পরিবেশ, বন ও জলবায়ু পরিবর্তন এবং পানিসম্পদ মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা সৈয়দা রিজওয়ানা হাসান বলেন, আওয়ামী লীগের অর্থে পুষ্টরা এখনও গুজব-অপপ্রচার ছড়াচ্ছে। তারা এ পরিবর্তনকে মেনে নিতে পারছে না।

রোববার বিকেলে প্রেস ইনস্টিটিউট বাংলাদেশ মিলনায়তনে গণমাধ্যমে ভুল তথ্য প্রচার থেকে উত্তরণের উপায় নিয়ে আয়োজিত সংলাপে তিনি এসব কথা বলেন।

উপদেষ্টা বলেন, বিগত সময়ে প্রচুর অপতথ্য ও ভুয়া তথ্য প্রচার হয়েছে। ক্ষমতায় থাকার সময় যখন অর্থনীতি টালমাটাল হয়েছে তখন রাসেল ভাইপারের গল্প, ৫ আগস্টের পরে ডাকাত-ডাকাত বলে অপপ্রচার করে মানুষকে ভিন্নধারায় ব্যস্ত রাখা হয়েছে। যাচাই না করে এসব প্রচার করেছে গণমাধ্যম।
তিনি বলেন, গণমাধ্যমের দায়িত্ব সঠিক তথ্য তুলে ধরা। তবে অনেক ক্ষেত্রে বিভ্রান্তিকর তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। এতে সমাজে ভুল ধারণা তৈরি হচ্ছে। কিছু সংবাদ শুধু ভিউ বাড়ানোর জন্য প্রকাশিত হয়। এতে প্রকৃত সত্য আড়ালে থেকে যায়।

‘অনেক মালিক ব্যবসা টেকাতে গণমাধ্যম গড়ে তুলেছেন’ মন্তব্য করে উপদেষ্টা বলেন, তাদের একটি অসৎ উদ্দেশ্য শুরু থেকে ছিল। ফলে বুঝতে হবে, কাদের কাছে প্রকৃত সত্য মানুষের মধ্যে পৌঁছে দেওয়ার দায়িত্ব রয়েছে। তারা অনেককে লক্ষ্য করে। ভুল তথ্য দিয়ে সাধারণ মানুষের মনে দ্বিধা তৈরি করে। বারবার বলতে বলতে মিথ্যাকে সত্য বানাতে চায়। দেশের অনেক গণমাধ্যম জুলাই অন্দোলন মেনে নেয়নি। তারা ৫ আগস্টের এক দিন আগেও ছাত্রদের পক্ষে সংবাদ প্রচার করেনি। এর পর এখন পাল্টে গেছে। তবে তাদের মধ্যে কোনো অনুতাপ নেই। তারা এখনও বিভিন্ন ক্ষেত্রে অপপ্রচার করতে সফল হচ্ছে। কারণ তাদের অনেক অর্থ আছে।

অনুষ্ঠানে পিআইবির মহাপরিচালক ফারুক ওয়াসিফ বলেন, বিগত সরকারের সময় প্রতিটি বিষয়ে ভুল বা বাড়ানো তথ্য দেওয়া হয়েছে।

যমুনা টেলিভিশনের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ও ব্রডকাস্ট জার্নালিস্ট সেন্টারের ট্রাস্টি ফাহিম আহমেদ বলেন, ৫ আগস্টের পর থেকে মিথ্যা তথ্য প্রচার করা হচ্ছে। অনেক টেলিভিশনের নামে সামাজিক মাধ্যমে পেজ খুলে গুজব ছড়ানো হচ্ছে। আমরা ব্যতিব্যস্ত থাকছি সেগুলো আমাদের নয়– সেটা প্রমাণ করতে।

গণমাধ্যম সংস্কার কমিশনের প্রধান কামাল আহমেদ বলেন, মূলধারার অনেক গণমাধ্যম বাধ্য হয়ে ভুল তথ্য প্রচার করে গুরুত্ব হারিয়েছে। এরা এখন ভাইরাল হওয়ার নেশায় যা-তা ছড়াচ্ছে।
সংলাপে আরও বক্তব্য দেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের প্রশাসক মোহাম্মদ এজাজ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রাশেদ আল মাহমুদ তিতুমীর, ইউল্যাবের অধ্যাপক ড.

দ্বীন মুহাম্মদ সুমন রহমান এবং অক্সফাম ইন বাংলাদেশের কান্ট্রি ডিরেক্টর আশীষ দামলে প্রমুখ।

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না

জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না বলে মন্তব্য করেছেন অন্তর্বর্তী সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। তিনি বলেন, বাংলাদেশের মানুষ মনে করে, অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান। তারা অন্তর্বর্তী সরকারকে সরাসরি চলে যেতে এখনও বলছে না। বরং একটা ভালো নির্বাচন উপহার দিতে সরকারই নির্বাচন আয়োজনের দিকে যাচ্ছে।

কাতারভিত্তিক গণমাধ্যম আলজাজিরায় এক সাক্ষাৎকারে তিনি এসব কথা বলেন। ‘মুহাম্মদ ইউনূস: রিয়েল রিফর্ম অর জাস্ট আ নিউ রুলিং ক্লাস ইন বাংলাদেশ’ শিরোনামে সাক্ষাৎকারটি গতকাল রোববার আলজাজিরার ওয়েবসাইটে প্রকাশ করা হয়। দীর্ঘ সাক্ষাৎকারে জুলাই বিপ্লব, সাবেক স্বৈরাচার প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভারতে পালিয়ে যাওয়া, সাবেক সরকারের দুর্নীতিসহ বিভিন্ন বিষয় নিয়ে  কথা বলেন তিনি।

বাংলাদেশে একটি সুষ্ঠু, নিরপেক্ষ এবং উদাহরণ সৃষ্টিকারী নির্বাচন উপহার দেওয়ার দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করে প্রধান উপদেষ্টা বলেন, নির্বাচনের আগে সংস্কারের তালিকা ছোট হলে ডিসেম্বরের মধ্যে নির্বাচন এবং তালিকা বড় হলে আগামী বছরের জুনের মধ্যে নির্বাচন হবে। অন্তর্বর্তী সরকারের কাছে জনপ্রত্যাশা এখনও তুঙ্গে রয়েছে উল্লেখ করে তিনি বলেন, জনগণ মনে করে অন্তর্বর্তী সরকার এখনও তাদের জন্য ভালো সমাধান।

আলজাজিরার উপস্থাপক ড. ইউনূসকে প্রশ্ন করেন, এটা কি বলা ঠিক যে, শেখ হাসিনার পতনের পর অন্তর্বর্তী সরকারের ‘মধুচন্দ্রিমা’ এখন সম্ভবত শেষ হয়েছে? কিছু বেশ বড় চ্যালেঞ্জ রয়েছে, যেগুলোর সুনির্দিষ্ট জবাব আপনাকে দিতে হবে। কারণ, পুরোনো ক্ষমতাধরদের প্রভাব রয়েছে, অনেকে রাজনৈতিক শূন্যতাকে কাজে লাগাতে চাইতে পারে।

লাখ লাখ রোহিঙ্গা শরণার্থীর সমাধান কি বাংলাদেশ একা করতে পারবে? জবাবে ড. ইউনূস বলেন, আমরা আন্তর্জাতিক সংস্থা ও জাতিসংঘের সঙ্গে রোহিঙ্গা সমস্যা নিয়ে কাজ করছি। তারা যাতে নিরাপদে বাড়ি ফিরে যেতে পারে, তা নিশ্চিত করার চেষ্টা করছি। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের মধ্যে কিছু বোঝাপড়া যাতে তৈরি হয়।

নির্বাচনে আওয়ামী লীগকে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হবে কিনা– এমন প্রশ্নের জবাবে ড. ইউনূস বলেন, এ প্রশ্নের জবাবের একটি অংশ আওয়ামী লীগকেই নির্ধারণ করতে হবে। দলটি আগে নিজেই সিদ্ধান্ত নেবে– তারা নির্বাচনে যোগ দেবে কিনা। তারা এখনও কিছু ঘোষণা করেনি। তা ছাড়া নির্বাচনের সময় নির্বাচন কমিশন কী প্রতিক্রিয়া দেয়, সেটাসহ নানা বিষয় সামনে আসতে পারে।

তাহলে আওয়ামী লীগের নির্বাচনে অংশ নেওয়ার বিষয়টি নির্বাচন কমিশনের ওপর ছেড়ে দিচ্ছেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, বিষয়টি তা নয়। অন্যান্য রাজনৈতিক দল আছে, যারা বলতে পারে যে, এই আইনের অধীনে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না।

সাক্ষাৎকারে থাইল্যান্ডের ব্যাংককে ড. ইউনূসের সঙ্গে ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির বৈঠকের প্রসঙ্গ ওঠে। ড. ইউনূস জানান, তিনি বিমসটেক সম্মেলনের ফাঁকে মোদির সঙ্গে বৈঠক করেছিলেন। সেখানে শেখ হাসিনাকে ‘চুপ’ রাখতে বলেছিলেন তিনি। জবাবে মোদি বলেছিলেন, এটা তাঁর জন্য সম্ভব নয়। শেখ হাসিনা সামাজিক মাধ্যম ব্যবহার করে কিছু বললে, সেটি তিনি নিয়ন্ত্রণ করতে পারবেন না।

যুক্তরাষ্ট্র, ভারত, পাকিস্তান ও চীনের সঙ্গে সম্পর্ক নিয়ে ড. ইউনূস বলেন, একসঙ্গে কাজ করার নীতি নিয়ে আগাতে চাই। আমরা একসঙ্গেই পারস্পরিক সহযোগিতামূলক পদক্ষেপ নিতে চাই।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চিনি-লবণের অনুপম পাঠ
  • মে দিবস ২০২৫ : শ্রমিক-মালিক ঐক্যে গড়বে নতুন বাংলাদেশ
  • বিদ্যালয়ের ১৮টি গাছ বিক্রি করলেন প্রধান শিক্ষক 
  • কর্ণাটকে ক্রিকেট খেলার সময় বচসা, যুবককে পিটিয়ে হত্যা
  • দেশে আন্তর্জাতিক পেমেন্ট গেটওয়ে চালুর দাবি 
  • রাখাইন রাজ্যে ‘মানবিক করিডোর’ বিষয়ে ব্যাখ্যা দিলেন প্রেস সচিব
  • কানাডায় আবারও লিবারেল পার্টির সরকার গঠনের আভাস
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে
  • জনগণ তাড়াতাড়ি ক্ষমতা হস্তান্তরের কথা বলছে না
  • আ.লীগ নির্বাচনে অংশ নেবে কিনা তাদেরকেই নির্ধারণ করতে হবে: ড. ইউনূস