ইসরায়েলের নতুন নিরাপত্তাপ্রধান হিসেবে সাবেক নৌ কমান্ডারকে বেছে নিলেন নেতানিয়াহু
Published: 31st, March 2025 GMT
ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ গোয়েন্দা সংস্থা শিন বেতের পরবর্তী প্রধান হিসেবে দেশটির সাবেক নৌ কমান্ডার এলি শারভিতকে বেছে নিয়েছেন ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় আজ সোমবার এই তথ্য জানিয়েছে। যদিও শিন বেতের বর্তমান প্রধান রোনেন বারকে বরখাস্তের আদেশ ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট স্থগিত করেছেন, তা সত্ত্বেও সংস্থাটির নতুন প্রধান হিসেবে এলিকে বেছে নিলেন নেতানিয়াহু।
নেতানিয়াহুর কার্যালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, সাতজন যোগ্য প্রার্থীর ব্যাপকভিত্তিক সাক্ষাৎকার নেওয়ার পর প্রধানমন্ত্রী ইসরায়েলের নৌবাহিনীর সাবেক কমান্ডার ভাইস অ্যাডমিরাল এলিকে শিন বেতের পরবর্তী পরিচালক হিসেবে নিয়োগ করার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
বিবৃতিতে আরও বলা হয়, এলি ৩৬ বছর সামরিক বাহিনীতে দায়িত্ব পালন করেছেন। তিনি পাঁচ বছর নৌ কমান্ডার ছিলেন। এই পদে থাকাকালে তিনি ইসরায়েলের জলসীমা প্রতিরক্ষায় নেতৃত্ব দিয়েছেন। হামাস, হিজবুল্লাহ ও ইরানের বিরুদ্ধে জটিল অভিযান পরিচালনা করেছেন।
শিন বেতের প্রধান রোনেন বারের বরখাস্তের বিষয়টি গত ২০ মার্চ আনুষ্ঠানিকভাবে অনুমোদন করে ইসরায়েলি মন্ত্রিসভা। সিদ্ধান্ত হয়, বারের দায়িত্বের শেষ দিন হবে ৮ এপ্রিল।
২০২১ সালের অক্টোবরে শিন বেতের প্রধান হিসেবে পাঁচ বছর মেয়াদে বারকে নিযুক্ত করা হয়েছিল। ২০ মার্চ নেওয়া সিদ্ধান্তের আগেই নেতানিয়াহু এক ভিডিও বিবৃতিতে বারকে বরখাস্ত করার বিষয়ে তাঁর ইচ্ছার কথা প্রকাশ করেছিলেন। তখন তিনি বারের সঙ্গে তাঁর চলমান অবিশ্বাসের কথা উল্লেখ করেছিলেন।
আরও পড়ুনইসরায়েলের নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্ত করলেন নেতানিয়াহু২১ মার্চ ২০২৫তবে বারকে বরখাস্তের বিষয়ে নেতানিয়াহু সরকারের আদেশ আটকে দেন ইসরায়েলের সুপ্রিম কোর্ট। ইসরায়েলের বিরোধী রাজনীতিকসহ কয়েকটি গোষ্ঠী বারকে বরখাস্তের সরকারি আদেশকে চ্যালেঞ্জ জানিয়ে দেশটির সর্বোচ্চ আদালতে পিটিশন দায়ের করেছিলেন। এর পরিপ্রেক্ষিতে সুপ্রিম কোর্ট বারকে বরখাস্তের সরকারি আদেশের ওপর সাময়িক নিষেধাজ্ঞা জারি করেন। আদালত বলেছেন, আগামী ৮ এপ্রিলের আগে আপিল উপস্থাপন না হওয়া পর্যন্ত এই স্থগিতাদেশ বহাল থাকবে।
২১ মার্চ সুপ্রিম কোর্টের এই আদেশের পর ইসরায়েলের অ্যাটর্নি জেনারেল গালি বাহারভ-মিয়ারা বলেছিলেন, নেতানিয়াহু এখন শিন বেতের নতুন প্রধান নিয়োগ করতে পারবেন না।
আরও পড়ুনইসরায়েলের নিরাপত্তাপ্রধানকে বরখাস্তের আদেশ আটকে দিলেন সুপ্রিম কোর্ট ২২ মার্চ ২০২৫কিন্তু নেতানিয়াহু জোর দিয়ে বলেন, ইসরায়েলের অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা সংস্থার প্রধান কে হবেন, সেই সিদ্ধান্ত তাঁর সরকার নেবে।
নেতানিয়াহু সরকার ২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর ইসরায়েলে হামাসের হামলা আঁচ করতে ব্যর্থতার দায় বারের ওপর চাপায়। মূলত এর পর থেকেই বারের সঙ্গে নেতানিয়াহুর সম্পর্ক তিক্ত হয়ে ওঠে।
আরও পড়ুন‘নেতানিয়াহু ইসরায়েলের বড় শত্রু’: ইসরায়েলে টানা তৃতীয় দিন ব্যাপক বিক্ষোভ২৩ মার্চ ২০২৫.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র ন বরখ স ত র কম ন ড র সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
শিক্ষক রায়হান অভিযুক্ত হলেও নাম নেই অস্ত্র ব্যবসায়ীর
সিরাজগঞ্জের শহীদ এম মনসুর আলী মেডিকেল কলেজের শ্রেণিকক্ষে গত বছরের ৪ মার্চ শিক্ষার্থীকে গুলির একটি মামলায় গত ৩১ জানুয়ারি অভিযোগপত্র জমা দিয়েছে ডিবি। এতে শ্রেণিকক্ষে শিক্ষার্থীকে গুলি করা কলেজের কমিউনিটি মেডিসিনের প্রাক্তন শিক্ষক ডা. রায়হান শরীফকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তবে অভিযোগপত্রে নাম নেই যার কাছ থেকে ডা. রায়হান অস্ত্র সংগ্রহ করেছিলেন সেই এস এস আল হোসাইন ওরফে সোহাগের। কুষ্টিয়ার ভেড়ামারার নওদাপাড়ার সোহাগের বিরুদ্ধে হত্যা, অস্ত্র-বিস্ফোরক ও নাশকতার একাধিক মামলা আছে।
গত বছরের ৪ মার্চ ব্যাগভর্তি অস্ত্র-গুলি নিয়ে ক্লাসে শিক্ষার্থীদের ভয় দেখান শিক্ষক রায়হান। তার দুর্ব্যবহারের প্রতিবাদ করায় তৃতীয় বর্ষের শিক্ষার্থী আরাফাত আমিন তমালকে লক্ষ্য করে শিক্ষক রায়হান গুলি করেন। শিক্ষার্থী তমাল বাম উরুতে গুলিবিদ্ধ হলেও বর্তমানে সুস্থ। ওই ঘটনায় শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের মুখে ব্যাগভর্তি অবৈধ অস্ত্রসহ গ্রেপ্তার হন শিক্ষক রায়হান। তাঁর ব্যাগে লাইসেন্সবিহীন দুটি বিদেশি পিস্তল, দুটি জাপানি সামুরাই, ১০টি বার্মিজ ছুরি ও ৭৮ রাউন্ড তাজা গুলি পাওয়া যায়। ডা. রায়হানের বিরুদ্ধে সে সময় আহত শিক্ষার্থী তমালের বাবা বগুড়ার আবদুল্লাহ আল আমিন হত্যাচেষ্টা ও ডিবি পুলিশ বিস্ফোরক আইনে মামলা করেন। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনে স্বাস্থ্য-শিক্ষা ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয় থেকে সাময়িক বহিষ্কার হন রায়হান। যদিও পরবর্তী সময়ে জামিন নিয়ে রায়হান এখন পলাতক। ঘটনার পর থেকে উধাও অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগও।
পুলিশ সূত্র জানায়, ডা. রায়হান সিরাজগঞ্জ আদালতে স্বীকারোক্তি ও জবানবন্দি দেন। তিনি জানান, সোহাগের কাছ থেকেই সব অস্ত্র কিনেছেন। এরপর অস্ত্র ও বিস্ফোরক আইনে সোহাগ ও রায়হানের বিরুদ্ধে মামলা করেন সিরাজগঞ্জ ডিবি পুলিশের সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী। অভিযোগ উঠেছে, অভিযোগপত্র থেকে সোহাগের নাম বাদ দিয়েছেন ডিবির বর্তমান তদন্ত কর্মকর্তা এসআই নাজমুল ইসলাম ও ইউনিট ওসি ইকরামুল হোসাইন। ডিবির তদন্ত ও দাখিলকৃত অভিযোগপত্র নিয়ে প্রশ্ন তুলেছেন ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী ও তাঁর বাবা।
সিরাজগঞ্জ ডিবির এসআই নাজমুল হক নতুন তদন্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দাখিল করলেও তিনি এ বিষয়ে বক্তব্য দিতে রাজি হননি। তাঁর ইউনিটপ্রধান বর্তমান ওসি ইকরামুল হোসাইন আজ ২৯ এপ্রিল প্রধান উপদেষ্টার কাছে থেকে পুলিশ পদক নিতে ঢাকায় রয়েছেন। তিনি ফোনে দাবি করেন, ডা. রায়হান আদালতে ১৬৪ ধারায় বিচারকের সামনে সোহাগের নাম বললেও তাঁর বাবা বা গ্রামের নাম জানাতে পারেননি। মামলার বাদী এজাহারে যে সোহাগের নাম-ঠিকানা উল্লেখ করেন, তিনি এতে জড়িত নন। বিএনপি করার কারণে রাজনৈতিক উদ্দেশ্যে হয়রানি করতেই আগের সরকারের সময় সাবেক এসপি ও ওসি সোহাগকে জড়িয়েছেন। শিক্ষক রায়হান যে সময় অস্ত্রগুলো কিনেছিলেন, তার আগে থেকেই সোহাগ ঢাকা ও ভারতে হাসপাতালে চিকিৎসাধীন ছিলেন। পরবর্তী সময়ে ইমিগ্রেশন ও হাসপাতাল সূত্রে এসব তথ্য জানা যায়।
এ বিষয়ে সাবেক এসপি আরিফুল ইসলামের বক্তব্য পাওয়া না গেলেও মামলার বাদী ডিবির সাবেক এসআই ওয়াদুত আলী বলেন, শিক্ষক রায়হানের সঙ্গে মোবাইল ফোনে সোহাগের কথোপকথন ও লেনদেনের বিষয় নিশ্চিত হওয়া যায়। তাই এজাহারে সোহাগের নাম ও মোবাইল নম্বর উল্লেখ করা হয়।
সমকালের অনুসন্ধানেও সাবেক এসআই ওয়াদুত আলীর এজাহার অনুযায়ী সোহাগের ফোন নম্বরের কল ডিটেইল এবং এনআইডি নম্বর সংগ্রহ করা হয়। সেখানে স্বেচ্ছাসেবক দল নেতা সোহাগেরই তথ্য ও ছবি পাওয়া যায়।
এ বিষয়ে অজ্ঞাত স্থান থেকে শিক্ষক রায়হান শরীফ গতকাল ফোনে বলেন, ‘আমি মানসিকভাবে বিধ্বস্ত। ডিবির চার্জশিটের বিষয়টি জানি না।’
মামলার সাবেক তদন্ত কর্মকর্তা এসআই ইব্রাহিম হোসেন বলেন, চার্জশিট থেকে সোহাগকে বাদ দেওয়ার বিষয়টি আত্মঘাতী ও তদন্তের নীতিমালার বাইরে।
জানা গেছে, ভেড়ামারার স্বেচ্ছসেবক দলের সদস্য সচিব কথিত অস্ত্র ব্যবসায়ী সোহাগ। গতকাল তিনি ফোনে বলেন, ‘আমার বিরুদ্ধে অস্ত্র, খুন ও নাশকতা মামলাগুলো রাজনৈতিক। আমি অস্ত্র ব্যবসায়ী নই। রাজনৈতিক এক নেতার বিরুদ্ধে মামলা করায় আমাকে ফাঁসানো হয়েছে।
রাজশাহী রেঞ্জ ডিআইজি মোহাম্মদ শাহজাহান বলেন, তদন্ত কর্মকর্তা স্বাধীন হলেও পুলিশ সুপার, সার্কেল অফিসার ও সংশ্লিষ্ট ইউনিটের ওসি সুপারভাইজরি অথারিটি। বিষয়টি খতিয়ে দেখব।