ফুলে ফুলে বাড়ি ভরা। উঠান থেকে বাড়ির বারান্দা—সবখানেই স্তূপ করা গোলাপ, সূর্যমুখী, জবা, গাঁদাসহ বর্ণিল সব ফুল। সাদা, টকটকে লাল, হলুদ, কমলা, বেগুনি—সব রঙের উপস্থিতি আছে। শুকিয়ে কিংবা পচে নষ্ট হয় না, রং ফিকে হওয়ার ভয়ও নেই। কারণ, এগুলো কাগজ ও প্লাস্টিকের তৈরি ফুল।

নওগাঁর আত্রাই উপজেলার জামগ্রামের চিত্র এটি। ৪০ বছরের বেশি সময় ধরে ওই গ্রামের নারী ও পুরুষেরা ফুল তৈরি করেন। সারা বছর ওই গ্রামের ফুল কারিগরদের হাতে কাগজ ও প্লাস্টিকের নানা ধরনের ফুল তৈরি হয়।

আজ বাদে কাল পয়লা বৈশাখ। বাংলা নববর্ষের উৎসবের রং ছড়িয়ে পড়বে সবখানে। ঐতিহ্যের এই বৈশাখী মেলায় প্রাণের ছোঁয়া আনবে জামগ্রামের কারিগরদের তৈরি ফুল।

জামগ্রামে বছরজুড়ে কাগজ ও প্লাস্টিকের ফুল তৈরির কাজ হলেও বৈশাখের আগে তা বেড়ে যায় কয়েক গুণ। এ ছাড়া ফাল্গুন, চৈত্র ও জ্যৈষ্ঠ মাসেও তাঁদের ব্যস্ততা থাকে। কারণ, এ সময় আশপাশের বিভিন্ন অঞ্চলে গ্রামীণ মেলা বসে। এসব মেলায় বিক্রির জন্য ফেরিওয়ালা ও ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা জামগ্রামের কারিগরদের কাছ থেকে ফুল কিনে নিয়ে যান।

সম্প্রতি জামগ্রামে গিয়ে দেখা যায়, বৈশাখ উপলক্ষে কাজের গতি বেড়েছে। গ্রামের অধিকাংশ বাড়িতেই চলছে ফুল তৈরির কাজ। গ্রামের অনেক নারী-পুরুষ কাগজ ও প্লাস্টিক দিয়ে কৃত্রিম ফুল তৈরি করে জীবিকার ব্যবস্থা করেছেন। বাড়ির উঠান থেকে বারান্দা, সবখানেই স্তূপ করা রং-বেরঙের ফুল। আবার কাগজ ও প্লাস্টিক বিভিন্ন রকমের ফুলের আকৃতি দিয়ে কেটে সেগুলোতে রং করে শুকাতে দেওয়া হয়েছে বাড়িসংলগ্ন খোলা জায়গায়।

গ্রামে যাঁরা ফুল তৈরি করেন, তাঁদের কয়েকজনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, জামসেদ আলী নামের এক ব্যক্তি প্রায় ৪০ থেকে ৪৫ বছর আগে কাগজের ফুল তৈরির কাজ শুরু করেন। তাঁর দেখাদেখি পুরো গ্রামের মানুষ এ পেশায় জড়িয়ে পড়েন। জামগ্রামে প্রায় আড়াই হাজার লোকের বসবাস। গ্রামের জনসংখ্যার অর্ধেকই ফুল তৈরি করে জীবিকা নির্বাহ করে থাকেন। দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে আসা ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী ও ফেরিওয়ালারা প্রকারভেদে প্রতি হাজার ফুল ৪ থেকে ১০ হাজার টাকা পাইকারি দামে কিনে নিয়ে যান। এসব ফুল মেলায় গিয়ে আবার ১০ থেকে ৪০ টাকা করে বিক্রি হয়।

জামসেদ আলী আর নেই। তবে তাঁর নাতি সুরুজ আলী দাদা ও বাবার পেশা আঁকড়ে আছেন। তিনি বলেন, তাঁর দাদা এ গ্রামে প্রথম কাগজের ফুল তৈরির কাজ শুরু করেন। এরপর তাঁর মা ও বাবা ফুল তৈরির কাজ করেছেন। ছোটবেলা থেকে মা–বাবাকে কাগজ কেটে নকশা তৈরি ও সেগুলোতে রং করে ফুল তৈরি করা দেখতে দেখতে তিনিও ফুল বানানো শিখেছেন। এখন তো গ্রামের প্রায় সব পরিবারেই কমবেশি ফুল তৈরির কাজ হয়। বর্তমানে ফুল তৈরি না করলেও গ্রামের দরিদ্র মানুষ দিয়ে পারিশ্রমিকের বিনিময়ে ফুল তৈরি করিয়ে নেন তিনি। তাঁর অধীন প্রায় ৩০ জন লোক কাজ করেন। সারা বছরই ফুল তৈরি করেন; তবে চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে চাহিদা বেশি থাকায় এ সময়টাতে ফুল তৈরি করা হয় বেশি।

ফুল তৈরির কারিগরদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, পরিবারের প্রায় সবাই ফুল তৈরির কাজ করে থাকেন। তবে পরিবারের নারী সদস্যরা নকশা অনুযায়ী কাগজ ও প্লাস্টিক কাটা এবং সেগুলোতে রং করার কাজ থাকেন। পুরুষ সদস্যরা ফুল তৈরির উপকরণ কাগজ ও প্লাস্টিক সংগ্রহের কাজ বেশি করে থাকেন। ফুল তৈরির পর অনেক পরিবারের পুরুষেরা নিজেরাই ফেরি করে বিক্রির জন্য বাড়ি থেকে বের হয়ে যান।

৫৫ বছর বয়সী ফুল ব্যবসায়ী আমিনুল ইসলাম বলেন, প্রায় ২০ বছর ধরে তিনি এই ফুল বিক্রির সঙ্গে যুক্ত। কারিগরদের তৈরি করা কাগজ ও প্লাস্টিকের ফুল পাইকারিতে কিনে নিয়ে চৈত্র, বৈশাখ ও জ্যৈষ্ঠ মাসে হওয়া মেলাগুলোতে বিক্রি করেন। নওগাঁ ছাড়াও নাটোর, রাজশাহী, জয়পুরহাট, বগুড়াসহ দেশের বিভিন্ন স্থানে হওয়া মেলায় ফুল বিক্রি করেন তিনি। মেলার মৌসুমে একেকজন ব্যবসায়ী ৩০ থেকে ৪০ হাজার টাকা পর্যন্ত আয় করে থাকেন।

নওগাঁর জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ আবদুল আউয়াল বলেন, এই ফুল কারিগরেরা শুধু উপার্জনই করেন না, বাংলার সব সাংস্কৃতিক উৎসবকে বর্ণিল করতেও বিশেষভাবে ভূমিকা রাখছেন। এটা একটি ক্ষুদ্র কুটির শিল্প। এই শিল্পের সঙ্গে জড়িত কারিগরদের জন্য উন্নত মানের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা, স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানসহ নানা উদ্যোগ নেওয়া হবে।

.

উৎস: Prothomalo

কীওয়ার্ড: ক র গরদ র ব যবস য় র ব যবস পর ব র

এছাড়াও পড়ুন:

মাগুরায় শিশু ধর্ষণ-হত্যা মামলায় সাক্ষ্য ৩ চিকিৎসকের

মাগুরায় আট বছরের শিশু ধর্ষণ ও হত্যা মামলায় চতুর্থ দিনের মতো সাক্ষ্য গ্রহণ সম্পন্ন হয়েছে। গতকাল বুধবার জেলার নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের বিচারক এম জাহিদ হাসানের আদালতে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়।

এ দিন শিশুকে চিকিৎসা প্রদানকারী তিন চিকিৎসক সাক্ষ্য দেন। তারা হলেন– মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতালের ডা. সোহাস হালদার, নাকিবা সুলতানা এবং ফরিদপুর মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের  ডা. ইসরাত জাহান। তারা সবাই শিশুটিকে ধর্ষণ করা হয়েছিল মর্মে সাক্ষ্য প্রদান করেন।  

এর আগে সকালে কড়া নিরাপত্তার মধ্যে মামলার ৪ আসামিকে আদালতে হাজির করা হয়। বাদীপক্ষের আইনজীবী ও নারী ও শিশু নির্যাতন দমন ট্রাইব্যুনালের পিপি মনিরুল ইসলাম মুকুল জানান, বিগত চার কার্যদিবস একটানা সাক্ষ্য গ্রহণ চলেছে। এ নিয়ে মোট ১৯ জনের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়েছে। মামলায় মোট ৩৭ জনের সাক্ষ্য নেওয়া হবে। আগামী রোববার মামলার তদন্ত কর্মকর্তা বাদে অন্য সব সাক্ষী সাক্ষ্য দেবেন। বুধবার আসামিপক্ষের আইনজীবী স্বাধীনভাবে সাক্ষীদের সাক্ষ্য গ্রহণ করেছেন। তিনি আদালতে আসামিরা নির্দোষ বলে যুক্তি উপস্থাপন করেন। আসামিরাও নিজেদের নির্দোষ দাবি করেছেন। 

বেড়াতে এসে ৬ মার্চ রাতে মাগুরা সদরের নিজনান্দুয়ালী গ্রামে বোনের শ্বশুর হিটু শেখের দ্বারা ধর্ষণের শিকার হয় ৮ বছরের শিশুটি। এই ধর্ষণের ঘটনা দেশজুড়ে ক্ষোভের সৃষ্টি করে। মাগুরা ২৫০ শয্যা হাসপাতাল, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ঘুরে ঢাকা সিএমএইচে তাকে ভর্তি করা হয়েছিল। ১৩ মার্চ শিশুটি সেখানে মারা যায়। এ ঘটনায় শিশুটির মা আয়েশা আক্তার বড় মেয়ের শ্বশুর হিটু শেখসহ চারজনকে আসামি করে মাগুরা সদর থানায় মামলা করেন। রিমান্ডে হিটু শেখ ধর্ষণের কথা স্বীকার করেছে।

সম্পর্কিত নিবন্ধ