অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর অস্ত্রোপচারের জন্য ছুটি নিয়ে বাড়ি যাওয়ার পথে অটোরিকশার ধাক্কায় মোটরসাইকেল আরোহী পুলিশ সদস্যের মৃত্যু হয়েছে। ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়কের গাজীপুরের কালিয়াকৈয় উপজেলার মৌচাক এলাকায় মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকাল সোয়া ১১টার দিকে এ দুর্ঘটনা ঘটে।

নিহত রনি শিকদার (২৬) টাঙ্গাইল সদর উপজেলার শাজাহানগঞ্জ ছোনাটি এলাকার জামাল শিকদারের ছেলে। তিনি গাজীপুর মেট্রোপলিটন পুলিশের কনস্টেবল হিসেবে কর্মরত ছিলেন।  

পুলিশ ও স্থানীয়রা জানান, পুলিশ কনস্টেবল রনি সহকারী উপ-কমিশনার দিনে দ্বীনে এ আলমের দেহরক্ষী হিসেবে দায়িত্ব পালন করতেন। রনির অন্তঃসত্ত্বা স্ত্রীর বুধবার (২ এপ্রিল) অস্ত্রোপচার হওয়ার কথা রয়েছে। সেই জন্য রনি আজ মঙ্গলবার (১ এপ্রিল) সকালে বাড়ির উদ্দেশে রওনা হন। যাওয়ার পথে কালিয়াকৈর উপজেলার মৌচাক এলাকায় পৌঁছালে একটি অটোরিকশা উল্টো পথে যাওয়ার সময় মোটরসাইকেলে ধাক্কা দেয়। এতে রনি সড়কে পড়ে গিয়ে মাথায় আঘাতপ্রাপ্ত হয়ে ঘটনাস্থলে মারা যায়। খবর পেয়ে হাইওয়ে পুলিশ নিহতের লাশ উদ্ধার করে গাজীপুর শহীদ তাজউদ্দিন আহমেদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের মর্গে পাঠায়। 

আরো পড়ুন:

‘ঈদযাত্রায় এবারের মতো স্বস্তি আর কখনো পাইনি’

সরেজমিন ফুলবাড়িয়া বাস কাউন্টার
প্রশাসন চলে গেলেই বাড়তি ভাড়া

নাওজোর হাইওয়ে থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা রইছ উদ্দিন জানান, নিহতের লাশ উদ্ধার করে তার পরিবারের কাছে বুঝিয়ে দেওয়া হয়েছে। অটোরিকশটি আটক করা হয়েছে। এ ঘটনায় আইনগত ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন বলে জানান তিনি। 

পুলিশের সহকারী উপ-কমিশনার দিনে দ্বীনে এ আলম জানান, রনি তার ব্যক্তিগত দেহরক্ষী ছিলেন। বাড়ি যাওয়ার পথে সড়ক দুর্ঘটনায় তার মৃত্যু হয়েছে।

ঢাকা/রেজাউল/বকুল

.

উৎস: Risingbd

কীওয়ার্ড: চ কর চ কর সড়ক পর বহন সড়ক দ র ঘটন

এছাড়াও পড়ুন:

শালবনে ছেচরা কই ও পাটখই

বিভতিভূষণের আরণ্যক উপন্যাসে একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, যিনি লবটুলিয়ার জঙ্গলে সরস্বতী কুন্ডের পাড়ে নানা জায়গা থেকে নানা প্রজাতির গাছপালা এনে লাগাতেন। সেসব গাছে ফুল ফুটলে আনন্দে তিনি আত্মহারা হয়ে যেতেন। আমারও একজন যুগলপ্রসাদ ছিলেন, নাম আজাহার। প্রায় আমারই সমবয়সী।

টাঙ্গাইলের সখীপুরে বিভিন্ন শালবনে ঘুরতে গেলে মাঝেমধ্যে তিনি আমার সাথি হতেন। শালবনে কত গাছ! তেমন কিছুই চিনি না। কিন্তু সেই শালবনের কোলে জন্ম নেওয়া ও বেড়ে ওঠা আজাহার ঠিকই সেসব গাছ চিনতেন, আর জিজ্ঞেস করলে টপাটপ নাম বলে দিতেন। কিন্তু গোলমাল বাধত সেসব নাম শুনে। কেননা সেসব নাম বলতেন, তাঁদের স্থানীয় ভাষায়। বইয়ে সেসব নাম খুঁজে পাওয়া যেত না।

একদিন শালবনের মধ্যে একটা ছোট গাছ দেখলাম, গাছের গুঁড়ির চারদিকে তীক্ষ্ণসরু ও সোজা প্রচুর কাঁটা বেরিয়েছে। পাতাগুলো দেখতে কিছুট পেয়ারাপাতার মতো। প্রচুর ডালপালায় গাছটার মাথা ঝাঁকড়া হয়ে আছে। ডালের আগায় শিষের মতো মঞ্জরিতে প্রচুর ঘিয়া ও সাদাটে রঙের খুদে ফুল ফুটেছে। চিনি না। তাই আজাহারকে জিজ্ঞেস করলাম, নাম কী? চট করেই বলে দিলেন, ছেচরা কই। মাছের নাম কই হয় জানি, কিন্তু কোনো গাছের নাম কই হতে পারে? অগত্যা ছবি তুলে ওই নামকেই মনে গেঁথে ফিরে এলাম ঢাকায়।

আজাহার বললেন, এখন ফুল দেখছেন। কদিন পরেই ওসব ফুল থেকে ছোট ছোট গুলির মতো প্রচুর ফল ধরবে। ছোটবেলায় আমরা সেসব কাঁচা ফল নিয়ে বাঁশের কঞ্চি দিয়ে ফটকা বানিয়ে তার চোঙে একটা একটা করে ফল দিয়ে বন্দুকের মতো গুলি গুলি খেলতাম। চোঙের ভেতরে একটা সরু কাঠি ঢুকিয়ে চাপ দিয়ে সেসব ফল গুলির মতো ফাটাতাম। ফটাস করে শব্দ হতো। এ সময় মাসখানেকের জন্য আমরা এ গাছের ফল, পরে জালি খেজুর নিয়ে যুদ্ধ যুদ্ধ খেলতাম। শালবনে সে সময় এ গাছের অভাব ছিল না। এখন তো দেখতে হলে খুঁজে বের করতে হয়।

ফিরে এসে সে ছবি পাঠালাম জাতীয় উদ্ভিদ উদ্যানের সাবেক বোটানিস্ট সামসুল হক ভাইয়ের কাছে। দুই দিন পরেই তিনি জানালেন, গাছটার স্থানীয় নাম ছেচরা কই, উদ্ভিদতাত্ত্বিক নাম Bridelia retusa, গোত্র ফাইলেনথেসি। বইপত্রে এ গাছের চারটি বাংলা নাম পেলাম—কাঁটাকই, কাঁটাকুশি, কামকই, আকদানা। বাংলাদেশ ছাড়াও এ গাছ আছে নেপাল, ভারত, শ্রীলঙ্কা, চীন, থাইল্যান্ড প্রভৃতি দেশে। সাধারণত উঁচু ও শুষ্ক বনাঞ্চলে এ গাছ দেখা যায়। ছোট বৃক্ষজাতীয় গাছ, প্রায় ১০ মিটার পর্যন্ত লম্বা হয়, দ্রুত বাড়ে। এ গাছের কাঁটা থাকায় বন্য প্রাণীরা এদের ধারে ঘেঁষে না, এমনকি এর বাকল দিয়েও বিষ তৈরি করা হয় বলে শুনেছি।

ফল গোলাকার, ছোট, কাঁচা ফল ময়লা সবুজ, পাকলে খোসায় লাল রং ধরে। ছেচরা কইগাছের কাঠ মাঝারি শক্ত থেকে শক্ত, কাঠের রং ময়লা লাল। রঙে ও গুণে কাঠ উৎকৃষ্ট। নির্মাণকাজ ও গরুর গাড়ির চাকা বানাতে ব্যবহার করা হয়। জ্বালানি কাঠ হিসেবে ব্যবহৃত হলেও শুষ্ক তৃণভূমিতে যদি কোনো গাছ থাকে, তবে সেসব ঘাসে আগুন দিলে এ গাছ পোড়ে না বলে কথিত রয়েছে। বীজ দ্বারা সহজে বংশবৃদ্ধি বা চারা হয়।

পূর্বাচল উপশহরের শালবনে দেখা পাটখই ফল

সম্পর্কিত নিবন্ধ