সরকারি কর্মচারী না হয়েও দিনাজপুর সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়মিত কাজ করছেন স্বপন রায়। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
শশরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ও নামজারি রিপোর্ট দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করার কথা তহশিলদার আবুল কাশেমের। কম্পিউটারে অদক্ষ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তিনি কার্যালয়ে স্বপন রায় নামে একজন কম্পিউটার অপারেটর রেখেছেন। স্বপন সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছেন।
সরেজমিন শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছেন স্বপন রায়। বারান্দায় থাকা ঝাড়ুদার সাগর কেউ এলে কী সমস্যা তা জেনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তাঁর কাছে। খাজনা আদায়, নামজারি রিপোর্টসহ সব কাজ করে দিচ্ছেন স্বপন রায়। এ সময় বসে থাকতে দেখা যায় তহশিলদার বা ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনার জন্য নগদ টাকা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সেবাপ্রত্যাশীরা খাজনা অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেবেন। ৮ দশমিক ২৫ একর পর্যন্ত মওকুফি খাজনা। এতে বছরে শতকপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ টাকা করে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বপন নামের এই ব্যক্তি সেবাপ্রত্যাশীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। অথচ তিনি কার্যালয়ের কেউ নন। তাঁর স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো নিয়োগপত্র নেই। তাঁর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি বা জানানোও হয়নি।
কৃষক ফিরোজুল ইসলাম বলেন, ‘২৯ শতক জমির খাজনা দিতে আইছি। ২৪ হাজার টাকা চাইছে। টাকা দিতে পারি না, কাজও হয় নাই।’ একই এলাকার কৃষক সিরাজুল বলেন, ভূমি অফিসে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ৪ হাজার টাকা চান। টাকা দেওয়ার পরও ঘোরানো হয় দিনের পর দিন। সেবা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ৩ বিঘা জমির খাজনা দিতে হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। আমরা তো জানি না, স্বপন অফিসের কেউই না।
শশরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর আনাফ বলেন, ভূমি অফিসে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম সামলানোর কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে। তবে স্বাভাবিক এ কার্য ব্যবস্থাপনা অস্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এখানে। স্বপন রায় এ অফিসের কেউ নন। অথচ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, নথি তাঁর দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তাঁকে কে, কীভাবে নিয়োগ করলেন– খতিয়ে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে স্বপন রায় বলেন, দুই বছর ধরে এখানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি। কর্মকর্তারা তাদের বেতন থেকে আমাকে টাকা দেন। চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে বলেন, ‘মৌখিক চুক্তি হয়েছে।’ সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, মানুষ ইচ্ছায় দিলে নেই। কাউকে জোর করা হয় না।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক আজাহার আলী বলেন, আমি তিন মাস হলো যোগ দিয়েছি। এসেই স্বপন রায়কে কাজ করতে দেখছি।
তহশিলদার আবুল কাশেম বলেন, স্বপন আগে থেকেই ছিলেন। তাঁর স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী কোনো নিয়োগ নেই। নিয়োগ ছাড়া সরকারি অফিসের কম্পিউটারে বসে কেউ কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারেন না। আমি কম্পিউটার চালাতে পারি না। তাই কাজের স্বার্থে তাঁকে রাখতে হয়েছে।
সদর ইউএনও ফয়সাল রায়হান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
উৎস: Samakal
কীওয়ার্ড: স বপন র য় অফ স র ক ক জ কর করছ ন সরক র
এছাড়াও পড়ুন:
চলন্ত বাসে কলেজছাত্রীকে ধর্ষণ, চালক আটক
ঢাকা থেকে বাড়ি ফেরার পথে এক কলেজছাত্রীকে চলন্ত বাসে ধর্ষণের ঘটনা ঘটেছে। নবীগঞ্জ-শেরপুর সড়কে রোববার রাতে যাত্রীবাহী বাসে এ ঘটনা ঘটে। পরে ওই ছাত্রীর চিৎকার শুনে স্থানীয় জনতা সড়কের তিনতালাব পুকুর পাড় নামক স্থানে বাসটি আটক করে এবং বাসের ড্রাইভারকে আটক করে সেনাবাহিনীর নিকট হস্তান্তর করে। এসময় বাসের হেলপার পালিয়ে যায়।
পরে সেনাবাহিনীর সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদের নেতৃত্বে একদল সেনা সদস্য ওই কলেজ ছাত্রী ও ড্রাইভারকে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করে। এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানায় মামলা দায়েরের প্রস্তুতি চলছে।
জানা যায়, ঢাকায় একটি কলেজে একাদশ শ্রেণিতে পড়ে ওই ছাত্রী। রোববার সকালে ঢাকার সায়েদাবাদ থেকে একটি বাসে উঠেন তিনি। তার গ্রামের বাড়ি যেতে বানিয়াচং যাওয়ার পথে শায়েস্থাগঞ্জ বাস স্ট্যান্ডে নামার কথা থাকলেও তিনি বাসের মধ্যে ঘুমিয়ে যান। ফলে বাস তাকে শায়েস্থাগঞ্জে না নামিয়ে শেরপুর বাসস্ট্যান্ডে নামিয়ে দেয়। সেখান থেকে রাত সাড়ে ১০টায় ওই কলেজছাত্রী একটি লোকাল বাসে উঠে। সেই বাসে কয়েকজন যাত্রী ছিল, বাসটি নবীগঞ্জ উপজেলার আউশকান্দি নামক স্থানে পৌঁছালে অন্যান্য যাত্রীদের নামিয়ে দেয়। এরপর ওই ছাত্রীকে একা পেয়ে বাসের চালক ও হেলপার তাকে বাসে পালাক্রমে ধর্ষণ করে।
এ বিষয়ে ওই ছাত্রী জানায়, তিনি ঢাকায় একটি কলেজে লেখাপড়া করেন। তার পরিবারের সবাই ঢাকায় থাকে তিনি ঢাকায় ঈদ করেছে। ঈদের ছুটিতে তিনি বাড়ি আসেননি এই জন্য আজকে গ্রামের বাড়িতে আসছিলেন।
বানিয়াচং থানার সেনাক্যাম্পের সিনিয়র ওয়ারেন্ট অফিসার হারুনুর রশিদ বলেন, আমরা কলেজছাত্রী ও বাস চালককে নবীগঞ্জ থানায় হস্তান্তর করেছি।
এ বিষয়ে নবীগঞ্জ থানার ওসি দুলাল মিয়া জানান, ঘটনার পর বাস চালককে আটক করা হয়েছে এবং হেলপার পালিয়ে গেছে। এ ব্যাপারে মামলা লেখার কাজ চলছে।