শরীয়তপুরের ডামুড্যা থেকে দুই ব্যবসায়ীকে অপহরণ করে মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল শুক্রবার বিকেলে ব্যবসায়ী ফয়সাল সরদারের ভাই স্বাধীন সরদার বাদী হয়ে ডামুড্যা থানায় মামলাটি করেছেন। মামলায় চার পুলিশ সদস্যসহ সাতজনের নাম উল্লেখের পাশাপাশি অজ্ঞাতনামা একজনকে আসামি করা হয়েছে।

ডামুড্যা থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) হাফিজুর রহমান প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের অভিযোগে সাতজনের নাম উল্লেখ ও একজনকে অজ্ঞাতনামা আসামি করে মামলা করা হয়েছে। আসামিদের মধ্যে চারজন পুলিশ সদস্য।

গত বৃহস্পতিবার দিবাগত রাত একটার দিকে ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ী মোহাম্মদ জুয়েল সরদার (৩২) ও ফয়সাল সরদারকে (২৪) অপহরণের পর নিয়ে যাওয়ার সময় চারজনকে আটক করে পিটুনি দেন জনতা। তাঁদের মধ্যে তিন পুলিশ সদস্য আছেন। এ ছাড়া এক পুলিশ সদস্যসহ চারজন পালিয়ে যান।

ওই মামলায় কৌশিক আহমেদ, কাউসার তালুকদার, রুবায়েত মীর ও জয় পোদ্দার নামে পুলিশের চার কনস্টেবলকে আসামি করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে কৌশিক ও জয় পোদ্দার খুলনা মেট্রোপলিটন পুলিশ, কাউসার তালুকদার চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশ ও রুবায়েত মীর ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশে কর্মরত আছেন।

মামলার এজাহারের বরাত দিয়ে ডামুড্যা থানার পুলিশ জানায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার মোহাম্মদ জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারের কাপড়ের ব্যবসায়ী। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান বন্ধ করে ওই দুই ব্যবসায়ী বাড়িতে ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন লোক ওই দুই ব্যবসায়ীকে একটি মাইক্রোবাসে তুলে নিয়ে যান। তাঁরা ওই দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনের বিক্রি করা টাকা চান। তাঁরা কোনো টাকা দিতে পারেননি। তখন অপহরণকারীরা তাঁদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চান। ওই ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন।

ওই দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পারে যান অপহরণকারীরা। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে অপহরণ চক্রকে ওই ব্যবসায়ীরা চার লাখ টাকা দেন। বাকি ছয় লাখ টাকা আদায় করার জন্য দিবাগত রাত একটার দিকে ওই চক্র ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যান। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ির ভেতর থেকে চিৎকার করলে স্থানীয় লোকজনের সন্দেহ হয়। তখন স্থানীয় লোকজন গাড়িটি আটকে চারজনকে পিটুনি দেন। পরে ডামুড্যা থানার পুলিশ গিয়ে তাঁদের উদ্ধার করে।

এ ঘটনার সিসিটিভি ক্যামেরার একটি ভিডিও ফুটেজ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়ে পড়েছে। ২ মিনিট ৩৩ সেকেন্ডের ওই ভিডিওতে দেখা যায়, দিবাগত রাত ১২টা ৫২ মিনিটের সময় ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় একটি মাইক্রোবাস থামানোর চেষ্টা করছেন কয়েক ব্যক্তি। তখন ওই মাইক্রোবাসটি নিয়ে পালানোর চেষ্টা করেন অপহরণকারীরা। এ সময় আরও কিছু মানুষ সড়কের মধ্যে মাইক্রোবাসটি আটকে দেন। তখন ভেতর থেকে কয়েক ব্যক্তি বের হয়ে পালানোর চেষ্টা করেন। স্থানীয় লোকজন তখন চারজনকে মারধর করেন।

অপহরণের শিকার ব্যবসায়ী ফয়সাল বলেন, ‘আমরা কাপড় ব্যবসায়ী। রাতে নামাজ পড়ার জন্য দোকান বন্ধ করে বাড়ির দিকে যাচ্ছিলাম। দারুল আমান বাজারের কাছে মদন ব্যাপারীর বাড়ির সামনে পৌঁছালে হঠাৎ একটি মাইক্রোবাস ও একটি মোটরসাইকেল আমাদের গতি রোধ করে। ওই গাড়ি থেকে চারজন নেমে আমাদের মাইক্রোবাসে তুলে ফেলেন। পরে হাতে পুলিশের হাতকড়া পরিয়ে দেন। টাকা চান। জানে বাঁচতে চাইলে ২০ লাখ টাকা দিতে বলেন। পরে আমরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হই। তবু আমাদের লোহার রড দিয়ে পেটান, কিল–ঘুষি মারেন।’

শরীয়তপুরের পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম প্রথম আলোকে বলেন, অপহরণ ও মুক্তিপণ আদায়ের ঘটনায় চার পুলিশ সদস্য জড়িত, এমন অভিযোগে মামলা হয়েছে। তিনজন আটক হয়েছেন, একজন পালিয়ে গেছেন। তাঁকে গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে। তাঁদের মধ্যে এক পুলিশ সদস্য চাকরিচ্যুত। অন্যরা বাহিনীতে আছেন। তাঁরা কীভাবে এখানে এলেন, তা খতিয়ে দেখা হচ্ছে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: দ ই ব যবস য় ক প ল শ সদস য র ব যবস য় ন অপহরণ ল সরদ র

এছাড়াও পড়ুন:

৮% জনগোষ্ঠীকে বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য হয়, প্রশ্ন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের

জাতীয় ঐকমত্য কমিশনসহ কোনো সংস্কার কমিশনে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রতিনিধি দেখা যায়নি বলে মন্তব্য করেছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন। তাদের প্রশ্ন, ঐকমত্য কমিশনে কোনো রাজনৈতিক দলকেও প্রশ্ন করতে দেখা গেল না যে ধর্মীয় ও জাতিগত সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীর কোনো প্রতিনিধি না থাকলে বা তাদের বাদ দিয়ে কীভাবে ঐক্য গঠন হয়।

‘অভ্যুত্থান পরবর্তী এক বছরে ৮% জনগোষ্ঠীর অবস্থা’ শীর্ষক সংবাদ সম্মেলনে এমন প্রশ্ন তোলা হয়েছে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের লিখিত বক্তব্যে। আজ শুক্রবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবে এই সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করে সংগঠনটি।

সংবাদ সম্মেলনে লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের মুখ্য সংগঠক (উত্তরাঞ্চল) তরুণ রায়। লিখিত বক্তব্যে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের আগে হোক বা পরে, রাজনৈতিক দলগুলোর কাছে এখনো ৮ শতাংশ শুধু রাজনৈতিকভাবে ব্যবহার করার জায়গা। তাদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট হতে দেখা যাচ্ছে না কোনো রাজনৈতিক দলকে। সে ক্ষেত্রে এমন অবস্থা চলমান থাকলে ৮ শতাংশ জনগোষ্ঠীকে নিজেদের অস্তিত্বের জানান দিতে ভবিষ্যতে নির্বাচনের সময় ভোটকেন্দ্র বয়কটের সিদ্ধান্তও নিতে হতে পারে।

সংবাদ সম্মেলন থেকে বলা হয়, গণ-অভ্যুত্থানের পর দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের মানুষেরা আক্রান্ত হতে থাকেন। তাৎক্ষণিকভাবে গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে সংখ্যালঘুরা জোরালো আন্দোলন গড়ে তোলেন। সেই আন্দোলন থেকে সংখ্যালঘু সুরক্ষা আইন প্রণয়ন, সংখ্যালঘু মন্ত্রণালয় গঠনসহ ৮ দফা দাবি তোলা হয়। সেসব দাবি বাস্তবায়নে তখন অন্তর্বর্তী সরকার প্রতিশ্রুতিও দিয়েছিল। কিন্তু গত ১ বছরে ৮ দফা দাবি বাস্তবায়নে অন্তর্বর্তী সরকারের আশানুরূপ কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ পরিলক্ষিত হয়নি।

সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলন লিখিত বক্তব্যে আরও উল্লেখ করেছে, বিগত ৫৩ বছরে কোনো সরকারই সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে পারেনি। আগামী দিনের নিরাপত্তা ও অধিকার রক্ষায় ৮ দফার বাস্তবায়ন করতে হবে। ৮ দফা যে দেশের ৮ শতাংশ সংখ্যালঘু সম্প্রদায়ের প্রত্যেকের মনের কথা জানান দিতে ২২ আগস্ট ‘জাতীয় সংখ্যালঘু সম্মেলন-২০২৫’ আয়োজন করা হবে।

এক প্রশ্নের জবাবে সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের আহ্বায়ক সুস্মিতা কর বলেন, সরকারের ঐকমত্য কমিশনে সংখ্যালঘু প্রতিনিধি নেই। দেশের একটি নির্দিষ্ট জনগোষ্ঠীকে নিয়ে তো ঐকমত্য গঠন হতে পারে না। গত বছরের ৯ আগস্ট থেকে দেশের সংখ্যালঘু সম্প্রদায় নিজেদের অধিকার নিয়ে সচেষ্ট আছে। সংখ্যালঘুদের সব সংগঠন আট দফা দাবিতে একাত্ম। যদি নির্বাচন–পূর্ববর্তী সময়ে সরকার কিংবা রাজনৈতিক দলগুলো থেকে এসব দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ গ্রহণ করতে না দেখা যায়, তাহলে হয়তো সংখ্যালঘুরা ভোট বয়কট লড়তে পারে।

এই সংবাদ সম্মেলন সঞ্চালনা করেন সংখ্যালঘু অধিকার আন্দোলনের প্রচার সম্পাদক সুব্রত বল্লভ। এ সময় উপস্থিত ছিলেন সংগঠনটির আদিবাসী সংগঠক সুমন ত্রিপুরা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ