গাজা পরিস্থিতিতে জড়িত ‘সব পক্ষ’কে যুদ্ধবিষয়ক আইন মানতে হবে: যুক্তরাষ্ট্র
Published: 1st, April 2025 GMT
গাজার সার্বিক পরিস্থিতির সঙ্গে জড়িত ‘সব পক্ষ’ যুদ্ধবিষয়ক আন্তর্জাতিক আইন মেনে চলবে বলে আশা করে যুক্তরাষ্ট্র। তবে গাজায় ইসরায়েলি বাহিনীর হামলায় নিহত ১৫ জনের বিষয়ে দেশটি কোনো মূল্যায়ন করেছে কী না, সে বিষয়ে নিশ্চিত তথ্য দিতে অস্বীকৃতি জানিয়েছে তারা। নিহতদের মাঝে কেউ ছিলেন স্বাস্থ্যকর্মী, কেউ আবার বেসামরিক প্রতিরক্ষাকর্মী ও একজন জাতিসংঘ কর্মকর্তা। খবর বিবিসির
এই হত্যাকাণ্ড সম্পর্কে প্রশ্ন করা হলে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তরের মুখপাত্র ট্যামি ব্রুস বলেন, ‘এ মুহূর্তে গাজায় যা কিছু ঘটছে, সেই সবকিছুর জন্যই হামাস দায়ী।’
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থা জানিয়েছে, গত ২৩ মার্চ পাঁচটি অ্যাম্বুলেন্স, একটি অগ্নিনির্বাপক ট্রাক এবং একটি জাতিসংঘের গাড়ি একের পর এক হামলার শিকার হয়েছে। এই ঘটনায় ১৫ জন নিহত হন এবং তাদের সবাইকে একত্রিত করে গণকবরে দাফন করা হয়েছে।
ইসরায়েলি সামরিক বাহিনী জানিয়েছে, তাদের সৈন্যরা এমন কিছু যানবাহনের ওপর গুলি চালিয়েছে, যেগুলো ‘সন্দেহজনকভাবে’ অগ্রসর হচ্ছিলো। কারণ, ওই যানবাহনগুলো তাদের হেডলাইট জ্বালিয়ে রাখেনি বা যানবাহনগুলোতে কোনও জরুরি সংকেতও চালু ছিল না। তাদের দাবি, নিহতদের মধ্যে একজন ছিলেন হামাস সদস্য। পাশাপাশি সেখানে অন্য যোদ্ধারাও ছিল। তবে মরদেহগুলোকে একসঙ্গে বালিতে কবর দেওয়া নিয়ে তারা কোনো মন্তব্য করেনি।
যুদ্ধ সম্পর্কিত আন্তর্জাতিক আইনে বেসামরিক নাগরিকদের লক্ষ্যবস্তু করার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা দেওয়া আছে। একই সঙ্গে চিকিৎসা সেবার সঙ্গে যুক্ত মানুষদের ব্যাপারেও এই আইনে বিশেষ সুরক্ষা দেবার কথা বলা হয়েছে। ইসরায়েলের সবচেয়ে বড় অস্ত্র সরবরাহকারী মিত্র যুক্তরাষ্ট্রও তার নিজের আইনের কাছে বাধা। আইন অনুযায়ী, যুদ্ধবিষয়ক আইন লঙ্ঘন করে বিদেশি সামরিক বাহিনী এই অস্ত্র ব্যবহার করতে পারে না।
জাতিসংঘের মানবিক সংস্থার প্রধান জনাথন হুইটল জানিয়েছেন, ইসরায়েলি হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত একটু অ্যাম্বুলেন্সের জরুরি আলোর সাহায্যে গণকবরটি চিহ্নিত করা হয়েছে।
‘এখানে যা হয়েছে, তা পুরোপুরিভাবে একটি ভয়াবহ ঘটনা,’ এক্স-এ প্রকাশিত এক ভিডিওতে বলেন জনাথন হুইটল। তিনি বলেন, ‘স্বাস্থ্যকর্মীরা কখনোই লক্ষ্যবস্তু হতে পারে না।’
হামাসের সঙ্গে যুদ্ধবিরতির আলোচনা স্থগিত হওয়ার পর গত ১৮ মার্চ থেকে ইসরায়েল ফের গাজায় আকাশ ও স্থল অভিযান চালানো শুরু করে। সেই থেকে গাজায় এক হাজার জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে হামাস-নিয়ন্ত্রিত গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়। এদিকে নতুন করে গাজার দক্ষিণাঞ্চলীয় এলাকার বেশকিছু স্থান খালি করার নির্দেশনা দিয়েছে তেল আবিব।
নোটিশে বলা হয়েছে, ‘সন্ত্রাসী’দের নিরস্ত্র করার জন্য ইসরায়েলি সেনাবাহিনী বড় ধরনের অভিযান শুরু করতে যাচ্ছে, ফলে রাফা এবং পার্শ্ববর্তী খান ইউনিসের স্থানীয় বাসিন্দারা যেন দ্রুত আল-মাওয়াসি অঞ্চলে সরে যান। এরপর ইসরায়েল ও হামাসের মধ্যে সাম্প্রতিক দুই মাসব্যাপী যুদ্ধবিরতির সময় রাফায় নিজেদের বাড়িতে ফেরত আসা হাজার হাজার ফিলিস্তিনি ঘরবাড়ি ছেড়ে পালাতে শুরু করেছেন।
ইসরায়েলি সেনাবাহিনীর নির্দেশে গাজার এক পঞ্চমাংশ এলাকা এখন খালি করে ফেলা হয়েছে।
এদিকে জরুরি ত্রাণ সরবরাহ বন্ধ থাকায় গাজার হাসপাতালগুলোতে দেখা দিয়েছে ওষুধ স্বল্পতা। যুদ্ধবিরতি ভেঙে লাগাতার ১৫ দিনের মতো চলছে ইসরায়েলি আগ্রাসন।
২০২৩ সালের ৭ অক্টোবর সীমান্ত পার করে ইসরায়েলের ওপর হামাসের এক নজিরবিহীন হামলার জবাবে ইসরায়েল গাজায় এই অভিযান শুরু করে। ওই হামলায় প্রায় এক হাজার ২০০ জন নিহত হয় এবং ২৫১ জন ইসরায়েলিকে জিম্মি করা হয়। এরপর থেকে চলমান যুদ্ধে ৫০ হাজার ৩৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে বলে জানিয়েছে গাজার স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
.উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: গ জ গণহত য ইসর য় ল ইসর য ক আইন
এছাড়াও পড়ুন:
স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ রোগীকেও বাঁচানো যায়
রাজধানীর উত্তরার দিয়াবাড়ির মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজে যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তে হতাহত হওয়ার ঘটনার পর দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকের বিষয়টি আলোচনায় এসেছে। জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটে এ ব্যাংকের অবস্থান। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর অনেকেই স্কিন (চামড়া বা ত্বক) দান করার জন্য আগ্রহ প্রকাশ করে ইনস্টিটিউটে যোগাযোগ করছেন। স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক থাকলে ৪০ শতাংশের বেশি পুড়ে যাওয়া রোগীকেও বাঁচানো সম্ভব।
২১ জুলাই দিয়াবাড়িতে মাইলস্টোন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ক্যাম্পাসে বিমানবাহিনীর একটি যুদ্ধবিমান বিধ্বস্ত হয়। গত সোমবার রাত ১০টায় স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো তথ্য অনুযায়ী, যুদ্ধবিমান বিধ্বস্তের ঘটনায় ৩৪ জন মারা গেছে। আর সোমবার বিকেল পর্যন্ত বিভিন্ন হাসপাতালে ভর্তি ৪৫ জন। তাদের মধ্যে বার্ন ইনস্টিটিউটে ভর্তি ৩৩ জন।
দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।জীবিত ব্যক্তির শরীর থেকে বিশেষ প্রক্রিয়ায় সংগ্রহ করা ত্বক মারাত্মকভাবে দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়। এ ছাড়া যে কেউ চাইলে মরণোত্তর ত্বক দান করতে পারেন। সে ক্ষেত্রে দাতার মৃত্যুর পর নির্দিষ্ট সময়ের মধ্যে মরদেহ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা হয়। পরে সেই ত্বক দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় ব্যবহার করা হয়।
ওজন কমানোসহ কিছু প্লাস্টিক সার্জারির পর বেঁচে যাওয়া ত্বক সংরক্ষণ করার মধ্য দিয়ে দেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংকটি যাত্রা শুরু করে। আগে এ ধরনের অস্ত্রোপচারের পর বাড়তি ত্বক ফেলে দেওয়া হতো।
স্কিন ব্যাংকের সমন্বয়কারী ও জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের সহযোগী অধ্যাপক মাহবুব হাসান প্রথম আলোকে বলেন, মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে মানুষের মধ্যে আগ্রহ বেড়েছে; বিশেষত অনেক নারী আগ্রহী হয়ে উঠেছেন। এখন পর্যন্ত শতাধিক মানুষ এ বিষয়ে আগ্রহ প্রকাশ করে যোগাযোগ করেছেন।
তবে সমস্যা হলো, আগ্রহী ব্যক্তিদের বেশির ভাগ চাইছেন, মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ শিক্ষার্থীদের শরীরে যাতে তাঁদের দান করা ত্বক ব্যবহার করা হয়। কিন্তু এটা নিশ্চিত করে বলা সম্ভব নয় যে প্রক্রিয়া শেষে কার দান করা ত্বক কার শরীরে ব্যবহার করা হবে। এ ছাড়া ত্বক দান করার ক্ষেত্রে স্ক্রিনিংসহ পুরো প্রক্রিয়া শুনে অনেকে আর আগ্রহ দেখাননি। এখন পর্যন্ত যাঁরা যোগাযোগ করেছেন, তাঁদের মধ্যে ১৫ থেকে ১৬ জন ত্বক দান করতে চেয়েছেন বলে জানান চিকিৎসক মাহবুব হাসান।
ভবিষ্যতে দগ্ধ রোগীর চিকিৎসায় ত্বক সংরক্ষণ করে রাখতে হয়। ত্বক সংগ্রহের পর বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় সংরক্ষণ করতে হয়। তাহলে সেই ত্বক পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে।মাহবুব হাসান, জাতীয় বার্ন অ্যান্ড প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের চিকিৎসক।৩ জুলাই মালয়েশিয়ায় অনুষ্ঠিত হয় পঞ্চম আন্তর্জাতিক দগ্ধ ও আঘাতপ্রাপ্তদের সম্মেলন। এই সম্মেলনে ‘এস্টাবলিশমেন্ট অব ফার্স্ট স্কিন ব্যাংক ইন বাংলাদেশ: দ্য ওয়ে অব ওভার কামিং দ্য চ্যালেঞ্জেস’ শিরোনামের বৈজ্ঞানিক প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন মাহবুব হাসান। প্রবন্ধে উল্লেখ করা হয়, দেশে স্কিন ব্যাংকের যাত্রা শুরুর পর দান করা ত্বক ব্যবহার করে ১০ জন দগ্ধ রোগীর চিকিৎসা করা হয়েছে। তাঁদের মধ্যে ৯ জনই বেঁচে গেছেন। আর শ্বাসকষ্টজনিত সমস্যা থাকায় একজন মারা গেছেন।
আপাতত রেজিস্ট্রেশন ও স্ক্রিনিংদেশের একমাত্র স্কিন ব্যাংক উদ্বোধন করা হয় গত ৯ জানুয়ারি। তবে গত ২০ ফেব্রুয়ারি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যাংকের কার্যক্রম শুরু হয়। ব্যাংকটিতে কারিগরি সহায়তা দিয়েছে সিঙ্গাপুর জেনারেল হাসপাতাল। বর্তমানে এই ব্যাংকে দুজন চিকিৎসক ও একজন নার্স দায়িত্ব পালন করছেন।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যাংকে ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে ৩ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।
স্কিন ব্যাংক যাত্রা শুরুর পর মোট ১৪ হাজার ৫০০ সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক সংরক্ষণ করা হয়েছিল। মাইলস্টোনের ঘটনার আগপর্যন্ত ৯ হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ছিল। মাইলস্টোনের ঘটনায় দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় গত রোববার পর্যন্ত এ ব্যাংক থেকে সাড়ে তিন হাজার সেন্টিমিটার স্কয়ার ত্বক ব্যবহার করা হয়েছে।মাইলস্টোনের ঘটনার পর ত্বকদানের বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বেশ আলোচনা হচ্ছে। ত্বকদানের আহ্বান জানিয়ে অনেকেই পোস্ট দিচ্ছেন। তবে কিছু কিছু ভুল তথ্যও সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ছড়িয়েছে।
আরও পড়ুনস্কিন ব্যাংক চালু হলো বাংলাদেশে, দগ্ধ রোগীদের চিকিৎসায় নতুন দিগন্ত২৫ জুলাই ২০২৫মাইলস্টোনের ঘটনার পর জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটের পরিচালক মোহাম্মদ নাসির উদ্দিন সাংবাদিকদের বলেছিলেন, অনেকেই ত্বক দান করতে আগ্রহ প্রকাশ করছেন। তবে স্কিন ব্যাংকে পর্যাপ্ত পরিমাণে ত্বক সংরক্ষিত আছে।
এ বিষয়ে চিকিৎসক মাহবুব হাসান বলেন, এ মুহূর্তে ত্বকদানে আগ্রহী ব্যক্তিদের রেজিস্ট্রেশন আর স্ক্রিনিং করে রাখার বিষয়ে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে, যাতে জরুরি প্রয়োজনে তাঁদের কাছ থেকে ত্বক সংগ্রহ করা যায়।
সংগ্রহ করা ত্বক পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে তরল নাইট্রোজেনে ডুবিয়ে মাইনাস ৯০ ডিগ্রি সেলসিয়াস তাপমাত্রায় রাখলে পাঁচ বছর পর্যন্ত ভালো থাকে