গাইবান্ধায় জামায়াতের গণসংযোগে আ.লীগের হামলা, আহত ২
Published: 13th, April 2025 GMT
গাইবান্ধায় বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর গণসংযোগ কর্মসূচিতে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীদের হামলায় দুইজন আহত হয়েছে। শনিবার (১২ এপ্রিল) সন্ধ্যার দিকে সদর উপজেলার সাহাপাড়া ইউনিয়নের নান্দিনা গ্রামে হামলা করা হয়।
আহতরা হলেন, নান্দিনা গ্রামের ওয়ার্ড জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক শিপন মন্ডল এবং তার ছোট ভাই জামায়াতের কর্মী স্বপন মণ্ডল। তারা গাইবান্ধা সদর হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছে।
জামায়াতের কর্মীরা জানান, দলের কেন্দ্রীয় কর্মসূচির অংশ হিসেবে জামায়াত কর্মীরা দাওয়াতি গণসংযোগ করতে নান্দিনা গ্রামে যান। এ সময় আওয়ামী লীগের নেতাকর্মীরা বাধা দেন। পরে বাধা উপেক্ষা করে কার্যক্রম চালিয়ে গেলে নান্দিয়া গ্রামের ওয়ার্ড আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো.
আরো পড়ুন:
শ্রমিক দল নেতার হামলায় ৩ পুলিশ আহত, গ্রেপ্তার ২
গাজীপুরে বিভিন্ন ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে শ্রমিকদের ভাঙচুর
আহত জামায়াত কর্মী শিপন মণ্ডল বলেন, ‘‘স্থানীয় আওয়ামী লীগ ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক মো. আমিনুল ইসলামের নির্দেশে তার লোকজন অতর্কিত হামলা চালায়। আমার ভাই স্বপন মণ্ডলের কানে ৬টি সেলাই দেওয়া হয়েছে। তাছাড়া আমাকে মারপিট করে আহত করেছে।’’
এ ঘটনার সঙ্গে জড়িত আওয়ামী লীগের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি করেন তিনি।
এ ব্যাপারে জানতে অভিযুক্ত সাহাপাড়া ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের ওয়ার্ড সাধারণ সম্পাদক আমিনুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। বাড়িতে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, তিনি বাড়িতে নেই।
জামায়াতে ইসলামীর গাইবান্ধা জেলা শাখার সহকারী সেক্রেটারি রোকনুজ্জামাম রোকন বলেন, ‘‘আমরা নিয়মতান্ত্রিক ও গণতান্ত্রিক দল হিসেবে মানুষকে ইসলামের দাওয়াত দিয়ে থাকি। কাউকে জোর করি না। আর আওয়ামী লীগ একটি সন্ত্রাসী সংগঠন। তারা গুপ্ত হামলা ও হত্যার পাঁয়তারা করছে।’’
সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তার করে আইনানুগ ব্যবস্থা নেওয়ার জোর দাবি জানান তিনি।
এদিকে, এ ঘটনার প্রতিবাদে রবিবার (১৩ এপ্রিল) বিকালে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সাহাপাড়া ইউনিয়ন শাখার আয়োজনে নান্দিনা গ্রামে বিক্ষোভ ও প্রতিবাদ কর্মসূচি পালন করে। সেখানে বক্তারা হামলার সঙ্গে জড়িত সন্ত্রাসীদের দ্রুত গ্রেপ্তারের দাবি জানান।
গাইবান্ধা সদর থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) শাহিনুর ইসলাম তালুকদার জানান, এ ঘটনায় রাতে অভিযুক্তকে গ্রেপ্তারের জন্য অভিযান চালানো হয়েছে। মামলার বিষয়টি প্রক্রিয়াধীন রয়েছে।
ঢাকা/মাসুম/বকুল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ইসল ম র ত কর ম আওয় ম
এছাড়াও পড়ুন:
দহন থেকে জংলি
‘আমি নিয়মিত অনেক চিত্রনাট্য পাচ্ছি। নিয়মিত সেসব সিনেমা করলে প্রচুর টাকা কামাতে পারব। ফিন্যান্সিয়ালি জায়গাটা অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু দর্শক আমাকে যেভাবে দেখতে চাচ্ছেন, তেমন গল্প পাচ্ছি না। দর্শক-প্রত্যাশার চেয়ে ভালো কিছু দিতে চাই। যখন সামগ্রিক চিন্তা করি, তখন ভাবতে হয় আমি কতটা আয় করলাম তার চেয়েও দর্শকের সামনে কীভাবে আসছি, সেটি মুখ্য। এটি একটি প্যাকেজ। মাঝে একটি-দুটি গল্প পছন্দ হয়। সেসব টিমের যে অবস্থা, বাজেট সামগ্রিকভাবে দেখতে গেলে ভালো গল্প তুলে আনা কঠিন হবে। তখন আমি না করে দিই। আমি চাইছি নিজের মতো করে কাজ করতে। জীবনে অনেক সিনেমা করতে হবে, এমন চিন্তা নেই। আমার মতো করে অল্প কিছু কাজ করে যেতে চাই।’ বলছিলেন সিয়াম আহমেদ।
গেল ঈদে মুক্তি পেয়েছে সিয়াম আহমেদ অভিনীত সিনেমা ‘জংলি’। যে সিনেমার সঙ্গে জড়িয়ে আছে নায়কের আবেগ ও পরিশ্রমের দীর্ঘ গল্প। সিনেমাটি করতে একচুলও ছাড় দেননি সিয়াম। ফলাফল হিসেবে পেয়েছেন দর্শকের অবারিত ভালোবাসা। জংলি মুক্তির পর তাই গল্পটি হয়ে উঠেছে সবার। দর্শকরা হলে গিয়ে কেঁদেছেন, গল্পে বুঁদ হয়ে থেকেছেন। করেছেন সিয়াম ও তাঁর টিমের প্রশংসা।
সিয়াম বললেন, ‘এ সিনেমায় আমি দীর্ঘ সময় দিয়েছি। সিনেমার জন্য চুলদাড়ি বড় করেছি। একটি সিনেমার জন্য আমার পাগলামি নিয়ে মা-বাবার মনে হয়তো প্রশ্ন ছিল, ছেলেটি চুল-দাড়ি বড় করে কী করছে? কী করেছি, এটি তো তাদের বোঝানো যায় না। তবে আমার আত্মবিশ্বাস ছিল, সিনেমাটি মুক্তির পরে গল্পটি তাদের টাচ করবে। কারণ, গল্পটিই এমন, এটি প্রথম যদি কাউকে টাচ করে, সেটি সন্তানের মা-বাবাদের। যে কারণে তাদের একসঙ্গে হলে নিয়ে কাছ থেকে অনুভূতি জানার চেষ্টা করেছি। এখন পর্যন্ত মা-বাবার কাছ থেকে সেরা ফিডব্যাক পেয়েছি। বাবা-মেয়ের গল্পটি দেখে তারা ইমোশনাল হয়ে গিয়েছিলেন। শুধু আমার বাবা-মা নন, অন্য মা-বাবাদের কাছেও গল্পটি নিজেদের হয়ে উঠেছে। তারা সিনেমাটি দেখে কেঁদেছেন। হল রিঅ্যাকশনের সেসব ভিডিও সবাই দেখেছেন। সব মিলিয়ে আমরা সফল। আমাদের জংলি সফল।’
মুক্তির পর থেকে ‘জংলি’ সিনেমার এগিয়ে যাওয়ার গ্রাফ দেখলে শুধু দর্শকের ভালোবাসায় সফল নয়, ব্যবসায়িকভাবেও সিনেমাটি যে সফল তার চিত্র বিদ্যমান। মাত্র ৮টি শো দিয়ে শুরু হওয়া সিনেমাটি ঈদের এতদিন পরও মাল্টিপ্লেক্সে ত্রিশটির মতো শো নিয়ে দাপিয়ে চলছে। দেশ ছাড়িয়ে বিদেশের মাটিতেও জংলি হয়ে উঠেছে দর্শকদের সিনেমা।
প্রযোজনা প্রতিষ্ঠান টাইগার মিডিয়ার কর্ণধার জানিয়েছেন, জংলি প্রায় ছয় কোটির (গ্রস) ক্লাবে প্রবেশ করেছে।
ঈদে মুক্তির পর থেকে ক্রমশ দর্শকপ্রিয় হয়ে ওঠে ‘জংলি’। এমনকি, দেশের সিনেমাপ্রেমীদের মন জয় করে কানাডা, আমেরিকা ও ইউকে’র ৪০টি থিয়েটারে মুক্তি পেয়েছে ‘জংলি’। গত ২৫ এপ্রিল থেকে স্বপ্ন স্কেয়ারক্রো-এর পরিবেশনায়, ঈদের সিনেমাগুলোর মধ্যে দেশের বাইরে সবচেয়ে বেশি থিয়েটারে একযোগে মুক্তি পেয়েছে এ সিনেমাটি। কানাডা ও আমেরিকার বক্স অফিসে প্রথম ৩ দিনের গ্রস ৩৫,০০০ ডলার আয় করে শুভসূচনা করেছে ‘জংলি’।
ঈদে আরও অনেক ছবি মুক্তি পেয়েছে। সেগুলোর মধ্যে জংলি বিশেষ হয়ে উঠেছে কেবল বাবা-মেয়ের গল্পের কারণে। সঙ্গে সিয়ামের নজরকাড়া অভিনয়। নৈঋতার পাখি হয়ে ওঠার দারুণ চেষ্টা। দিমিত্রি থে স্টোনহার্ট নামে এক মনীষী বলেছেন, ‘একজন বাবা বলেন না যে তিনি তোমাকে ভালোবাসেন; বরং তিনি দেখিয়ে দেন যে, তিনি তোমাকে ভালোবাসেন’ জংলি সিনেমায় সিয়াম সেটি বোঝাতে পেরেছেন। ফলে সিনেমাটি হয়ে উঠেছে সবার।
প্রখ্যাত কথাসাহিত্যিক হুমায়ূন আহমেদ বলেছেন– ‘পৃথিবীতে আসার সময় প্রতিটি মানুষই একটি করে আলাদিনের প্রদীপ নিয়ে আসে, কিন্তু খুব কম মানুষই সেই প্রদীপ থেকে ঘুমন্ত দৈত্যকে জাগাতে পারে।’
সিয়াম তাঁর জীবনের সেই দৈত্যকে জাগাতে পেরেছেন। পেরেছেন বলেই হয়তো আজ তিনি সাধারণ সিয়াম থেকে নায়ক সিয়াম হয়ে উঠেছেন। সিয়ামের যাত্রাটা শুরু বেশ আগে হলেও পুরোপুরি শুরু হয় ‘দহন’ সিনেমার মাধ্যমে। রায়হান রাফী পরিচালিত এ সিনেমাটির মাধ্যমে সিয়াম নাটক থেকে পুরোপুরি চলচ্চিত্রের মানুষ হয়ে ওঠেন। সে যাত্রা এখনও চলছে। প্রথম সিনেমায় যে সিয়ামকে সবাই দেখেছেন, জংলির সেই সিয়াম যেন আকাশ-পাতাল। তখন সিয়াম ছিলেন তরুণ, এই সিয়াম এখন বাবা। পর্দায় ও বাস্তবে দুই জায়গাতে দারুণ এক বাবা হয়ে উঠেছেন তিনি। নিজের অভিনয় ক্যারিয়ার নিয়ে আগামী পরিকল্পনা কী? প্রশ্ন রাখলে নায়ক বলেন, ‘আমি নিজের সঙ্গে প্রতিযোগিতা করতে চাই। যারা আমার আগের কাজ দেখেছেন, তারা যেন বলেন, আগের কাজকে ছাড়িয়ে যেতে পেরেছি। আরেকজনকে ছাড়িয়ে যাওয়ার চেয়ে নিজেকে ছাড়িয়ে যাওয়া কঠিন।’