হোয়াটসঅ্যাপের ছবি প্রতারণা কী, যেভাবে কাজ করে
Published: 12th, April 2025 GMT
প্রযুক্তির উন্নতির সঙ্গে সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে সাইবার প্রতারণার কৌশল। প্রতিনিয়ত বদলে যাচ্ছে প্রতারকদের ধরন-ধারণ। হালনাগাদ এক পদ্ধতিতে এখন হোয়াটসঅ্যাপের মতো মেসেজিং অ্যাপে পাঠানো সাধারণ একটি ছবি হয়ে উঠতে পারে বড় ধরনের আর্থিক ক্ষতির কারণ। সম্প্রতি ভারতের মধ্যপ্রদেশে এমনই এক প্রতারণার অভিযোগ উঠেছে। যেখানে হোয়াটসঅ্যাপে অচেনা নম্বর থেকে একটি ছবি নামানোর পর এক ব্যক্তি তাঁর ব্যাংক অ্যাকাউন্ট থেকে প্রায় দুই লাখ টাকা হারিয়েছেন।
সাইবার নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের মতে, এ প্রতারণায় স্টেগানোগ্রাফি নামের একটি প্রযুক্তি ব্যবহার করা হচ্ছে। যার মাধ্যমে সাধারণ ছবি ফাইলের ভেতরে লুকিয়ে রাখা হয় ক্ষতিকর সফটওয়্যার বা ম্যালওয়্যার। ব্যবহারকারী ছবিটি খোলার সঙ্গে সঙ্গে সেই ম্যালওয়্যার নীরবে যন্ত্রে ইনস্টল হয়ে যায় এবং কাজ শুরু করে। এ ম্যালওয়্যার ব্যবহারকারীর ব্যাংক অ্যাকাউন্টের ইউজারনেম, পাসওয়ার্ড ও ওটিপির মতো সংবেদনশীল তথ্য চুরি করে নিতে সক্ষম। অনেক ক্ষেত্রে এটি যন্ত্রে দূরবর্তী প্রবেশাধিকারও চালু করে দেয়। ফলে প্রতারকেরা সরাসরি ভুক্তভোগীর ফোন বা ট্যাবলেটে ঢুকে পড়তে পারে। আবার কখনো কখনো প্রতারকেরা ব্যবহারকারীকে প্ররোচিত করতে ফোনকল বা মেসেজ পাঠিয়ে থাকে। সেখানে ছবিটি খুলে দেখতে বলেই মূলত ফাঁদে ফেলা হয়।
এ ধরনের প্রতারণা থেকে সুরক্ষিত থাকতে হলে প্রথমেই সতর্ক থাকতে হবে অচেনা নম্বর থেকে পাঠানো ছবি বা ফাইলের ব্যাপারে। পরিচয় নিশ্চিত না হয়ে কোনো ফাইল ডাউনলোড করার ঝুঁকি নেওয়া উচিত নয়। হোয়াটসঅ্যাপের ‘অটো ডাউনলোড’ অপশন বন্ধ রাখা জরুরি। ফলে অজান্তে কোনো ক্ষতিকর ফাইল ডিভাইসে সংরক্ষিত হবে না। এ ছাড়া ফোন ও অ্যাপ্লিকেশন নিয়মিত হালনাগাদ রাখা উচিত। কারণ, এসব আপডেটে সাধারণত সর্বশেষ নিরাপত্তা প্যাঁচ থাকে।
বিশ্বস্ত অ্যান্টিভাইরাস সফটওয়্যার ব্যবহার করাও গুরুত্বপূর্ণ। এটি ডিভাইস স্ক্যান করে ম্যালওয়্যার শনাক্ত করতে ও তা প্রতিরোধে সহায়তা করে। একই সঙ্গে যেকোনো সন্দেহজনক ফোনকল বা বার্তার ব্যাপারে সচেতন থাকা জরুরি। অপরিচিত কেউ যদি পরিচিত ব্যক্তির ছবি বা পরিচয় যাচাই করার কথা বলে কোনো ছবি খোলার অনুরোধ জানায়, সেটি প্রতারণার অংশ হতে পারে।
সূত্র: টাইমস অব ইন্ডিয়া
.উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: টসঅ য প ম য লওয ব যবহ র
এছাড়াও পড়ুন:
বৃষ্টিস্নাত রমনায় সবুজের উল্লাস
রমনা উদ্যানের গাছগুলো বৃষ্টিতে ভিজছে, ভিজছে মাটি ও মাটির ওপরের ঘাসগুলো। বর্ষায় রমনার রূপ হয় দেখার মতো। চারদিকে কেবল সবুজ আর সবুজ। বসন্তের মতো ফুল নেই তো কী হয়েছে? আছে শ্যামল রূপ, আছে অপার স্নিগ্ধতা। বুকভরে ধুলাহীন নিশ্বাস নেওয়ার অবকাশ, প্রকৃতির উদার আমন্ত্রণ।
‘পাগলা হাওয়ার বাদল-দিনে’ ঢাকার রমনা পার্কের গাছের পাতাগুলো এখন আরও সবুজ। টলটলে জলের নয়নাভিরাম ঝিলটা টইটম্বুর। ধুলাময়লাহীন পায়ে চলার পথ। আর গাছের পাতার ফাঁকে রয়েছে অজস্র ফুল। কোনোটা লাল, কোনোটা বেগুনি আবার কোনোটা সাদা। বৃষ্টির মধুর আশকারা পেয়ে রমনা পার্কে এখন সবুজের উল্লাস।
এই পার্কটিকে ঢাকার ফুসফুস বলা হয়। এর যথেষ্ট কারণ আছে অবশ্য। এ রকম প্রগাঢ় নিরেট সবুজ এ শহরে কমই আছে। রমনা তাই ঢাকার জনজীবনের স্পন্দন। এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।
সম্প্রতি ‘বৃষ্টি নেশাভরা’ এক বিকেলে অরুণোদয় ফটক দিয়ে রমনা পার্কে প্রবেশ করলাম। অনেকে শরীরচর্চায় ব্যস্ত। কেউ দল বেঁধে করছেন, কেউ একাকী। কোনো দল ব্যায়াম করে ভোরে, কেউ আবার বিকেলে বা সন্ধ্যায়। আবার অনেকে আছেন দুই বেলাই হাঁটাহাঁটি করেন। হাঁটা সেরে কেউ কেউ লেকের পাশে এসে দুদণ্ড জিরিয়ে নেন। লেকে চলছিল বোট।
বর্ষার ফুলের উৎসব
বর্ষা এলেই রমনা পার্ক যেন রঙের নতুন ভাষা শেখে। আমাদের ঋতুচক্র অনুযায়ী, বসন্ত ও গ্রীষ্মকালেই এ দেশে ফোটে অধিকাংশ ফুল। তবে বর্ষারও নিজস্ব কিছু ফুল আছে, আর গ্রীষ্মের কিছু ফুল টিকে থাকে বর্ষা পর্যন্ত। সেদিন রমনায় গিয়ে এমনই কিছু ফুল চোখে পড়ল—বৃষ্টিভেজা পাতার ফাঁকে তাদের রং যেন আরও উজ্জ্বল হয়ে উঠেছিল। মনে হলো, প্রকৃতির এই নিঃশব্দ উৎসবেও কত কথা লুকিয়ে থাকে!
রমনার গোলাপবিথি সেদিন দর্শনার্থীদের সবচেয়ে বেশি মনোযোগ কাড়ছিল। সারি সারি ঝোপে ফুটে আছে হরেক রঙের গোলাপ—লাল, সাদা, হলুদ, কমলা, গাঢ় গোলাপি। বর্ষার ভেজায় যেন আরও সতেজ, আরও তাজা হয়ে উঠেছে প্রতিটি পাপড়ি। নরম আলো আর বৃষ্টিজলে ভেজা ফুলগুলোর সৌন্দর্য মোহিত করেছে পথচলার মানুষকে। কেউ থেমে দাঁড়িয়ে ছবি তুলছেন, কেউ ভিডিও করছেন—মুঠোফোনে বন্দী হচ্ছে বর্ষার রঙিন রমনা।
এটি কেবল একটি পার্ক নয়, বরং নাগরিক জীবনের পরম আনন্দ-আশ্রয়।