গাজায় গণহত্যা বন্ধ ও স্বাধীন ফিলিস্তিনের দাবিতে বাসদের বিক্ষোভ
Published: 11th, April 2025 GMT
ফিলিস্তিনের গাজায় অব্যাহত গণহত্যা বন্ধ এবং ফিলিস্তিনিদের আবাসভূমি ফিলিস্তিনিদের ফিরিয়ে দেওয়ার দাবিতে সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল করেছে বাংলাদেশের সমাজতান্ত্রিক দল (বাসদ)। আজ শুক্রবার বিকেলে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে এই সমাবেশ ও বিক্ষোভ মিছিল হয় বলে দলটির এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে। সমাবেশ শেষে বিক্ষোভ মিছিলটি জাতীয় প্রেসক্লাব, তোপখানা রোড, পল্টন, নূর হোসেন চত্বর, জিপিও, বায়তুল মোকাররম, বিজয়নগর ঘুরে সেগুনবাগিচায় বাসদের কার্যালয়ের সামনে এসে শেষ হয়।
সমাবেশে বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সাধারণ সম্পাদক বজলুর রশীদ ফিরোজ বলেন, আমেরিকান সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ইউরোপীয় সাম্রাজ্যবাদী গোষ্ঠী মধ্যপ্রাচ্যে আধিপত্য বিস্তার এবং তেল সম্পদের ওপর দখলদারি প্রতিষ্ঠার লক্ষ্যে ১৯৪৮ সালে ‘ইসরায়েল’ নামক একটি কৃত্রিম জায়নবাদী সামরিক রাষ্ট্রের সৃষ্টি করে। ৭ হাজার কিলোমিটার দিয়ে শুরু হলেও ক্রমাগত ফিলিস্তিনের জায়গা দখল করে চলেছে ইসরায়েল সরকার। ইতিমধ্যে গাজার অর্ধেক ভূমি দখল করে নিয়েছে ইসরায়েল। যুক্তরাষ্ট্রসহ সাম্রাজ্যবাদী দুনিয়া অর্থ ও অস্ত্র দিয়ে ইসরায়েলকে দানবে পরিণত করেছে।
বজলুর রশীদ বলেন, এটি মুসলমান বনাম ইহুদিদের যুদ্ধ নয়, এটি মার্কিন সাম্রাজ্যবাদের নেতৃত্বে ও ইসরায়েলি জায়নবাদের বিরুদ্ধে ফিলিস্তিনি জনগণের স্বাধীনতার লড়াই। গণহত্যাকারী নেতানিয়াহু ও তাঁর দোসরদের বিরুদ্ধে খোদ ইসরায়েলেও ব্যাপক বিক্ষোভ চলছে। ইসরায়েলের কমিউনিস্ট পার্টিসহ বিভিন্ন গণতান্ত্রিক শক্তি ও ব্যক্তি ফিলিস্তিনে গণহত্যার প্রতিবাদ করছেন। বর্তমান বিশ্বে একজন অগ্রগণ্য পদার্থবিদ যিনি ইহুদি তিনিও গাজায় ইসরায়েলি গণহত্যার প্রতিবাদ করেছেন। ইসরায়েলের পার্লামেন্টে কমিউনিস্ট পার্টির সদস্য দাঁড়িয়ে নেতানিয়াহুকে ‘সিরিয়াল কিলার’ উল্লেখ করে গাজায় গণহত্যা বন্ধের দাবি জানিয়েছেন।
বাসদের এই নেতা আরও বলেন, একদিকে ধর্ম-বর্ণ, জাতি, দেশনির্বিশেষে বাংলাদেশ, যুক্তরাষ্ট্রসহ বিশ্বব্যাপী গণহত্যার প্রতিবাদ হচ্ছে। অন্যদিকে মিসর, জর্ডান, বাহরাইন, সংযুক্ত আরব আমিরাতসহ কতিপয় মুসলিম দেশ জায়নবাদী ইসরায়েল রাষ্ট্রের সঙ্গে এখনো কূটনৈতিক সম্পর্ক রেখেছে, এটি অত্যন্ত লজ্জাজনক। বক্তব্যে তিনি ৭ এপ্রিল ফিলিস্তিনের সঙ্গে সংহতি জানানোর মিছিল থেকে দেশের বিভিন্ন স্থানে বাটাসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে হামলা, ভাঙচুর ও লুটপাটের ঘটনার তীব্র নিন্দা ও প্রতিবাদ জানিয়ে হামলা-লুটপাটের সঙ্গে জড়িতদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির দাবি জানান।
গাজায় ইসরায়েলি হামলা, গণহত্যার বিষয়ে বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের বিবৃতি প্রসঙ্গে বজলুর রশীদ বলেন, এটা খুবই সাদামাটা নিরীহ বক্তব্য হয়েছে। সরকারের বিবৃতিতে জায়নবাদী ইসরায়েলের মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রের কথা বিন্দুমাত্র উল্লেখ না করায় তীব্র নিন্দা ও ক্ষোভ প্রকাশ করেন তিনি।
সমাবেশে আরও বক্তব্য দেন বাসদের কেন্দ্রীয় কমিটির সদস্য জুলফিকার আলী, কেন্দ্রীয় বর্ধিত ফোরামের সদস্য খালেকুজ্জামান লিপন, আবু নাঈম খান বিপ্লব, মহিলা ফোরামের নেত্রী রুখসানা আফরোজ আশা, ছাত্রনেতা মুক্তা বাড়ৈ প্রমুখ।
বাসদ নেতারা বাংলাদেশ সরকারকে ইসরায়েলের সঙ্গে সব কূটনৈতিক সম্পর্ক বাতিল করা ও আন্তর্জাতিক সব ফোরামে ইসরায়েলের বিরুদ্ধে এবং মদদদাতা যুক্তরাষ্ট্রের বিরুদ্ধে সোচ্চার হওয়ার আহ্বান জানান। এ ছাড়া গাজায় অব্যাহত গণহত্যা বন্ধে যথাযথ ভূমিকা পালন করতে ব্যর্থ হওয়ায় জাতিসংঘের কঠোর সমালোচনা করেন।
.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
সুদানে কারা গণহত্যা চালাচ্ছে, আরব আমিরাতের ভূমিকা কী
২০২৩ সালের এপ্রিল মাসে সুদান এক ভয়াবহ গৃহযুদ্ধের মধ্যে পড়ে। ক্ষমতার নিয়ন্ত্রণ নিতে দেশটির সামরিক বাহিনী এবং শক্তিশালী আধা সামরিক গোষ্ঠী র্যাপিড সাপোর্ট ফোর্সেসের (আরএসএফ) মধ্যে শুরু হওয়া তীব্র লড়াই থেকে এই গৃহযুদ্ধ শুরু হয়। এই যুদ্ধে পশ্চিম দারফুর অঞ্চলে দুর্ভিক্ষ সৃষ্টি হয় এবং সেখানে গণহত্যা সংঘটিত হওয়ার অভিযোগও ওঠে।
সম্প্রতি আরএসএফ এল-ফাশের শহরটি দখল করার পর এর বাসিন্দাদের নিয়ে বড় ধরনের উদ্বেগ তৈরি হয়েছে। এই সংঘাতে এখন পর্যন্ত সারা দেশে দেড় লাখের বেশি মানুষ মারা গেছেন এবং প্রায় ১ কোটি ২০ লাখ মানুষ নিজেদের ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়েছেন। জাতিসংঘ এটিকে বিশ্বের বৃহত্তম মানবিক সংকট বলে অভিহিত করেছে।
পাল্টাপাল্টি অভ্যুত্থান ও সংঘাতের শুরু১৯৮৯ সালের সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে ক্ষমতায় আসা দীর্ঘদিনের প্রেসিডেন্ট ওমর আল-বশিরকে ২০১৯ সালে ক্ষমতাচ্যুত করার পর থেকেই দফায় দফায় যে উত্তেজনা চলছিল, তার সর্বশেষ পরিস্থিতি হচ্ছে বর্তমান গৃহযুদ্ধ।
বশিরের প্রায় তিন দশকের শাসনের অবসানের দাবিতে বিশাল জনবিক্ষোভ হয়েছিল। তারই প্রেক্ষিতে তাঁকে ক্ষমতা থেকে সরিয়ে দেয় সেনাবাহিনী। কিন্তু দেশটির মানুষ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠার জন্য আন্দোলন চালিয়ে যায়। যার পরিপ্রেক্ষিতে একটি যৌথ সামরিক-বেসামরিক সরকার গঠিত হয়। কিন্তু ২০২১ সালের অক্টোবর মাসে আরও একটি সামরিক অভ্যুত্থানের মাধ্যমে সরকারটিকে উৎখাত করা হয়। এই অভ্যুত্থানের কেন্দ্রে ছিলেন সশস্ত্র বাহিনীর প্রধান ও দেশটির কার্যত প্রেসিডেন্ট জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান এবং তাঁর ডেপুটি ও আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো।
এই দুই জেনারেল দেশের ভবিষ্যৎ নির্ধারণ ও বেসামরিক শাসনে ফিরে যাওয়া নিয়ে প্রস্তাবিত পদক্ষেপে একমত হতে পারেননি। তাঁদের মধ্যে মূল বিরোধের বিষয় ছিল প্রায় এক লাখ সদস্যের আরএসএফ-কে সেনাবাহিনীর সঙ্গে একীভূত করার পরিকল্পনা এবং নতুন এই যৌথ বাহিনীর নেতৃত্ব নিয়ে। ধারণা করা হয়, দুজন জেনারেলই তাঁদের ক্ষমতা, সম্পদ ও প্রভাব ধরে রাখতে চেয়েছিলেন।
আরএসএফ সদস্যদের দেশের বিভিন্ন স্থানে মোতায়েন করা হলে সেনাবাহিনী বিষয়টিকে নিজেদের জন্য হুমকি হিসেবে দেখে। এ নিয়ে ২০২৩ সালের ১৫ এপ্রিল দুই পক্ষের মধ্যে গোলাগুলি শুরু হয়। সেই লড়াই দ্রুত তীব্র আকার ধারণ করে এবং আরএসএফ খার্তুমের বেশির ভাগ অংশ দখল করে নেয়। যদিও প্রায় দুই বছর পর সেনাবাহিনী খার্তুমের নিয়ন্ত্রণ ফিরে পায়।
জেনারেল আবদেল ফাত্তাহ আল-বুরহান (বামে) এবং আরএসএফ নেতা জেনারেল মোহাম্মদ হামদান দাগালো (ডানে)