গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের (জিসিসি) একটি সড়ক নির্মাণ কাজে অনিয়ম ও কারচুপির মাধ্যমে ৬০ লাখ টাকা দুর্নীতির চেষ্টা আটকে দিয়েছেন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক ও ঢাকা বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ চৌধুরী।

সোমবার (২৪ মার্চ) সিটি কর্পোরেশনের মাসিক সমন্বয় সভা শেষে বিভাগীয় কমিশনার শরফ উদ্দিন আহমেদ সাংবাদিকদের এ তথ্য জানান।

জিসিসির প্রশাসক আরো জানান, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের গুরুত্বপূর্ণ জয়দেবপুর-পুবাইল আঞ্চলিক সড়কটি উন্নয়নের জন্য প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়। এই প্রকল্পের নির্মাণ ব্যয় ধরা হয় ২৫ কোটি টাকা। সাড়ে ৮ কিলোমিটার দৈর্ঘ্য ও ২০ ফুট প্রস্থের এই সড়কের নির্মাণ কাজে ম্যাকাডাম (ইটের খোয়া) বিছানাতে পুরনো ও নিম্নমানের সামগ্রী ব্যবহার করার অভিযোগ ওঠে। বিষয়টি তার নজরে এলে তিনি এ ব্যাপারে খোঁজখবর নেন এবং সড়কের সিডিউল ও বাস্তবায়ন বিষয়গুলো যাচাই করে অভিযোগের সত্যতা পান। এ সড়কের প্রায় তিন কিলোমিটার নিম্নমানের ইটের খোয়া ব্যবহার করা হয়। এসব খোয়ার মান খারাপ থাকায় তিনি ব্যবহৃত ৩ কিলোমিটার সড়কের সমস্ত খোয়া অপসারণ করে পুরো সড়কে সিডিউলে উল্লেখিত মানসম্পন্ন নতুন খোয়া ব্যবহার করার জন্য নির্দেশ দেন।

তিনি আরো জানান, এই সড়কের কাজের ইস্টিমেটে (প্রাক্কলন) খোয়া বাবদ প্রায় ৬০ থেকে ৭০ লাখ টাকা ধরা আছে। নিম্নমানের সামগ্রী অপসারণের ফলে সরকারের এই ৬০ লাখ টাকার অপচয় রোধ হলো এবং নতুন মানসম্পন্ন খোয়া ব্যবহার করে কাজ বাস্তবায়ন করতে পারলে এই কাজের মান উন্নত হবে। ফলে সড়কটি টিকসই হবে। এর সুবিধা পাবে এই সিটি কর্পোরেশনের সড়ক ব্যবহারকারী নাগরিকরা।

এ সময় তিনি আরো বলেন, ‘‘যে কয় দিন গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসক হিসেবে থাকবো, এখানে কোনো অনিয়ম এবং দুর্নীতি প্রশ্রয় দেওয়া হবে না।’’ তিনি আশা প্রকাশ করেন, গাজীপুর মহানগরীর নাগরিকরা তথ্য দিয়ে তাকে সহযোগিতা করবেন, যাতে এখানে একটি নাগরিক বান্ধব প্রশাসন গড়ে তোলা যায়।

এদিকে, সিটি কর্পোরেশনের প্রশাসকের এমন সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়েছেন, গাজীপুর সিটি কর্পোরেশনের সুধী সমাজ। গাজীপুর নাগরিক ফোরামের সভাপতি জালাল উদ্দিন বলেন, নতুন প্রশাসক একটি রাস্তার অনিয়ম ধরেছেন এবং তার প্রতিকারের ব্যবস্থা নিয়েছেন, এটি অবশ্যই অভিনন্দনযোগ্য। তিনি আরো আশা প্রকাশ করেন, প্রশাসকের দায়িত্বকালীন সময়ে সিটি কর্পোরেশনের অন্যান্য যত অনিয়ম, অব্যবস্থাপনা আছে, তা দূরীকরণে তৎপরতা অব্যাহত রাখবেন।

স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, জয়দেবপুর-পুবাইল সড়কটি নগরবাসীর পুবাইল, কালীগঞ্জ, ঘোড়াশাল হয়ে ঢাকা-সিলেট মহাসড়কের সঙ্গে মিলিত হয়েছে। সড়কটি গুরুত্বপূর্ণ। ইতিপূর্বেও এ সড়কটি বিভিন্ন সময় সংস্কার ও মেরামত করা হয় কিন্তু কাজে অনিয়ম ও কারচুপির কারণে কোনটাই টেকেনি। গত কয়েক বছর যাবত এ সড়কটি চলাচলের অনুপযোগী হয়ে পড়ে আছে এবং যোগাযোগ প্রায় বিচ্ছিন্ন হয়েছিল। গুরুত্বপূর্ণ এই সড়কটি ঢাকা-ময়মনসিংহ মহাসড়ক এবং ঢাকা বাইপাস সড়কের যানজট এড়াতে নাগরিকদের সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে।

এ সময় সিটি করপোরেশনের সচিব নমিদা দে, প্রধান রাজস্ব কর্মকর্তা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনা কর্মকর্তা সোহেল রানা, তত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সুদীপ চক্রবর্তী, সকল আঞ্চলিক নির্বাহী কর্মকর্তা ও নির্বাহী প্রকৌশলীরা উপস্থিত ছিলেন।

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ব যবহ র কর অন য ম

এছাড়াও পড়ুন:

মেঘনার জোয়ারে সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, দুই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন

মেঘনা নদীর জোয়ারের পানির তোড়ে সেতুর সংযোগ সড়ক ধসে যাওয়ায় নোয়াখালীর হাতিয়া ও লক্ষ্মীপুরের রামগতি উপজেলার মধ্যে সড়ক যোগাযোগ বন্ধ হয়ে পড়েছে। হাতিয়া ও রামগতি উপজেলার মাঝামাঝি এই সেতুর অবস্থান। আর ধসে পড়া সংযোগ সড়কটি পড়েছে রামগতির তেগাছিয়া বাজারে। আজ মঙ্গলবার সকাল আটটার দিকে প্রবল জোয়ারে সেতুর সংযোগ সড়ক ভেঙে পড়ে। এতে স্থানীয় স্কুল-মাদ্রাসার শিক্ষার্থী, ব্যবসায়ীসহ দুই উপজেলার বাসিন্দারা যাতায়াতে দুর্ভোগ পোহাচ্ছেন।

ওই এলাকার বাসিন্দারা জানান, সেতুর পশ্চিম পাশের সংযোগ সড়কের একাংশের মাটি সরে ধসে পড়েছে। বিষয়টি রামগতি স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরকে (এলজিইডি) জানানো হয়েছে। তবে বিকেল নাগাদ কোনো পদক্ষেপ গ্রহণ করা হয়নি। ধসের কারণে সড়কটি দিয়ে যানবাহন, এমনকি মানুষজনের চলাচলও বন্ধ হয়ে গেছে।

স্থানীয় বাসিন্দা আবদুল মতিন প্রথম আলোকে বলেন, দুই উপজেলার সীমান্তবর্তী তেগাছিয়া বাজারের খালের ওপর নির্মিত সেতু দিয়ে উভয় উপজেলার বাসিন্দারা তেগাছিয়া বাজারে যাতায়াত করেন। তেগাছিয়া বাজারের বড় অংশটি হাতিয়ার মধ্যে। আরেক অংশ রামগতি সীমানার ভেতরে। এ ছাড়া স্থানীয় একটি সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় ও দুটি মাদ্রাসার শিক্ষার্থীদের যাতায়াতের একমাত্র মাধ্যম এই সড়ক ও সেতু।

স্থানীয় টাংকির বাজারের ঘাটে আসা ইলিশ লক্ষ্মীপুর হয়ে দেশের বিভিন্ন স্থানে যায় এই সড়ক দিয়ে। তাই সেতুর সড়ক বিধ্বস্ত হওয়ায় দুটি উপজেলার মাছ ব্যবসায়ীরাও ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। দ্রুত সংযোগ সড়ক মেরামত না করলে মূল সেতুই ঝুঁকিতে পড়বে বলে আশঙ্কা ওই এলাকার বাসিন্দাদের।

জানতে চাইলে স্থানীয় সরকার প্রকৌশল অধিদপ্তরের (এলজিইডি) রামগতি উপজেলা প্রকৌশলী স্নেহাল রায় মুঠোফোনে প্রথম আলোকে বলেন, হাতিয়া-রামগতি উপজেলা সড়কের তেগাছিয়া বাজারের খালের ওপর নির্মিত ৪০ মিটার দৈর্ঘ্যের সেতুটির সংযোগ সড়কের কিছু অংশ জোয়ারের পানির তোড়ে ভেঙে গেছে বলে শুনেছেন। কিন্তু পুরোপুরি বিচ্ছিন্ন হয়ে যাওয়ার বিষয়টি তাঁকে কেউ জানায়নি। তিনি বিষয়টি নিয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার (ইউএনও) সঙ্গে কথা বলে দ্রুত যোগাযোগব্যবস্থা স্বাভাবিক করার চেষ্টা করবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • বেহাল সড়ক
  • মেঘনার জোয়ারে সেতুর সংযোগ সড়কে ধস, দুই উপজেলার সড়ক যোগাযোগ বিচ্ছিন্ন