বেড়িবাঁধ ভেঙে যাওয়ায় সাতক্ষীরা আশাশুনি উপজেলার আনুলিয়া ইউনিয়নবাসীর ঈদের দিন রাত কেটেছে নির্ঘুম। খোলপেটুয়া নদীর বাঁধ ভেঙে জোয়ারের তোড়ে গতকাল সোমবার রাতে ১০টি গ্রাম প্লাবিত হয়েছে। পানিবন্দী হয়ে পড়েছে ইউনিয়নের ২০ হাজারের বেশি মানুষ। ভেসে গেছে চার শতাধিক মৎস্যঘের। তলিয়ে গেছে ৫০০ বিঘা বোরো ধান। ঘরবাড়ি ছেড়ে তিন শতাধিক পরিবার আশ্রয় নিয়েছে অন্যত্র। অনেকেই ঘরবাড়ি ছাড়ার প্রস্তুতি নিচ্ছেন।

পরিস্থিতির ভয়াবহতা ঠেকাতে গত ৩০ ঘণ্টাও বাঁধ সংস্কারের কাজ শুরু করা যায়নি। দ্রুত সংস্কার করা না গেলে শুধু আনুলিয়া ইউনিয়ন নয়, পার্শ্ববর্তী আরও তিনটি ইউনিয়ন পানিতে তলিয়ে অসংখ্য মানুষ ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারেন বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সাতক্ষীরা থেকে আশাশুনি ২৫ কিলোমিটার। সেখান থেকে আরও ২৫ কিলোমিটার গেলে আনুলিয়া ইউনিয়ন পরিষদ। পরিষদের দক্ষিণে আরও তিন কিলোমিটার গেলে বিছট সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়–সংলগ্ন খোলপেটুয়া নদীর ভাঙন এলাকা।

আজ মঙ্গলবার সকালে সাড়ে ৯টার দিকে সরেজমিনে দেখা যায়, ভাঙনকবলিত এলাকা দিয়ে গ্রামের মধ্যে হু হু করে পানি ঢুকছে। স্থানীয় উদ্যোগে কয়েক শ মানুষ ভাঙন দিয়ে পানি আটকানোর চেষ্টা করেছেন। আর কয়েক হাজার উৎসুক মানুষ জড়ো হয়ে দূর থেকে ভাঙনকবলিত এলাকা দেখছেন। স্থানীয় ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যানের পক্ষে মাইকিং করে জানানো হচ্ছে আগামীকাল বুধবার সকাল সাতটার মধ্যে প্রতিটি বাড়ির নারীরা বাদে পুরুষদের বাঁধ সংস্কারে অংশ নেওয়ার জন্য। 

বিছট উচ্চমাধ্যমিক মডেল হাইস্কুলের সহকারী প্রধান শিক্ষক আবু দাউদ জানান, পানি উন্নয়ন বোর্ডের বিছট গ্রামের যে স্থানে বাঁধ ভেঙে গেছে, ওই স্থান দীর্ঘদিন ঝুঁকিপূর্ণ অবস্থায় ছিল। এ ছাড়া স্থানীয় মৎস্যঘেরে পানি তোলার জন্য পানি উন্নয়ন বোর্ডর বাঁধ ছিদ্র করে পাইপ বসিয়ে পানি তোলার কারণে হঠাৎ বাঁধটি ধসে যায়। গতকাল সকাল সাড়ে আটটার দিকে ঈদের নামাজ পড়ার সময় গ্রামবাসী জানতে পারেন, হঠাৎ বাঁধটি ধসে গ্রামের মধ্যে পানি ঢুকছে। নামাজ শেষ না করেই কয়েক হাজার মানুষ এক হয়ে বাঁধটি সংস্কারের চেষ্টা করেন। কিন্তু বেলা ১১টার দিকে তাঁদের সে উদ্যোগ ভেস্তে যায়। এ কারণে খোলপেটুয়া নদীর পানিতে একের পর এক গ্রামে পানি ঢুকতে শুরু করে।

আবু দাউদ বলেন, তাঁর বিদ্যালয় এসএসসি পরীক্ষার কেন্দ্রে। ১০ এপ্রিল থেকে এসএসসি পরীক্ষা শুরু। বাঁধ সংস্থার করা না গেলে তাঁর বিদ্যালয়ে পরীক্ষা নেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।

আনুলিয়া ইউপির ৪, ৫ ও ৬ নম্বর সংরক্ষিত ওয়ার্ডের সদস্য আকলিমা খাতুন বলেন, গ্রামের পর গ্রাম তলিয়ে যাচ্ছে। কর্তৃপক্ষ এখনো কোনো সিদ্ধান্ত নিতে পারছে না কীভাবে বাঁধ সংস্কার করা যাবে। ইতিমধ্যে তাঁর ওয়ার্ডের একাধিক কাঁচা বাড়ি ধসে গেছে। বিছট গ্রামের অর্ধশতাধিক পরিবার বাড়ি ছেড়েছে।

আনুলিয়া ইউপির চেয়ারম্যান মো.

রুহুল কদ্দুস জানান, বাঁধ ভেঙে যাওয়ায় গতকাল রাত তাঁদের নির্ঘুম কেটেছে। ঈদে তাঁর ইউনিয়নের মানুষ আনন্দ উপভোগ করতে পারেনি। ইতিমধ্যে বিছট, নয়াখালী, বাসুদেবপুর, বল্লভপুর, আনুলিয়া, চেঁচুয়া, কাকবাশিয়া, চেওটিয়া, কপসান্ডা, পার বিছট গ্রামে পানিতে তলিয়ে গেছে। এসব গ্রামের ২০ হাজারের বেশি মানুষ পানিবন্দী হয়ে পড়েছে। তিন শতাধিক পরিবার বাড়িঘর ছেড়ে অন্যত্র আশ্রয় নিয়েছে। চার শতাধিক মাছের ঘের ভেসে গেছে। বোরো ধানের খেত তলিয়ে গেছে। অর্ধশতাধিক কাঁচা ঘর ভেঙে পড়েছে।

ইউপির চেয়ারম্যানের দাবি, দ্রুত ভেঙে যাওয়া বাঁধ মেরামত করা না গেলে শুধু আনুলিয়া ইউনিয়ন নয়, পার্শ্ববর্তী খাজরা, বড়দল ও প্রতাপনগরের একাংশ পানিতে প্লাবিত হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। তিনি বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত নিতে দেরি হলে তিনি এলাকাবাসীর স্বার্থে আগামীকাল সকাল সাতটা থেকে বাঁধ মেরামতের কাজ শুরু করবেন।

ঘটনাস্থলে দাঁড়িয়ে সাতক্ষীরা জেলা প্রশাসক মোস্তাক আহমেদ বলেন, পানি উন্নয়ন বোর্ডের উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের সঙ্গে কথা বলে কীভাবে তাড়াতাড়ি বাঁধ সংস্কার করা যায়, এ বিষয়ে চেষ্টা চলছে। এসব বাঁধ তদরকির ব্যবস্থা দুর্বল থাকায় মৎস্যচাষিরা ইচ্ছেমতো বাঁধ কেটে পাইপ ঢুকিয়ে পানি তুলেছেন। এ কারণে দুর্বল বাঁধ আরও দুর্বল হয়ে ধসে পড়েছে।

পানি উন্নয়ন বোর্ডের খুলনা অঞ্চলের তত্ত্বাবধায়ক প্রকৌশলী সৈয়দ শহিদুল আলম ঘটনাস্থল পরিদর্শনকালে বলেন, ঈদের কারণে দক্ষ শ্রমিক না পাওয়ায় বাঁধ নির্মাণের কাজ শুরু করা যাচ্ছে না। আশা করছেন, আগামীকাল কাজ শুরু করতে পারবেন। ইতিমধ্যে বাঁধ মেরামতের প্রয়োজনীয় সরঞ্জাম ভাঙনকবলিত এলাকায় নিয়ে আসা হয়েছে।

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: শত ধ ক

এছাড়াও পড়ুন:

চারঘাটে পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন

রাজশাহীর চারঘাট উপজেলার পিরোজপুর গ্রামের একজন নারী একটি ফেস্টুন হাতে মানববন্ধনে দাঁড়িয়ে ছিলেন। তাতে লেখা ছিল ‘নদী আমাদের মা, মায়ের বুক ভাঙা চাই না।’ এ রকম আরও বিভিন্ন স্লোগান লেখা ব্যানার, ফেস্টুন হাতে দাঁড়িয়ে ছিলেন ভাঙনকবলিত এলাকার মানুষেরা।

জেলার চারঘাট উপজেলা সদরে নদীভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে এই মানববন্ধন হয়। জেলার চারঘাট ও বাঘা উপজেলায় পদ্মার ভাঙনকবলিত পাঁচটি গ্রামের মানুষের উদ্যোগে আজ শনিবার বেলা ১১টা থেকে ১১টা ৪০ মিনিট পর্যন্ত এই আয়োজন হয়।

গ্রামবাসীর ভাষ্য, চারঘাট উপজেলার গোপালপুর, রাউথা, পিরোজপুর, সাহাপুর এবং বাঘা উপজেলার চক রাজাপুর, আতারপাড়া এলাকায় পদ্মা নদীতে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণ না করা হলে আগামীতে ভাঙনের ঝুঁকি আছে। এই আশঙ্কায় ভাঙনকবলিত গ্রামবাসী এই মানববন্ধনের আয়োজন করে।

এই কর্মসূচিতে যোগ দিতে এসেছিলেন চারঘাটের পিরোজপুর গ্রামের শাহানাজ বেগম (৪০। তিনি বললেন, ‘আমার বাড়ি নদীর পাড়ের ওপরে ঝুলি আছে। যকুন তকুন ভাইঙ্গি পড়বি।’

একই এলাকা থেকে এসেছেন পারভীনা খাতুন (৩৫)। সঙ্গে তাঁর শিশু ও বৃদ্ধ শাশুড়িকে নিয়ে এসেছেন। তিনি জানান, নদী একেবারে পায়ের তলায় এসে গেছে। তাঁদের আর পেছনে সরার জায়গা নেই।

মানববন্ধনে প্রধান অতিথি হিসেবে বক্তব্য দেন রাজশাহী জেলা বিএনপির আহ্বায়ক ও সাবেক উপজেলা চেয়ারম্যান আবু সাইদ। তিনি বলেন, পিরোজপুর, গোপালপুর, সাহাপুর এলাকায় দীর্ঘদিন থেকে নদীভাঙন অব্যাহত আছে। এলাকার অন্তত ৫০০ মানুষের ঘরবাড়ি পদ্মা নদীতে বিলীন হয়ে গেছে। এলাকার বাস্তুহারা মানুষ দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ছড়িয়ে পড়েছেন। তাঁরা এলাকায় ফিরতে পারছেন না। এই ভাঙনকবলিত এলাকায় এবার যদি বাঁধ নির্মাণের ব্যবস্থা না করা হয়, তাহলে জনগণ আবার রাজপথে নামবে। পানি উন্নয়ন বোর্ড (পাউবো) অচল করে দেওয়া হবে। তাঁদের অফিস করতে দেওয়া হবে না।

মানববন্ধনে বক্তব্য দেন উপজেলা বিএনপির সভাপতি জাকিরুল ইসলাম, উপজেলা বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক শাহীন আলী, জেলা যুবদলের যুগ্ম আহ্বায়ক সাব্বির রহমান, পৌর বিএনপির যুগ্ম সম্পাদক আবদুস সালেক আদিল, সাংগঠনিক সম্পাদক মাহবুবুর রহমান, উপজেলা ছাত্রদলের সদস্যসচিব শাহীনুর রহমান, ভাঙনকবলিত এলাকার শিক্ষক মনিরুল ইসলাম প্রমুখ।

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • চারঘাটে পদ্মার ভাঙন রোধে স্থায়ী বাঁধ নির্মাণের দাবিতে মানববন্ধন