গণহত্যার প্রতিবাদ করে গাজাবাসীর জন্য রাইখানদের প্রার্থনা
Published: 18th, April 2025 GMT
গণহত্যার প্রতিবাদ করে জালিম ইসরায়েলের আগ্রাসন থেকে মজলুম গাজাবাসীর মুক্তির জন্য প্রার্থনা করেছে পটুয়াখালীর রাখাইন সম্প্রদায়।
গাজায় গণহত্যা ও নির্বিচার হত্যাকাণ্ডের শিকার ফিলিস্তিনি জনগোষ্ঠীর জন্য কুয়াকাটায় মাহা সাংগ্রাই জলকেলি উৎসবে এক মিনিট নীরাবতা পালন করে রাখাইন সম্প্রদায়।
পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুক্রবার রাখাইন জলকেলি উৎসবের শুরুতে গাজায় গণহত্যার শিকার ফিলিস্তিনিদের জন্য এক মিনিট নীরবতা পালন করা হয়। ছবি: রাইজিংবিডি
আরো পড়ুন:
প্রধান উপদেষ্টার উপ-প্রেস সচিব
বিশ্বে পূর্বশত্রুদের মিত্রে পরিণত হওয়ার অনেক উদাহরণ রয়েছে
অবশেষে জিম্বাবুয়ে সিরিজ সম্প্রচারকারী চ্যানেল পেলো বিসিবি
শুক্রবার দুপুরে (১৮ এপ্রিল) কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শ্রীমঙ্গল বৌদ্ধবিহার-সংলগ্ন রাখাইন মাঠে জলকেলি উৎসবের প্রারম্ভে সবাই দাঁড়িয়ে এই নীরবতা পালন করেন।
রাখাইনদের অন্যান্য ধর্মীয় অনুষ্ঠানে গাজাবাসীর জন্য বিশেষ দোয়ার আয়োজন করা হয় বলেও জানিয়েছেন সম্প্রদায়টির ধর্মগুরুরা।
গণহত্যা অভিযানে গাজা ও ফিলিস্তিন নিশ্চিহ্ন করতে ইসরায়েলের বর্বর আগ্রাসনের বিরুদ্ধে রাখাইনদের এসব উদ্যোগ মানবতার জন্য, সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির জন্য দৃষ্টান্ত বলে মনে করছেন সেখানকার মানুষ।
রাখাইন জলকেলি উৎসব দেখতে আসা কলাপাড়ার আলীপুর এলাকার বাসিন্দা মো.
“নিপীড়িত গাজাবাসীর জন্য তাদের সহমর্মিতা আমাকে আপ্লুত করেছে,” বলেন হোসেন মিয়া।
মহিপুর থেকে আসা মো. আবদুস সালাম বলেন, “এমনিতেই রাখাইনদের সঙ্গে আমাদের একটি সম্প্রীতির বন্ধন রয়েছে। আজ তারা গাজাবাসীর জন্য প্রার্থনা করেছে। তাদের প্রতি আমাদের সম্মান আরো বেড়ে গেল।”
মিশ্রীপাড়া সীমা বৌদ্ধবিহারের উপাধ্যক্ষ উত্তম মহাথের বলেন, “আমাদের ধর্মীয় অনুষ্ঠানগুলোতে গাজাবাসীর জন্য প্রায়ই বিশেষ প্রার্থনা করি। শুধু গাজাবাসীই নয়, পৃথিবীর সকল দাঙ্গা-হাঙ্গামাসহ যুদ্ধ বন্ধ হোক- এটাই আমাদের প্রার্থনা।”
“ আমরা মানুষ হিসেবে সবাইকে সবার প্রতি সৌহার্দ্যপূর্ণ আচরণের অনুরোধ জানাচ্ছি,” বলেন উত্তম মহাথের।
কলাপাড়া উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা রবিউল ইসলাম বলেন, “গাজাবাসীর প্রতি রাখাইন সম্প্রদায়ের পক্ষ থেকে এক মিনিট নীরবতার মাধ্যমে মানবতার সঙ্গে যে সৌহার্দ্যপূর্ণ সম্প্রীতি তারা দেখিয়েছেন, এ জন্য তাদের উপজেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।”
“রাখাইন সম্প্রদায় ভিন্ন ধর্মালম্বী হলেও মানবতার ধর্ম সবার এক। তাই রাখাইন সম্প্রদায় এই নীরবতা পালনের মধ্য দিয়ে আজ ফিলিস্তিনের পক্ষে তাদের সম্প্রীতি আনুষ্ঠানিকভাবে প্রকাশ করল।”
শুক্রবার পটুয়াখালীর কলাপাড়ার কুয়াকাটায় শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী রাখাইন জলকেলি উৎসব, যাতে শামিল হচ্ছেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের মানুষ, সেই সঙ্গে যুক্ত হচ্ছেন বিদেশিরাও।
উৎসব শুরুর দিন ঐতিহ্যবাহী জলকেলিতে মেতে উঠতে দেখা যায় রাখাইনদের। তরুণ-তরুণী ও কিশোর-কিশোরীদের আনন্দ করতে দেখা যায়। উৎসবে সহায়তা করছে স্থানীয় প্রশাসন।
ঢাকা/ইমরান/রাসেল
উৎস: Risingbd
কীওয়ার্ড: চ কর চ কর গ জ ব স র জন য কল প ড় র গণহত য আম দ র ন রবত জলক ল
এছাড়াও পড়ুন:
কারও কোনো অপরাধ নাই
পিতার মস্তিষ্কে ঘর আমি তবু আলাদা কেউ
আছে সে নিশ্চিত জানি; দেখে না চোখ
না রূপ, না অরূপ
দল বেঁধে থাকি অসংখ্য ভাই-বোন
মা তার বুক পেতে ধরে রাখে
খণ্ড খণ্ড আমাকে, তাকে এবং তোকে
অন্ধকার ঘন হলে স্মৃতিরা ডানা মেলে—
চুপচাপ, খুব ধীরে
জেগে ওঠে হরেক জগৎ
রাজকন্যার রূপ নিয়ে বসে থাকে মা
কত স্বপ্ন, কত গল্পেরা মুহূর্তে মহিরুহ হয়
মা মেলে ধরে অপরূপ রূপ, বেহেশতের খুশবু
বাবা কামে
ঘামে
মায়ের পুকুর থেকে তুলে আনে চিতল হরিণ
আমাদের ঘুম ভাঙে
অসংখ্য কোটি বছরের ঘুম থেকে
আমরা অসংখ্য ভাই-বোন জেগে উঠি
এ আমাদের গেরিলা যুদ্ধ ছিল
পৃথিবীকে জানবার, মাটিতে সোনারোদ গন্ধ মেখে
কিছু প্রেম মানুষকে বিলাব, অথবা আমরা গোল হয়ে ঘুরি
মায়ের নাভিমূলে
মা বিস্তৃত হতে থাকে, মা প্রসারিত হতে থাকে
মা হেমন্তের নরম ভোর, অলৌকিক রোদ...
প্রতি রাতে বাবাকে হত্যা করে মা
ক্রমাগত বাবা জন্মাতে থাকে মায়ের পুষ্পিত জলাধার থেকে
আমরা বুঝতে পারি না, কে মা? কে বাবা?
মানুষ মূলত ভ্রমণে আছি
শুধু কি আমরা এই নদী–নক্ষত্র–আকাশ
ফেনিল আকাশগঙ্গা অজস্র মহাকাশ
অসংখ্য ধূলিকণা, গতির নিভৃত প্রাণ
পথে পথে যুদ্ধ হলো
ভীষণ
খানাখন্দ বাধা, ভাইয়ের চিৎকার
বোনের যন্ত্রণাকাতর মুখ, তবু
আমাকেই যেতে হয়েছে, পেছনে
কোটি কোটি ভাইবোনের মৃত্যুর মিছিল
যে যাচ্ছে, তার কোনো অপরাধ নাই
যে আসছে, তার কোনো অপরাধ নাই
কথা ছিল হাসিতে ফেটে পড়ি
এসেছি নতুন দেশে; দৃশ্যমান পেয়েছি শরীর
কেন তবে দিয়েছি হরেক চিৎকার?
কার ভয়ে?
অতীত হত্যার ছোপ ছোপ রক্ত, চিৎকার
কান্না-অভিমান
ভাইকে হত্যার অপরাধ?
বোনকে হত্যার অভিশাপ?
কিসের কান্না আমার?
স্মৃতি আমাকে কান্নার ভাষা দেয়
কান্না দেয় মুক্তি অথবা—
মানুষের কি কখনো মুক্তি হয়েছিল?
এত ধর্ম এল
দেবতা, মুনি, নবী এল বিশ্বমুক্তির বার্তা নিয়ে
তবু পৃথিবীতে শান্তি এল না
জন্মের মৃত্যু থাকে চলমান
হত্যা থাকে চলমান
আমরা মানুষেই ফিরে এসেছি বারবার
মানুষ হত্যা করে যে মানুষ টাকা নেয়
সে অর্থ সে ভালোবেসে মানুষে দেয়
এ বিশাল পৃথিবী
দখল নিয়েছে মানুষ
প্রতি ইঞ্চি জমি-পাথর-ঝরনা-বন
মানুষের পদচ্ছাপ সবর্ভূতে ব্যাপ্তিমান
দখল মানে যুদ্ধ
যুদ্ধ মানে মৃত্যু—হত্যা-লুট-মৃত্যু
এত বিপ্লব, রক্তপাত, যুদ্ধ, হানাহানি
তবু দিন শেষে ফিরে এসেছি মানুষের কাছে
মানুষের বোধ দিয়েছে নতুন পথ
গতি আর স্থিতি
হত্যা আমাদের করতে হয়
হত্যা–শান্তি
ধর্ম–হত্যা, সভ্যতা–হত্যা
পৃথিবীতে প্রতিদিন হত্যার উৎসব বসে
হাওয়াকে হত্যা করে তির ছুটে চলে সামনে
কারও কোনো অপরাধ থাকে না
কত কত মা তার সন্তানকে সমূহ হত্যা করে
নিভৃতে কান্নার উৎসব করে
কারও কোনো অপরাধ নাই
মানুষ ভালোবাসবে শুধু
সকল প্রাণীকে, পাহাড়, নদী, ঘাস
হাওয়াকে হত্যা করে তির ছুটে চলে সামনে
কারও কোনো অপরাধ থাকে না
না হাওয়ার, না তিরের...