Prothomalo:
2025-11-03@02:13:15 GMT

নওগাঁর দিবর দিঘিতে একদিন

Published: 22nd, March 2025 GMT

‘কোথাও আমার হারিয়ে যাওয়ার নেই মানা মনে মনে!’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের গানের এই পঙ্‌ক্তি স্মরণ করে কেবল মনে মনে নয়, সশরীর হাজির উত্তরবঙ্গের ঐতিহাসিক ‘দিবর দিঘি’–তে। এর অবস্থান নওগাঁর পত্নীতলা উপজেলার দিবর ইউনিয়নে।

নওগাঁ সদর থেকে ৩৯ কিলোমিটার উত্তর-পশ্চিমে নজিপুর পৌরসভা, যার ধার ঘেঁষে বয়ে চলেছে আত্রাই নদ। এই নদের ওপর নির্মিত পুরোনো ‘শহীদ মুক্তিযোদ্ধা সিদ্দিক প্রতাপ সেতু’ পার হয়ে সোজা পথ চলে গেছে ২১ কিলোমিটার পশ্চিমে আমের সাম্রাজ্য সাপাহার উপজেলায়। এই মৌসুমে অজস্র ভাঁটফুল শুভ্র সৌন্দর্য মেলে ফুটে আছে পথের ধারে। যেতে যেতে পথ এক রেখা হয়ে যায়। সাপাহারের দুই কিলোমিটার আগে রাস্তার বাঁ পাশে চোখে পড়ে সারি সারি ইউক্যালিপটাস ও আকাশমণিগাছে ছেয়ে থাকা বন। কাঁকর বিছানো উঁচু–নিচু মাটি।

একটু এগিয়েই রাস্তার ডান পাশে ‘ঐতিহাসিক দিবর দিঘি’ নামাঙ্কিত বড় এক তোরণ। তোরণ পেরিয়ে গ্রাম, আঁকাবাঁকা পাকা রাস্তা ধরে এগিয়ে চলা। দুই পাশে আমবাগান। বিয়ের টোপরের মতো মুকুলে ছেয়ে আছে সব আমগাছ। কয়েকটি বড় পুকুর দেখতে দেখতে এগিয়ে চলেছি সেই দিঘির দিকে। কাছাকাছি এসে দেখি, ঢালু হয়ে অনেকটা পথ নেমে গেছে দিঘি বরাবর। নামছি ঢাল বেয়ে ইট বিছানো সরু পথে। দুপাশে প্রহরীর মতো দেবদারুগাছের সারি।

দিঘির শানবাঁধানো ঘাটে এসে বসলাম। তখন বিকেল। প্রায় ২০ একরের বিশাল দিঘি। মেঘলা দিন, ঠান্ডা হাওয়া বয়ে চলেছে। একই রঙের আকাশ ও দিঘির পানি। শুধু ওই পাড়ের গাছপালা এমন মিলনরেখায় ছেদ ঘটিয়েছে। ছোট ছোট ঢেউ দুলতে দুলতে এসে মিলিয়ে যাচ্ছে পাড়ে। এক অদ্ভুত প্রশান্তি ভুলিয়ে দেয় পথের ক্লান্তি। দিঘির মাঝখানে যে অখণ্ড গ্রানাইট পাথরের স্তম্ভ দেখা যাচ্ছে, সেটাই এই দিঘির বিশেষত্ব, সেটাই এখানকার ইতিহাসের স্মারক।

বর্গাকার এই দিঘির মাঝখানের স্তম্ভটি প্রতিষ্ঠার ইতিহাস সম্পর্কে ইতিহাসবিদদের নানা মত আছে। কারও মতে, কৈবর্ত বিদ্রোহের সময় পাল রাজবংশের রাজা দ্বিতীয় মহিপালকে পরাজিত করার কৃতিত্ব স্মরণীয় করে রাখতে কৈবর্ত রাজা দিব্যক এই জয়স্তম্ভ নির্মাণ ও দিঘি খনন করেন।

আবার কেউ কেউ বলেন, দিব্যকের রাজত্বকালে পাল রাজা রামপাল বরেন্দ্র উদ্ধারের চেষ্টা করে দিব্যকের কাছে পরাজিত হন। দিব্যক সেই জয়ের স্মৃতি রক্ষায় এই স্তম্ভ নির্মাণ করেন। প্রত্নতাত্ত্বিকদের মতে, কৈবর্ত রাজা ভীম তাঁর চাচা দিব্যকের স্মৃতি রক্ষায় এই স্তম্ভ নির্মাণ করেন।

১৮০৭-০৮ সালে ব্রিটিশ তথ্যানুসন্ধানী ও জরিপকারী ফ্রান্সিস বুকানন দিবর দিঘির শিলাস্তম্ভের দৈর্ঘ্য ৩০ দশমিক ৭৫ ফুট বলে উল্লেখ করেন। স্যার আলেকজান্ডার কানিংহামের বর্ণনা মতে, স্তম্ভটিতে মোট ৯টি কোণ আছে এবং এই স্তম্ভের ব্যাস ৭৩ সেন্টিমিটার (২৯ ইঞ্চি)।

দিঘির চারপাশে চোখ বোলালে মনে হয় বিশাল এক অ্যাম্ফিথিয়েটার বা স্টেডিয়ামের গ্যালারি। রোমের কলোসিয়ামের কথা মনে পড়ে যায়, যেখানে গ্ল্যাডিয়েটরদের রক্তক্ষয়ী লড়াইয়ে জিততে হতো প্রতিপক্ষ মল্লবীর অথবা হিংস্র কোনো পশুর সঙ্গে। হেরে গেলে প্রাণপাত, জিতে গেলে বীর।

দিবর দিঘির এই জয়স্তম্ভ যুদ্ধ, রক্তপাত, জয়-পরাজয়, মোটকথা কৈবর্ত বিদ্রোহের সেই সময়ের কথা স্মরণ করিয়ে দেয়, যা শত শত বছর ধরে এভাবেই দণ্ডায়মান, একটুও হেলে পড়েনি। বিখ্যাত প্রত্নতাত্ত্বিক ও ইতিহাসবিদ আবুল কালাম মোহাম্মদ যাকারিয়া তাঁর ‘বাঙলাদেশের প্রত্নসম্পদ’ বইয়ে এ বিষয়ে লিখেছেন, ‘বহুতলবিশিষ্ট অট্টালিকার ভিত্তিদেশের মতো স্তম্ভটির মাটির নিচের নিম্নদেশ সাতটি স্তবকে নির্মিত ছিল এবং নিচের স্তবকগুলো নিচের দিকে ক্রমেই স্ফীতকায় করে নির্মিত ছিল।’ আজও সগৌরবে এই শিলাস্তম্ভ কত রহস্য নিয়ে ইতিহাসের নীরব সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে!

খাঁজকাটা ও পাথরে খোদাইকৃত অলংকারশোভিত এই স্তম্ভের সৌন্দর্য ও দিঘির বিশালতা পর্যটকদের এক ঘোরলাগা আবেশে টানে। ঘাটে নৌকা বাঁধা। নৌকা নিয়ে গিয়ে ছুঁয়ে দেখে আসা যায় শিলাস্তম্ভ। স্থির দৃষ্টিতে কিছুক্ষণ তাকিয়ে থাকলে মনে হতে থাকবে, এই স্তম্ভ ঘিরে যেন আশপাশের সবকিছু আকর্ষিত হচ্ছে। এ পাশের পাড় থেকে তাকালে দেখা যায়, স্তম্ভটি অন্য পাড়ের কাছাকাছি। ওই পাড়ে গিয়ে মনে হয়, স্তম্ভটি আগের পাড়ের কাছাকাছি—এমন দৃষ্টিবিভ্রম তৈরি হয়। দিবর দিঘি দেখতে এলে এর বহুমাত্রিক সৌন্দর্য ও রহস্যে যে কেউ মুগ্ধ হবেন।

এমন দৃশ্যমুগ্ধতায় একাত্ম হয়ে থাকতে থাকতে কখন যেন জালের মতো অন্ধকারে জড়িয়ে যায় চারপাশ। সন্ধ্যার হাত ধরে থোকা থোকা ছায়া ঘন হয়ে ওঠে দিঘিপাড়ের আমবাগানে। বাতাসে মুকুলের ম–ম ঘ্রাণ। বুঝলাম, এই প্রত্নগভীরতা থেকে বেরিয়ে আসার সময় হয়েছে। ফিরে যাচ্ছি আবার চলমান জীবনের ব্যস্ততায়, বাস্তবতায়। পেছনে আবছা অন্ধকারে যাবতীয় স্মৃতি নিয়ে পানিতে একলা দাঁড়িয়ে থাকে দিব্যক বিজয়স্তম্ভ।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ বর দ ঘ ক বর ত

এছাড়াও পড়ুন:

ইউরোপে পাইলটদের বেতন কোন দেশে কত

ইউরোপে সবচেয়ে বেশি বেতনের পেশার মধ্যে অন্যতম একটি হচ্ছে পাইলট। ফ্রান্সে এটি পঞ্চম সর্বোচ্চ মাসিক বেতনের পেশা। জার্মানিতে জটিল ভূমিকার পাইলটেরা মাসে ২৮ হাজার ৯৬ ইউরো উপার্জন করেন। যুক্তরাজ্যে পূর্ণকালীন পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলাররা মধ্যম আয়ে পঞ্চম স্থানে। ডেনমার্কে ২০২৩ সালে মাসিক বেতন ১৩ হাজার ৫২৩ ইউরো, দেশটির হিসাবে সপ্তম সর্বোচ্চ বেতন।

অভিজ্ঞতা অনুযায়ী বেতনের বৈচিত্র্য

পাইলটদের বেতন দেশ অনুযায়ী ভিন্ন ভিন্ন হয়। যুক্তরাজ্যে বেতন শুরু হয় বছরে ৫৪ হাজার ২৮৩ ইউরো (৪৭,০০০ পাউন্ড) থেকে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য এটি প্রায় ১ লাখ ৭৩ হাজার ২৪৩ ইউরো (১ ইউরো সমান ১৪১ টাকা ৭৭ পয়সা, ২২ অক্টোবর ২০২৫ হিসাবে) পর্যন্ত হতে পারে, জানিয়েছে ব্রিটিশ ন্যাশনাল ক্যারিয়ার্স সার্ভিস।

ইআরআই অর্থনৈতিক গবেষণা ইনস্টিটিউট জানায়, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতার পাইলটরা এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞ পাইলটের চেয়ে ৬০ থেকে ৮০ শতাংশ বেশি আয় করেন। অর্থাৎ অভিজ্ঞ পাইলটরা প্রায় তিন গুণ বেশি উপার্জন করেন।

আরও পড়ুনফ্রিল্যান্সিংয়ে নামার আগে এ পাঁচটি বিষয় ভাবুন১৯ অক্টোবর ২০২৫দেশভিত্তিক তথ্য

যুক্তরাজ্য

২০২৪ সালের এপ্রিল পর্যন্ত এএনএসের তথ্যানুসারে, পূর্ণকালীন ‘এয়ারক্রাফট পাইলট ও এয়ার ট্রাফিক কন্ট্রোলার’-এর বার্ষিক আয় প্রায় ৯৫ হাজার ২৪০ ইউরো (৮০,৪১৪)। ইআরআইয়ের মতে, গড় বার্ষিক বেতন ৯০ হাজার ২৫৩ ইউরো (৭৮,১৪৬ পাউন্ড), লন্ডনের জন্য ১ লাখ ১৫ হাজার ৫৬২ ইউরো (১০০,০৬০ পাউন্ড)।

জার্মানি

জার্মানির ফেডারেল স্ট্যাটিস্টিক্যাল অফিসের তথ্যমতে, গড় মাসিক বেতন ১২ হাজার ৫৬৬ ইউরো (বার্ষিক ১,৫০,৭৯২ ইউরো)। মধ্যম আয় ১০ হাজার ২০৭ ইউরো (বার্ষিক ১,২২,৪৮৪ ইউরো), অভিজ্ঞ ও বিশেষায়িত পাইলটদের ক্ষেত্রে তা ৩ লাখ ৪২ হাজার ৭২ ইউরো পর্যন্ত হতে পারে। ইআরআইয়ের তথ্য অনুসারে, এক থেকে তিন বছরের অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটের গড় বেতন ৭৩,৭৮৫ ইউরো, আট বছরের বেশি অভিজ্ঞতাসম্পন্ন পাইলটদের জন্য ১ লাখ ৩২ হাজার ১১৭ ইউরো।

ফ্রান্স

INSEE জানায়, ‘সিভিল এভিয়েশন টেকনিক্যাল ও কমার্শিয়াল ফ্লাইট অফিসার’দের গড় মাসিক বেতন ৯ হাজার ৩০০ ইউরো (বার্ষিক ১,১১,৬০০ ইউরো)। ERI অনুসারে, অভিজ্ঞ পাইলটদের জন্য গড় বেতন ১ লাখ ৯ হাজার ২৯২ ইউরো।

ছবি: এমিরেটসের ওয়েবসাইট থেকে নেওয়া

সম্পর্কিত নিবন্ধ