মুক্তিপণ আদায়কালে গণপিটুনি, অপহরণকারী তিন পুলিশসহ গ্রেপ্তার ৪
Published: 29th, March 2025 GMT
শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার নামে দুই কাপড় ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদস্যসহ আটজনের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই দুই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন চার অপহরণকারীকে আটক করে। তবে বাকি চারজন পালিয়ে যায়। এ সময় গণপিটুনি দিয়ে চার অপহরণকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়।
বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ডামুড্যা বাজার-সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গণপিটুনির এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ পাহারায় বর্তমানে গ্রেপ্তার চার আসামিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা হলেন বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ সেতু, ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার, মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর ও কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন। তাদের মধ্যে কৌশিক, কাউসার ও রুবায়েত মীর পুলিশ কনস্টেবল। তবে রুবায়েত মীরকে আগেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কৌশিক খুলনা জেলা পুলিশ লাইনে এবং কাউসার চট্টগ্রামের একটি থানায় কর্মরত। তবে তারা বেশ কয়েকদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। অপহরণের ঘটনায় গতকাল ভুক্তভোগী ফয়সালের ভাই স্বাধীন সরদার ডামুড্যা থানায় অপহরণ মামলা করেছেন।
পুলিশ, ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতি ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন লোক অস্ত্রের মুখে একটি মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নিয়ে যায়। তারা ওই দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনের বিক্রি করা টাকা চায়। কিন্তু কাছে টাকা না থাকায় তারা অপহরণকারীদের দিতে পারেননি। তখন অপহরণকারীরা তাদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চায়। তবে ওই ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এই সময়ের মধ্যে অপহরণকারীরা দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পারে যায়। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই ব্যবসায়ী মুক্তিপণ হিসেবে অপহরণকারীদের ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেন। বাকি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকা আদায় করতে রাত ১টার দিকে অপহরণকারীরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায়। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ি থেকে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। স্থানীয়রা ডাকাত সন্দেহে গাড়ি ঘিরে ফেলেন। এ সময় অপহরণকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনতা তাদের চারজনকে আটক করে পিটুনি দেয়। এরপর ডামুড্যা থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ কনস্টেবল ছিল। সে পলাতক রয়েছে। তবে জয় কোথায় কর্মরত, তা জানা যায়নি।
অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছে। সে এই অভিযানে আমাদের নেতা ছিল। অপহরণের সময় যে টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে আছে। আমি আর কিছু জানি না।
উদ্ধারের পর ফয়সাল ও জুয়েল জানান, অপহরণকারীরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের হাতে হাতকড়া পরায় ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হওয়ার পরও অপহরণকারীরা তাদের রড দিয়ে পেটায়, কিল-ঘুসি মারে। পরে মাদারীপুর লেক পারে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দিই।
ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক জানান, গ্রেপ্তার চারজনকে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, মুক্তিপণ আদায়ের সময় জনতার হাতে ধরা পড়া চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যেও একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। পালিয়ে যাওয়াদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: অপহরণক র র দ ই ব যবস য় ল সরদ র উপজ ল র এল ক র সদস য ফয়স ল
এছাড়াও পড়ুন:
দুনিয়ায় প্রত্যেক মুসলিমকে যেসব পরীক্ষার মধ্য দিয়ে যেতে হবে
জীবন একটি পরীক্ষার ময়দান, যেখানে আমরা বিভিন্ন চ্যালেঞ্জ ও কষ্টের মুখোমুখি হই। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫)
এই পরীক্ষাগুলো প্রায়ই আমাদের হতাশ বা বিমর্ষ করে তুলতে পারে, কিন্তু ইসলাম আমাদের শেখায় যে এই কষ্টগুলো আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম এবং পরকালে চিরস্থায়ী সুখের পথ প্রশস্ত করে। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘এই দুনিয়ার জীবন তো কেবল ক্ষণস্থায়ী ভোগ, আর পরকালই হলো চিরস্থায়ী আবাস।’ (সুরা গাফির, আয়াত: ৩৯)
পরীক্ষার উদ্দেশ্যইসলামে পরীক্ষা বা কষ্টকে আল্লাহর রহমতের অংশ হিসেবে দেখা হয়। এগুলো আমাদের পাপ থেকে মুক্তি, আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বৃদ্ধি, নিজেকে নম্র করা এবং তাঁর নৈকট্য লাভের মাধ্যম।
আমি অবশ্যই তোমাদের পরীক্ষা করব কিছু ভয়, ক্ষুধা, সম্পদের ক্ষতি, জীবন ও ফসলের ক্ষতি দিয়ে। আর যারা ধৈর্য ধরে, তাদের সুসংবাদ দাও।সুরা বাকারা, আয়াত: ১৫৫পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘যখনই তুমি আল্লাহর জন্য কিছু ত্যাগ করবে, আল্লাহ তা তোমার জন্য আরও উত্তম কিছু দিয়ে প্রতিস্থাপন করবেন।’ (মুসনাদে আহমদ, হাদিস: ২৩,০৭৪)
আরও পড়ুনযে ৪টি পরীক্ষা নবীজি (সা.)–এর জীবনকে দৃঢ়তা দিয়েছে২২ জুলাই ২০২৫পরীক্ষার মাধ্যমে আল্লাহর নৈকট্যদুনিয়ার জীবন সাময়িক এবং এর কষ্টগুলো ক্ষণস্থায়ী। আমরা প্রায়ই দুনিয়ার সমস্যায়, যেমন অর্থনৈতিক সংকট, সম্পর্কের জটিলতা বা সামাজিক চাপ, এতটাই মগ্ন হয়ে পড়ি যে আমাদের মূল উদ্দেশ্য ভুলে যাই। পবিত্র কোরআন আমাদের স্মরণ করিয়ে দেয়, ‘কিন্তু যে ব্যক্তি তার প্রভুর সামনে দাঁড়ানোর ভয় করেছে এবং নিজের নফসকে অবৈধ কামনা থেকে বিরত রেখেছে, তার জন্য জান্নাতই হবে আশ্রয়।’ (সুরা নাজিয়াত, আয়াত: ৪০–৪১)
ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি আল্লাহ তাঁর বান্দার জন্য পর্দা তুলে দিতেন এবং তাকে দেখাতেন, কীভাবে তিনি তার জন্য সবকিছু পরিচালনা করেন, তবে তার হৃদয় আল্লাহর প্রতি ভালোবাসায় গলে যেত এবং কৃতজ্ঞতায় টুকরা টুকরা হয়ে যেত। তাই যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে দুঃখ করো না। হয়তো আল্লাহ তোমার দোয়ার কণ্ঠ শুনতে চান।’ (ইবন কাইয়্যিম, আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১২৮, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)
পরীক্ষা আমাদের ধৈর্য ও বিশ্বাস যাচাই করে এবং এর মাধ্যমে আমরা আল্লাহর কাছে উচ্চ মর্যাদা লাভ করতে পারি।পরীক্ষা আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়। এটি আমাদের নম্র করে, আমাদের পাপমুক্তি ঘটায় এবং আল্লাহর ওপর নির্ভরতা বাড়ায়। নবীজি (সা.) বলেছেন, ‘দুনিয়ায় যে ব্যক্তি সবচেয়ে বেশি কষ্ট ও পরীক্ষার মধ্য দিয়ে গেছে, তাকে জান্নাতে একবার ডুবিয়ে দেওয়া হবে এবং জিজ্ঞাসা করা হবে, ‘হে আদম সন্তান, তুমি কি কখনো কোনো কষ্ট দেখেছিলে? তুমি কি কখনো দুঃখ অনুভব করেছিলে?’ সে বলবে, ‘না, হে আমার রব! আমি কখনো কোনো কষ্ট দেখিনি, কখনো কোনো দুঃখ অনুভব করিনি।’ (সহিহ মুসলিম, হাদিস নম্বর–২৮০৭)
আরও পড়ুনবালকের ঈমানের পরীক্ষা ও বাদশাহের নির্মম পরিণতি০৪ মে ২০২৪আল্লাহর পরিকল্পনায় ভরসাপরীক্ষার সময় মনে রাখতে হবে যে আল্লাহর পরিকল্পনা আমাদের পরিকল্পনার চেয়ে উত্তম। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।’ (সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬)
এই আয়াত আমাদের শেখায় যে কষ্টের পেছনে আল্লাহর একটি বৃহত্তর উদ্দেশ্য রয়েছে।
হয়তো তোমরা এমন কিছু অপছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য কল্যাণকর। আর এমন কিছু পছন্দ করো, যা তোমাদের জন্য ক্ষতিকর। আল্লাহ জানেন, আর তোমরা জানো না।সুরা বাকারা, আয়াত: ২১৬আরেকটি হাদিসে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি পরকালের জন্য চিন্তিত থাকে, আল্লাহ তার বিষয়গুলো সহজ করে দেবেন, তার হৃদয়ে তৃপ্তি দেবেন এবং দুনিয়া তার কাছে আসবে, যদিও সে তা অপছন্দ করে।’ (ইবন মাজাহ, হাদিস: ৪১০৫)
পরীক্ষায় ধৈর্য ও দোয়াপরীক্ষার সময় ধৈর্য ধরা এবং আল্লাহর কাছে দোয়া করা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। পবিত্র কোরআনে বলা হয়েছে, ‘যে ব্যক্তি আল্লাহর ওপর ভরসা করে, তিনি তার জন্য যথেষ্ট।’ (সুরা তালাক, আয়াত: ৩) দোয়ার মাধ্যমে আমরা আমাদের হৃদয়ের কথা আল্লাহর কাছে প্রকাশ করি এবং তাঁর রহমতের জন্য আশ্রয় প্রার্থনা করি।
ইবন কাইয়্যিম (রহ.) বলেছেন, ‘যদি দুনিয়ার কষ্ট তোমাকে ক্লান্ত করে, তবে সিজদায় তোমার আকাঙ্ক্ষা প্রকাশ করো এবং জেনে রাখো, আল্লাহ কখনো ভোলেন না।’ (আল–ফাওয়ায়িদ, পৃষ্ঠা ১৩০, বৈরুত: দারুল কুতুব আল–ইলমিয়্যাহ, ১৯৯৬)
আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না।জীবনের পরীক্ষাগুলো আমাদের আল্লাহর কাছাকাছি নিয়ে যায়, আমাদের হৃদয়কে বিশুদ্ধ করে এবং পরকালে জান্নাত লাভের পথ প্রশস্ত করে। দুনিয়ার কষ্ট ক্ষণস্থায়ী, কিন্তু আল্লাহর ভালোবাসা ও রহমত চিরস্থায়ী।
আমরা যদি আল্লাহকে আমাদের হৃদয়ের কেন্দ্রে রাখি, তবে কোনো পরীক্ষাই আমাদের ভেঙে দিতে পারবে না; বরং নবীজি (সা.)–এর শিক্ষা ও ধৈর্য, দোয়া এবং আল্লাহর ওপর ভরসার মাধ্যমে আমরা জীবনের প্রতিটি পরীক্ষায় বিজয়ী হতে পারব।
আরও পড়ুনত্যাগের পরীক্ষা, সফলতার উদ্যাপন০১ আগস্ট ২০২০