অপহৃত ৫৫ জেলেকে ফেরত দিল আরাকান আর্মি
Published: 16th, April 2025 GMT
কক্সবাজারের টেকনাফের নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরে মাছ ধরার সময় মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মির (এএ) হাতে অপহৃত ৫৫ জন জেলেকে ফেরত এনেছে বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি)। আজ বুধবার বেলা আড়াইটার দিকে ট্রলারে করে ৫৫ জনকে নাফ নদীর টেকনাফ পৌরসভার ট্রানজিট ঘাটে আনা হয়। সেখান থেকে জেলেদের দমদমিয়া বিজিবি বিওপিতে নেওয়া হয়। জেলেদের মধ্যে ১৩ জন বাংলাদেশি। অপর ৪২ জন রোহিঙ্গা। রোহিঙ্গারা টেকনাফের বিভিন্ন ট্রলারে জেলে হিসেবে কাজ করছিলেন।
বিজিবির দেওয়া তথ্যমতে, গত পাঁচ মাসে আরাকান আর্মি নাফ নদী ও তৎসংলগ্ন বঙ্গোপসাগর থেকে ১৫১ জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল। এর মধ্যে আরাকান আর্মির সঙ্গে যোগাযোগ করে বিজিবি ১৩৪ জনকে ফেরত এনেছে। সর্বশেষ আজ বিজিবির তৎপরতায় আরাকান আর্মি ৫৫ জন জেলেকে ফেরত দিয়েছে।
টেকনাফ-২ বিজিবি ব্যাটালিয়নের অধিনায়ক লেফটেন্যান্ট কর্নেল মো.
সীমান্তের একাধিক সূত্র জানায়, টানা ১১ মাসের লড়াই–সংঘাতের পর গত বছরের ৮ ডিসেম্বর মিয়ানমারের রাখাইন রাজ্যের ৮০ শতাংশ এলাকা (২৭১ কিলোমিটার) দখলে নেয় দেশটির সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান আর্মি। এরপর নাফ নদীতে মাছ শিকারে নিষেধাজ্ঞা জারি করে। বাংলাদেশ জলসীমানার টেকনাফের জেলেরা মাছ ধরতে গেলে ধরে নিয়ে যায়। গত পাঁচ মাসে নাফ নদী ও বঙ্গোপসাগরের বিভিন্ন পয়েন্ট থেকে আরাকান আর্মির সদস্যরা কয়েক দফায় ১৫১ জনকে ধরে নিয়ে গিয়েছিল।
বুধবার ফিরে আসা কয়েকজন জেলে জানান, অপহরণের পর আরাকান আর্মির সদস্যরা বাংলাদেশি জেলেদের রাখাইন রাজ্যের ধামনখালী ও নাক্ষ্যংদিয়া ফাঁড়িতে আটকে রেখেছিল। অপহরণের সময় ট্রলারসহ বাংলাদেশি জেলেদের ধরে নেওয়া হলেও ট্রলার ফেরত দেওয়া হয়নি। রাখাইন রাজ্যের ফাঁড়িতে ধরে নিয়ে যাওয়া ১০-১২টি টেকনাফের মাছ ধরার ট্রলার পড়ে থাকতে দেখা গেছে।
উৎস: Prothomalo
কীওয়ার্ড: আর ক ন আর ম র জন জ ল ন ফ নদ
এছাড়াও পড়ুন:
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশের স্মরণে শাহবাগে সমাবেশ, ৩ দফা দাবি
‘কারফিউ ভেঙে নারীদের সমাবেশ’–এর এক বছর পূর্তিতে প্রগতিশীল নারী সংগঠন, স্বতন্ত্র অধিকারকর্মী এবং নারী শিক্ষার্থীদের উদ্যোগে আজ সোমবার বিকেলে শাহবাগে জাতীয় জাদুঘরের সামনে স্মরণ সমাবেশ অনুষ্ঠিত হয়েছে। সেখান থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। সমাবেশের প্রতিপাদ্য ছিল ফ্যাসিবাদবিরোধী সংগ্রাম চলবেই।
গত বছরের ২৭ জুলাই কারফিউ ভেঙে বিভিন্ন শ্রেণি–পেশার নারীরা পল্টন মোড়ে ‘হামার বেটাক মারলু ক্যানে’ শীর্ষক একটি সমাবেশ করেছিলেন।
সমাবেশে নারী মুক্তি কেন্দ্রের সভাপতি সীমা দত্ত বলেন, ফ্যাসিবাদী শাসনামলের অবসান ঘটলেও এখনো ফ্যাসিবাদী কাঠামোর অবসান হয়নি। বরং দিন দিন নব্য ফ্যাসিবাদের উত্থান ঘটছে। যেখানে পাহাড়–সমতলের একের পর এক নারী নিপীড়ন, ধর্ষণ ও মব সন্ত্রাসের শিকার হচ্ছে। অন্যদিকে নিপীড়ককে আশ্রয় ও দায়মুক্তি দিচ্ছে রাষ্ট্র।
তথ্য আপা রাজস্বকরণ আন্দোলনের প্রতিনিধি রোমানা ইসলাম বলেন, তথ্য আপারা দুই মাস ধরে প্রেসক্লাবে তাঁদের চাকরি রাজস্বকরণের দাবি জানিয়ে আন্দোলন করছেন, বসে আছেন। অথচ তাঁদের চাকরি নিশ্চিত করা নিয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের কোনো দৃষ্টি নেই। তাঁদের ৭ বছর কর্মজীবনে বেতন থেকে কেটে নেওয়া ২০ কোটি টাকাও ফেরত দেওয়া হচ্ছে না।
হিল উইমেনস ফেডারেশনের সদস্য রুপসী চাকমা বলেন, গণ–অভ্যুত্থানের পর কল্পনা চাকমার অপহরণ মামলার সুষ্ঠু বিচার হবে, তাই ভেবেছিল বাংলাদেশের নারী সমাজ। কিন্তু চিহ্নিত অপহরণকারী লেফটেন্যান্ট ফেরদৌস নিরাপদে ঘুরে বেড়ালেও কল্পনা চাকমার যে মামলাটি আওয়ামী সরকার খারিজ করেছে, তা একইভাবে বলবৎ আছে এবং মামলা পুনরায় শুরুর জন্য শুনানির তারিখ বারবার পেছাচ্ছে।
বম স্টুডেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের কেন্দ্রীয় কমিটির সভাপতি লালরিথাং বম অভিযোগ করেন, আওয়ামী সরকার বম জাতির ওপর ‘কালেক্টিভ পানিশমেন্ট’–এর নামে যত্রতত্র থেকে নিরীহ বমদের আটক শুরু করেছিল। আজও কারাগারে বমরা আটকে আছে। তিনজন বম ব্যক্তিকে কারাগারে অত্যাচারের মধ্য দিয়ে রাষ্ট্রীয়ভাবে হত্যা করা হয়েছে।
আজ সমাবেশ থেকে তিন দফা দাবি জানানো হয়। দাবিগুলো হলো, দুই মাস ধরে আন্দোলনরত তথ্য আপাদের চাকরি রাজস্বভুক্ত করতে হবে; নিম্ন আদালতে কল্পনা চাকমা অপহরণ মামলা খারিজের আদেশ বাতিল করে পুনঃ তদন্ত ও চিহ্নিত অপহরণকারী লে. ফেরদৌস গংদের বিচারের আওতায় আনা এবং পাহাড় ও সমতলে নারী ধর্ষণ, নিপীড়ন এবং মব সন্ত্রাসের বিচার করতে হবে এবং কারাগারে আটক সব বমকে অবিলম্বে মুক্তি দিতে হবে।
সমাবেশে গণতান্ত্রিক অধিকার কমিটির সদস্য মারজিয়া প্রভার সঞ্চালনায় আরও বক্তব্য দেন শহীদ শেখ ফাহমিন জাফরের মা কাজী লুলু মাখামিন শিল্পী, বাংলাদেশ ছাত্র ইউনিয়নের কেন্দ্রীয় সাংস্কৃতিক সম্পাদক অর্ণি আনজুম প্রমুখ।
পাশাপাশি সংহতি জানিয়ে উপস্থিত ছিলেন অ্যাকটিভিস্ট ও কবি ফেরদৌস আরা রুমী, আইনজীবী সাদিয়া আরমান, রাষ্ট্র সংস্কার আন্দোলনের সদস্য জাকিয়া শিশির, অ্যাকটিভিস্ট প্রাপ্তি তাপসী, চিকিৎসক সুরাইয়া ইয়াসমিনসহ আরও অনেকে।
সমাবেশে সূচনা ও সমাপনী সংগীত পরিবেশন করে চারণ সাংস্কৃতিক কেন্দ্র এবং বিবর্তন সাংস্কৃতিক কেন্দ্র।