শরীয়তপুরের ডামুড্যা উপজেলায় জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার নামে দুই কাপড় ব্যবসায়ীকে অপহরণের অভিযোগ উঠেছে পুলিশ সদস্যসহ আটজনের বিরুদ্ধে। গত বৃহস্পতিবার রাতে ওই দুই ব্যবসায়ীর পরিবারের কাছ থেকে মুক্তিপণ আদায় করতে যাওয়ার সময় স্থানীয় লোকজন চার অপহরণকারীকে আটক করে। তবে বাকি চারজন পালিয়ে যায়। এ সময় গণপিটুনি দিয়ে চার অপহরণকারীকে পুলিশের হাতে তুলে দেওয়া হয়। 

বৃহস্পতিবার রাত ১টার দিকে ডামুড্যা বাজার-সংলগ্ন বাসস্ট্যান্ড এলাকায় গণপিটুনির এ ঘটনা ঘটে। পুলিশ পাহারায় বর্তমানে গ্রেপ্তার চার আসামিকে শরীয়তপুর সদর হাসপাতালে চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। তারা হলেন বাগেরহাট জেলার মোল্লারহাট উপজেলার গারফা এলাকার কৌশিক আহমেদ সেতু, ডামুড্যা উপজেলার বড় শিধুলকুড়া এলাকার কাউসার তালুকদার, মাগুরা জেলার বাসিন্দা রুবায়েত মীর ও কুমিল্লা জেলার লাকসাম উপজেলার আমৌদা এলাকার শরীফ হোসেন। তাদের মধ্যে কৌশিক, কাউসার ও রুবায়েত মীর পুলিশ কনস্টেবল। তবে রুবায়েত মীরকে আগেই চাকরিচ্যুত করা হয়েছে। কৌশিক খুলনা জেলা পুলিশ লাইনে এবং কাউসার চট্টগ্রামের একটি থানায় কর্মরত। তবে তারা বেশ কয়েকদিন ধরে কর্মস্থলে অনুপস্থিত। অপহরণের ঘটনায় গতকাল ভুক্তভোগী ফয়সালের ভাই স্বাধীন সরদার ডামুড্যা থানায় অপহরণ মামলা করেছেন।

পুলিশ, ডামুড্যা বাজারের ব্যবসায়ী সমিতি ও ভুক্তভোগী সূত্রে জানা যায়, ভেদরগঞ্জ উপজেলার ইকরকান্দি এলাকার জুয়েল সরদার ও ফয়সাল সরদার ডামুড্যা বাজারে কাপড়ের ব্যবসা করেন। বৃহস্পতিবার রাতে ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বন্ধ করে তারা বাড়ি ফিরছিলেন। রাত সাড়ে ৯টার দিকে ডামুড্যার দারুল আমান বাজার এলাকায় কয়েকজন লোক অস্ত্রের মুখে একটি মাইক্রোবাসে তাদের তুলে নিয়ে যায়। তারা ওই দুই ব্যবসায়ীর কাছে সারা দিনের বিক্রি করা টাকা চায়। কিন্তু কাছে টাকা না থাকায় তারা অপহরণকারীদের দিতে পারেননি। তখন অপহরণকারীরা তাদের কাছে মুক্তিপণ হিসেবে ২০ লাখ টাকা চায়। তবে ওই ব্যবসায়ীরা ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হন। এই সময়ের মধ্যে অপহরণকারীরা দুই ব্যবসায়ীকে নিয়ে মাদারীপুর শহরের লেকের পারে যায়। সেখানে গিয়ে মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে দুই ব্যবসায়ী মুক্তিপণ হিসেবে অপহরণকারীদের ৩ লাখ ৯১ হাজার টাকা দেন। বাকি ৬ লাখ ৯ হাজার টাকা আদায় করতে রাত ১টার দিকে অপহরণকারীরা ব্যবসায়ীদের নিয়ে ডামুড্যা বাসস্ট্যান্ড এলাকায় যায়। সেখানে দুই ব্যবসায়ী গাড়ি থেকে চিৎকার শুরু করলে স্থানীয়দের সন্দেহ হয়। স্থানীয়রা ডাকাত সন্দেহে গাড়ি ঘিরে ফেলেন। এ সময় অপহরণকারীরা পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে জনতা তাদের চারজনকে আটক করে পিটুনি দেয়। এরপর ডামুড্যা থানা পুলিশ এসে তাদের উদ্ধার করে। গ্রেপ্তারকৃতদের জিজ্ঞাসাবাদ করে জানা গেছে, তাদের সঙ্গে জয় পোদ্দার নামে আরেক পুলিশ কনস্টেবল ছিল। সে পলাতক রয়েছে। তবে জয় কোথায় কর্মরত, তা জানা যায়নি।

অপহরণকারী দলের সদস্য রুবায়েত মীর গণমাধ্যমকর্মীদের বলেন, কাউসার তালুকদার আমাদের এখানে এনেছে। সে এই অভিযানে আমাদের নেতা ছিল। অপহরণের সময় যে টাকা পেয়েছিলাম, তা কাউসারের কাছে আছে। আমি আর কিছু জানি না।
উদ্ধারের পর ফয়সাল ও জুয়েল জানান, অপহরণকারীরা পুলিশ পরিচয় দিয়ে তাদের হাতে হাতকড়া পরায় ও পিস্তল ঠেকিয়ে ভয় দেখায়। ১০ লাখ টাকা দিতে রাজি হওয়ার পরও অপহরণকারীরা তাদের রড দিয়ে পেটায়, কিল-ঘুসি মারে। পরে মাদারীপুর লেক পারে নিয়ে যায়। সেখানে আমরা মোবাইল ব্যাংকিংয়ের মাধ্যমে ৪ লাখ টাকা দিই।
ডামুড্যা থানার ওসি হাফিজুর রহমান মানিক জানান, গ্রেপ্তার চারজনকে পুলিশ পাহারায় চিকিৎসা দেওয়া হচ্ছে। 
এ বিষয়ে শরীয়তপুর পুলিশ সুপার নজরুল ইসলাম জানান, মুক্তিপণ আদায়ের সময় জনতার হাতে ধরা পড়া চারজনের মধ্যে তিনজন পুলিশ সদস্য বলে আমরা নিশ্চিত হয়েছি। পালিয়ে যাওয়াদের মধ্যেও একজন পুলিশ সদস্য রয়েছেন। পালিয়ে যাওয়াদের গ্রেপ্তারে চেষ্টা চলছে। তাদের ব্যাপারে তদন্ত করা হচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: অপহরণক র র দ ই ব যবস য় ল সরদ র উপজ ল র এল ক র সদস য ফয়স ল

এছাড়াও পড়ুন:

আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার

আড়াইহাজার উপজেলার শীর্ষ মাদক কারবারি ও সন্ত্রাসী সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল ও তার সহযোগী ফজলুল হক ওরফে ফজুকে গ্রেপ্তার করেছে র‌্যাব-১১। 

শুক্রবার (১৩ জুন) ভোরে কুমিল্লা জেলার দাউদকান্দি থানার দাউদকান্দি ব্রিজের টোল-প্লাজা এলাকায় অভিযান পরিচালনা করে তাদেরকে গ্রেপ্তার করা হয়। গ্রেপ্তারকৃত সোহেল মেম্বার ওরফে ফেন্সি সোহেল (৩৮) আড়াইহাজারের বালিয়াপাড়া এলাকার মোঃ মকবুল হোসেনের পুত্র। অপরদিকে ফজলুল হক ওরফে ফজু (৩০) একই এলাকার আউয়ালের পুত্র।  

গ্রেপ্তারকৃত আসামীদের প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে তারা সূকৌশলে দীর্ঘদিন যাবৎ মাদক ক্রয়-বিক্রয়সহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডে জড়িত ছিল মর্মে স্বীকার করে। গ্রেপ্তারকৃত আসামী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর বিরুদ্ধে নারয়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী ও মাদক, অপহরণ, চুরি, হত্যা চেষ্টাসহ ১৪-১৫টি মামলা রয়েছে।

এছাড়া গ্রেপ্তারকৃত আসামি ফজলুল হক ফজু এর বিরুদ্ধে নারায়ণগঞ্জ জেলার বিভিন্ন থানায় সন্ত্রাসী, অপহরণ, ছিনতাইসহ ৪-৫টি মামলা রয়েছে। গ্রেপ্তারকৃত আসামিদ্বয়কে পরবর্তী আইনানুগ কার্যক্রমের জন্য নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানায় হস্তান্তর করা হয়েছে।

শুক্রবার বিকেলে র‌্যাব-১১ এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানায়, প্রাথমিক অনুসন্ধানে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জ জেলার আড়াইহাজার থানার ব্রাহ্মন্দী ইউনিয়নের ৩ নং ওয়ার্ডের বালিয়াপাড়ার মকবুল হোসেনের ছেলে সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল বিগত ইউপি নির্বাচনে ক্ষমতার দাপট দেখিয়ে ইউপি সদস্য নির্বাচিত হয়। নির্বাচিত হওয়ার পর থেকে সে আরও বেপোরোয়া হয়ে উঠে। 

পরবর্তীতে সে অবৈধ মাদক সেবন ও ক্রয়-বিক্রয়ের সাথে জড়িয়ে পরে। পরবর্তিতে এক সময় সে এলাকায় শীর্ষ মাদক ব্যবসায়ী হিসেবে পরিচিতি পায়। তখন থেকে সবাই ফেন্সি সোহেল হিসাবে ডাকে। দীর্ঘদিন ধরে মাদক বিক্রির সঙ্গে সন্ত্রাসী কর্মকান্ড করে আসছে। তার পুরো পরিবার মাদকের সঙ্গে জড়িত। প্রকাশ্যে অস্ত্র নিয়ে মহড়া দেওয়ার অভিযোগও রয়েছে তার বিরুদ্ধে।

ফজলুল হক ফজু এই শীর্ষ সন্ত্রাসী-মাদক ব্যবসায়ী সোহেল মেম্বার ফেন্সি সোহেল এর একান্ত সহযোগী। তাদের ভয়ে এলাকাবাসী ভীত-সন্ত্রস্ত। যারাই তাদের এই সন্ত্রাসী কার্যক্রম ও মাদক ব্যবসার বিরোধিতা করে তাদেরকেই সোহেল ও তার সহযোগীরা নির্মমভাবে নির্যাতন করে।
 

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • কক্সবাজারে অপহৃত রোহিঙ্গা উদ্ধার, আটক ৩
  • র‌্যাব পরিচয়ে অপহরণ: চক্রের মূল হোতা গ্রেপ্তার
  • মুক্তিপণ না পেয়ে দক্ষিণ আফ্রিকায় বাংলাদেশিকে হত্যা
  • কল্পনা চাকমার অপহরণের বিচার চেয়ে ফেরার পথে হামলার অভিযোগ, গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির নিন্দা
  • আড়াইহাজারে শীর্ষ মাদক কারবারি সন্ত্রাসী সোহেল সহযোগীসহ গ্রেপ্তার