অজপাড়া গায়ের মেয়ে তাহমিনা। মেধাবী ও লক্ষী। গ্রাজুয়েশন করেছে। তবে যথা সময়ের বিয়ে না করায় গ্রামে তাকে সবাই আইবুড়ো মেয়েই বলে। বিয়ে না করায় তাহমিনার উপর জ্বীনের আছর আছে বলেও ছড়ানো হয়।  কিন্তু এসবের বাইরে তাহমিনার বড় একটা পরিচয় আছে। যে পরিচয় কেউ জানে না।  

অন্যদিকে জয়নাল উড়নচণ্ডী স্বভাবের ছেলে। সারাদিন বন্ধুদের সাথে ঘুড়ে বেড়ায়, বাবার টাকা ওড়ায়।  বাবা সরকারি চাকরিজীবী, ঘুষ ও দুর্নীতির টাকায় বাড়ি-গাড়ি করেছেন। জয়নাল গরমের ছুটি কাটাতে আসে মামা বাড়িতে অজপাড়া গায়ের ফিল নিতে। এখানে এসে  মামাতো ভাইদেরর সঙ্গে গভীর রাতে পিকনিক করার জন্য এর ওর বাড়িতে মুরগি চুরি করে।  তাহমিনাদের বাড়িতে চুড়ি করতে  এসেই দেখতে পায় তাহমিনাকে এবং প্রেমে পড়ে যায়তার। ঘটতে থাকে নানা নাটকীয় ঘটনা। 

এমন গল্পেই নির্মিত হয়েছে নাটক সামার ভ্যাকেশন। যাতে প্রধান দুই ভূমিকায় অভিনয় করেছেন নিলয় আলমগীর ও হিমি। নাটকটি ভার্সেটাইল মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেলে প্রকাশের পর  ২৪ ঘণ্টায় মিলিয়ন দর্শক দেখে ফেলেছেন।  কমেন্টের ঘরে কেউ বলছে, এক কথায় অসম্ভব সুন্দর একটি নাটক। মনে হলো তারাতারিই শেষ হয়ে গেল।  কেউ আবার বলছে, নিলয়-হিমি দারুণ। তাদের নাটক দেখতে অন্যরকম এক আনন্দ লাগে।  নিলয় হিমি সেরা জুটি।

সাথী নামের একজন লিখেছেন, নিলয় ভাই ও হিমী আপু সেরা জুটি। এ জুটির নাটক গুলো মানে হিট সামার ভ্যাকেশন নাটকটা এককথায় ফাটাফাটি এ নাটকের পুরো টিমের অভিনয় ভীষণ সুন্দর হয়েছে।

এমনিতেই টিভি কিংবা ইউটিউব নাটকে নিলয়-হিমি এখন ভরসার নাম। তাদের নাটক মানেই মিলিয়ন মিলিয়ন ভিউ। তাই উৎসব মানেই নিলয়-হিমি জুটির নাটক প্রচার হয় ডজন ডজন। সেই ধারাবাহিকতায় এবারের ঈদ আয়োজনে নিলয় হিমির নতুন সংযোজজন সামার ভ্যাকেশন। যে নাটকটি কিছুটা কমিডি ঘরানার। কিন্তু তাতে নেই ভাড়ামি। গল্পে অজপাড়া গায়ের সুন্দর একটি গল্প চিত্রায়িত হয়েছে। যাতে আছে নারী উন্নয়নের গল্প ও  সামাজিক মূল্যবোধের বার্তাও। 

নাটকটি পরিচালনা করেছেন  নির্মাতা মাহমুদ হাসান রানা বলেন, নিলয় আর হিমি নাটকের সফল জুটি। যে কোনো গল্পের কাজ করে তাদের উপর ভরসা করা যায়। সামার ভ্যাকেশন সুন্দর একটি গল্পের নাটক। যে গল্পে কমেডি আছে, গল্প আছে আছে সামাজিক বার্তাও।  প্রচারের পর তাই বেশ সাড়া পাচ্ছি। 

নিলয় হিমি ছাড়াও নাটকটিতে বিভিন্ন চরিত্রে অভিনয়  করেছেন সাবরিনা রনি,জুলফিকার চঞ্চল, ইমরান আজান, আশরাফুল ইসলাম বাবু, মোহিত তমালসহ অনেকেই। 

‘সামার ভ্যাকেশন’ নাটকটি ভার্সেটাইল মিডিয়ার ইউটিউব চ্যানেল ও ফেসবুক পেজে  দেখা যাচ্ছে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ন টক র ন টক কর ছ ন স ন দর ন টকট

এছাড়াও পড়ুন:

শ্রমিক অধিকার, আন্দোলন ও শ্রম সংস্কারের প্রস্তাবনার বাস্তবতা

মে দিবস শুধু একটি তারিখ নয়, এটি শ্রমজীবী মানুষের শতবর্ষব্যাপী সংগ্রাম, আত্মত্যাগ ও অধিকার প্রতিষ্ঠার প্রতীক। ১৮৮৬ সালে শিকাগো শহরে শ্রমঘণ্টা নির্ধারণের দাবিতে আন্দোলনরত শ্রমিকদের রক্তে রঞ্জিত হয়েছিল দিনটি। আজ পৃথিবীর প্রায় সব দেশেই দিনটি পালিত হয় শ্রমিকদের অধিকার ও মর্যাদার প্রতীক হিসেবে। বাংলাদেশেও মে দিবস পালিত হয় আনুষ্ঠানিকতা ও প্রতীকী উদ্‌যাপনের ভেতর দিয়ে। কিন্তু বাস্তবতা হলো, দেশের শ্রমিকশ্রেণির জীবনমান, অধিকার ও কর্মপরিবেশ এখনো কাঙ্ক্ষিত পর্যায়ে পৌঁছায়নি। এই প্রবন্ধে মে দিবসের তাৎপর্য, বাংলাদেশের শ্রমিকদের বর্তমান অবস্থান, শ্রমিক আন্দোলনের ধারা ও শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবের বাস্তবতা নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করা হবে।

বাংলাদেশের শ্রমিকশ্রেণি: পরিসংখ্যান ও বাস্তবতা

বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বৃহৎ অবদান রাখা সত্ত্বেও শ্রমিকেরা চূড়ান্ত পর্যায়ের অবহেলা ও বঞ্চনার শিকার। দেশের প্রায় ছয় কোটি শ্রমজীবী মানুষের মধ্যে একটি বড় অংশ পোশাক কারখানা, নির্মাণ, পরিবহন, কৃষি ও সেবা খাতে যুক্ত। অনেকেই অনানুষ্ঠানিক খাতে কাজ করেন, যেখানে নেই কোনো সুনির্দিষ্ট চাকরির নিরাপত্তা, নেই শ্রমিককল্যাণ সুবিধা এবং নেই সংগঠনের অধিকার।

বিশেষ করে তৈরি পোশাক খাত, যেখানে প্রায় ৪০ লাখ শ্রমিক কাজ করেন, দেশের রপ্তানি আয়ের প্রায় ৮০ শতাংশ আসে এখান থেকে। কিন্তু এ খাতের শ্রমিকদের অধিকাংশই পান না যথোপযুক্ত মজুরি। নিরাপদ কর্মপরিবেশের অভাবে প্রায়ই দুর্ঘটনা ঘটে, যেমন রানা প্লাজা ধস কিংবা তাজরীন ফ্যাশনসের আগুন।

শ্রমিকসংগঠন ও আন্দোলনের ধারা

বাংলাদেশে শ্রমিক আন্দোলনের একটি ঐতিহাসিক ঐতিহ্য রয়েছে। পাকিস্তান আমলে শ্রমিকেরা বিভিন্ন আন্দোলনের মাধ্যমে শ্রমঘণ্টা নির্ধারণ, মজুরি বৃদ্ধির দাবি আদায় করেছিলেন। স্বাধীনতা–পরবর্তীকালে শ্রমিক ইউনিয়নগুলোর ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হলেও পরবর্তী সময়ে রাজনৈতিক দলগুলোর প্রভাব, সুবিধাবাদী নেতৃত্ব ও বিভক্তি শ্রমিক সংগঠনগুলোকে দুর্বল করে দেয়।

বর্তমানে শ্রমিক আন্দোলনের ক্ষেত্রে দুটি চিত্র স্পষ্ট—একদিকে কিছু আন্তরিক ও ত্যাগী শ্রমিকনেতা শ্রমিকদের অধিকার আদায়ে লড়ছেন; অন্যদিকে কিছু নেতার ব্যক্তিস্বার্থ ও রাজনৈতিক যোগসূত্র আন্দোলনকে প্রশ্নবিদ্ধ করে তুলেছে। এ কারণে শ্রমিকদের প্রকৃত স্বার্থ উপেক্ষিত থেকে যাচ্ছে এবং অনেক ক্ষেত্রেই শ্রমিকেরা আস্থা হারাচ্ছেন সংগঠনের প্রতি।

সরকার ও শ্রমিকনীতি

বাংলাদেশ সরকার শ্রমনীতি প্রণয়নের মধ্য দিয়ে শ্রমিকদের অধিকার রক্ষা ও কর্মপরিবেশ উন্নয়নের অঙ্গীকার করলেও বাস্তবে তা অনেক সময়েই কার্যকর হয় না। আইএলও কনভেনশন অনুযায়ী, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার, মজুরি নিয়ে দর-কষাকষি করার অধিকার থাকলেও বহু ক্ষেত্রে এই অধিকার চর্চা করতে গিয়ে শ্রমিকেরা হয়রানির শিকার হন।

অনেক মালিক প্রতিষ্ঠানে ট্রেড ইউনিয়ন গঠনকে ভয় পান। অনেক ক্ষেত্রে শ্রমিকদের সংগঠনের চেষ্টা দমন করতে তাঁদের ছাঁটাই করা হয়, ভয়ভীতি দেখানো হয়; এমনকি কোনো কোনো ক্ষেত্রে হয়রানি, হামলা বা মামলা দেওয়া হয়। আর তাই শ্রমিকেরা সংগঠিত হওয়ার আগে দশবার ভাবেন।

শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাব: আশার আলো নাকি প্রতীকী পদক্ষেপ?

সম্প্রতি গঠিত শ্রম সংস্কার কমিশন বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ প্রস্তাবনা দিয়েছে, যা বাস্তবায়িত হলে শ্রমিকদের জীবনমানে ইতিবাচক পরিবর্তন আসতে পারে। কমিশনের প্রস্তাবনার মধ্যে রয়েছে–

১. তিন বছর পরপর জাতীয় মজুরি নির্ধারণ করা, ২. বার্ষিক মূল্যস্ফীতির ভিত্তিতে মজুরি সমন্বয়, ৩. সময়মতো বেতন না দিলে ক্ষতিপূরণ, ৪. শ্রমিকদের জন্য আপৎকালীন তহবিল গঠন, ৫. ট্রেড ইউনিয়ন গঠনের শর্ত শিথিল, ৬. আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে কর্মী নিয়োগ বন্ধ, ৭. মাতৃত্বকালীন ছুটি ছয় মাসে উন্নীত করা, ৮. শ্রম আদালতকে আধুনিকায়ন ও সংস্কার ও ৯. শ্রম আইন সংশোধনের মাধ্যমে ট্রাইব্যুনালের ক্ষমতা বাড়ানো।

এই প্রস্তাবগুলো অনেকাংশেই সময়োপযোগী ও শ্রমিকবান্ধব। কিন্তু প্রশ্ন হলো, এ প্রস্তাব বাস্তবায়নে সরকার কতটা আন্তরিক? অতীত অভিজ্ঞতা বলে, নীতিগত সিদ্ধান্ত অনেক সময়ই মাঠপর্যায়ে এসে বাস্তবায়িত হয় না। আইন থাকলেও তার প্রয়োগ দুর্বল থাকে। আবার মালিকদের সংগঠন যেকোনো সংস্কারমূলক পদক্ষেপকে ব্যাহত করতে সক্রিয় থাকে।

শ্রম সংস্কারের চ্যালেঞ্জ

প্রথমত, শ্রমিকদের সংগঠিত হওয়ার অধিকার নিশ্চিত না হলে কোনো সংস্কারই বাস্তব ফল দেবে না। দ্বিতীয়ত, শ্রম আদালতের ধীরগতি, মামলার জট ও রায় কার্যকর না হওয়া শ্রমিকদের ন্যায়বিচার থেকে বঞ্চিত করে। তৃতীয়ত, শ্রম আইন প্রয়োগে যাঁরা দায়িত্বে আছেন, যেমন শ্রম পরিদর্শক বা প্রশাসনিক কর্তৃপক্ষ— তাঁদের প্রশিক্ষণ, জনবল ও নিরপেক্ষতা অনেক সময়েই প্রশ্নবিদ্ধ।

এ ছাড়া নারী কর্মীদের জন্য নিরাপদ কর্মপরিবেশ, মাতৃত্বকালীন ছুটি, যৌন হয়রানিবিরোধী কার্যকর ব্যবস্থা এখনো অনেক প্রতিষ্ঠানে অনুপস্থিত। ট্রেড ইউনিয়নের নেতৃত্বেও নারীর অংশগ্রহণ খুবই সীমিত, যা একটি দুঃখজনক বাস্তবতা।

আশাবাদ ও করণীয়

তবু শ্রম সংস্কার কমিশনের প্রস্তাবগুলো যদি আন্তরিকতার সঙ্গে বাস্তবায়ন করা যায়, তাহলে শ্রমিকদের সামাজিক নিরাপত্তা নিশ্চিত হতে পারে। এ জন্য দরকার রাজনৈতিক সদিচ্ছা, প্রশাসনিক দক্ষতা এবং মালিক-শ্রমিক অংশীদারত্বের ভিত্তিতে একটি স্বচ্ছ ও কার্যকর কাঠামো গঠন।

সরকারকে অবশ্যই নিশ্চিত করতে হবে, যেন কোনো শ্রমিককে সংগঠন গঠনের জন্য হেনস্তার শিকার না হতে হয়। ট্রেড ইউনিয়নগুলোকে প্রয়োজন আত্মসমালোচনা ও গণতান্ত্রিক সংস্কার। নেতৃত্বে প্রগতিশীল, শ্রমিকবান্ধব ও দূরদর্শী ব্যক্তিদের আনতে হবে। শ্রমিকদের সচেতনতা বাড়াতে প্রশিক্ষণ ও অধিকারবিষয়ক প্রচার চালাতে হবে।

সর্বোপরি, মালিক শ্রেণিকে বোঝাতে হবে যে শ্রমিকদের কল্যাণ শুধু নৈতিক দায়িত্ব নয়, অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার পূর্বশর্তও বটে। একটি কর্মিবান্ধব পরিবেশ কর্মক্ষমতা ও উৎপাদনশীলতা বাড়ায়, যা শেষ পর্যন্ত মালিকেরও লাভ।

উপসংহার

মে দিবসের চেতনা আমাদের শিক্ষা দেয় যে শ্রমিকের অধিকার কোনো দয়া নয়, এটি তাঁর প্রাপ্য। এই চেতনাকে ধারণ করে আমাদের এগিয়ে যেতে হবে। কেবল মে দিবসে ব্যানার, শোভাযাত্রা বা আনুষ্ঠানিকতা নয়, শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি, নিরাপদ কর্মপরিবেশ, সংগঠনের অধিকার ও সামাজিক মর্যাদা নিশ্চিত করাই হোক আমাদের মূল অঙ্গীকার।

শ্রম সংস্কার কমিশনের সুপারিশ বাস্তবায়নের মাধ্যমে আমরা যদি শ্রমিকদের উন্নত জীবনের ভিত্তি তৈরি করতে পারি, তবেই মে দিবস হবে অর্থবহ; আর বাংলাদেশ একটি মানবিক, ন্যায্য ও অন্তর্ভুক্তিমূলক রাষ্ট্রে পরিণত হবে।

সাহিদা পারভীন শিখা সাধারণ সম্পাদক জাতীয় নারী শ্রমিক ট্রেড ইউনিয়ন কেন্দ্র

সম্পর্কিত নিবন্ধ