কুয়েটের ঘটনায় নিন্দা জানিয়ে বুয়েট শিক্ষার্থীদের মানববন্ধন
Published: 15th, April 2025 GMT
খুলনা প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (কুয়েট) ২২ শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে মামলা দায়েরসহ অন্যান্য ঘটনায় গভীর উদ্বেগ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) সাধারণ শিক্ষার্থীরা। এই ঘটনায় তাঁরা প্রতিবাদী মানববন্ধন করেছেন। লিখিত বিবৃতি দিয়েছেন। কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে থাকার কথা জানিয়েছেন।
আজ মঙ্গলবার দুপুরে বুয়েটের কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে এই মানববন্ধন করা হয়। মানববন্ধনে বুয়েটের মেকানিক্যাল বিভাগের ২০ ব্যাচের শিক্ষার্থী আল ফারাবি ও আরমান হাসান লিখিত বিবৃতি পড়েন।
বিবৃতিতে বলা হয়, গত ১৮ ফেব্রুয়ারি কুয়েট ক্যাম্পাসে ছাত্রদল ও বিএনপিপন্থী সন্ত্রাসীদের সশস্ত্র হামলায় শতাধিক শিক্ষার্থী আহত হন। সাধারণ শিক্ষার্থীদের ছাত্ররাজনীতিমুক্ত নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবির বিপরীতে শিক্ষাঙ্গনের অভ্যন্তরে এমন বর্বরোচিত সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডের নিন্দা জানাতে না জানাতেই তাঁরা দেখতে পান, ঘটনার প্রায় দুই মাস পর কুয়েট প্রশাসনের সহযোগিতায় ২২ জন নিরপরাধ, আন্দোলনকারী সাধারণ শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে মামলা করা হয়েছে। এই মামলা উদ্দেশ্যপ্রণোদিত, ভিত্তিহীন, রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রসূত ও মিথ্যা।
কুয়েট প্রশাসনের ভূমিকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, এই হামলার প্রকৃত তদন্ত সম্পন্ন না হওয়া, অপরাধীদের যথাযথভাবে চিহ্নিত না করে কীভাবে আন্দোলনরত নিরীহ শিক্ষার্থীদের নাম মামলায় অন্তর্ভুক্ত করা হলো, তা বিস্ময়ের উদ্রেক করে। বিষয়টি অত্যন্ত উদ্বেগজনক। কুয়েট প্রশাসনের ভূমিকা অত্যন্ত প্রশ্নবিদ্ধ। তাঁরা স্পষ্ট করে বলতে চান, এই প্রক্রিয়া কুয়েট প্রশাসন ও তদন্ত কমিটির নিষ্ক্রিয়তা, ব্যর্থতা ও পক্ষপাতিত্বের প্রতিফলন।
আরও পড়ুনকুয়েটের ভিসির পদত্যাগের এক দফা ঘোষণা, হলগুলোর তালা ভাঙছেন আন্দোলনকারীরা১ ঘণ্টা আগেবিবৃতিতে বলা হয়, তাঁরা (বুয়েট শিক্ষার্থীরা) জানতে পেরেছেন, আন্দোলন দমন করার লক্ষ্যে কুয়েট প্রশাসন একের পর এক দমনমূলক পদক্ষেপ গ্রহণ করছে। যেমন হল বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শিক্ষার্থীরা হল ত্যাগে অসম্মতি জানালে পানি, বিদ্যুৎ, ওয়াইফাই সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দিয়ে স্বৈরাচারী কায়দায় হল ত্যাগে বাধ্য করা হয়। ঈদের সময় শিক্ষার্থীদের ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হয়নি। অথচ বহিরাগতদের অনায়াসে প্রবেশের সুযোগ করে দেওয়া হয়। চিহ্নিত সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা না নিয়ে উল্টো ন্যায়সংগত দাবি নিয়ে আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের দোষারোপ করে অপপ্রচার চালানো হয়। হলে প্রবেশ করতে না দিয়ে শিক্ষার্থীদের রাতে খোলা আকাশের নিচে রাস্তায় থাকতে বাধ্য করে নিকৃষ্টতম নজির স্থাপন করেছে কুয়েট প্রশাসন। এটি নিঃসন্দেহে একটি নিন্দনীয় আচরণ।
বিবৃতিতে বলা হয়, তাঁরা (বুয়েট শিক্ষার্থীরা) মনে করেন, এই মামলা শুধু কুয়েটের ২২ জন শিক্ষার্থীর বিরুদ্ধে নয়, বরং এটি দেশের প্রতিটি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের স্বাধীনতা ও শিক্ষার্থীদের যৌক্তিক অধিকার হরণের প্রচেষ্টা। আজ যদি তাঁরা চুপ থাকেন, কাল হয়তো এই ধরনের প্রহসনের শিকার হতে হবে আরও অনেক শিক্ষার্থীকে। রাজনৈতিক স্বার্থের কারণে মেধাবী শিক্ষার্থীদের দমন করার মাধ্যমে জুলাই আন্দোলনের ‘স্পিরিট’ নষ্ট করা সামগ্রিকভাবে দেশের জন্য কল্যাণকর কিছু বয়ে আনবে না।
আরও পড়ুনকুয়েটে প্রশাসনিক ভবনের ভেতরে চলছে সিন্ডিকেট সভা, বাইরে শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভ–মিছিল১৮ ঘণ্টা আগেকুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে থাকার কথা জানানো হয় বিবৃতিতে। এতে বলা হয়, তাঁরা (বুয়েট শিক্ষার্থীরা) জানতে পেরেছেন, গতকাল সোমবার রাতে কুয়েটের সিন্ডিকেট মিটিংয়ে ৩৭ জন শিক্ষার্থীকে সাময়িকভাবে বহিষ্কারের সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে। নিরাপদ ছাত্ররাজনীতিমুক্ত ক্যাম্পাসের দাবিতে শান্তিপূর্ণ আন্দোলনকারী কোনো নিরপরাধ শিক্ষার্থীকে আন্দোলন দমনের লক্ষ্যে বহিষ্কার করা কোনোক্রমেই কাম্য নয়। বুয়েট শিক্ষার্থীরা কুয়েটের সাধারণ শিক্ষার্থীদের ন্যায্য আন্দোলনে পাশে আছেন। এই মিথ্যা মামলা অবিলম্বে প্রত্যাহার, প্রকৃত দোষীদের বিচার, কুয়েট ভিসি ও কুয়েট প্রশাসনের বিতর্কিত-নেতিবাচক ভূমিকার জবাবদিহি নিশ্চিতের জোর দাবি জানাচ্ছেন তাঁরা। বুয়েট শিক্ষার্থীরা স্পষ্ট করে জানাতে চান, তাঁরা এই প্রহসনের বিরুদ্ধে। তাঁরা এই অন্যায়ের বিরুদ্ধে। তাঁরা কুয়েটের শিক্ষার্থী ভাই-বোনদের পাশে আছেন। অনতিবিলম্বে কুয়েট প্রশাসন যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণ না করলে এ দেশের ছাত্রসমাজ কঠোর আন্দোলনে যেতে বাধ্য হবে। এ ব্যাপারে সরকারের সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা কামনা করছেন তাঁরা।
আরও পড়ুনপয়লা বৈশাখেও হল খোলার দাবিতে শিক্ষার্থীদের অবস্থান, সন্ধ্যায় সিন্ডিকেট সভা১৪ এপ্রিল ২০২৫.উৎস: Prothomalo
এছাড়াও পড়ুন:
মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী পালিত
মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মাগুরছড়া ট্র্যাজেডির ২৮তম বার্ষিকী মানববন্ধন কর্মসূচির মধ্যদিয়ে পালিত হয়েছে।
গতকাল শনিবার সকাল ১১টায় মাগুরছড়া গ্যাসক্ষেত্রের সামনে পাহাড় রক্ষা পরিবেশ, উন্নয়ন সোসাইটিসহ বিভিন্ন সংগঠনের আয়োজনে এক মানববন্ধন কর্মসূচি পালিত হয়।
মৌলভীবাজার জেলা পাহাড় রক্ষা পরিবেশ ও উন্নয়ন সোসাইটির সভাপতি ময়নুল ইসলাম চৌধুরীর সভাপতিত্বে ও প্রভাষক সেলিম আহমেদ চৌধুরীর সঞ্চালনায় এ সময় বক্তব্য দেন কমলগঞ্জ সরকারি গণমহাবিদ্যালয়ের প্রভাষক হামিদা খাতুন, সাংবাদিক আব্দুর রাজ্জাক রাজা, নিছসা সভাপতি আব্দুস সালাম, সাধারণ সম্পাদক রাসেল হাসান বক্ত, পরিবেশকর্মী সাজু আহমেদ, শাহারা ইসলাম রুহিন, শ্রমিক নেতা দুলাল মিয়া, ছাত্রনেতা লিটন গাজী, মিনহাজুল ইসলাম মুন্না, আব্দুল মতিন, মিসবাউর রহমান, আদিবাসী নেতা সুচিনগুল প্রমুখ।
মানববন্ধনে বক্তারা বলেন, এখনও বাংলাদেশ সেই বিপর্যয়ের জন্য দায়ী মার্কিন প্রতিষ্ঠানের কাছ থেকে কোনো ক্ষতিপূরণ আদায় করতে পারেনি। বাংলাদেশ সরকার এ বিষয়ে নিষ্ক্রিয় হলেও দেশের স্বার্থরক্ষায় আন্দোলনকারীরা সরব রয়েছেন। ২৮ বছর পার হয়ে গেলেও দুর্ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত ব্যক্তি ও পরিবারের ক্ষতিপূরণ আদায়ে সচেতন হয়নি সরকার। বিষয়টি আমলে নেয়নি কোম্পানি।