Samakal:
2025-05-01@09:59:24 GMT

ভাড়া করা লোকে সরকারি সেবা

Published: 8th, April 2025 GMT

ভাড়া করা লোকে সরকারি সেবা

সরকারি কর্মচারী না হয়েও দিনাজপুর সদর উপজেলার শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে নিয়মিত কাজ করছেন স্বপন রায়। সরকার নির্ধারিত ফির চেয়ে বেশি অর্থ নিয়ে সেবা দিচ্ছেন। এতে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছেন সেবাপ্রার্থীরা।
শশরা ইউনিয়ন ভূমি কার্যালয়ে দাপ্তরিক কার্যক্রম পরিচালনার পাশাপাশি অনলাইনে ভূমি উন্নয়ন কর ও নামজারি রিপোর্ট দেওয়াসহ যাবতীয় কাজ করার কথা তহশিলদার আবুল কাশেমের। কম্পিউটারে অদক্ষ হওয়ার অজুহাত দেখিয়ে তিনি কার্যালয়ে স্বপন রায় নামে একজন কম্পিউটার অপারেটর রেখেছেন। স্বপন সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে কয়েক গুণ বেশি টাকা আদায় করছেন।
সরেজমিন শশরা ইউনিয়ন ভূমি অফিসে গিয়ে দেখা যায়, কম্পিউটারের সামনে বসে কাজ করছেন স্বপন রায়। বারান্দায় থাকা ঝাড়ুদার সাগর কেউ এলে কী সমস্যা তা জেনে পাঠিয়ে দিচ্ছেন তাঁর কাছে। খাজনা আদায়, নামজারি রিপোর্টসহ সব কাজ করে দিচ্ছেন স্বপন রায়। এ সময় বসে থাকতে দেখা যায় তহশিলদার বা ভূমি অফিসের সহকারী কর্মকর্তা আবুল কাশেমকে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক অফিসের কয়েকজন কর্মচারী জানান, ইউনিয়ন ভূমি অফিসে খাজনার জন্য নগদ টাকা গ্রহণের কোনো সুযোগ নেই। সেবাপ্রত্যাশীরা খাজনা অনলাইনের মাধ্যমে জমা দেবেন। ৮ দশমিক ২৫ একর পর্যন্ত মওকুফি খাজনা। এতে বছরে শতকপ্রতি সর্বোচ্চ ২০ টাকা করে নেওয়া যেতে পারে। কিন্তু স্বপন নামের এই ব্যক্তি সেবাপ্রত্যাশীদের সরলতার সুযোগ নিয়ে তাদের জিম্মি করে অতিরিক্ত টাকা আদায় করছেন। অথচ তিনি কার্যালয়ের কেউ নন। তাঁর স্থায়ী বা অস্থায়ী কোনো নিয়োগপত্র নেই। তাঁর বিষয়ে কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে অনুমতি বা জানানোও হয়নি। 
কৃষক ফিরোজুল ইসলাম বলেন, ‘২৯ শতক জমির খাজনা দিতে আইছি। ২৪ হাজার টাকা চাইছে। টাকা দিতে পারি না, কাজও হয় নাই।’ একই এলাকার কৃষক সিরাজুল বলেন, ভূমি অফিসে গেলে বিভিন্ন সমস্যা দেখিয়ে ৪ হাজার টাকা চান। টাকা দেওয়ার পরও ঘোরানো হয় দিনের পর দিন। সেবা ঠিকমতো পাওয়া যাচ্ছে না। ৩ বিঘা জমির খাজনা দিতে হয়েছে ২৪ হাজার টাকা। আমরা তো জানি না, স্বপন অফিসের কেউই না।
শশরা ইউনিয়নের প্যানেল চেয়ারম্যান হুমায়ুন কবীর আনাফ বলেন, ভূমি অফিসে স্বাভাবিকভাবে কার্যক্রম সামলানোর কথা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে। তবে স্বাভাবিক এ কার্য ব্যবস্থাপনা অস্বাভাবিকভাবে পরিচালিত হচ্ছে এখানে। স্বপন রায় এ অফিসের কেউ নন। অথচ সরকারি গুরুত্বপূর্ণ কাগজপত্র, নথি তাঁর দায়িত্বে রাখা হয়েছে। তাঁকে কে, কীভাবে নিয়োগ করলেন– খতিয়ে দেখা দরকার।
এ বিষয়ে স্বপন রায় বলেন, দুই বছর ধরে এখানে চুক্তিভিত্তিক কাজ করছি। কর্মকর্তারা তাদের বেতন থেকে আমাকে টাকা দেন। চুক্তিপত্র দেখতে চাইলে বলেন, ‘মৌখিক চুক্তি হয়েছে।’ সেবাপ্রত্যাশীদের কাছ থেকে অতিরিক্ত টাকা নেওয়ার বিষয়ে তাঁর ভাষ্য, মানুষ ইচ্ছায় দিলে নেই। কাউকে জোর করা হয় না।
ইউনিয়ন ভূমি অফিসের অফিস সহায়ক আজাহার আলী বলেন, আমি তিন মাস হলো যোগ দিয়েছি। এসেই স্বপন রায়কে কাজ করতে দেখছি।
তহশিলদার আবুল কাশেম বলেন, স্বপন আগে থেকেই ছিলেন। তাঁর স্থায়ী কিংবা অস্থায়ী কোনো নিয়োগ নেই। নিয়োগ ছাড়া সরকারি অফিসের কম্পিউটারে বসে কেউ কাজ করতে পারেন কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, পারেন না। আমি কম্পিউটার চালাতে পারি না। তাই কাজের স্বার্থে তাঁকে রাখতে হয়েছে।
সদর ইউএনও ফয়সাল রায়হান বলেন, অভিযোগ পেয়েছি। সহকারী কমিশনারকে (ভূমি) তদন্তের দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তিনি প্রতিবেদন দেওয়ার পর ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: স বপন র য় অফ স র ক ক জ কর করছ ন সরক র

এছাড়াও পড়ুন:

নড়াইলে সরকারি গাছ বিক্রির অভিযোগে চেয়ারম্যানসহ ১৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা

নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ ইউনিয়নে সড়কের পাশে সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে মামলা হয়েছে। গতকাল বুধবার রাতে শাহবাদ ইউনিয়ন ভূমি সহকারী কর্মকর্তা মশিউর রহমান বাদী হয়ে সদর থানায় মামলাটি করেন।

মামলায় ওই ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমানসহ ১৩ জন আসামি করা হয়েছে। অন্য আসামিরা হলেন প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকা ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন ও প্রশিকার গঠিত সংগঠন প্রভাতী যুব সংঘের সভাপতি নড়াইল সদর উপজেলার তুজরডাঙ্গা এলাকার মুজিবুর রহমান, সদস্য একই এলাকার জরিনা বেগম, রজব আলী, মো. আজিবর, মো. ইলিয়াছ, ইমান আলী, মো. ওমর, মো. হায়দার, আবু সাঈদ, মো. এনামুল ও মো. শরিফুল।

এ বিষয়ে আজ বৃহস্পতিবার সকালে নড়াইল সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাজেদুল ইসলাম বলেন, ‘সরকারি গাছ চুরি করে বিক্রির অভিযোগে একটি মামলা হয়েছে। ঘটনার তদন্ত করে দোষী ব্যক্তিদের বিরুদ্ধে আইনানুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

মামলার এজহারে বাদী অভিযোগ করেছেন, গত ২৯ এপ্রিল নড়াইল সদর উপজেলার শাহাবাদ বাজার থেকে হাজির বটতলা পর্যন্ত সরকারি রাস্তার জায়গা থেকে গাছ কাটা ও চুরি করে বিক্রির সংবাদ পেয়ে তিনি ঘটনাস্থলে যান। উপস্থিত হয়ে দেখেন, কাটা গাছবোঝাই একটি ট্রাক এবং নছিমন জব্দ করেছেন নড়াইল সদর উপজেলা ভূমি অফিসের সহকারী কমিশনার দেবাশীষ অধিকারী। তখন ঘটনাস্থলে শ্রমিকদের জিজ্ঞাসাবাদ ও খোঁজ নিয়ে জানতে পারেন, মামলার আসামিরা কোনো ধরনের অনুমতি ছাড়াই খাসজমি থেকে গাছ কেটে বিক্রি করেছেন। এর আগেও একবার তাঁরা ওই জমি থেকে গাছ বিক্রি করেছিলেন। জব্দ করা গাছের লগ, ডালপালা এবং আগে কাটা গাছের অবশিষ্ট ভূমিসংলগ্ন গুঁড়ি পর্যবেক্ষণ করে বোঝা গেছে, ওই স্থান থেকে আনুমানিক পাঁচ লাখ টাকার অধিক গাছ চুরি করে কাটা ও বিক্রি হয়েছে।  

প্রশিকা নড়াইল উন্নয়ন এলাকার ব্যবস্থাপক শাহাব উদ্দিন বলেন, ২০০৯ সালে প্রশিকা, ইউনিয়ন পরিষদ ও প্রভাতী যুব সংঘের যৌথ উদ্যোগে একটি চুক্তির মাধ্যমে সড়কের পাশে গাছগুলো রোপণ করেছিল। সে সময় সড়কটি খাস খতিয়ানভুক্ত ছিল না। বর্তমানে তা সরকারের আওতায় পড়ায় গাছ কাটার অনুমতি চেয়ে ইউএনওর কাছে আবেদন করা হয়েছিল, তবে প্রশাসন কোনো সিদ্ধান্ত দেয়নি।  কিছুদিন আগে ইউপি সদস্য ইব্রাহিম তাঁকে ফোনে জানান, বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালা বিক্রি করতে চান চেয়ারম্যান। বিদ্যুৎ বিভাগের কাটা ডালপালাগুলো পড়ে থেকে নষ্ট হবে ভেবে তিনি বিক্রিতে সম্মতি দেন। পরে গাছ কীভাবে বা কারা কেটেছে, তা তিনি জানেন না।

মামলা করার আগে অবৈধভাবে গাছ কাটার অভিযোগের ব্যাপার জানতে চাইলে ইউপি চেয়ারম্যান জিয়াউর রহমান বলেছিলেন, প্রশিকার সঙ্গে চুক্তির একটি পক্ষ ছিল ইউনিয়ন পরিষদ। সেই হিসেবে গাছ কাটার অনুমতি নিতে ইউএনও বরাবর প্রশিকার আবেদন তিনি চেয়ারম্যান হিসেবে সুপারিশ করেছিলেন। তবে গাছ কেটেছে প্রশিকা আর তাদের সংগঠন। এখানে চেয়ারম্যান-মেম্বরের কিছু নেই।

নড়াইল সদর উপজেলা সহকারী কমিশনার (ভূমি) দেবাশীষ অধিকারী বলেন, প্রশিকার চুক্তির সময় সড়কটি ব্যক্তিমালিকানাধীন জমিতে ছিল, পরে ২০১৫ সালে এটি খাস খতিয়ানভুক্ত হয়। খাসজমি থেকে গাছ কাটা বেআইনি। এ কারণে তাঁদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ