সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের নৈশপ্রহরীর পকেটে মিলল ৪০ হাজার টাকা
Published: 16th, April 2025 GMT
অনিয়ম, দুর্নীতি ও গ্রাহকদের কাছ থেকে ঘুষ চাওয়াসহ বিভিন্ন অভিযোগ খতিয়ে দেখতে কুষ্টিয়ার খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান চালিয়েছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। এ সময় প্রাথমিকভাবে অনিয়ম দুর্নীতির প্রমাণ পান তারা। একই সঙ্গে তারা সেখানকার নৈশপ্রহরীর পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেন।
বুধবার (১৬ এপ্রিল) দুপুরের দিকে দুদকের সমন্বিত কুষ্টিয়া আঞ্চলিক কার্যালয়ের একটি টিম এ অভিযান চালায়। কুষ্টিয়া কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক বুলবুল আহমেদ অভিযানে নেতৃত্ব দেন।
দুদক সূত্রে জানা গেছে, বিভিন্ন অনিয়ম ও দুর্নীতির অভিযোগে খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে অভিযান পরিচালনা করে দুদক। এ সময় দুদকের টিম তল্লাশি করে কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী হারুনার রশিদ হারুনের পকেট থেকে ৪০ হাজার টাকা উদ্ধার করেছে। হারুন দাবি করেছেন যে, টাকাগুলো তার ব্যক্তিগত। তার কাছে টাকার উৎসের প্রমাণ চেয়েছে দুদক।
আরো পড়ুন:
যশোর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে দুদক
ফ্ল্যাট দখলের অভিযোগ: টিউলিপসহ ৩ জনের বিরুদ্ধে মামলা
খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ের নৈশপ্রহরী হারুনার রশিদ হারুন বলেন, “আমি অনিয়ম দুর্নীতির সঙ্গে জড়িত না। আমার পকেটে ব্যক্তিগত ব্যবসার ৪০ হাজার টাকা ছিল। সেটা দুদক উদ্ধার করেছে। সেই টাকা ঘুষের টাকা না।”
আপনি নৈশপ্রহরী, দিনের বেলায় অফিস করেন কেন? এমন এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “গরিব মানুষ দিনের বেলায় অফিসে এসে কামকাজ করি। মুহুরি দলিল লেখকরা কিছু টাকা-পয়সা দেন। বাড়তি কিছু টাকা পাই এ জন্যই দিনের বেলায় অফিস করি।”
সাব-রেজিস্ট্রার রাসেল মল্লিক কুষ্টিয়া সদর সাব রেজিস্ট্রার অফিসে কর্মরত। খোকসা সাব রেজিস্ট্রার অফিসে সপ্তাহে একদিন অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করেন। অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগ অস্বীকার করে রাসেল মল্লিক বলেন, “অফিসের বাইরে কী হয়, বাইরে কে কী নেন, সে ব্যাপারে আমি কিছু বলতে পারব না। তবে, অফিস ও অফিসের স্টাফরা সরকারি ফির বাইরে একটি টাকাও নেয় না। যে টাকাটা নেওয়া হয়, সেই টাকার রশিদও দেওয়া হয়। অভিযোগের ভিত্তিতে দুদক অভিযান পরিচালনা করেছে। আমি সার্বিকভাবে সহযোগিতা করেছি। উনারা রেজিস্ট্রির রেকর্ডপত্র যাচাই-বাছাই করেছেন। কী অনিয়ম-দুর্নীতি পেয়েছেন, সেটা উনারাই বলতে পারবেন। আমি উনাদের সর্বাত্মক সহযোগিতা করেছি।”
দুদকের কর্মকর্তা বুলবুল আহমেদ বলেন, “খোকসা সাব-রেজিস্ট্রারের কার্যালয়ে বিভিন্ন অনিয়ম দুর্নীতির অভিযোগে আমরা অভিযান পরিচালনা করেছি। অভিযানে কিছু অনিয়ম-দুর্নীতির প্রমাণ পাওয়া গেছে। আমরা অফিসের নৈশপ্রহরীর কাছে ৪০ হাজার টাকা পেয়েছি। উনি ব্যক্তিগত ব্যবসার টাকা বলে দাবি করেছেন। বিষয়টি তদন্ত করে যথাযথ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে। আমাদের এ অভিযান চলমান থাকবে।”
তিনি আরো বলেন, “খোকসার সাব-রেজিস্ট্রার সপ্তাহে একদিন ডিউটি করেন। সেবাগ্রহীতাদের কাছে থেকে এই অফিসের স্টাফরা যে ফি আদায় করেন, সেগুলো দৈনন্দিন রেকর্ড করা হয় না। কিছুদিন পরে সেগুলো রেকর্ড করা হয়। উনাদের নির্দেশনা দিয়েছি যে, যখন টাকা কালেকশন করবেন তখনই রেকর্ড করবেন এবং চালানটা জমা দেবেন। আমরা রেজিস্ট্রির ফটোকপি চেয়েছি, রেকর্ডপত্র চেয়েছি। পরবর্তীতে আমরা কমিশন বরাবর রিপোর্ট দাখিল করব।”
ঢাকা/কাঞ্চন/মাসুদ
.উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর ৪০ হ জ র ট ক র কর ড অফ স র
এছাড়াও পড়ুন:
চাকরি খেয়ে ফেলব, কারারক্ষীকে কারাবন্দী আ’লীগ নেতা
‘চাকরি খেয়ে ফেলব, দেখে নেব তোমাকে, চেন আমি কে?’ কারবন্দী কুড়িগ্রাম জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজু (৪৯) মঙ্গলবার বিকেল ৪টার দিকে ২ কারারক্ষীকে এভাবে হুমকি দেন বলে অভিযোগ উঠেছে।
জানা যায়, কুড়িগ্রাম জেলা কারাগারে জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে দেখতে যান তার কয়েকজন স্বজন। কারা নিয়মানুযায়ী সাক্ষাৎ কক্ষে বেঁধে দেওয়া সময়ে কথা শেষ করার কথা থাকলেও তিনি তার মানতে রাজি নন। তিনি দীর্ঘ সময় কথা বলতে চাইলে সাক্ষাৎ কক্ষে দায়িত্বরত মহিলা কারারক্ষী পপি রানী কারাবন্দী নেতার স্বজনদের সময়ের মধ্যে কথা শেষ করতে বলেন। এতে ক্ষিপ্ত হন আওয়ামী লীগ নেতা সাজু। তখন তিনি বলেন, ‘এই আপনি কে? ডিস্টার্ব করছেন কেন? চিনেন আমাকে? চাকরি খেয়ে ফেলব।’
এ সময় সাক্ষাৎ কক্ষে সাজুর স্বজনরাও পপি রানীর সঙ্গেও আক্রমণাত্মক আচরণ করেন। পপি রানীকে নিরাপদ করতে সুমন নামের আরেকজন কারারক্ষী এগিয়ে এলে তাকে লাথি দিয়ে বের করে দেওয়ার হুমকি দেন সাজু। উত্তেজনার একপর্যায়ে ঘটনাস্থলে দ্রুত উপস্থিত হন প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক। তিনি সাজুর স্বজনদের সাক্ষাৎ কক্ষ থেকে চলে যেতে বলেন। তারাও চলে যাওয়ার সময়ে কারারক্ষীদের গালিগালাজ করেন।
এ ব্যাপারে কারারক্ষী পপি রানী বলেন, ‘আমি ডিউটিরত অবস্থায় তিনি আমাকে প্রভাব দেখিয়ে চাকরি খাওয়ার হুমকি দেন ও গালিগালাজ করেন। আমি জেলার স্যারের কাছে বিচার প্রার্থনা করছি।’
প্রত্যক্ষদর্শী কারারক্ষী মো. সুমন বলেন, ‘আমরা তো ছোট পদে চাকরি করি, আমাদের নানান নির্যাতন সহ্য করতে হয়। আমি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের অনুমতি ছাড়া আর কিছু বলতে পারব না।’
প্রধান কারারক্ষী আব্দুর রাজ্জাক বলেন, ‘সাক্ষাৎ কক্ষের ভেতরে পুলিশ সদস্যকে গালিগালাজ করা হয়। পরে আমি গিয়ে পরিবেশ শান্ত করি।’
এ বিষয়ে জানতে চাইলে কুড়িগ্রাম কারাগারের জেলার এ জি মো. মামুদ বলেন, ‘বিষয়টি আমি শুনেছি। বন্দীরা আমাদের সঙ্গে খারাপ ব্যবহার করলেও আমরা মানবিকতা প্রদর্শন করি। কেউ অতিরিক্ত কিছু করলে জেলের নিয়ম অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’
উল্লেখ্য, জেলা আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক মোস্তাফিজুর রহমান সাজুকে গত ৩ ফেব্রুয়ারি বিকেলে রংপুর শহরের সড়ক ও জনপথ কার্যালয়ের কাছ থেকে গ্রেপ্তার করে পুলিশের গোয়েন্দা শাখা (ডিবি)। তার বিরুদ্ধে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন চলাকালে ছাত্র-জনতার ওপর হামলা ও শিক্ষার্থী আশিক হত্যা মামলাসহ একাধিক মামলা রয়েছে।