ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত গণহত্যা বন্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের আবাসভূমি ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয় বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব, তোপখানা রোড, পল্টন, নূর হোসেন চত্বর, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, বিজয়নগর ঘুরে সেগুনবাগিচায় বাসদের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।

সমাবেশে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তার এবং তেল সম্পদের ওপর দখলদারি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে ‘ইসরায়েল’ নামক একটি কৃত্রিম জায়নবাদী সামরিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। ৭ হাজার কিলোমিটার দিয়ে শুরু হলেও ক্রমাগত ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করে চলেছে ইসরায়েল সরকার। ইতিমধ্যে গাজার অর্ধেক ভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে দানবে পরিণত করেছে।

বজলুর রশীদ বলেন, এটি মুসলমান বনাম ইহুদিদের যুদ্ধ নয়, এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ও ইসরায়েলি জায়নবাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার লড়াই। গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু ও তাঁর দোসরদের বিরুদ্ধে খোদ ইসরায়েলেও ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। ইসরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তি ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ করছেন। বর্তমান বিশ্বে একজন অগ্রগণ্য পদার্থবিদ যিনি ইহুদি তিনিও গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ করেছেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্টে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহুকে ‘সিরিয়াল কিলার’ উল্লেখ করে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।

বাসদের এই নেতা আরও বলেন, একদিকে ধর্ম-বর্ণ, জাতি, দেশনির্বিশেষে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী গণহত্যার প্রতিবাদ হচ্ছে। অন্যদিকে মিসর, জর্ডান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কতিপয় মুসলিম দেশ জায়নবাদী ইসরায়েল রাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রেখেছে, এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। বক্তব্যে তিনি ৭ এপ্রিল ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানানোর মিছিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলা-লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।

গাজায় ইসরায়েলি হামলা, গণহত্যার বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রসঙ্গে বজলুর রশীদ বলেন, এটা খুবই সাদামাটা নিরীহ বক্তব্য হয়েছে। সরকারের বিবৃতিতে জায়নবাদী ইসরায়েলের মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রের কথা বিন্দুমাত্র উল্লেখ না করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।

সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী, কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব, মহিলা ফোরামের নেত্রী রুখসানা আফরোজ আশা, ছাত্রনেতা মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।

বাসদ নেতারা বাংলাদেশ সরকারকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করা ও আন্তর্জাতিক সব ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া গাজায় অব্যাহত গণহত্যা বন্ধে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেন।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ইসর য় ল র গণহত য র

এছাড়াও পড়ুন:

হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত

ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জের দেশ হাইতিতে গত সপ্তাহে একাধিক গ্যাং হামলায় ৫০ জনেরও বেশি মানুষ নিহত হয়েছে। জাতীয় মানবাধিকার প্রতিরক্ষা নেটওয়ার্কের (আরএনডিডিএইচ) তথ্যানুসারে, সংকটে জর্জরিত দেশটিতে সর্বশেষ ভয়াবহ গণহত্যার ঘটনা এটি।

মঙ্গলবার (১৬ সেপ্টেম্বর) বার্তা সংস্থা এএফপির বরাত দিয়ে এক প্রতিবেদনে এ তথ্য জানিয়েছে মার্কিন সংবাদমাধ্যম ব্যারন’স। 

গতকাল সোমবার এএফপিকে পাঠানো এক প্রতিবেদনে আরএনডিডিএইচ জানায়, গত ১১ ও ১২ সেপ্টেম্বর রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের উত্তর এলাকায় এই হামলাগুলো ঘটে।

ওই প্রতিবেদনে বলা হয়, ‘২০২৫ সালের ১৪ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত নিহত হওয়া বহু মানুষের লাশ এখনও পাওয়া যায়নি। লাশগুলো এখনও ঝোপের মধ্যে পড়ে আছে এবং কুকুর লাশগুলো খেয়ে ফেলেছে।’

পশ্চিম গোলার্ধের সবচেয়ে দরিদ্র দেশ হাইতি। দেশটির একটি অংশ ও রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্সের বেশিরভাগ এলাকা সশস্ত্র গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণে থাকায় সহিংসতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২০২৪ সালের শুরুর দিকে গ্যাংগুলোর একটি জোট লাগাতার হামলা শুরু করলে পরিস্থিতির চরম অবনতি হয়। যার ফলে প্রধানমন্ত্রী এরিয়েল হেনরি পদত্যাগ করেন এবং প্রেসিডেন্টের অন্তর্বর্তীকালীন পরিষদের কাছে ক্ষমতা হস্তান্তর করেন।

হাইতির পুলিশকে সমর্থন করার জন্য কেনিয়ার নেতৃত্বাধীন বহুজাতিক বাহিনী মোতায়েন করার পরও সহিংসতা দমন করা সম্ভব হয়নি।

আরএনডিডিএইচ জানিয়েছে, ভিভ আনসানম গ্যাং জোট, যারা ২০২৪ সালের মার্চ মাস থেকে ক্যাবারেট শহরের নিয়ন্ত্রণে রয়েছে, তারা গত সপ্তাহে নিকটবর্তী ল্যাবোডেরি শহরে বেসামরিক জনগণের বিরুদ্ধে অত্যন্ত নিষ্ঠুর গণহত্যা চালিয়েছে। শহরটি রাজধানী পোর্ট-অ-প্রিন্স থেকে প্রায় ২৫ কিলোমিটার উত্তরে অবস্থিত।

সংস্থাটি আরো জানায়, ‘তারা ৫০ জনেরও বেশি মানুষকে হত্যা করেছে এবং বেশ কয়েকটি বাড়িতে আগুন ধরিয়ে দিয়েছে।’

প্রতিবেদনে আরো বলা হয়, ‘বেঁচে থাকা কয়েকজন পার্শ্ববর্তী এলাকায় পালিয়ে যেতে সক্ষম হন। অন্যান্যরা আক্রমণকারীদের হাত থেকে বাঁচতে নৌকায় করে সমুদ্রে পালিয়ে যায়।’ 

জাতিসংঘের মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস গত মাসে সতর্ক করে বলেছেন, হাইতিতে ‘রাষ্ট্রীয় কর্তৃত্ব ভেঙে পড়ছে।’

তিনি নিরাপত্তা পরিষদকে সতর্ক করে বলেন, হাইতির রাজধানীর বাইরেও সহিংসতা ছড়িয়ে পড়ছে। সেখানকার ৯০ শতাংশ অঞ্চলের ওপর গ্যাংগুলোর নিয়ন্ত্রণ রয়েছে।

রবিবার, তিনি ক্যাবারে কমিউনে হামলার নিন্দা জানিয়েছেন এবং দেশগুলোকে প্রয়োজনীয় ‘সরবরাহ, কর্মী ও তহবিল দিয়ে বহুজাতিক নিরাপত্তা সহায়তা মিশনকে শক্তিশালী করার প্রচেষ্টা ত্বরান্বিত করার’ আহ্বান জানিয়েছেন।

জাতিসংঘের মানবাধিকার বিষয়ক হাইকমিশনারের তথ্যানুসারে, চলতি বছরের প্রথমার্ধে হাইতিতে কমপক্ষে ৩ হাজার ১৪১ জন নিহত হয়েছে।

ঢাকা/ফিরোজ

সম্পর্কিত নিবন্ধ

  • গাজায় ইসরায়েলি অভিযানের ‘কঠোরতম ভাষায়’ নিন্দা জানিয়েছে সৌদি আরব
  • যারা জাতীয় পার্টিসহ ১৪ দলকে নিষিদ্ধ চায়, তারা আদালতে অভিযোগ দিতে পারে: সালাহউদ্দিন আহমদ
  • গাজায় ইসরায়েলের গণহত্যার প্রমাণ পেয়েছে জাতিসংঘের তদন্ত কমিশন
  • হাইতিতে গ্যাং হামলায় ৫০ জনের বেশি নিহত
  • ‘গাজায় গণহত্যা চলছে, আমি সেই গণহত্যার নিন্দা করছি’