গতকাল শুক্রবার মিয়ানমারের রাজধানীসহ দেশটির বিভিন্ন স্থানে দুটি শক্তিশালী ভূমিকম্প হয়েছে। এর একটি ৭.৭ মাত্রার ছিল, অপরটি ছিল ৬.৪ মাত্রার। এর উৎপত্তিস্থল মিয়ানমারের মান্দালয়। ভূমিকম্পটির উৎপত্তি ১০ কিলোমিটার গভীরে। যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএসজিএস এ তথ্য জানিয়েছে। শুধু মিয়ানমার নয়, এর প্রভাব অনুভূত হয়েছে ভারত, থাইল্যান্ডসহ দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়ার বিভিন্ন স্থানে। কেন দেশটিতে ভয়াবহ এ ভূমিকম্প আঘাত হানল, তা নিয়ে চলছে আলোচনা।
ভূমিকম্পের দিক থেকে সবচেয়ে সক্রিয় অঞ্চলগুলোর মধ্যে মিয়ানমার একটি। বৈশ্বিক ভূকম্পন ঝুঁকির মানচিত্রে মিয়ানমার মাঝারি থেকে উচ্চ ঝুঁকির রেড জোনে অবস্থিত।
বলা হয়, মিয়ানমারের সেন্ট্রাল বেসিনের একটি ফল্ট বা চ্যুতি আছে। এর নাম ‘সাগাইং ফল্ট’। দেশটিতে ভূমিকম্পের ঝুঁকির সবচেয়ে বড় কারণই হলো এই সাগাইং ফল্ট। এটি শান মালভূমি ও সেন্ট্রাল মিয়ানমার বেসিনের মাঝামাঝি এলাকায় অবস্থিত। সেখানেই এই ভূমিকম্পের উৎপত্তি হয়েছে। এলাকাটি ভূমিকম্পপ্রবণ। সাগাইং ফল্টকে উল্লেখযোগ্য ভূমিকম্পের সঙ্গে যুক্ত করা হয়েছে, যা এই অঞ্চলের ভূমিকম্পের কার্যকলাপকে তুলে ধরে। এই ফল্টে দুটি স্থলভাগ একে অপরের পাশ দিয়ে সরে যায়।
ভূমিকম্প বিশেষজ্ঞরা বলছেন, গত ২০ বছরে মিয়ানমারে এত মাত্রার ভূমিকম্প হওয়ার নজির নেই। এর প্রভাবে রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে কয়েক দফায় কম্পন অনুভূত হয়েছে। এর পরাঘাত বা আফটার শক আরও হতে পারে।
যে অঞ্চলে ভূমিকম্প হয়েছে, সেটি ‘ইন্দো-বার্মা সাবডাকশন জোনের’ মধ্যে পড়েছে। সাবডাকশন জোন হলো এমন একটি এলাকা, যেখানে দুটি টেকটোনিক প্লেট সংঘর্ষে লিপ্ত হয় এবং একটি ডুব দেয় বা অন্যটির নিচে পড়ে যায়।
বিশেষজ্ঞরা বলেন, একসময় পৃথিবীর সব স্থলভাগ একত্রে ছিল। পৃথিবীর উপরিভাগের প্লেটগুলো ধীরে ধীরে আলাদা হয়ে গেছে। এই প্লেটগুলোকেই বিজ্ঞানীরা বলেন টেকটোনিক প্লেট। এগুলো একে অপরের সঙ্গে পাশাপাশি লেগে থাকে। কোনো কারণে এগুলোর মধ্যে সংঘর্ষ হলেই তৈরি হয় শক্তি। এই শক্তি সিসমিক তরঙ্গ আকারে ছড়িয়ে পড়ে। যদি তরঙ্গ শক্তিশালী হয়, তাহলে সেটি পৃথিবীর উপরিতলে এসে পৌঁছায়। আর সেখানে পৌঁছানোর পর শক্তি অটুট থাকলে সেটা ভূত্বককে কাঁপিয়ে তোলে। এই কাঁপুনিই ভূমিকম্প। এই প্লেটের নানা ভূগর্ভস্থ চ্যুতি আছে। সেগুলোই ভূমিকম্পপ্রবণ এলাকা হিসেবে চিহ্নিত।
একটি প্রধান চ্যুতি, প্রধানত ভারতীয় প্লেট এবং সুন্দা প্লেটের মধ্যে মহাদেশীয় ডান-পার্শ্বীয় রূপান্তর চ্যুতি। এটি মিয়ানমারের মধ্য দিয়ে প্রায় ১ হাজার ২০০ কিলোমিটার বিস্তৃত। খবর নিউজ২৮।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: ভ ম কম প ভ ম কম প র
এছাড়াও পড়ুন:
রাইজিংবিডিতে সংবাদ প্রকাশ: ডেরা রিসোর্টের লাইসেন্স বাতিল
মানিকগঞ্জের ঘিওরের বালিয়াখোড়ায় অবস্থিত ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের নানা অনিয়ম নিয়ে রাইজিংবিডিতে ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে সংবাদ প্রকাশের পর প্রতিষ্ঠানটির লাইসেন্স বাতিল করেছে বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়। একইসঙ্গে ডেরা রিসোর্টে ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনা করতে মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসনকে নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
বুধবার (১৭ সেপ্টেম্বর) বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয়ের সহকারী নিয়ন্ত্রক (সিনিয়র সহকারী সচিব) শেখ রাশেদুজ্জামান স্বাক্ষরিত এক নির্দেশনা পত্রে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
জানা গেছে, ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টার ২০২২ সালের ১৮ ডিসেম্বর লাইসেন্স প্রাপ্তির আবেদন করেন। নানা অনিয়মের কারণে তাদের লাইসেন্স নামঞ্জুর করা হয়েছে। রিসোর্টের লাইসেন্স না থাকায় প্রশাসনকে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেওয়া হয়েছে।
২০২৫ সালের ১৪ জানুয়ারি ‘ফসলি জমি দখল করে ডেরা রিসোর্ট নির্মাণ, বিপাকে কৃষক’; ১৯ মার্চ ‘ছাড়পত্র ছাড়াই চলছে ডেরা রিসোর্ট, তদন্ত কমিটি গঠন’ শিরোনামে দুটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে রাইজিংবিডি। গত ১৩ সেপ্টেম্বর ‘কবরস্থানে হরিণের খামারসহ নানা অনিয়মের আখড়া ডেরা রিসোর্ট’ শিরোনামে প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর বেসামরিক বিমান ও পর্যটন মন্ত্রণালয় ডেরার লাইসেন্স নামঞ্জুর করে ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দেন।
সুশাসনের জন্য নাগরিক মানিকগঞ্জ জেলা কমিটির সভাপতি অধ্যাপক ইন্তাজ উদ্দিন বলেন, “অনলাইন নিউজ পোর্টাল রাইজিংবিডিতে ডেরা রিসোর্ট নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদনগুলোতে সাধারণ মানুষের ক্ষোভ ও ভোগান্তি তুলে ধরা হয়েছে। প্রতিবেদক অনুসন্ধান করে ডেরা রিসোর্টের নানা অনিয়ম তুলে এনেছেন। প্রতিবেদন প্রকাশের পর প্রশাসন লাইসেন্স বাতিল করে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের নির্দেশ দিয়েছে এটি ভালো উদ্যোগ। তবে এসব নির্দেশনা কাগজে কলমের মধ্যে সীমাবদ্ধ না রেখে বাস্তবায়ন করাটাই বড় কাজ। নির্দেশনা বাস্তবায়ন হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।”
মানিকগঞ্জের জেলা প্রশাসক ড. মানোয়ার হোসেন মোল্লা বলেন, “মন্ত্রণালয়ের নির্দেশনার কপি পেয়েছি। সে অনুযায়ী আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।”
ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপক ওমর ফারুক বলেন, “লাইসেন্সের বিষয়ে কোন নোটিশ এখনও পাইনি আমরা। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনার বিষয়েও জানা নেই। যদি লাইসেন্স বাতিল করে থাকে, তাহলে আমরা আইনিভাবে বিষয়টি সমাধান করব।”
এ বিষয়ে জানতে বৃহস্পতিবার (১৮ সেপ্টেম্বর) সকালে এশিউর গ্রুপের অঙ্গসংগঠন ডেরা রিসোর্ট এন্ড স্পা সেন্টারের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শেখ সাদীর মোবাইলে ফোন করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি।
ঢাকা/চন্দন/এস