সাম্প্রতিক সময়ে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে বিশেষত সামাজিক মাধ্যমে যে নেতিবাচক চর্চা হয়েছে, তা সচেতন কোনো মানুষেরই নজর এড়ায়নি। যে উদ্দেশ্যেই তা করা হোক, এটি যে বিশেষত দেশ ও জাতির জন্য বিপজ্জনক– তা সচেতন ব্যক্তিমাত্রেরই না বোঝার কোনো কারণ নেই। তাই এ লেখার অবতারণা।

বিষয়টির সূত্রপাত ঘটান সদ্যঘটিত রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টির (এনসিপি) একজন শীর্ষসারির নেতা। তিনি সেনাপ্রধানের সঙ্গে তাঁর আরেক সতীর্থসহ একটি বৈঠক করেছিলেন নিজেদেরই আগ্রহে। সেই বৈঠকের ১০ দিন পর এ নিয়ে তিনি এক ফেসবুক পোস্ট দেন, যেখানে তিনি সেনাপ্রধানের বিরুদ্ধে কার্যত কিছু অভিযোগ করেন, যদিও পরবর্তী সময়ে তাঁর সতীর্থ এক ফেসবুক পোস্টে ওই অভিযোগের বিষয়ে দ্বিমত প্রকাশ করেন। একই সময়ে সামাজিক মাধ্যমে আমার বাংলাদেশ পার্টির (এবি পার্টি) এক নেতার একটি ভিডিও ভাইরাল হয়, যেখানে ওই নেতা সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনী সম্পর্কে ব্যাপক বিষোদ্গার করেন। 

একটি স্বাধীন-সার্বভৌম রাষ্ট্রের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠানের অন্যতম হলো সেনাবাহিনী। তাকে সার্বভৌমত্বের প্রতীক হিসেবেও মনে করা হয়। তাই সচেতন মহল সাধারণত সেনাবাহিনী সম্পর্কে যে কোনো আলোচনাকে স্পর্শকাতর মনে করে থাকে। অন্তত সেনাবাহিনীকে নিয়ে বিতর্ক সৃষ্টির চেষ্টা কোনো দেশপ্রেমিক বা সচেতন মানুষ করেন না। বাংলাদেশ সেনাবাহিনীও এ ধারণার বাইরে নয়। লক্ষ্য করলে দেখা যাবে মূলধারার সংবাদমাধ্যমও এ বাহিনী সম্পর্কে যে কোনো বিতর্ক এড়িয়ে চলে।

আরও গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো, বিশেষত ৫ আগস্ট-পরবর্তী সময়ে দেশের প্রায় সব মানুষই তাকিয়ে আছে সেনাবাহিনীর দিকে। গণঅভ্যুত্থানে আইনশৃঙ্খলা রক্ষার প্রধান দায়িত্ব পালনকারী পুলিশ প্রতিষ্ঠান হিসেবে যে ক্ষতির মুখে পড়েছে, তাতে বাহিনীটির সোজা হয়ে দাঁড়াতে আরও অনেক সময় লাগবে। জানমাল রক্ষাসহ পুলিশের বিশাল দায়িত্ব সেনাসদস্যরা কাঁধে তুলে নিয়েছেন। এখন প্রতিষ্ঠানটি যদি অকার্যকর হয়ে পড়ে তাহলে আক্ষরিক অর্থেই দেশে এক মাৎস্যন্যায় নেমে আসতে পারে। এ কারণেও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে ওই বিষোদ্গার ভয়ংকর বলে বিবেচিত হচ্ছে।

বর্তমান সেনাপ্রধান অভ্যুত্থানের সময় এবং অভ্যুত্থান-পরবর্তী পরিস্থিতি ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে বেশ ধৈর্য ও বিচক্ষণতার পরিচয় দিয়েছেন। এ ক্ষেত্রে দেশ-জাতি এবং বিশেষত গণতন্ত্রের প্রতি তাঁর প্রতিশ্রুতি জনপরিসরে প্রশংসা কুড়িয়েছে বললেও বাড়িয়ে বলা হবে না। সেই সেনাপ্রধান ও তাঁর নেতৃত্বাধীন বাহিনীর বিরুদ্ধে যারা বিকৃত রুচির বক্তব্য দিয়ে চলেছেন, তারা তাদের বিকৃত মানসিকতারই পরিচয় দিচ্ছেন। অথবা অন্য কোনো অভিসন্ধিও থাকতে পারে তাদের। ঘোলা পানিতে মাছ শিকারে উৎসাহী লোকের তো অভাব নেই এ দেশে।

আশার বিষয় হলো, সেনাপ্রধান ও সেনাবাহিনীর বিরুদ্ধে আলোচ্য বিষোদ্গার ব্যাপক নিন্দাও পেয়ে চলেছে। অনেকেই সামাজিক মাধ্যমেই এর বিরুদ্ধে সমালোচনামুখর হয়ে উঠেছেন। দেশের অর্থনীতি যে গভীর সংকটকাল অতিক্রম করছে এবং বিভিন্ন শ্রেণি-পেশার মানুষ যেভাবে নানা কারণে বিক্ষুব্ধ হয়ে উঠছেন, তার মধ্যে সেনাবাহিনীকে দুর্বল করা হলে, তার ফল ভয়াবহ হতে বাধ্য। জাতীয় স্বার্থেই সেনাবাহিনীকে বিতর্কিত করা উচিত নয়।

শেষ কথা হলো, যারা রাজনীতি করেন তাদের কিন্তু অনেক ধৈর্যশীল ও বিচক্ষণ হতে হয়। সৌজন্যবোধ তাদের গুরুত্বপূর্ণ এক বৈশিষ্ট্য। তদুপরি কোথায় কোন কথা বলা হলে কী ফল হতে পারে তাদের তাও জানতে হয়।

সাইফুর রহমান তপন: সহকারী সম্পাদক, সমকাল

.

উৎস: Samakal

এছাড়াও পড়ুন:

দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা

মানবেন্দ্র নারায়ণ (এম এন) লারমাই দেশে প্রথম আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে বৈজ্ঞানিকভাবে চিহ্নিত করেছিলেন। তিনি প্রথম দেশে কাঠামোগতভাবে আত্মপরিচয়ের রাজনীতিকে স্পষ্ট করেন। একটি বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন তিনি।

পার্বত্য চট্টগ্রাম জনসংহতি সমিতির (জেএসএস) নেতা ও সাবেক সংসদ সদস্য এম এন লারমার ৮৬তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে আজ সোমবার রাজধানীর বিশ্বসাহিত্য কেন্দ্রে আয়োজিত এক আলোচনা সভায় বক্তারা এ কথাগুলো বলেন।

‘বিপ্লবী মানবেন্দ্র নারায়ণ লারমার ৮৬ম জন্মবার্ষিকী উদ্‌যাপন কমিটি’ এ আলোচনা সভার আয়োজন করে। পরে এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এসব কথা জানানো হয়।

আলোচনা সভায় লেখক ও গবেষক পাভেল পার্থ বলেন, ১৯৫৫-৬৫ সালের মধ্যে তৈরি হওয়া ‘বাইনারি বিভাজন’ পরবর্তীকালে প্রতিষ্ঠা করেছে বাংলাদেশে সরকার। ‘বাইনারি’ মনস্তত্ত্বকে এখনো এই দেশে টিকিয়ে রাখা হয়েছে। এম এন লারমা ‘বাঙালি হেজিমনি’র বিরুদ্ধে আত্মপরিচয়ের বয়ান বাঁচিয়ে রাখতে তৎকালে জোরালো প্রতিবাদ করেছিলেন।

জেএসএসের কেন্দ্রীয় সদস্য দীপায়ন খীসা বলেন, কাপ্তাই বাঁধ না করার বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করতে গিয়েই ছাত্র এম এন লারমার প্রতিবাদী জীবন শুরু হয়। চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানের পর যে বৈষম্যহীন, অন্তর্ভুক্তিমূলক বাংলাদেশের কথা বলা হচ্ছে, এম এন লারমা ১৯৭২ সালে বাংলাদেশের সংবিধান প্রণয়নকালেই এসব বিষয় নিয়ে জোরালো বক্তব্য দিয়েছিলেন।

দীপায়ন খীসা বলেন, ‘সংবিধান সংস্কারের বিষয়ে সংবিধান সংস্কার কমিশন বা জাতীয় ঐকমত্য কমিশন কখনো ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের সঙ্গে সংলাপ করেনি। আমরাও এই দেশের অংশ। তাহলে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদের কেন কোনো সংলাপে অংশগ্রহণ করার জন্য আহ্বান জানানো হলো না?’ তিনি বলেন, চব্বিশের গণ–অভ্যুত্থানে ক্ষুদ্র জাতিগোষ্ঠীর মানুষদেরও অংশীদারত্ব আছে। কিন্তু অভ্যুত্থান–পরবর্তী সময়ে তাদেরই ভুলে গেল এই সরকার।

সভাপতির বক্তব্যে পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি বাস্তবায়ন আন্দোলনের যুগ্ম সমন্বয়কারী জাকির হোসেন বলেন, ‘বাঙালি হয়ে যাও’ কথাটার পেছনে বাঙালি মুসলিমদের জাত্যভিমানের ব্যাপারটি রয়েছে। এম এন লারমা বাংলাদেশের মধ্যে থেকে নিজেদের অধিকার নিয়ে বেঁচে থাকার জন্য আন্দোলন শুরু করেছিলেন। সেই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে পরবর্তীকালে ‘পার্বত্য চট্টগ্রাম চুক্তি’ নামে একটি চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে।

পার্বত্য চট্টগ্রাম পাহাড়ি ছাত্র পরিষদ (পিসিপি) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখার সাধারণ সম্পাদক শান্তিময় চাকমার সঞ্চালনায় আলোচনা সভায় অন্যদের মধ্যে বক্তব্য দেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের অর্থ সম্পাদক মেইনথিন প্রমীলা, সাংবাদিক এহসান মাহমুদ, বাংলাদেশ মারমা স্টুডেন্টস কাউন্সিলের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক অং শোয়ে সিং মারমা।

অনুষ্ঠানটি শুরু হয় এম এন লারমাকে সম্মান জানিয়ে কবিতা পাঠের মাধ্যমে। কবিতা পাঠ করেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী রেই চাকমা ও লাল নিকিম বম। কবিতা আবৃত্তির পর এম এন লারমার জীবনবৃত্তান্ত পাঠ করেন হিল উইমেন্স ফেডারেশন ঢাকা মহানগর কমিটির সাধারণ সম্পাদক রিয়া চাকমা।

অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন বাংলাদেশ আদিবাসী ফোরামের তথ্য প্রচার ও প্রকাশনাবিষয়ক সম্পাদক হিরণ মিত্র চাকমা, জেএসএসের কেন্দ্রীয় স্টাফ সদস্য অনন্ত বিকাশ ধামাই, হিল উইমেন্স ফেডারেশনের কেন্দ্রীয় সভাপতি শান্তিদেবী তঞ্চঙ্গ্যা, পিসিপি ঢাকা মহানগর শাখার সভাপতি জগদীশ চাকমা, বাংলাদেশ আদিবাসী ছাত্র সংগ্রাম পরিষদের সভাপতি অনন্ত তঞ্চঙ্গ্যা।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতিআগ্রহ নিয়ে প্রশ্ন টিআইবির
  • আগামী সরকারের মন্ত্রীদের জন্য গাড়ি কেনার অতি আগ্রহের কারণ কী, প্রশ্ন টিআইবির
  • ডাকসুর ব্যালট পেপারে ২ ভোট নিয়ে যা বলছে নির্বাচন কমিশন
  • নরসিংদীতে ইউনিয়ন বিএনপির কমিটি স্থগিত
  • দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • নেপাল, বাংলাদেশ, শ্রীলঙ্কা: দক্ষিণ এশিয়ায় জেন–জি বিপ্লবের পরবর্তী নিশানা কে
  • গাজায় পাগলের মতো বোমা ফেলছে ইসরায়েল
  • ফতুল্লা পুলিশের সহায়তায় আপন ঠিকানায় মানসিক প্রতিবন্ধী নারী
  • দেশে বহুত্ববাদী রাষ্ট্রের ধারণা দিয়েছিলেন এম এন লারমা
  • ফতুল্লায় প্রতারণা করে ১৫ লাখ টাকার রড নিলো প্রতারক চক্র, কুমিল্লায় গ্রেপ্তার ৩