় পুলিশের কাছে মামলা সংক্রান্ত তথ্য চাইলে তাদেরকে মারধর করে পুলিশ।
পুলিশ জানায়, বিকেলে নগরের বড়পোল এলাকায় মো.
হালিশহর থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান বলেন, যুবলীগ কর্মী শাবুর বিরুদ্ধে কোন মামলা নেই। তবে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে হামলার সুনির্দিষ্ট তথ্যপ্রমাণ রয়েছে। তাকে আটক করতে গেলে পুলিশের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করে আসামিকে ছিনিয়ে নেয় তার পরিবারের সদস্যরা। পরে অভিযান চালিয়ে তার বাবাকে গ্রেপ্তার করা হয়। তার বিরুদ্ধে পুলিশকে সরকারি কাজে বাধা দেওয়ার অভিযোগে মামলা দায়ের করা হবে।
শাবুর পরিবারের অভিযোগ, শাবুকে ঘর থেকে টেনে-হিঁচড়ে নিয়ে যাচ্ছিল এসআই জিয়াউল। এ সময় পরিবারের লোকজন তার বিরুদ্ধে কোন মামলা আছে কিনা জানতে চাইলে পুলিশ তাদের ওপর চড়াও হয়। এসময় এসআই জিয়াউল শাবুর মাকে লাথি মারেন বলে অভিযোগ তাদের। এছাড়া এসআই জিয়াউল হালিশহরজুড়ে লোকজনকে আওয়ামী লীগ কর্মী দাবি করে গ্রেপ্তার বাণিজ্য করছে বলেও অভিযোগ করেন তারা।
অভিযোগ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে ওসি মনিরুজ্জামান বলেন, 'এসব অভিযোগ সত্য না। বরং তারা পুলিশের উপর চড়াও হয়েছে।'
এসআই জিয়াউল হকের কাছে জানতে চাইলে তিনি বলেন, 'আমি অসুস্থ। কথা বলতে পারছি না।' এটা বলে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: আটক আটক করত পর ব র র
এছাড়াও পড়ুন:
রাজশাহীতে যুবদল–ছাত্রদলের চাঁদাবাজির মামলার এজাহার ফাঁস, এসআইকে বদলি
রাজশাহীতে যুবদল ও ছাত্রদলের নেতাদের বিরুদ্ধে চাঁদাবাজির মামলা রুজুর আগে এজাহার ফাঁসের ঘটনায় এবার এক উপপরিদর্শককে (এসআই) বদলি করা হয়েছে। ওই পুলিশ কর্মকর্তার সঙ্গে ছাত্রদলের এক নেতার ফোনালাপ ফাঁস হওয়ার পর বিষয়টি নিয়ে রাজশাহীতে তুমুল আলোচনা চলছে।
নগরের বোয়ালিয়া থানা থেকে বদলি হওয়া ওই পুলিশ কর্মকর্তার নাম এস এম রকিবুল ইসলাম। চাঁদাবাজির মামলার এজাহার থানায় রেকর্ড হওয়ার আগেই তিনি সেটি হোয়াটসঅ্যাপে পাঠিয়ে দেন ছাত্রদল নেতা এমদাদুল হক ওরফে লিমনের কাছে। এমদাদুল হক রাজশাহী সরকারি সিটি কলেজ ছাত্রদলের সদস্যসচিব। ২৩ জুলাই রাতে আবাসন ব্যবসায়ী মোস্তাফিজুর রহমান তাঁর বিরুদ্ধে দুই লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগে বোয়ালিয়া থানায় মামলা করেন। মামলায় এমদাদুল হকসহ ৩৬ জনের নাম উল্লেখ করা হয়।
এজাহার ফাঁসের ঘটনা জানাজানি হওয়ার পর গতকাল সোমবার এসআই রকিবুলকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে রাজশাহী পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
এসআই রকিবুলের সঙ্গে সেই রাতে হওয়া কথোপকথনের রেকর্ড ফাঁস করে দেন এমদাদুল হক নিজেই। হোয়াটসঅ্যাপের ওই কথোপকথন ভিডিও করে রেখেছিলেন তিনি। ভিডিওতে দেখা যায়, এমদাদুল হক সালাম দিয়ে কথা শুরু করেন। এসআই রকিবুল তাঁর উত্তর না দিয়ে বলেন, ‘মামলা রেকর্ড হচ্ছে, হচ্ছে...রেকর্ডটা করতে দে।’ এমদাদুল জানতে চান, ‘আচ্ছা, ওর (মোস্তাফিজুর রহমানের) মামলাডা হলো, কে কে ভাই বলেন তো একটু। বলা যাবে?’ এসআই বলেন, ‘তুই ফোন দিছিস তোর পরে আমি গেছি। যায়ে এজাহার নিসি, তোরে দিসি। আমি জানি? কমিশনার অফিস থেকে এজাহার লিখিসে।’ এমদাদুল প্রশ্ন করেন, ‘ওখানেই এজাহার লিখেছে? কমিশনার অফিসে?’ এসআই বলেন, ‘হ্যাঁ, ওখান থাইকা অফিসে থেকে এজাহার পাঠায়ে দিসে। অপারেটর তাই কলো যে স্যার, পেনড্রাইভে করে এজাহার পাঠায় দিসে ফোর্স দিয়ে।’
ভিডিওতে আরও দেখা যায়, এমদাদুল বলেন, ‘ও, কমিশনার নিজেই লিখেছে?’ এসআই বলেন, ‘তা জানি না। সে (পুলিশ কমিশনার) তো আর নিজে লেখে না। ওই অফিস (আরএমপি সদর দপ্তর) থেকে পাঠায়ছে। আমি কাজ করতেছি, ফ্রি হয়ে ফোন দিচ্ছি। রাখো।’
পরে মামলাটি প্রত্যাহারের দাবি ও বাদীকে গ্রেপ্তারের দাবিতে রাজশাহীতে মানববন্ধন করেন বিএনপি ও এর অঙ্গসংগঠনের নেতা–কর্মীরা। সেখানে মাইকে বাজিয়ে শোনানো হয় এসআই রকিবুল ও এমদাদুলের এই কল রেকর্ড।
এরপর বিব্রতকর পরিস্থিতিতে পড়ে পুলিশ। বিষয়টি বোয়ালিয়া জোনের উপকমিশনারকে তদন্ত করতে বলা হয়। প্রাথমিক তদন্ত শেষে এসআই রকিবুল ইসলামকে থানার দায়িত্ব থেকে সরিয়ে গতকাল পুলিশ লাইনসে সংযুক্ত করা হয়।
রাজশাহী মহানগর পুলিশের গণমাধ্যম শাখার অতিরিক্ত উপকমিশনার গাজিউর রহমান বলেন, ‘রকিবুল ইসলামের গত তিন মাসের চাকরির পারফরম্যান্স খারাপ হওয়ায় তাকে থানা থেকে বদলি করা হয়েছে। এর সঙ্গে ওই কল রেকর্ডের কোনো সম্পর্ক নেই। আর কল রেকর্ডে সে যা বলেছে, তার ব্যাপারে অবশ্য ডিপার্টমেন্ট তাকে জিজ্ঞাসাবাদ করবে।’
পুলিশ কমিশনার কার্যালয় থেকে কোনো মামলার এজাহার পাঠানোর প্রসঙ্গে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনো হয় না। মামলার বাদী থানায় এসে লিখিত এজাহার ওসির কাছে জমা দেন অথবা লিখতে না পারলে অন্য কাউকে দিয়ে লিখে তা বাদীকে পড়ে শোনানো হয়। তিনি তাতে সায় দিলে টিপসই নেওয়া হয়।’ কমিশনার কার্যালয় থেকে উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে মামলা পাঠানো হতে পারে কি না, এমন প্রশ্নে গাজিউর রহমান বলেন, ‘এটা কখনোই সম্ভব নয়। রাতে কমিশনার অফিসে কেউ থাকে না। তা ছাড়া আমি রেকর্ডটি শুনেছি। বলেছে, কমিশনার অফিস থেকে। এখন কমিশনার তো আরও আছে। সেটা ঠিক নয়।’