চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ, সতর্ক করলেন ট্রাম্প
Published: 5th, April 2025 GMT
এবার যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যে অতিরিক্ত শুল্ক আরোপ ও একগুচ্ছ নিষেধাজ্ঞার ঘোষণা দিয়েছে চীন। দুই দিন আগে যুক্তরাষ্ট্র ঘোষিত রিসিপ্রোক্যাল ট্যারিফ বা পাল্টা শুল্ক আরোপের প্রতিক্রিয়ায় গতকাল শুক্রবার এ শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেয় বেইজিং।
গতকাল চীনের অর্থ মন্ত্রণালয় মার্কিন পণ্যে শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়ে জানায়, ১০ এপ্রিল থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত ৩৪ শতাংশ শুল্ক কার্যকর হবে। এ ছাড়া যুক্তরাষ্ট্রে গুরুত্বপূর্ণ কিছু কাঁচামাল রপ্তানিও নিয়ন্ত্রণ করবে তারা।
মার্কিন পণ্য আমদানিতে সমান পাল্টা শুল্ক আরোপ করার পাশাপাশি গতকাল বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থায় (ডব্লিউটিও) যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে একটি মামলা করেছে চীন।
গত বুধবার বাংলাদেশ সময় দিবাগত রাত দুইটায় অনেক দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণা দেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। এতে তিনি চীনের ওপর নতুন করে ৩৪ শতাংশ পাল্টা শুল্ক আরোপের কথা জানান, যা আগে আরোপিত শুল্কসহ ৫৪ শতাংশে দাঁড়িয়েছে। ট্রাম্প প্রশাসনের বাড়তি শুল্ক আরোপের কারণে চীন সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত দেশগুলোর একটি হয়ে উঠেছে।
চীন বলছে, যুক্তরাষ্ট্র চীনা পণ্যে যে বাড়তি শুল্ক আরোপ করেছে, তা আন্তর্জাতিক বাণিজ্য রীতির সঙ্গে সংগতিপূর্ণ নয়। চীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয় এক বিবৃতিতে বলেছে, প্রাসঙ্গিক আইনের আলোকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ কার্যকর করার মাধ্যমে জাতীয় নিরাপত্তা ও স্বার্থকে আরও ভালোভাবে রক্ষা করাই
চীন সরকারের উদ্দেশ্য।যুক্তরাষ্ট্রের পণ্যে চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প। বেইজিংকে সতর্ক করে গতকাল নিজের মালিকানাধীন সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ট্রুথ সোশ্যালে তিনি লিখেছেন, চীন ভুল করছে। তারা আতঙ্কে এমন কাজ করছে, যার পরিণাম ভোগার মতো অবস্থায় তারা নেই।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক ঘোষণার পাল্টা ব্যবস্থা হিসেবে আরও কিছু পদক্ষেপ নিয়েছে চীন। দেশটির বাণিজ্য মন্ত্রণালয় গতকাল জানিয়েছে, তারা নতুন করে ১৬টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে রপ্তানি নিয়ন্ত্রণ তালিকায় অন্তর্ভুক্ত করছে। ফলে এসব প্রতিষ্ঠানের জন্য চীনের বাজার ও প্রযুক্তিতে প্রবেশাধিকারে বিধিনিষেধ আরও বাড়বে। এ ছাড়া ১১টি মার্কিন প্রতিষ্ঠানকে নতুন করে ‘অবিশ্বস্ত সত্তা’ তালিকায় যুক্ত করেছে। এর আওতায় চীন এসব বিদেশি প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নিতে পারবে।
বিশ্বের সর্ববৃহৎ অর্থনীতি যুক্তরাষ্ট্র ও দ্বিতীয় বৃহৎ অর্থনীতি চীনের পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপে ট্রাম্পের শুরু করা বাণিজ্যযুদ্ধ বিপজ্জনক মোড় নিচ্ছে। বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে শুরু হয়েছে বড় দরপতন। অর্থনীতিতেও দেখা দিয়েছে মন্দার শঙ্কা।
বিশ্লেষকদের মতে, একাধিক পাল্টা পদক্ষেপের ঘোষণা দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে চলমান বাণিজ্যযুদ্ধকে আরও এক ধাপ এগিয়ে নিল চীন। যুক্তরাষ্ট্রের সব পণ্যের ওপর অতিরিক্ত শুল্ক আরোপে ইতিমধ্যে উত্তপ্ত বাণিজ্যযুদ্ধে নতুন মাত্রা যোগ করবে। এ পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে বৈশ্বিক বাজারে অনিশ্চয়তা আরও বেড়েছে।
ডব্লিউটিওতে চীনের মামলাচীনের বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র গতকাল জানান, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধে ডব্লিউটিওতে মামলা করেছেন তাঁরা। তিনি বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের আরোপিত শুল্ক ডব্লিউটিওর নিয়মের গুরুতর লঙ্ঘন। এটি ডব্লিউটিও সদস্যদের বৈধ অধিকার ও স্বার্থের ক্ষতি করবে এবং নিয়মভিত্তিক বহুপক্ষীয় বাণিজ্যব্যবস্থা ও আন্তর্জাতিক অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থাকে দুর্বল করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ প্রসঙ্গে চীনের মুখপাত্র আরও বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপ একটি একপক্ষীয় আচরণ। এটি বৈশ্বিক অর্থনীতি ও বাণিজ্যিক ব্যবস্থার স্থিতিশীলতাকে বিপন্ন করবে। তাই চীন দৃঢ়ভাবে এ সিদ্ধান্তের বিরোধিতা করছে।
কয়েক ডজন দেশের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নজিরবিহীন বাড়তি শুল্ক আরোপ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছে ডব্লিউটিও। বৈশ্বিক বাণিজ্যে এর প্রভাব নিয়ে সংস্থাটি সতর্ক করে বলেছে, এতে ২০২৫ সালে বৈশ্বিক বাণিজ্য প্রায় ১ শতাংশ কমে যাবে।
পাল্টাপাল্টি শুল্ক আরোপ নিয়ে উদ্বেগ জানিয়েছেন ডব্লিউটিওর প্রধান এনগোজি ওকোনজো-ইওয়েলা। তিনি বলেছেন, ‘একের পর এক পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপে বৈশ্বিক বাণিজ্য হ্রাস এবং বাণিজ্যযুদ্ধ শুরুর ঝুঁকি নিয়ে আমি গভীরভাবে উদ্বিগ্ন।’
বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে দরপতনডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন বিভিন্ন দেশের ওপর বাড়তি শুল্ক আরোপ করার পর থেকেই বৈশ্বিক পুঁজিবাজারে দরপতন শুরু হয়েছে। গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো এশিয়া, ইউরোপ ও যুক্তরাষ্ট্রের পুঁজিবাজারগুলোয় বড় দরপতন হয়েছে।
গতকাল মার্কিন পুঁজিবাজারে লেনদেন শুরুর পরই বড় দরপতন হয়। লেনদেন শুরু হওয়ার পর প্রথম কয়েক মিনিটে ডাও জোন্স এবং এসঅ্যান্ডপি ৫০০ সূচকের ২ দশমিক ৪ শতাংশ কমে গেছে। নাসড্যাক সূচক কমে গেছে ৩ শতাংশের বেশি।
ইউরোপের পুঁজিবাজারেও গতকাল টানা দ্বিতীয় দিনের মতো দরপতন হয়েছে। ইউরোপের পুঁজিবাজারে গড়ে সূচক ৪ শতাংশ কমেছে। এফটিএসই ১০০ সূচক ৪ দশমিক ৬ শতাংশ ও ড্যাক্স সূচকও ৪ দশমিক ৫ শতাংশ কমে গেছে।
দ্বিতীয় দিনের মতো দরপতন দেখেছে এশিয়া। গতকাল জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২ দশমিক ৮ শতাংশ কমেছে। এ ছাড়া হংকংয়ের হ্যাংসেং সূচক ১ দশমিক ৫২ শতাংশ ও চীনের সাংহাইয়ের সমন্বিত সূচক দশমিক ২৪ শতাংশ কমেছে।
পুঁজিবাজারে দরপতনের পাশাপাশি বৈশ্বিক বাজারে জ্বালানি তেলের দামও কমেছে। গতকাল এক দিনে জ্বালানি তেলের দাম কমেছে ৮ শতাংশ। করোনা মহামারির সময় ২০২১ সালের পর গত কয়েক বছরে তেলের দাম এতটা কমেনি।
মার্কিন বহুজাতিক বিনিয়োগ ব্যাংক জেপি মরগ্যান বলেছে, এমন পরিস্থিতিতে চলতি বছরের শেষ নাগাদ বৈশ্বিক মন্দার ঝুঁকি বেড়ে এখন ৬০ শতাংশে এসেছে।
যুক্তরাষ্ট্রের শুল্ক আরোপের নিন্দা জানিয়ে আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেছেন, এমনিতেই বৈশ্বিক প্রবৃদ্ধি ছিল মন্থর। এর মধ্যেই নতুন শুল্ক আরোপ বৈশ্বিক অর্থনীতিকে বড় ঝুঁকিতে ফেলবে।
বৈশ্বিক অর্থনীতিতে শুল্ক আরোপের প্রভাব নিয়ে ক্রিস্টালিনা জর্জিয়েভা বলেন, ‘শুল্ক আরোপের যেসব ঘোষণা এসেছে, সামষ্টিক অর্থনীতিতে এর প্রভাব কেমন, এখনো তা আমরা মূল্যায়ন করছি। তবে এটা স্পষ্ট এতে বেশ বড় ঝুঁকি তৈরি হয়েছে।’ তবে এখনই অর্থনীতিতে কোনো মন্দা আসবে না বলে মনে করেন তিনি।
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: শ ল ক আর প র ব যবস থ পদক ষ প গতক ল দশম ক র ওপর
এছাড়াও পড়ুন:
ছয় কোটি শ্রমিক রাষ্ট্রীয় সুরক্ষার বাইরে
দেশের মোট শ্রমিকের ৮৪ দশমিক ১ শতাংশের কোনো দায়দায়িত্ব নেয় না রাষ্ট্র । শ্রমিক হিসেবে তাদের রাষ্ট্রীয় স্বীকৃতি নেই। কোনো রকম আইনি ও সামাজিক সুরক্ষা নেই। কর্মস্থলের পরিচয়পত্র নেই। কাজের ক্ষেত্রে অন্যায়ের শিকার হলে তাদের শ্রম আদালতে মামলা করার সুযোগও নেই। বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরো-বিবিএসের তথ্য অনুযায়ী, অপ্রাতিষ্ঠানিক এই শ্রমিকের সংখ্যা ৫ কোটি ৯৬ লাখ ৮০ হাজার।
বিশালসংখ্যক শ্রমিকের প্রতি রাষ্ট্রের এ রকম অবহেলার বিষয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেছে সরকারের গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন। প্রধান উপদেষ্টা অধ্যাপক মুহাম্মদ ইউনূসের কাছে গত ২১ এপ্রিল পেশ করা কমিশনের ২৫ সুপারিশের মধ্যে প্রথমে প্রাতিষ্ঠানিক এবং অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের সব শ্রমিকের আইনি সুরক্ষা ও স্বীকৃতি দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
দেশের শ্রম খাতের দুর্বলতা চিহ্নিত করা এবং শ্রমিকের অধিকার ও জীবনমান উন্নয়নে সুপারিশ প্রণয়নের উদ্দেশ্যে গঠিত ১৯ সদস্যের কমিশনপ্রধান ছিলেন বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব লেবার স্টাডিজ-বিলসের নির্বাহী পরিচালক সৈয়দ সুলতান উদ্দিন আহমেদ। জানতে চাইলে গতকাল তিনি সমকালকে বলেন, ‘আমরা সংস্কার কমিশনের পক্ষ থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকে বিশেষভাবে গুরুত্ব দিয়েছি। শ্রম আইনে অন্য সব শ্রমিকের মতো একই অধিকার এবং সুযোগসুবিধা পাওয়ার পাশাপাশি ক্ষেত্রবিশেষে তাদের বাড়তি সুবিধা দেওয়ার কথা বলেছি। সামাজিক সুরক্ষার আওতায় তাদের জন্য ভাতার কথা বলেছি। প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকের জন্য এ সুবিধার সুপারিশ করা হয়নি। কারণ, তারা চাকরি শেষে কমবেশি কিছু আর্থিক সুবিধা পান।’
কমিশনের এ সব সুপারিশ বাস্তবায়ন করতে নিয়মিত নজরদারি রাখার কথাও জানান তিনি।
এ বাস্তবতায় আজ বৃহস্পতিবার মহান শ্রমিক দিবস পালন করা হচ্ছে। আজ সরকারি ছুটি থাকবে। এ দিনও কাজ করতে হবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের। রাষ্ট্রীয় পর্যায়ে দিবসটি পালনের বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়। দিবসের এবারের প্রতিপাদ্য ‘শ্রমিক মালিক এক হয়ে, গড়ব এ দেশ নতুন করে’।
বিবিএসের গত নভেম্বরে প্রকাশিত সর্বশেষ জরিপ প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশে কর্মক্ষম জনসংখ্যা ১২ কোটি ৬ লাখ ২০ হাজার। তাদের মধ্যে শ্রমশক্তি ৭ কোটি ৩৪ লাখ ৫০ হাজার। মোট শ্রমশক্তির ৮৪ দশমিক ১ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করে।
দেশে শ্রমশক্তি বলতে ১৫ বছরের বেশি বয়সের মানুষের মধ্যে যারা কর্মে নিয়োজিত এবং বেকার জনগোষ্ঠীর সমষ্টিকে বোঝায়। আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর মানদণ্ড অনুযায়ী, যারা সাত দিনে কমপক্ষে ১ ঘণ্টার বেতন, মজুরি বা মুনাফার বিনিময় অথবা পরিবারের নিজস্ব ভোগের জন্য পণ্য উৎপাদনের কাজ করেছেন জরিপে তাদের কর্মে নিয়োজিত হিসেবে বিবেচনা করা হয়েছে। আবার যারা কর্মক্ষম কিন্তু কোনো কাজে নিয়োজিত নন, নির্দিষ্ট সময়ে কাজ খুঁজে বেড়ান এবং ওই সময়ে কাজের সুযোগ পেলে সে কাজ করতে প্রস্তুত তাদের বেকার বলা হয়েছে। এ হিসাবে দেশে বেকারের সংখ্যা ২৪ লাখ ৬০ হাজার।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক কারা
আন্তর্জাতিক শ্রম সংস্থা–আইএলওর আন্তর্জাতিক শ্রম পরিসংখ্যানবিদের সম্মেলন ইন্টারন্যাশনাল কনফারেন্স অব লেবার স্ট্যাটিসিয়ান্স–আইসিএলসির সংজ্ঞা অনুযায়ী, বেসরকারি অনিবন্ধিত প্রতিষ্ঠান, ব্যক্তি বা খানামালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলোর আইনি সত্তা নেই, পরিপূর্ণ হিসাব নেই, উৎপাদনের হিসাব দিতে হয় না এবং বেসরকারি ও অনিবন্ধিত–এরকম খাতকে অনানুষ্ঠানিক খাত এবং এ খাতের শ্রমিকদের অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিক বলা হয়।
মূলত কৃষি, শিল্প ও সেবা খাতে অপ্রাতিষ্ঠানিক শ্রমিক বেশি। কৃষিতে ৯৮ দশমিক ৬৩ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক। শিল্প খাতে ৮২ দশমিক ৭৫ শতাংশ। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের বড় অংশই গ্রামে থাকেন।
বিবিএস বলছে, গ্রামের মোট শ্রমিকের ৮৭ দশমিক ৪ শতাংশ অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন। সংখ্যায় তারা ৪ কোটি ৬১ লাখ ১০ হাজার। শহরের শ্রমিকদের এ হার কিছুটা কম। ৭৪ দশমিক ৫ শতাংশ। সংখ্যায় এক কোটি ৩৫ লাখ ৭০ হাজার। নারী শ্রমিকদের ৯৫ দশমিক ৭ শতাংশ অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করে থাকেন।
শ্রম আইনে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতকেও অন্তর্ভুক্ত করার সুপারিশ কমিশনের
শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রতিবেদনে প্রাতিষ্ঠানিক, অপ্রাতিষ্ঠানিক, কৃষি, গৃহশ্রমিক, অভিবাসী, স্বনিয়োজিত শ্রমিকসহ সব শ্রমিকের জন্য শ্রম আইনে সুরক্ষা নিশ্চিত করার সুপারিশ করা হয়েছে। এ লক্ষ্যে শ্রমিকদের কাজের স্বীকৃতি, পরিচয়পত্র, নিরবচ্ছিন্ন কাজ এবং আয়ের নিশ্চয়তা, মর্যাদাকর শোভন কর্মপরিবেশ নিশ্চিত করার কথা বলা হয়। এতে আরও বলা হয়, এসব শ্রমিকের জন্য রাষ্ট্রীয় সুরক্ষা হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রণালয়ের সব অধিদপ্তরের প্রধান কার্যালয় থেকে প্রতিটি জেলা ও উপজেলা পর্যায়ে আলাদা অফিস অথবা ডেস্ক স্থাপন করতে হবে। শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা এবং কল্যাণে প্রাতিষ্ঠানিক ও অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের সব ধরনের তথ্য নিয়ে তথ্যভান্ডার করা, পরিচয়পত্র দেওয়া এবং অবসর ভাতা চালুসহ বেশ কিছু সুপারিশ করে কমিশন।
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের প্রবীণ শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতার সুপারিশ
রাষ্ট্রের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের আওতায় বিভিন্ন সুবিধা পেয়ে থাকেন প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা। অবসরের পরও কিছু সুবিধা পান তারা। তবে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকরা সারা জীবন খাটুনির পর প্রবীণ বয়সে আরও কষ্টে থাকেন। কারণ সামান্যতম কোনো সুবিধা পান না তারা। এ বিবেচনা থেকে অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের জন্য অসরকালীন ভাতা বা তাদের সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতায় আনার সুপারিশ করেছে কমিশন। তাদের অবসরের বয়সসীমা ৬০ বছর নির্ধারণের কথা বলা হয় এতে। দরিদ্র বেকার শ্রমিকদের বয়স্কভাতা এবং তাদের প্রতিদিনের খাদ্য, বস্ত্র, চিকিৎসা ও অন্যান্য চাহিদা বিবেচনায় বয়স্কভাতার পরিমাণ নির্ধারণের কথা বলেছে কমিশন। অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের পেশা ও খাত অনুযায়ী সংগঠিত হওয়া, প্রতিনিধিত্ব করা ও নিয়োগকারী, তাদের সমিতি করার সুযোগ দেওয়ার কথাও বলা হয় কমিশনের সুপারিশে।
প্রাতিষ্ঠানিকের ৫৫ খাতেও ন্যূনতম মজুরি নেই
অপ্রাতিষ্ঠানিক খাতের চেয়ে কিছুটা ভালো হলেও প্রাতিষ্ঠানিক খাতের শ্রমিকদের অবস্থাও খুব বেশি ভালো নয়। এখনও অনেক শিল্প খাতকে ন্যূনতম মজুরি কাঠামোর আওতায় আনা হয়নি। মালিকপক্ষ যা দেয়, তা মেনে নিয়ে কাজ করেন শ্রমিকরা। এরকম অন্তত ৫৫টি খাতে ন্যূনতম মজুরি ঘোষণা করা হয়নি।
শ্রম মন্ত্রণালয়ের কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর সূত্রে জানা গেছে, দেশের স্বীকৃত শিল্প আছে ১০২টি।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের মজুরি বোর্ড হয় সর্বশেষ ১৯৮৩ সালে। অর্থাৎ, গত তিন যুগ ধরে একই মজুরি চলছে এ খাতে। জানতে চাইলে সরকারের নিম্নতম মজুরি বোর্ডের সচিব রাইসা ইসলাম গতকাল সমকালকে বলেন, ন্যূনতম মজুরি কাঠামোতে বর্তমানে ৪৭টি শিল্প রয়েছে। নতুন করে দুটি শিল্পকে ন্যূনতম মজুরির আওতায় আনা হবে। আরও ২০ শিল্পকে এর আওতায় আনার প্রক্রিয়া চলছে। তিনি জানান, পেট্রোল পাম্পের শ্রমিকদের মজুরি পুনঃনির্ধারণে বোর্ড গঠন হয়েছে। মালিক পক্ষ এ-সংক্রান্ত সভায় আসছে না। এ অবস্থায় করণীয় জানতে শ্রম মন্ত্রণালয়ের পরামর্শ চেয়েছে মজুরি বোর্ড।
টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পে তিন যুগ ধরে একই মজুরির বিষয়ে জানতে চাইলে রাইসা ইসলাম বলেন, টাইপ ফাউন্ড্রি শিল্পের আর অস্তিত্ব নেই। খাতটি হয়তো বিলুপ্ত ঘোষণা করা হবে।