বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালের লেবার রুমে সাশন্তি ত্রিপুরাকে (২১) নেওয়া হয় সোমবার ভোর চারটার দিকে। বাইরে তখন নানা চিন্তা মাথায় নিয়ে ঘামছিলেন তাঁর স্বামী অসিত ত্রিপুরা। তখন তাঁর প্রার্থনা ছিল একটাই– নতুন শিশু ও তার মা যেন সুস্থ থাকেন। অবশেষে চার ঘণ্টার দীর্ঘ লড়াই শেষে সকাল ৭টা ৫৫ মিনিটে স্বাভাবিকভাবে পৃথিবীর আলোতে আসে ছেলেসন্তান। মঙ্গলবার পর্যন্ত এই শিশুটির নাম রাখা হয়নি।

দেড় বছরের বিবাহিত জীবনে প্রথমবারের মতো সন্তানের মুখ দেখতে পেরে ততক্ষণে অসিত-সাশন্তি দম্পতির খুশি বাঁধ ভেঙেছে। অসিত ত্রিপুরা বলেন, তারা দু’জন সিদ্ধান্ত নিয়েছিলেন– ছেলেই হোক আর মেয়েই হোক, তাকে আলোকিত মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবেন। যে-ই জন্ম নিক, তাকে বুকের ভেতর সমানভাবেই আগলে রাখবেন। তাই অনাগত সন্তানের লিঙ্গপরিচয় নির্ণয়ের জন্য আলট্রাসনোগ্রামও করাননি। অন্য সব চিকিৎসা ঠিকমতো করিয়েছেন।

অসিতের বাড়ি জেলা সদর হাসপাতালের আধা কিলোমিটার দূরে। বান্দরবান পৌরসভার ৩ নম্বর ওয়ার্ডের কালাঘাটা এলাকার ত্রিপুরাপল্লীর এই বাসিন্দা। তিনি একটি এনজিওকর্মী। আগে থেকেই অসিতের প্রেমের সম্পর্ক ছিল সাশন্তির। সেই সম্পর্ক পারিবারিকভাবে পরিণতি পায় বছর দেড়েক আগে। এনজিও কর্মী হওয়ায় মানুষের ব্যক্তিগত স্বাতন্ত্র্যবোধ নিয়ে সচেতন অসিত। সেই দর্শন ফুটে ওঠে তাঁর কথায়, ‘এখনো সন্তানকে কী বানাবো– সেই চিন্তা মাথায় আসেনি। তবে তাকে মানুষের মতো মানুষ করে বেড়ে ওঠার পরিবেশ দেওয়ার চেষ্টা করবো। সে বড় হয়ে কী হবে বা কী হতে চায়– সেই সিদ্ধান্ত তাকেই নিতে বলবো।’

হাসপাতালে যখন সাশন্তি তীব্র প্রসব ব্যথায় কাতড়াচ্ছিলেন, তখন পাশে ছিলেন বোন স্মরণিকা ত্রিপুরা। তিনি বলেন, চার ঘণ্টার মতো যন্ত্রণা পেয়েছেন তাঁর বোন। তখন শুধু সৃষ্টিকর্তাকে স্মরণের কথাই বলছিলেন। সময় গড়াচ্ছিল, আর দুর্বল হয়ে পড়ছিলেন সাশন্তি। তখন সাহস জুগিয়ে গেছেন স্মরণিকা। সকালে স্বাভাবিক প্রসবের পর শুরুতেই নবজাতক ছেলেকে মায়ের কোলে দেওয়া হয়। দ্বিতীয় মানুষ হিসেবে সেই ছেলেকে কোলে নেন খালা স্মরণিকা। সেটা জীবনের অন্যতম মধুর স্মৃতি হয়ে থাকবে বলেও জানালেন তিনি।

বান্দরবান জেলা সদর হাসপাতালের জ্যেষ্ঠ নার্স সুমিত্রা ত্রিপুরা বলেন, পহেলা বৈশাখের দিন সকাল ৯টার মধ্যে এই হাসপাতালে একজন মাত্র নবজাতক জন্ম নিয়েছে। তা-ও স্বাভাবিকভাবেই জন্ম নিয়েছে ছেলেশিশুটি। অসিত-সাশন্তি ত্রিপুরা দম্পতির কোলে এসেছে তাদের প্রথম সন্তান। নবজাতক ও মা দুইজনই সুস্থ আছে।

এই দম্পতির সঙ্গে আত্মীয়তার সম্পর্কের কথা জানিয়ে সুমিত্রা ত্রিপুরা বলেন, ‘তারা আমার কাছে এসে পরামর্শ নিতো। এ কারণেই তাদের সন্তানের স্বাভাবিক প্রসব সম্ভব হয়েছে।’ গর্ভধারণের আগে ও পরে চিকিৎসক বা অভিজ্ঞ নার্সের পরামর্শ নেওয়ার আহ্বান জানান সুমিত্রা। তাঁর ভাষ্য, এতে করে গর্ভকালীন জটিলতা এড়ানো যাবে। পাশাপাশি সুস্থ সন্তান জন্মদানও সম্ভব হবে। 

.

উৎস: Samakal

কীওয়ার্ড: ব ন দরব ন শ শ র জন ম স মরণ

এছাড়াও পড়ুন:

কার্টুন, মিমে অভ্যুত্থানের ভিন্ন ধারার দৃশ্যায়ন

টাকার বস্তার ভেতর থেকে মাথা উঁচিয়ে আছেন শুভ্র কেশ, সফেদ দাড়ি, চশমা পরিহিত এক লোক। তাঁর ছবি দেখে তো বটেই, এই বর্ণনা থেকেও তাঁকে চিনবেন দেশবাসী। বর্তমানে কারাগারের বাসিন্দা পতিত স্বৈরশাসকের এই উপদেষ্টা বলছেন, ‘টাকার ওপর আমার বিশ্বাস উঠে গেছে।’ এই ছবির পাশেই এক কাটআউট। সেখানে ‘শেখ হাসিনা পালায় না’ বলতে বলতে দৌড়ে পালাচ্ছেন ছাত্র–জনতার অভ্যুত্থানে ক্ষমতার মসনদ থেকে উৎপাটিত শেখ হাসিনা।

এমন মজার মজার কার্টুন, মিম, গ্রাফিতি, ভিডিও স্থাপনাকর্মসহ বৈচিত্র্যময় সৃজনসম্ভার নিয়ে শুরু হয়েছে ‘বিদ্রূপে বিদ্রোহ’ নামের ব্যতিক্রমী এক প্রদর্শনী। আয়োজন করেছে অনলাইনভিত্তিক স্যাটায়ার সাময়িকী ‘ইয়ারকি’। জুলাই গণ-অভ্যুত্থানের বর্ষপূর্তি উপলক্ষে ধানমন্ডির আলিয়ঁস ফ্রঁসেজের লা গ্যালারিতে গতকাল বৃহস্পতিবার সন্ধ্যায় আনুষ্ঠানিকভাবে ছয় দিনের এ প্রদর্শনী শুরু হয়েছে। চলবে ৫ আগস্ট পর্যন্ত। সবার জন্য প্রতিদিন বেলা তিনটা থেকে রাত আটটা পর্যন্ত খোলা।

গত বছর ফ্যাসিবাদবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলনে উত্তাল ছিল জুলাই। একটি বৈষম্যহীন, উদার গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক মানবিক সমাজ প্রতিষ্ঠার জন্য পথে নেমেছিলেন অগণিত মানুষ। শেখ হাসিনার কর্তৃত্ববাদী সরকারকে উৎখাত করতে জীবন উৎসর্গ করেছেন তাঁদের অনেকে। আহত হয়েছেন বেশুমার। রক্তরঞ্জিত রাজপথ বেয়ে এসেছে জনতার বিজয়।

প্রদর্শনীতে প্রবেশপথটির দুই পাশে লাল রঙের পটভূমিতে বড় বড় ডিজিটাল পোস্টার। সেখানে ২ জুলাই থেকে ৫ আগস্ট পর্যন্ত প্রতিদিনের বিভিন্ন ঘটনার আলোকচিত্র, সংবাদপত্র, অনলাইন পোর্টাল, টেলিভিশনের রিপোর্ট, ছবি, ফেসবুকসহ বিভিন্ন সামাজিক মাধ্যমের পোস্ট—এসব তুলে আনা হয়েছে এ পোস্টারগুলোতে। প্রবেশপথটিও লাল রঙের। ‘জুলাই করিডর’ নামে এই রক্তিম পথটি বেয়ে দর্শনার্থীরা প্রদর্শনীতে প্রবেশের সময় অভ্যুত্থানের উত্তাল দিনগুলোর উত্তাপ ফিরে পাবেন।

সম্পর্কিত নিবন্ধ