শুল্ক আরোপে যুক্তরাষ্ট্রই বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হবে
Published: 4th, April 2025 GMT
মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘স্বাধীনতা দিবসের’ শুল্ক আরোপের একটি স্পষ্ট চিত্র এখন আমাদের কাছে আছে। এটি কীভাবে অন্যান্য বাণিজ্যিক অংশীদারের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রকেও প্রভাবিত করবে, তাও বুঝতে পারছি।
মার্কিন প্রশাসন দাবি করছে, আমদানির ওপর এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য ঘাটতি কমাবে এবং যেগুলোকে তারা অন্যায্য এবং একতরফা বাণিজ্য অনুশীলন হিসেবে মনে করে, তা মোকাবিলা করবে। ট্রাম্প বলেছেন, এই দিনটি চিরকাল মনে রাখা হবে। কারণ এটি ছিল সেই দিন, যখন আমেরিকান শিল্প পুনর্জন্ম লাভ করেছিল এবং আমেরিকার ভাগ্য পুনরুদ্ধার হয়েছিল।
এই ‘পাল্টা’ শুল্ক এমনভাবে ডিজাইন করা হয়েছে, যা দেশগুলো মার্কিন পণ্যের ওপর শুল্ক, মুদ্রা কারসাজি ও শুল্কবহির্ভূত প্রতিবন্ধকতার মাধ্যমে যে ক্ষতি করছে, তার অর্ধেকের সমান। দেশগুলোর ওপর আরোপিত শুল্ক বেশির ভাগ পণ্যের ওপর প্রযোজ্য হবে। কিছু উল্লেখযোগ্য খাত যেমন– ইস্পাত, অ্যালুমিনিয়াম ও গাড়ি ইতোমধ্যে নতুন শুল্কের আওতাভুক্ত। প্রতিটি দেশের ওপর ১০ শতাংশ হারে আরোপিত শুল্ককে সর্বজনীন ভিত্তি
হিসেবে ধরা হয়েছে। উচ্চমাত্রার শুল্কের কবলে পড়েছে ভিয়েতনাম (৪৬ শতাংশ), থাইল্যান্ড (৩৬ শতাংশ), চীন (৩৪ শতাংশ), ইন্দোনেশিয়া (৩২ শতাংশ), তাইওয়ান (৩২ শতাংশ), সুইজারল্যান্ডসহ (৩১ শতাংশ) বিভিন্ন দেশ। চীনের এই শুল্ক বিদ্যমান ২০ শতাংশ শুল্কের অতিরিক্ত। তাই চীনা পণ্য আমদানিতে মোট ৫৪ শতাংশ শুল্ক প্রযোজ্য হবে। ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপিত দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ও যুক্তরাজ্য। আপাতত কানাডা ও মেক্সিকোর নাম বুধবারের ঘোষণায় উল্লেখ করা হয়নি। এর আগে নির্বাহী আদেশে ট্রাম্প দেশ দুটির ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছিলেন।
যদিও কিছু দেশ মার্কিন পণ্যের ওপর যে শুল্ক আরোপ করে, তা যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্কের চেয়ে বেশি। ‘স্বাধীনতা দিবসের’ ঘোষণায় দাবি করা হয়েছে, এটি দেশগুলোর আরোপিত শুল্কের অর্ধেক। এর পেছনের হিসাবগুলো চ্যালেঞ্জের সম্মুখীন হতে পারে। যেমন– একটি সাম্প্রতিক গবেষণা অনুসারে, শুল্কবহির্ভূত ব্যবস্থাগুলো অনুমান করা খুবই কঠিন এবং অনেক অনিশ্চয়তার মধ্যে থাকে।
জিডিপিতে পাল্টা শুল্কের প্রভাব
প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে আমদানির ওপর প্রতিশোধমূলক শুল্ক আরোপ করতে পারে। এরই মধ্যে কানাডা (মার্কিন রপ্তানির বৃহত্তম গন্তব্য), ইউরোপীয় ইউনিয়ন ও চীন জানিয়েছে, তারা এ ধরনের পদক্ষেপের জবাব দেবে।
এই পাল্টাপাল্টি বাণিজ্য সংঘাতের প্রভাব অনুমান করতে আমি পণ্য ও সেবার উৎপাদন, বাণিজ্য এবং ভোগের ওপর ভিত্তি করে একটি বিশ্বব্যাপী মডেল ব্যবহার করেছি। এটি এমন ধরনের টুলস, যেগুলোকে ‘কম্পিউটেবল জেনারেল ইকুইলিব্রিয়াম মডেলস’ বলা হয়। এগুলো সরকার, একাডেমিক ও পরামর্শক প্রতিষ্ঠানগুলো ব্যাপকভাবে নীতি পরিবর্তন মূল্যায়ন করতে ব্যবহার করে।
প্রথম মডেলটি এমন একটি পরিস্থিতি অনুমান করে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্র যত শুল্ক আরোপ করে, অন্যান্য দেশও মার্কিন পণ্যের ওপর সমতুল্য শুল্ক আরোপ করে। পাল্টাপাল্টি এ পদক্ষেপের কারণে মার্কিন জিডিপি ১ দশমিক ৪৫ শতাংশ (৪৩ হাজার ৮৪০ কোটি ডলার) সংকুচিত হয়। এটি দেশের ১২ কোটি ৬০ লাখ পরিবারের মধ্যে ভাগ করলে দেখা যায়, প্রতিটি পরিবারের বার্ষিক ৩ হাজার ৪৮৭ ডলার হারাচ্ছে। এটি অন্য যে কোনো দেশের অনুরূপ সংকোচনের চেয়ে বেশি।
যদিও আনুপাতিক জিডিপি সবচেয়ে বেশি কমে মেক্সিকো (২ দশমিক ২৪ শতাংশ) ও কানাডার (১ দশমিক ৬৫ শতাংশ)। কারণ এই দেশগুলো তাদের মোট রপ্তানির ৭৫ শতাংশেরও বেশি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়। মেক্সিকান পরিবারগুলো বছরে ১ হাজার ১৯২ ডলার এবং কানাডীয় পরিবারগুলো ২ হাজার ৪৬৭ ডলার হারায়। জিডিপি সংকোচনের তালিকায় অন্যান্য দেশের মধ্যে রয়েছে ভিয়েতনাম (দশমিক ৯৯ শতাংশ) এবং সুইজারল্যান্ড (দশমিক ৩২ শতাংশ)।
আবার তুলনামূলকভাবে কম মার্কিন শুল্কের সম্মুখীন হওয়া দেশগুলো বাণিজ্যযুদ্ধ থেকে লাভবানও হয়। যেমন নিউজিল্যান্ডের দশমিক ২৯ শতাংশ এবং ব্রাজিলের জিডিপি দশমিক ২৮ শতাংশ বাড়ছে। নিউজিল্যান্ডের পরিবারগুলো প্রতি বছর ৩৯৭ ডলার লাভবান হয়। আর বিশ্বের বাকি অংশের (যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া সব দেশ) মোট জিডিপি ৬ হাজার ২০০ কোটি ডলার কমে। এ ছাড়া বৈশ্বিক জিডিপি ৫০ হাজার কোটি ডলার বা দশমিক ৪৩ শতাংশ কমছে। এই ফলাফল নিশ্চিত করে, বাণিজ্যযুদ্ধ বিশ্ব অর্থনীতিকে সংকুচিত করে।
প্রতিশোধ ছাড়া জিডিপিতে প্রভাব
দ্বিতীয় পরিস্থিতিতে মডেলিংটি চিত্রিত করে, অন্যান্য দেশ মার্কিন শুল্কের প্রতিক্রিয়া না জানালে কী হবে। এ ক্ষেত্রে যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে উচ্চ মার্কিন শুল্কের মুখোমুখি হয় এবং যারা রপ্তানির একটি বড় অংশ যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, তাদের জিডিপিতে আনুপাতিকভাবে সবচেয়ে বেশি নেতিবাচক প্রভাব পড়বে। এর মধ্যে রয়েছে কানাডা, মেক্সিকো, ভিয়েতনাম, থাইল্যান্ড, তাইওয়ান, সুইজারল্যান্ড, দক্ষিণ কোরিয়া ও চীন। আর যেসব দেশ তুলনামূলকভাবে কম নতুন শুল্কের মুখোমুখি হয়, তারা লাভবান হয়েছে, যার মধ্যে সবচেয়ে বড় জিডিপি প্রবৃদ্ধি দেখিয়েছে যুক্তরাজ্য।
এই শুল্ক মার্কিন জিডিপি দশমিক ৪৯ শতাংশ বা ১৪ হাজার ৯০০ কোটি ডলার কমিয়ে দেয়। কারণ এই শুল্ক যুক্তরাষ্ট্রে উৎপাদন খরচ এবং ভোক্তা মূল্য বাড়িয়ে দেয়। বিশ্বের বাকি অংশের মোট জিডিপি ১৫ হাজার ৫০০ কোটি ডলার কমিয়ে দেয়, যা প্রতিশোধ নেওয়ার সময় একই হ্রাসের দ্বিগুণেরও বেশি। এটি ইঙ্গিত দেয়, প্রতিশোধমূলক শুল্কারোপের মাধ্যমে বিশ্বের বাকি অংশ ক্ষতি কমাতে পারে। একই সময়ে প্রতিশোধ যুক্তরাষ্ট্রের জন্য আরও খারাপ ফলাফলের দিকে নিয়ে যায়।
ট্রাম্প প্রশাসনের পূর্ববর্তী শুল্ক ঘোষণা আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের চাকা থামিয়ে দিয়েছিল। পাল্টা শুল্কগুলো সেই চাকার মধ্যে আরও সমস্যা সৃষ্টি করেছে। শেষ পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রই সবচেয়ে বেশি ক্ষতির সম্মুখীন হতে পারে।
লেখক: অকল্যান্ড প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির অধ্যাপক
দ্য কনভারসেশন থেকে অনূদিত
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প আর প ত শ ল ক এই শ ল ক অন য ন য পর ব র দশম ক
এছাড়াও পড়ুন:
‘মহাভারত’ হতে পারে আমির খানের শেষ সিনেমা
বলিউডের ‘মিস্টার পারফেকশনিস্ট’ খ্যাত আমির খান হয়তো এবার বিদায়ের প্রস্তুতি নিচ্ছেন। ইঙ্গিত দিয়েছেন, তাঁর স্বপ্নের প্রকল্প ‘মহাভারত’-ই হতে পারে তাঁর অভিনয় জীবনের শেষ সিনেমা।
সম্প্রতি ‘হিন্দুস্তান টাইমস’-এ দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে আমির বলেন, “মহাভারত আমার স্বপ্নের প্রজেক্ট। আমি মনে করি, এটা এমন এক কাজ, যা একবার করলে মনে হবে জীবনে আর কিছুই বাকি নেই। এতটাই আবেগঘন, বিস্তৃত আর মহিমান্বিত এই কাহিনি। এই মহাকাব্যে যা কিছু রয়েছে, তা জীবনেও আছে।”
৫৯ বছর বয়সী এই অভিনেতা আরও বলেন, ‘মহাভারতের মতো জটিল ও গভীর প্রকল্পের পর হয়তো মনে হবে নতুন করে আর কিছু বলার নেই। নিশ্চিত না, তবে এমনটাই মনে হচ্ছে।’
তবে এখানেই থেমে যেতে চান না তিনি। জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কাজ করে যেতে চান বলেও জানিয়েছেন আমির খান। তাঁর কথায়, “আমি চাই, আমার মৃত্যু হোক পায়ে জুতো পরে।” অর্থাৎ কাজ করতে করতেই চলে যেতে চান তিনি।
আমির এখন ব্যস্ত ‘সিতারে জামিন পার’ সিনেমার প্রচারণা নিয়ে। এই সিনেমাটির মাধ্যমেই ‘লাল সিং চাড্ডা’র পর আবারও বড় পর্দায় ফিরছেন তিনি।
‘সিতারে জামিন পার’ মূলত ২০০৭ সালের বহুল প্রশংসিত ‘তারে জামিন পার’-এর সিকুয়েল। এই ছবিতেও আমির কেবল অভিনয়ই করেননি, বরং প্রযোজনার দায়িত্বও নিয়েছেন।
এবারের সিনেমায় তাঁর বিপরীতে অভিনয় করছেন জেনেলিয়া ডি সুজা। ছবিতে রয়েছে আরও চমক। একসঙ্গে ১০ নতুন মুখকে বড় পর্দায় হাজির করছেন আমির খান। তাঁরা হলেন:
আরৌশ দত্ত, গোপী কৃষ্ণ ভার্মা, সাম্বিত দেশাই, বেদান্ত শর্মা, আয়ুষ বানসালি, আশীষ পেন্ডসে, ঋষি সাহানি, ঋষভ জৈন, নমন মিশ্র এবং সিমরান মঙ্গেশকর।
তাছাড়া এই ছবিতে আরও রয়েছেন দারশিল সাফারি, সোনালি কুলকার্নি, ব্রিজেন্দ্র কালা এবং সুরেশ মেননের মতো অভিজ্ঞ অভিনেতারা।
‘সিতারে জামিন পার’ সিনেমাটি মুক্তি পাবে ২০ জুন। এখন দেখার অপেক্ষা, এই ছবি দিয়ে আমির খান আবার কতটা দর্শকের হৃদয় জয় করতে পারেন। আর তার পরেই শুরু হতে পারে সেই বহু প্রতীক্ষিত ‘মহাভারত’-এর যাত্রা।